অর্ণব সান্যাল
দুই পক্ষে তুমুল ‘লড়াই’ হলো। একে অন্যকে দেখে নেওয়ার লড়াই। সেই লড়াইয়ে প্রাথমিকভাবে আহত হলো অর্ধশতাধিক আর প্রাণ গেল নাহিদ হাসানের। জানা গেছে, একটি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারিম্যানের কাজ করতেন নাহিদ। একজন ডেলিভারিম্যানকে মৃত্যু ডেলিভারি দিয়ে আসলে কী পেল বিবাদে জড়ানো দুই পক্ষ?
গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, তুচ্ছ ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। সেই তুচ্ছ ঘটনাটা আবার ইফতারের টেবিল সাজানো নিয়ে এবং তা প্রথমে সীমাবদ্ধ ছিল নিউমার্কেটের দুই ব্যবসায়ীর মধ্যেই। এরপর তা দুটি পক্ষের মধ্যে বিস্তৃত সংঘাতে পরিণত হয়। সেই সংঘাত এতটাই প্রচণ্ড হয়ে ওঠে যে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায় এবং রাজধানীর আপামর নাগরিক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়তে বাধ্য হয়। তাদের সংঘাত থেকে রক্ষা পায়নি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও। এখন পর্যন্ত ঘটনার যেসব ছবি ও ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে, তাতে দুই পক্ষকেই নানা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় দেখা গেছে। কারও হাতে হকিস্টিক, কারও হাতে গাছের ডাল, কারও হাতে লাঠি বা আগুন লাগানোর সরঞ্জাম ছিল। অর্থাৎ, যতভাবে একজনকে মেরে শুইয়ে দেওয়া যায়, তার সমস্ত উপকরণই দুই পক্ষের কাছে ছিল। আবার ককটেল বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া গেছে।
সংঘাত এমনই এক বিষয়, যেখানে সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর বাইরেও অনেক ‘কোলাটেরাল ড্যামেজ’ হয়। যে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়জন সক্রিয়ভাবে ‘দেইখ্যা লমু’ শীর্ষক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে হতাহতদের একটি বড় অংশই যে বিবদমান পক্ষগুলোর বাইরে, সেটি অনুমান করা যায়। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন সাংবাদিক। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তাঁদের পেটানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে সাধারণ নাগরিকেরা যে ছিলেন তার অন্যতম উদাহরণ নাহিদ হাসান। এখনো পর্যন্ত জানা তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় যে, তিনি কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই পথে নেমেছিলেন। নাহিদের বাবা সে কথাই বলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাহিদের বাবাকে ছুটতে হলো হাসপাতালে, হাত পেতে নিতে হলো ছেলের লাশ।
প্রশ্ন জাগে, নাহিদের প্রাণটাই কি তবে এই সংঘাতের ট্রফি? নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কি উত্তর প্রজন্মের কাছে এমনটাই বলবেন—‘আমাদের সময় কাউরে ছাড়ি নাই। ইট ছুইড়া, পিটাইয়া মানুষ মারসি। আমাদের এলাকা পার হইতে গেলেও মানুষ মরসে। আর তোমরা কী করো?’
আচ্ছা, উত্তর প্রজন্মকে কি নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অহং রক্ষায় মানুষ মারার ও আগুন জ্বালানোর শিক্ষাই দেবেন?
আপাতভাবে মনেই হচ্ছে যে এ দুই পক্ষ আসলে অহং রক্ষার ‘লড়াই’য়েই শামিল হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের যেমন অহংয়ে আঘাত লেগেছিল, ঠিক তেমনটাই হয়েছিল ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও। আর সেই ‘মহান’ সংগ্রামে তারা বলি দিয়েছেন নাহিদের প্রাণ। তার রক্তে রাঙা হাত দেখতে কেমন লাগছে সম্মানিত ‘সচেতন’ নাগরিকদের?
সোম ও মঙ্গলবারের ঘটনাকে কেন অহং রক্ষার লড়াই বলা হলো, তার ব্যাখ্যায় যাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। ছাত্রজীবনে নিউমার্কেটে কেনাকাটার সুযোগও হয়েছিল। ওই এলাকায় ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট-নীলক্ষেত এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দ্বৈরথ দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে যেমন ব্যবসায়ীদের খারাপ ব্যবহার ও কটূক্তি আছে, তেমনি আছে শিক্ষার্থীদের ‘স্টুডেন্ট পাওয়ার’ দেখানোর আকাঙ্ক্ষা। এর বাইরে অর্থ লেনদেনের (পড়ুন চাঁদাবাজি) বিষয়টি তো আছেই। দুই পক্ষের কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। দুই পক্ষের মধ্যেই নিজেদের ‘ক্ষমতা’ দেখানোর উদগ্র বাসনা ছিল এবং আছে। হয়তো আগামী দিনেও থাকবে। বিষয়টি এমন কখনোই নয় যে, শুধু ব্যবসায়ীরা মার খেয়ে যাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে। আবার শিক্ষার্থীরা আজীবন কটূক্তি শুনতে শুনতে হুট করে একদিন প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছেন, সেটিও সত্য বলে মেনে নেওয়া কঠিন। অন্তত নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তা কখনোই মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষেই আছে একে অপরকে ‘শিক্ষা দেওয়ার’ মনোভাব। আর তাতে মূল প্রভাবক অহং। ব্যবসায়ীরা যেমন ওই এলাকাকে নিজেদের ভেবে প্রভাব খাটাতে চান, তেমনি শিক্ষার্থীরাও মনে করেন ওই এলাকার ‘অভিভাবক’ তাঁরাই।
এবং এ কারণেই আইনকানুন, পুলিশ—সব অগ্রাহ্য করে রাস্তা দখল করে মারামারিতে মত্ত হতে দুই পক্ষরই বাধে না। তারা মনে করে, ‘সাধারণ নাগরিক’ এখানে কোনো বিষয়ই না। ওটি শুধু ‘জিম্মি’ করার বস্তু। আর জিম্মি যাকে করা হয়, তার প্রাণের কি কোনো মূল্য থাকে?
মূল্য থাকে না বলেই নাহিদেরা কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে রাস্তায় মরে যান। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন—‘গন্ডগোল’ থাকলে বের হওয়ার দরকার কী? কিন্তু যে দেশে দ্রব্যমূল্য পাগলা ঘোড়ার গতিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বাজারে না পেয়ে কিনতে হয় টিসিবির লাইনে রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে। যে দেশে যেকোনো সরকারি কাজ করাতে ‘ঘুষ’ দিতে হয় মুক্তহস্তে, সে দেশের খেটে খাওয়া মানুষদের কি আদৌ তেমন প্রশ্নের মুখে ফেলা যায়? যাদের দিনের রোজগারেই ওই দিনটায় পেট ভরে, তাদের রাস্তায় নামতেই হয়। কারণ তাদের পেটে-ভাতে থাকার ন্যূনতম সুরক্ষা না দেন ব্যবসায়ীরা, না শিক্ষার্থীরা, না দেয় সরকারকাঠামো।
ওদিকে এবারের অহং রক্ষার লড়াইয়ে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত, তারাও শুরুতে ছিল নিষ্ক্রিয়। পুলিশকে মঙ্গলবারের সংঘাতে শুরুতে মাঠে পাওয়া যায়নি। বড় কর্তারা বলছেন, ‘সাবধানতা অবলম্বন’ করতে গিয়েই নাকি এই অবস্থা! অর্থাৎ, তারা ‘খেলার মাঠ’-এ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চায়নি। দুই পক্ষকেই ‘মারামারি’ করতে দিয়েছে এবং শেষে ‘রোগী মরিয়া যাইবার পর’ ডাক্তার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তো এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে আর বাংলা সিনেমার কী দোষ? তারা তো মারামারির পরই পুলিশকে স্ক্রিনে আনবে!
অন্যদিকে যারা রণক্ষেত্রে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকার লোকসান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পক্ষাবলম্বনের মাধ্যমে মেটাতে চাইছেন, আপনারা জেনে রাখুন, চেতনে বা অবচেতনে আপনারা একটি ‘দেইখ্যা লমু’ সংস্কৃতিরই অংশ। সুযোগ পেলে আপনারও ক্ষমতা দেখানোর জন্য কারও মাথায় হকিস্টিকের বাড়ি দিতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না। রক্তে রাঙা হাত আপনাদের কাছে শৌর্য-বীর্যেরই প্রতীক!
এমন এক ‘সার্কাস’ চলাকালীন দেশেই নাহিদের শেষকৃত্যের জন্য ব্যস্ত হতে হবে এক পিতাকে। তাঁকে মেনে নিতে হবে যে, এ দেশে এভাবেই উলুখাগড়াদের প্রাণ যায় এবং ভবিষ্যতেও যাবে। হয়তো মাঝে মাঝে কোনো এক রাতের নিঃশব্দে তাঁর বুকটা হু হু করে উঠবে। তিনি কাঁদবেন এবং ভাববেন নিজের ছেলেটার অকালে মরে যাওয়ার কথা। তিনি উপযুক্ত কারণ খোঁজার চেষ্টা করবেন এবং পাবেন না। অসহায় বোধে অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি কি অভিশাপ দেবেন? দিলে সেই অভিশাপ মাথায় নিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারবেন তো মঙ্গলবারের ‘মাস্তানতন্ত্রের’ ধারক-বাহক সুপ্রিয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী ভাইয়েরা?
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
নিউমার্কেটে সংঘর্ষ সম্পর্কিত পড়ুন:
দুই পক্ষে তুমুল ‘লড়াই’ হলো। একে অন্যকে দেখে নেওয়ার লড়াই। সেই লড়াইয়ে প্রাথমিকভাবে আহত হলো অর্ধশতাধিক আর প্রাণ গেল নাহিদ হাসানের। জানা গেছে, একটি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারিম্যানের কাজ করতেন নাহিদ। একজন ডেলিভারিম্যানকে মৃত্যু ডেলিভারি দিয়ে আসলে কী পেল বিবাদে জড়ানো দুই পক্ষ?
গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, তুচ্ছ ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। সেই তুচ্ছ ঘটনাটা আবার ইফতারের টেবিল সাজানো নিয়ে এবং তা প্রথমে সীমাবদ্ধ ছিল নিউমার্কেটের দুই ব্যবসায়ীর মধ্যেই। এরপর তা দুটি পক্ষের মধ্যে বিস্তৃত সংঘাতে পরিণত হয়। সেই সংঘাত এতটাই প্রচণ্ড হয়ে ওঠে যে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায় এবং রাজধানীর আপামর নাগরিক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়তে বাধ্য হয়। তাদের সংঘাত থেকে রক্ষা পায়নি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও। এখন পর্যন্ত ঘটনার যেসব ছবি ও ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে, তাতে দুই পক্ষকেই নানা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় দেখা গেছে। কারও হাতে হকিস্টিক, কারও হাতে গাছের ডাল, কারও হাতে লাঠি বা আগুন লাগানোর সরঞ্জাম ছিল। অর্থাৎ, যতভাবে একজনকে মেরে শুইয়ে দেওয়া যায়, তার সমস্ত উপকরণই দুই পক্ষের কাছে ছিল। আবার ককটেল বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া গেছে।
সংঘাত এমনই এক বিষয়, যেখানে সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর বাইরেও অনেক ‘কোলাটেরাল ড্যামেজ’ হয়। যে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়জন সক্রিয়ভাবে ‘দেইখ্যা লমু’ শীর্ষক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে হতাহতদের একটি বড় অংশই যে বিবদমান পক্ষগুলোর বাইরে, সেটি অনুমান করা যায়। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন সাংবাদিক। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তাঁদের পেটানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে সাধারণ নাগরিকেরা যে ছিলেন তার অন্যতম উদাহরণ নাহিদ হাসান। এখনো পর্যন্ত জানা তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় যে, তিনি কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই পথে নেমেছিলেন। নাহিদের বাবা সে কথাই বলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাহিদের বাবাকে ছুটতে হলো হাসপাতালে, হাত পেতে নিতে হলো ছেলের লাশ।
প্রশ্ন জাগে, নাহিদের প্রাণটাই কি তবে এই সংঘাতের ট্রফি? নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কি উত্তর প্রজন্মের কাছে এমনটাই বলবেন—‘আমাদের সময় কাউরে ছাড়ি নাই। ইট ছুইড়া, পিটাইয়া মানুষ মারসি। আমাদের এলাকা পার হইতে গেলেও মানুষ মরসে। আর তোমরা কী করো?’
আচ্ছা, উত্তর প্রজন্মকে কি নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অহং রক্ষায় মানুষ মারার ও আগুন জ্বালানোর শিক্ষাই দেবেন?
আপাতভাবে মনেই হচ্ছে যে এ দুই পক্ষ আসলে অহং রক্ষার ‘লড়াই’য়েই শামিল হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের যেমন অহংয়ে আঘাত লেগেছিল, ঠিক তেমনটাই হয়েছিল ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও। আর সেই ‘মহান’ সংগ্রামে তারা বলি দিয়েছেন নাহিদের প্রাণ। তার রক্তে রাঙা হাত দেখতে কেমন লাগছে সম্মানিত ‘সচেতন’ নাগরিকদের?
সোম ও মঙ্গলবারের ঘটনাকে কেন অহং রক্ষার লড়াই বলা হলো, তার ব্যাখ্যায় যাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। ছাত্রজীবনে নিউমার্কেটে কেনাকাটার সুযোগও হয়েছিল। ওই এলাকায় ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট-নীলক্ষেত এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দ্বৈরথ দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে যেমন ব্যবসায়ীদের খারাপ ব্যবহার ও কটূক্তি আছে, তেমনি আছে শিক্ষার্থীদের ‘স্টুডেন্ট পাওয়ার’ দেখানোর আকাঙ্ক্ষা। এর বাইরে অর্থ লেনদেনের (পড়ুন চাঁদাবাজি) বিষয়টি তো আছেই। দুই পক্ষের কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। দুই পক্ষের মধ্যেই নিজেদের ‘ক্ষমতা’ দেখানোর উদগ্র বাসনা ছিল এবং আছে। হয়তো আগামী দিনেও থাকবে। বিষয়টি এমন কখনোই নয় যে, শুধু ব্যবসায়ীরা মার খেয়ে যাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে। আবার শিক্ষার্থীরা আজীবন কটূক্তি শুনতে শুনতে হুট করে একদিন প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছেন, সেটিও সত্য বলে মেনে নেওয়া কঠিন। অন্তত নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তা কখনোই মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষেই আছে একে অপরকে ‘শিক্ষা দেওয়ার’ মনোভাব। আর তাতে মূল প্রভাবক অহং। ব্যবসায়ীরা যেমন ওই এলাকাকে নিজেদের ভেবে প্রভাব খাটাতে চান, তেমনি শিক্ষার্থীরাও মনে করেন ওই এলাকার ‘অভিভাবক’ তাঁরাই।
এবং এ কারণেই আইনকানুন, পুলিশ—সব অগ্রাহ্য করে রাস্তা দখল করে মারামারিতে মত্ত হতে দুই পক্ষরই বাধে না। তারা মনে করে, ‘সাধারণ নাগরিক’ এখানে কোনো বিষয়ই না। ওটি শুধু ‘জিম্মি’ করার বস্তু। আর জিম্মি যাকে করা হয়, তার প্রাণের কি কোনো মূল্য থাকে?
মূল্য থাকে না বলেই নাহিদেরা কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে রাস্তায় মরে যান। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন—‘গন্ডগোল’ থাকলে বের হওয়ার দরকার কী? কিন্তু যে দেশে দ্রব্যমূল্য পাগলা ঘোড়ার গতিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বাজারে না পেয়ে কিনতে হয় টিসিবির লাইনে রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে। যে দেশে যেকোনো সরকারি কাজ করাতে ‘ঘুষ’ দিতে হয় মুক্তহস্তে, সে দেশের খেটে খাওয়া মানুষদের কি আদৌ তেমন প্রশ্নের মুখে ফেলা যায়? যাদের দিনের রোজগারেই ওই দিনটায় পেট ভরে, তাদের রাস্তায় নামতেই হয়। কারণ তাদের পেটে-ভাতে থাকার ন্যূনতম সুরক্ষা না দেন ব্যবসায়ীরা, না শিক্ষার্থীরা, না দেয় সরকারকাঠামো।
ওদিকে এবারের অহং রক্ষার লড়াইয়ে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত, তারাও শুরুতে ছিল নিষ্ক্রিয়। পুলিশকে মঙ্গলবারের সংঘাতে শুরুতে মাঠে পাওয়া যায়নি। বড় কর্তারা বলছেন, ‘সাবধানতা অবলম্বন’ করতে গিয়েই নাকি এই অবস্থা! অর্থাৎ, তারা ‘খেলার মাঠ’-এ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চায়নি। দুই পক্ষকেই ‘মারামারি’ করতে দিয়েছে এবং শেষে ‘রোগী মরিয়া যাইবার পর’ ডাক্তার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তো এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে আর বাংলা সিনেমার কী দোষ? তারা তো মারামারির পরই পুলিশকে স্ক্রিনে আনবে!
অন্যদিকে যারা রণক্ষেত্রে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকার লোকসান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পক্ষাবলম্বনের মাধ্যমে মেটাতে চাইছেন, আপনারা জেনে রাখুন, চেতনে বা অবচেতনে আপনারা একটি ‘দেইখ্যা লমু’ সংস্কৃতিরই অংশ। সুযোগ পেলে আপনারও ক্ষমতা দেখানোর জন্য কারও মাথায় হকিস্টিকের বাড়ি দিতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না। রক্তে রাঙা হাত আপনাদের কাছে শৌর্য-বীর্যেরই প্রতীক!
এমন এক ‘সার্কাস’ চলাকালীন দেশেই নাহিদের শেষকৃত্যের জন্য ব্যস্ত হতে হবে এক পিতাকে। তাঁকে মেনে নিতে হবে যে, এ দেশে এভাবেই উলুখাগড়াদের প্রাণ যায় এবং ভবিষ্যতেও যাবে। হয়তো মাঝে মাঝে কোনো এক রাতের নিঃশব্দে তাঁর বুকটা হু হু করে উঠবে। তিনি কাঁদবেন এবং ভাববেন নিজের ছেলেটার অকালে মরে যাওয়ার কথা। তিনি উপযুক্ত কারণ খোঁজার চেষ্টা করবেন এবং পাবেন না। অসহায় বোধে অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি কি অভিশাপ দেবেন? দিলে সেই অভিশাপ মাথায় নিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারবেন তো মঙ্গলবারের ‘মাস্তানতন্ত্রের’ ধারক-বাহক সুপ্রিয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী ভাইয়েরা?
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
নিউমার্কেটে সংঘর্ষ সম্পর্কিত পড়ুন:
‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র অন্যতম নেতা সাইফুল হক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা ছিলেন। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। এখন পর্যন্ত ২০টি বই লিখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে...
১৬ ঘণ্টা আগেসদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে নানা মাত্রিক আলোচনার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ‘গণহত্যার বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।’
১৬ ঘণ্টা আগেতিন মাস পার হলো, আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলের অধীনে আছি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের অবসান ঘটেছে। অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছিল—সামাজিক সব বৈষম্যের অবসান ঘটবে, আমাদের সামগ্রিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে, প্রকৃত স্বাধীনতা..
১৬ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার নাছিয়াঘোনা এলাকায় যাওয়া-আসা করতে গেলে বোঝা যায় সেটি দুর্গম এলাকা। এ কারণেই সেখানে বসানো হয়েছিল ফাঁড়ি। কিন্তু ৫ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পুলিশের থানা ও ফাঁড়িগুলোয় যখন আক্রমণ করা হচ্ছিল, তখন নুরু আলম নুরু নামের এক সন্ত্রাসীও সে সুযোগ নেন। তিনি পুলিশের ফাঁড়ি দখল করে...
১৬ ঘণ্টা আগে