মুহাম্মদ হাবিল উদ্দীন
কেনাকাটা ছাড়া কেউ কি আছে? পণ্য হোক বা সেবা, ধনী গরিব সবাই এটা-সেটা কিনি; কিছু ক্ষেত্রে কেউ ক্রেতা, অন্যকিছুতে তিনিই আবার বিক্রেতা। এসব কেনাবেচার বাজারে একটা কমন কথা প্রায় ক্ষেত্রেই ক্রেতারা বলেন—এত দাম! দাম শুধু বাড়ছেই! খাব কী? তবে, দাম বৃদ্ধি নিয়ে একটা কথা আবার জনসংখ্যার খুব কম জন বলে থাকেন। এই কম জনেরা বলেন—গ্যাস, তেল, বিদ্যুৎ মূল্য আর ব্যাংক ঋণের সুদহার এত বেশি, জিনিসপত্রের দাম কমবে ক্যামনে? যদি খেয়াল করেন, দেখবেন এই কম জনেরা হচ্ছেন—উৎপাদক বা আমদানিকারক অথবা সরবরাহকারী।
তাঁদের এই ধরনের তথ্যের বাস্তবিক ভিত্তি ও বস্তুগত সম্পর্ক কতটুকু? পণ্য প্রস্তুত হয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে কোনটির কতটুকু প্রভাব বা অংশ?
পণ্যের উৎপাদন থেকে বাজারে পৌঁছা পর্যন্ত খরচগুলো হলো—কাঁচামালের দাম, বেতন-ভাতা, গ্যাস-তেল-পানি-বিদ্যুতের মূল্য, বিজ্ঞাপন ব্যয়, চাঁদা, বকশিশ, কমিশন, পরিবহন ব্যয় ও ভ্যাট। এর সঙ্গে করপোরেট ট্যাক্স আর মালিকের মুনাফা ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রয় মূল্য নির্ধারিত হওয়ার কথা আর্থিক তত্ত্ব বা হিসাববিজ্ঞানের হিসাবে। কৃষি হোক বা শিল্পপণ্য হোক, উৎপাদন খরচের প্রথম ও প্রধান প্রভাব এর প্রস্তুতের উপকরণ ও পরিমাণে এবং শ্রমের ডিগ্রিতে ও সময়ের ব্যাপ্তিতে।
উৎপাদনের উপকরণগুলোর একেকটার অংশ, পরিমাণ এবং মূল্যের ওপর উৎপাদন ব্যয়ের সম্পর্কের অংশ বেশি। উপকরণ বলতে কাঁচামাল, প্যাকেজিং, ইউটিলিটি এসব; শ্রম বলতে উৎপাদন সময় ও শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সংখ্যা।
কারিগরি অঙ্কে পণ্য ভেদে উৎপাদন ব্যয়ে কাঁচামাল ও বেতন-ভাতার খরচই অধিকাংশ বা অর্ধেকেরও বেশি হওয়ার কথা। তবে, অহেতুক বিতর্ক এড়াতে অঙ্কের শতকরা হারের আনুমানিক পরিমাণ বা রাফ রেঞ্জ উল্লেখ করা ঊহ্য থাকল। এ প্রেক্ষাপটে ভাবা যেতে পারে—পণ্যের উৎপাদন মূল্যের মাট্রিক্স যদি এ রকম হয়, তবে পণ্যের মূল্য বা ব্যবসার খরচ বৃদ্ধির দায় ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণের সুদের হারকে দেওয়ার খবর দেখা বা শোনা যায় কেন? অবশ্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যকেও তাঁরা দায়ী করেন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আরেক নিয়ামক রূপে। প্রশ্ন বা আলোচনা যেহেতু ব্যাংক ঋণের সুদের হারের ভূমিকা ও প্রভাব নিয়ে, তাই ইউটিলিটি প্রসঙ্গ এ ক্ষেত্রে স্থির রেখে সুদহার নিয়েই বরং কথা বাড়াচ্ছি।
আসলেই কি ব্যাংক ঋণের সুদের হার পণ্য মূল্যের সরাসরি অংশ বা নিয়ামক? উত্তরের বড় অংশ—না; ছোট্ট অংশ—হ্যাঁ। আসুন দেখি, ব্যাংক ঋণ কেন লাগে? কোথায় লাগে বা ব্যবসায়ীরা কেন নেন?
জানাশোনা কমন উত্তর—কারখানা বানাতে, পণ্য প্রস্তুতিতে আর বিক্রির জন্য বাজারে পৌঁছাতে যত টাকা লাগে তত টাকার মূলধন নিজেদের থাকে না বলে অবশিষ্ট অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ করে নিতে হয়। অর্থাৎ, ব্যবসার ব্যয় নির্বাহের জন্যই ঋণ করে ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া হয় এবং ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার আগ্রহ প্রায় সব উদ্যোক্তারই। বাস্তবে এ-ও শোনা যায়, তথ্য পাওয়া যায়, এসব ঋণের পরিমাণ বা অংশ অর্থনৈতিক অঙ্কে যা হওয়ার কথা, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা শতকরায় শত বা তারও বেশি। অবশ্য বিপরীতও শোনা যায়, কিছু কিছু কোম্পানির ব্যাংক ঋণ নেই বা অতি অল্প। কারণ ওই সব কোম্পানির বাজারে বেশ সুনাম বলে বাজারে তাদের পণ্যের চাহিদা ভালো। ফলে পাইকারি পরিবেশকদের থেকে নগদ বা অগ্রিম অর্থ নিয়ে তারা পণ্য সরবরাহ করে।
ঋণ কম কোম্পানির আর ঋণ বেশি কোম্পানির সমগোত্রীয় পণ্যের মূল্য বাজারে প্রায় একই বা কাছাকাছি। কাঁচামাল এবং উৎপাদন ও বিপণন কৌশলও কিছুটা কাছাকাছি। তবে ব্যবস্থাপনা কৌশল ও দক্ষতা কিছুটা ভিন্ন। তাই কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে পণ্য উৎপাদনের পর বাজারে পৌঁছাতে যা যা বস্তু ও ব্যবস্থার সংযোজন হয় সেসবের কম্পোনেন্টের মূল্যের অনুপাতেই বাজারে সব সদাইয়ের দাম বাড়ার বা কমার কথা।
বরং ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের প্রভাব অন্যত্র। কারণ ওই সব বস্তু ও ব্যবস্থার বিপরীতে তো ঋণের টাকা ব্যয় হয়েছে। যার ঋণ বেশি, তার সুদ বাবদ ব্যয় বেশি; যার ঋণ কম তার সুদ ব্যয় কম, মুনাফা বেশি। আবার উৎপাদন ও বিপণনের বস্তু ও ব্যবস্থা সংগ্রহ ও প্রয়োগে যে যত কারিগরি ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ, তার তত খরচ কম, মুনাফা বেশি। সুতরাং, সুদ হারের প্রত্যক্ষ প্রভাব পণ্যের মূল্যে পড়ে বলাটা সংগত না। তবে, এই ‘না’- এর ভাগ শতকরা একশতে এক শ বলাও ঠিক না; অল্প অংশ—‘হ্যাঁ’ হবে।
সেই ‘হ্যাঁ’-টা হচ্ছে মুনাফার অংশে; ব্যবস্থাপনার মানের মাত্রায়, যেহেতু এটি বাদ দিয়ে পণ্য মূল্য নির্ধারণ হয় না। উৎপাদন থেকে বাজারে পৌঁছাতে যা যা বস্তু ও ব্যবস্থা, সেসবের মূল্য বা খরচের সঙ্গে মুনাফার হার, সুদের খরচ যোগ করে পণ্যের বাজারমূল্য ঠিক করা হয়। বোঝাই যায়, ব্যাংক ঋণের পরিমাণ আর সুদ হারের হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে মুনাফার বিপরীত গতি হবে। সুদের হার বেশি হলে মুনাফা কম; কম হলে মুনাফা বেশি।
ব্যবসায়ীরা কি মুনাফা কম চান? তাঁরা ব্যবসার সম্প্রসারণ চান, ভোগের নতুনত্ব চান, চাহিদার পরিধি বাড়ান। হয় তখন তাঁরা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেন, না হলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিলম্ব ঘটান, বা ঋণের সুদ হার কমানোর দাবি/তদবিরে তৎপর হন, যেন মুনাফা না কমে।
আবার মানুষ যখন ভোগ বা কেনাকাটা বৃদ্ধি করে, বাজারে তখন জোগান ঘাটতি হলেও ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। অন্যদিকে, ক্রেতারা যখন কেনাকাটা বা ভোগ কমাবে, তখন বিক্রি বাড়ানোর জন্য উৎপাদনকারী পণ্যের মূল্য হ্রাস করে কেনাকাটা বাড়াতে ক্রেতাকে প্রলুব্ধ করে থাকেন—বিক্রি বাড়িয়ে মুনাফা ও অর্থ-প্রবাহ সচল রাখার জন্য।
ওপরের উভয় ক্ষেত্রেই কমন প্রতিফলন হচ্ছে—ব্যবসায়ী বা ক্রেতা যারাই হোন, যার যার পর্যায়ে ভোগ-চাহিদা কমালে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা বা সুযোগ রহিত হয়। আর পণ্যের ক্রয় ও ভোগে কম ব্যয় হলে, অব্যয়িত অর্থ সঞ্চয় হয়। সেই সঞ্চয় ব্যাংকে ডিপোজিট হতে থাকে; আর ডিপোজিট বেশি থাকলে ব্যাংকও অলস অর্থ (লিকুইড মানি) ঋণ বাজারে ব্যবহারের নিমিত্তে ঋণের সুদ হার হ্রাস করে থাকে।
এসব তত্ত্বকথা। তত্ত্বের নিরিখে আমাদের দেশের বাস্তবতা দেখা হলে কী পাওয়া যেতে পারে? আমাদের দেশে কি সুদের হার হ্রাস করা হলে, বাজারে সেভাবে পণ্যের মূল্য কমে যায়?। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তরটি ‘না’ হওয়ার কথা। কেন তা ‘না’, এ নিয়ে তথ্য তালাশ যেমন কম হয়, তেমনই ব্যবসার অদৃশ্য অ-কারিগরি ব্যয় কেন বেশি হয়, তা জানা থাকলেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও কম হয়। ফলে, ফলটা ক্রেতা, তথা গণমানুষের গায়েই পড়ে—বাড়তি ব্যয়ের। ব্যয় বেশি তো ব্যাংকে ডিপোজিট (আমানত) কম। তাই ঋণের সুদহার কমবে কোন হিসাবের বিজ্ঞানে?
আবার ব্যাংকের সুদহার কম তো ব্যাংকের মুনাফা কম। ডিপোজিটের সুদহারও কম। ব্যাংক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। মুনাফা কম তো শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) কম। লাখো হাজার ডিপোজিটর, শেয়ারহোল্ডারেরা কিন্তু সাধারণ গণমানুষ। লাভ বা ক্ষতি কার?
লেখক: প্রকৌশলী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার
কেনাকাটা ছাড়া কেউ কি আছে? পণ্য হোক বা সেবা, ধনী গরিব সবাই এটা-সেটা কিনি; কিছু ক্ষেত্রে কেউ ক্রেতা, অন্যকিছুতে তিনিই আবার বিক্রেতা। এসব কেনাবেচার বাজারে একটা কমন কথা প্রায় ক্ষেত্রেই ক্রেতারা বলেন—এত দাম! দাম শুধু বাড়ছেই! খাব কী? তবে, দাম বৃদ্ধি নিয়ে একটা কথা আবার জনসংখ্যার খুব কম জন বলে থাকেন। এই কম জনেরা বলেন—গ্যাস, তেল, বিদ্যুৎ মূল্য আর ব্যাংক ঋণের সুদহার এত বেশি, জিনিসপত্রের দাম কমবে ক্যামনে? যদি খেয়াল করেন, দেখবেন এই কম জনেরা হচ্ছেন—উৎপাদক বা আমদানিকারক অথবা সরবরাহকারী।
তাঁদের এই ধরনের তথ্যের বাস্তবিক ভিত্তি ও বস্তুগত সম্পর্ক কতটুকু? পণ্য প্রস্তুত হয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে কোনটির কতটুকু প্রভাব বা অংশ?
পণ্যের উৎপাদন থেকে বাজারে পৌঁছা পর্যন্ত খরচগুলো হলো—কাঁচামালের দাম, বেতন-ভাতা, গ্যাস-তেল-পানি-বিদ্যুতের মূল্য, বিজ্ঞাপন ব্যয়, চাঁদা, বকশিশ, কমিশন, পরিবহন ব্যয় ও ভ্যাট। এর সঙ্গে করপোরেট ট্যাক্স আর মালিকের মুনাফা ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রয় মূল্য নির্ধারিত হওয়ার কথা আর্থিক তত্ত্ব বা হিসাববিজ্ঞানের হিসাবে। কৃষি হোক বা শিল্পপণ্য হোক, উৎপাদন খরচের প্রথম ও প্রধান প্রভাব এর প্রস্তুতের উপকরণ ও পরিমাণে এবং শ্রমের ডিগ্রিতে ও সময়ের ব্যাপ্তিতে।
উৎপাদনের উপকরণগুলোর একেকটার অংশ, পরিমাণ এবং মূল্যের ওপর উৎপাদন ব্যয়ের সম্পর্কের অংশ বেশি। উপকরণ বলতে কাঁচামাল, প্যাকেজিং, ইউটিলিটি এসব; শ্রম বলতে উৎপাদন সময় ও শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সংখ্যা।
কারিগরি অঙ্কে পণ্য ভেদে উৎপাদন ব্যয়ে কাঁচামাল ও বেতন-ভাতার খরচই অধিকাংশ বা অর্ধেকেরও বেশি হওয়ার কথা। তবে, অহেতুক বিতর্ক এড়াতে অঙ্কের শতকরা হারের আনুমানিক পরিমাণ বা রাফ রেঞ্জ উল্লেখ করা ঊহ্য থাকল। এ প্রেক্ষাপটে ভাবা যেতে পারে—পণ্যের উৎপাদন মূল্যের মাট্রিক্স যদি এ রকম হয়, তবে পণ্যের মূল্য বা ব্যবসার খরচ বৃদ্ধির দায় ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণের সুদের হারকে দেওয়ার খবর দেখা বা শোনা যায় কেন? অবশ্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যকেও তাঁরা দায়ী করেন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আরেক নিয়ামক রূপে। প্রশ্ন বা আলোচনা যেহেতু ব্যাংক ঋণের সুদের হারের ভূমিকা ও প্রভাব নিয়ে, তাই ইউটিলিটি প্রসঙ্গ এ ক্ষেত্রে স্থির রেখে সুদহার নিয়েই বরং কথা বাড়াচ্ছি।
আসলেই কি ব্যাংক ঋণের সুদের হার পণ্য মূল্যের সরাসরি অংশ বা নিয়ামক? উত্তরের বড় অংশ—না; ছোট্ট অংশ—হ্যাঁ। আসুন দেখি, ব্যাংক ঋণ কেন লাগে? কোথায় লাগে বা ব্যবসায়ীরা কেন নেন?
জানাশোনা কমন উত্তর—কারখানা বানাতে, পণ্য প্রস্তুতিতে আর বিক্রির জন্য বাজারে পৌঁছাতে যত টাকা লাগে তত টাকার মূলধন নিজেদের থাকে না বলে অবশিষ্ট অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ করে নিতে হয়। অর্থাৎ, ব্যবসার ব্যয় নির্বাহের জন্যই ঋণ করে ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া হয় এবং ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার আগ্রহ প্রায় সব উদ্যোক্তারই। বাস্তবে এ-ও শোনা যায়, তথ্য পাওয়া যায়, এসব ঋণের পরিমাণ বা অংশ অর্থনৈতিক অঙ্কে যা হওয়ার কথা, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা শতকরায় শত বা তারও বেশি। অবশ্য বিপরীতও শোনা যায়, কিছু কিছু কোম্পানির ব্যাংক ঋণ নেই বা অতি অল্প। কারণ ওই সব কোম্পানির বাজারে বেশ সুনাম বলে বাজারে তাদের পণ্যের চাহিদা ভালো। ফলে পাইকারি পরিবেশকদের থেকে নগদ বা অগ্রিম অর্থ নিয়ে তারা পণ্য সরবরাহ করে।
ঋণ কম কোম্পানির আর ঋণ বেশি কোম্পানির সমগোত্রীয় পণ্যের মূল্য বাজারে প্রায় একই বা কাছাকাছি। কাঁচামাল এবং উৎপাদন ও বিপণন কৌশলও কিছুটা কাছাকাছি। তবে ব্যবস্থাপনা কৌশল ও দক্ষতা কিছুটা ভিন্ন। তাই কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে পণ্য উৎপাদনের পর বাজারে পৌঁছাতে যা যা বস্তু ও ব্যবস্থার সংযোজন হয় সেসবের কম্পোনেন্টের মূল্যের অনুপাতেই বাজারে সব সদাইয়ের দাম বাড়ার বা কমার কথা।
বরং ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের প্রভাব অন্যত্র। কারণ ওই সব বস্তু ও ব্যবস্থার বিপরীতে তো ঋণের টাকা ব্যয় হয়েছে। যার ঋণ বেশি, তার সুদ বাবদ ব্যয় বেশি; যার ঋণ কম তার সুদ ব্যয় কম, মুনাফা বেশি। আবার উৎপাদন ও বিপণনের বস্তু ও ব্যবস্থা সংগ্রহ ও প্রয়োগে যে যত কারিগরি ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ, তার তত খরচ কম, মুনাফা বেশি। সুতরাং, সুদ হারের প্রত্যক্ষ প্রভাব পণ্যের মূল্যে পড়ে বলাটা সংগত না। তবে, এই ‘না’- এর ভাগ শতকরা একশতে এক শ বলাও ঠিক না; অল্প অংশ—‘হ্যাঁ’ হবে।
সেই ‘হ্যাঁ’-টা হচ্ছে মুনাফার অংশে; ব্যবস্থাপনার মানের মাত্রায়, যেহেতু এটি বাদ দিয়ে পণ্য মূল্য নির্ধারণ হয় না। উৎপাদন থেকে বাজারে পৌঁছাতে যা যা বস্তু ও ব্যবস্থা, সেসবের মূল্য বা খরচের সঙ্গে মুনাফার হার, সুদের খরচ যোগ করে পণ্যের বাজারমূল্য ঠিক করা হয়। বোঝাই যায়, ব্যাংক ঋণের পরিমাণ আর সুদ হারের হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে মুনাফার বিপরীত গতি হবে। সুদের হার বেশি হলে মুনাফা কম; কম হলে মুনাফা বেশি।
ব্যবসায়ীরা কি মুনাফা কম চান? তাঁরা ব্যবসার সম্প্রসারণ চান, ভোগের নতুনত্ব চান, চাহিদার পরিধি বাড়ান। হয় তখন তাঁরা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেন, না হলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিলম্ব ঘটান, বা ঋণের সুদ হার কমানোর দাবি/তদবিরে তৎপর হন, যেন মুনাফা না কমে।
আবার মানুষ যখন ভোগ বা কেনাকাটা বৃদ্ধি করে, বাজারে তখন জোগান ঘাটতি হলেও ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। অন্যদিকে, ক্রেতারা যখন কেনাকাটা বা ভোগ কমাবে, তখন বিক্রি বাড়ানোর জন্য উৎপাদনকারী পণ্যের মূল্য হ্রাস করে কেনাকাটা বাড়াতে ক্রেতাকে প্রলুব্ধ করে থাকেন—বিক্রি বাড়িয়ে মুনাফা ও অর্থ-প্রবাহ সচল রাখার জন্য।
ওপরের উভয় ক্ষেত্রেই কমন প্রতিফলন হচ্ছে—ব্যবসায়ী বা ক্রেতা যারাই হোন, যার যার পর্যায়ে ভোগ-চাহিদা কমালে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা বা সুযোগ রহিত হয়। আর পণ্যের ক্রয় ও ভোগে কম ব্যয় হলে, অব্যয়িত অর্থ সঞ্চয় হয়। সেই সঞ্চয় ব্যাংকে ডিপোজিট হতে থাকে; আর ডিপোজিট বেশি থাকলে ব্যাংকও অলস অর্থ (লিকুইড মানি) ঋণ বাজারে ব্যবহারের নিমিত্তে ঋণের সুদ হার হ্রাস করে থাকে।
এসব তত্ত্বকথা। তত্ত্বের নিরিখে আমাদের দেশের বাস্তবতা দেখা হলে কী পাওয়া যেতে পারে? আমাদের দেশে কি সুদের হার হ্রাস করা হলে, বাজারে সেভাবে পণ্যের মূল্য কমে যায়?। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তরটি ‘না’ হওয়ার কথা। কেন তা ‘না’, এ নিয়ে তথ্য তালাশ যেমন কম হয়, তেমনই ব্যবসার অদৃশ্য অ-কারিগরি ব্যয় কেন বেশি হয়, তা জানা থাকলেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও কম হয়। ফলে, ফলটা ক্রেতা, তথা গণমানুষের গায়েই পড়ে—বাড়তি ব্যয়ের। ব্যয় বেশি তো ব্যাংকে ডিপোজিট (আমানত) কম। তাই ঋণের সুদহার কমবে কোন হিসাবের বিজ্ঞানে?
আবার ব্যাংকের সুদহার কম তো ব্যাংকের মুনাফা কম। ডিপোজিটের সুদহারও কম। ব্যাংক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। মুনাফা কম তো শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) কম। লাখো হাজার ডিপোজিটর, শেয়ারহোল্ডারেরা কিন্তু সাধারণ গণমানুষ। লাভ বা ক্ষতি কার?
লেখক: প্রকৌশলী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার
সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে অটোরিকশা বন্ধের প্রস্তাবে চালকদের রাস্তায় নেমে আসা এবং শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবরোধে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
৪ ঘণ্টা আগেআগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কী পারবে না, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কী হবে না—এ নিয়ে গরম এখন রাজনীতির মাঠ। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবে দাবিদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি তো আরও একধাপ বেশি। আওয়ামী লীগকে কেবল নির্বাচনের বাইরে রাখাই নয়, দাবি তাদের দেশের প্রাচী
১১ ঘণ্টা আগেহুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওনের ছেলে নিষাদ হুমায়ূনের একটা ভাইরাল ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। বেশ মজা পেলাম। সত্যি বললে মজার চেয়েও ছোট্ট বাচ্চার কথায় ভাবনার উদ্রেক হলো। চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত হলো।
১১ ঘণ্টা আগেপরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সার্কুলার অর্থনীতি বা বৃত্তাকার অর্থনীতি এক নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশে স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কুলার অর্থনীতির বিকল্প নেই।
১১ ঘণ্টা আগে