নজরুল জাহিদ
লালনের গান কেন ভালো লাগে, বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অধিবাসী হিসেবে এই ভালো লাগায় আমার কোনো ব্যক্তিগত পক্ষপাত আছে কি-না, লালনের গানে ব্যবহৃত আঞ্চলিক শব্দ, অর্থ ও উচ্চারণ জানা থাকায় আমার বাড়তি সুবিধার কারণে এই ভালো লাগা কি-না, কিংবা অতি শৈশব থেকে সাধুগুরুদের আখড়ায় বসে গান শোনার, তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আড্ডার কারণে আমার মনে কোনো অযৌক্তিক আগ্রহ তৈরি হয়েছে কি-না ইত্যাদি নিয়ে অনেক ভেবেছি। সেসব ভাবনার ফলাফল নিয়েই আজকের এই লেখা।
লেখাপড়া, চাকরি, আর পারিবারিক কারণে বারবার বিদেশে গেছি। কখনো অল্প সময়, কখনো-বা দু-তিন বছর একটানা বসবাস করেছি; বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে মিশেছি। অজান্তেই তুলনা করেছি নিজেদের সঙ্গে। কী আছে আমাদের, যা ওঁদের নেই? কী আমাকে আলাদা উচ্চতা দিয়েছে? কী আমাকে বিশেষ করে রাখবে আগামীতে? অনেক কিছুর মধ্যে যে বিষয়টা প্রধান বলে মনে হয়েছে, তা হলো বাংলার লোকজ সম্পদ।
এই লোকজ সম্পদই বাঙালির শক্তির আধার। সম্প্রীতির এবং আত্মোন্নতির অমীয় বাণীসমৃদ্ধ ভাববাদি ভক্তিগীতি বা দেহতত্ত্বের গানগুলো হলো এই লোকজ সম্পদের মধ্যে অন্যতম। এই সম্পদই বাঙালিকে পৃথিবীর অন্য সব জাতি থেকে বিশেষ করে রেখেছে। আর লালন শাহ ফকির হলেন বাংলার সেই শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যের প্রধানতম অংশভাক।
আলাদা করে বাউল বা লালন অনুসারীদের চিনতে হয়নি। এঁদের সম্পর্কে আলাদা করে পড়তেও হয়নি। গ্রামে, পাড়ায় বা এমনকি পরিবারে এঁরা আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। এঁদেরকে চিনতাম ‘নাড়ার ফকির’ হিসেবে। ‘নাড়া’ বলতে গ্রামে গাছের ডালপালা কেটে ছেঁটে তাঁকে ছোট করাও বোঝাত। মাথা টাক করাটাও ছিল ‘মাথা নাড়া’ করা। ধান কাটা শেষে মাঠে পড়ে থাকা ধানের অবশিষ্ট অংশকে ‘ধানের নাড়া’ বলত। জসিম উদ্দীনের ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতায় আছে—
‘তুমি যদি যাও সে–সব কুড়ায়ে
নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁয়ো–চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।’
নিঃসন্তান বিধবা নারীদের ‘নাড়া-খাড়া বিধবা’; অর্থাৎ, পিছুটানহীন বিধবা বলা হতো। রাগসংগীত শিক্ষার ক্ষেত্রে শিষ্যের ডান হাতে লাল রংয়ের সুতা; অর্থাৎ, ‘নাড়া’ বেঁধে দিয়ে নিজ ঘরানায় গ্রহণের রেওয়াজটি আজও চালু আছে। গ্রামের বাচ্চাদের কোমরে তাবিজ বাঁধার চিকন সুতাকেও ‘নাড়া’ বলা হতো।
আমাকে একবার দিদার শাহ ফকির* ‘নাড়া’ শব্দের অর্থের সঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা এখলাসের প্রসঙ্গে বলেছিলেন। তাঁর মতে, এই সুরায় আল্লাহ নিজেকে অমুখাপেক্ষী, কারও সঙ্গে সম্পৃক্ত নন অর্থে পরিচয় দিয়েছেন, যার সঙ্গে ‘নাড়া’ অর্থের মিল আছে। লালনের গানেও বেশ কয়েক স্থানে এই নাড়া শব্দের উল্লেখ আছে, যা শুনলে লালন ও তাঁর অনুসারীরা নাড়া বলতে কী বোঝেন, তা বোঝা যায়। লালন নিজেকেও নাড়া হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এমনকি আত্মাকেও নাড়া হিসেবে পরিচিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। যেমন—
-‘একজন নাড়া জগৎ জোড়া, কাজটি তাহার জগৎ ছাড়া’
-‘নাড়ার সঙ্গে হয়ে নাড়ি, পরণে পরেছি ডুরি, দেবনা আঁচির কড়ি, বেড়াবো চৈতন্যের পথে’
-‘কুলের বউ ছিলাম বাড়ি/হলাম ন্যাড়ি ন্যাড়ার সাথে/কুলের আচার কুলের বিচার/আর কি ভুলি সেই ভোলাতে’
-‘দিসনে আর আঁচাই কড়ি, নাড়ার নাড়ি হও যেইরে; থাকবি ভালো, সর্বকাল যাবে দূরে’
-‘তিল পরিমাণ জায়গাতে কী কুদরতিময়! জগতজোড়া নাড়া সেথায় বারাম দেয়, বলবো কী সেই নাড়ার গুন বিচার অমাবস্যা পূর্ণিমা সদায় দীপ্তকার...’
সব মিলিয়ে যা দাঁড়ায়, তা হলো—লালনের মতে, ‘নাড়া’ শব্দটির অর্থ হলো শাখাহীন বা সন্তানহীন। রক্ষণশীল মুসলমানদের কাছে এঁরা গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। তবে সাধারণ অর্থে এঁদের সবাই নির্বিবাদী নিরীহ ভাবুক ধরনের মানুষ মনে করত। ফলে এক ধরনের সাধারণ প্রশ্রয়ের আশ্রয়েই তাঁদের থাকতে দেখেছি, যা ইদানীং কমে গেছে।
আমার চাচির ভাই ‘নাড়ার ফকির’ ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে চাচির আড়ালে অন্যরা যখন কথা বলত, তখন তাতে খুব একটা শ্রদ্ধা দেখেছি, তা নয়। বরং নাড়ার ফকির হয়ে বংশের মান নষ্ট করেছে—এমন অভিযোগ শোনা যেত। কিন্তু উনি যখন বোনের বাড়িতে আসতেন, সাদা আলখেল্লা পরা, কাঁধে একটা ঝোলা, হাতে একটা একতারা, সারাক্ষণ মুখে হাসি, আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতেন, যেন আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। এটা আমার ভালো লাগত। শিশুকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করার এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব আশ্চর্যের ছিল। তাঁর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
গানের গলা ভালো ছিল না। কিন্তু প্রায় সারাক্ষণই গান গাইতেন। পরে জেনেছি, এসব গানকে ভক্তিগান, ভাবগান, বাউলগান যে নামেই ডাকি না কেন, সাধুগুরুদের জীবনে এগুলো এক অনিবার্য উপাদান। খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা, অর্থ বা সম্মানের জন্য তাঁরা গান করেন না। তাঁরা গান করেন আরাধনা বা সাধনার মাধ্যম হিসেবে, জীবনাচরণের অংশ হিসেবে। গানই তাঁদের মন্ত্র, স্তোত্র বা ধর্মবাণী।
জীবন কেমনভাবে যাপন করা হবে, মনুষ্য জন্মের উদ্দেশ্য বা পরিণতি কী, ভালো বা মন্দ কী দিয়ে নির্ধারিত হবে—এমন দার্শনিক বিষয় ছাড়াও এমনকি আহার-নিদ্রা-মৈথুন-সংক্রান্ত প্রাত্যহিক জীবনের নানা প্রশ্নের জবাবও তাঁরা গানের মাধ্যমে অনুসন্ধান করেন। তাই দেখা যায়, নিছক আনন্দ বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে গান গাইতে বসেও ভক্তি আর উপলব্ধির আবেশে তাঁদের চোখ জলে ভরে ওঠে; ভক্তিরসের স্রোতধারায় আনন্দ আর বেদনার অপূর্ব মিলন ঘটে।
সেই আমার লালনের গান শোনা শুরু। আলমডাঙ্গার দিদার শাহ, রইচ উদ্দিনসহ অনেকের গান শুনতাম। আমাদের বাড়ির পাশেই মতলেব নামে এক সাধুর ছোট খুপড়ি ঘরে প্রায় সন্ধ্যায় গানের আসর বসত। আমিই ছিলাম সেই আসরের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। একসময় একুশে পদকপ্রাপ্ত খোদাবক্স সাঁইয়ের স্নেহ-সান্নিধ্য পেলাম। লালন গবেষক ড. ক্যারল সলোমনের সঙ্গে আমেরিকায় বন্ধুত্ব হলো। তাঁর আমেরিকার বাসায় মকছেদ আলী সাঁইয়ের রেকর্ডেড গান শুনলাম। এসব ‘সোনার ধানে’ আমার জীবনের গোলা ভরে গেল। লালনের গানকে প্রতিদিন যেন নতুনভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে বুঝলাম এই গানের সুর ও বাণীর ভেতর দিয়ে নিজস্ব জীবন দর্শন ও ভাববাদী ঔদার্যমণ্ডিত অসাম্প্রদায়িক উদার মানবতাবাদ প্রচারিত হয়েছে। গানের মধ্যে লালন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আত্মিক-দৈহিক সম্পর্ক বর্ণনা করেছেন, করেছেন মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলনের জয়গান।
ক্রমবর্ধমান ভেদ-বিভক্তি অসহিষ্ণুতার এই সময়ে মানুষে-মানুষে মিলনের জয়গান গাওয়ার অংশ হিসেবেই লালনের গান এখন বেশি করে শোনা ও শোনানো দরকার। তবে খেয়াল রাখা দরকার, যেন ‘বাজার’ এই গানের মরমী মাধুর্য নষ্ট না করে।
কারণ ইদানীং লক্ষ্য করছি, একদিকে এই গানের মাহাত্ম্য দেশি-বিদেশি গবেষকদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে, শাহরিক সমাজে এই গান জনপ্রিয় হচ্ছে।
অন্যদিকে, জনপ্রিয়তা বাড়াতে গানগুলো নিয়ে ফিউশন ম্যাশআপ জাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হচ্ছে। তাতে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে গানের সুরের, আর আদর্শের। ব্যাপারটা একটু বিস্তারিত বলা দরকার।
উচ্চপ্রযুক্তি ও উচ্চ তাল-লয়-মাত্রা প্রয়োগ করায় গানগুলো থেকে ভক্তিরস, আর মরমী ঔদার্য যেন হারিয়ে যাচ্ছে। লালনের গানের কথা, আর সুরের পরিবর্তন হচ্ছে। দীর্ঘকাল কপিরাইট থাকার কারণে রবীন্দ্রসংগীতের একটা মান বা স্ট্যান্ডার্ড দাঁড়িয়ে গেছে। আমাদের কান তৈরি হয়ে গেছে। তাই বেসুরো রবীন্দ্রসংগীত ‘বাজার’ পায় না।
কিন্তু লালনের গান ছাপার অক্ষরে সংকলিত এবং স্বরলিপিতে নিবন্ধিত না থাকায় গানের কথায় গরমিল দেখা যাচ্ছে। নিবেদনের ভাব, ভঙ্গি বা সুরেও পরিবর্তন হচ্ছে। এ ছাড়া লালনের গানে যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের বেশ কিছু আঞ্চলিক শব্দ আঞ্চলিক উচ্চারণে ব্যবহৃত হয়েছে, যা অন্য কারও দ্বারা উচ্চারণ করা কঠিন, ঠিকভাবে লেখাও সম্ভব না এবং ওই বিশেষ শব্দ বা শব্দমালার অর্থ জানা না থাকায় এসব শব্দ ঠিকভাবে গীত বা উচ্চারিত হচ্ছে না। তাই পুরো গানের রসভঙ্গ এবং অনর্থ ঘটছে। এই প্রেক্ষাপটে শুদ্ধ শ্রোতা ও সমর্থক তৈরি করা এবং সত্যিকারের সাধুগুরুদের পরিবারে গান যেভাবে চর্চিত এবং গীত হয়, তা শোনার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার বলে মনে হয়।
পাশাপাশি আরও দুটি কাজ শুরু করা দরকার। প্রথমটি হলো—সাধুগুরুদের সম্পর্কে অনেকে ভাবেন যে, তাঁদের সংসার নেই, তাঁরা অবৈজ্ঞানিক, অস্বাস্থ্যকর, নেশাসক্ত, আয়-উপার্জনহীন পরাশ্রয়ী এবং অসামাজিক ও অযাচারী। এমনকি তাঁদের পোশাক আশাক ও শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়েও ভুল ধারণা আছে। যেমন—তাঁরা কমলা বা গেরুয়া রঙের আলখেল্লা ধরনের কাপড় পরেন এবং তাঁদের লম্বা চুল বা মাথায় জট আছে।
আসলে এ রকম ধারণা ভুল। স্বামী-স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাঁদের জীবন আমাদের আর সবার মতোই। কেউ কৃষি করেন, কেউ চাকরি বা ব্যবসা। তাঁদের ঘর-সংসার, সমাজ, সামাজিকতা—সব আছে। সাধারণ গৃহী অ-বাউলদের তুলনায় তাঁরা বরং সমাজের জন্য উপকারী। কারণ, তাঁরা যুগে যুগে কেবল আক্রান্তই হয়েছেন, কখনো আক্রমণ করেননি। যে এলাকায় তাঁদের বসবাস, সেখানকার থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যাবে—কোনো সাধুগুরুর নামে মামলা বা অভিযোগ নেই। যে গ্রামে বা মহল্লায় তাঁদের বসবাস, সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যাবে—তাঁরা কোনো ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত নন। তাঁরা নির্লোভ, তাই নির্বিরোধী। এমনকি পশুর গায়েও তাঁরা হাত তোলেন না। বরং, একটি নির্মল জীবনধারার মধ্যে সংগীতের সুর আর পূর্ববর্তী গুরুদের রচিত গানের বাণীর নির্দেশনা মেনে তাঁদের জীবন অতিবাহিত করেন। তাঁদের জীবনের মূলমন্ত্র নির্মোহ, তথা ‘জিন্দা মরা’ হয়ে জীবনকে উপভোগ করা এবং তা অনেকের সেবায় নিযুক্ত করে শুধু মানুষ হিসেবে নয়, প্রাণী হিসেবেও প্রকৃতির সংসারে মিশে থাকা।
সাধক ও লালন সংগীতজ্ঞ খোদাবক্স সাঁইয়ের ভাষায়, ‘লালনের মূল কথা হলো মানবপ্রেম। মানুষ ভজতে হবে, গুরুর মাধ্যমে দেহ মোকামের খবর জানতে হবে, আমি কে, কোথা থেকে এলাম, কোথায় যাব—এসব বুঝতে হবে। মুর্শিদের স্বরূপ চিনে শুদ্ধ মানুষ হতে হবে।’
আরেকটি জরুরি কাজ হলো—অশান্ত-অসুখী দেশিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সাধুগুরুদের জীবনাদর্শের গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং তা প্রচার করে বিশ্বশান্তি অর্জনের পথ প্রতিষ্ঠা করা।
আমরা সবাই জন্মেই যুদ্ধ দেখেছি। আমাদের আগে যারা এই গ্রহে জন্মেছেন, তারাও যুদ্ধ দেখেছেন, যুদ্ধের শিকার হয়েছেন। আমাদের ছেলেমেয়েরা এবং তাঁদের সন্তানও কি হিংসা, লোভ, আর নির্যাতনের দুনিয়া থেকে রেহাই পাবে না? যুদ্ধই কি মানবজাতির নিয়তি? শান্তি নয়? বহুবার বহুভাবে পৃথিবীতে এই প্রশ্ন উচ্চারিত হয়েছে।
উনিশ পিপে নস্যি ফুরিয়েছে সেই কবে, জাতিপুঞ্জ জাতিসঙ্ঘসহ হাজারো সংস্থার জন্ম হয়েছে, ব্যয়িত হয়েছে অজস্র অর্থ, রচিত হয়েছে ফরমুলা, খচিত হয়েছে তারকার পর তারকা, কিন্তু শান্তির ললিতবাণীর পাথরের মূর্তিতে প্রাণের প্রতিষ্ঠা হয়নি। অবশেষে মানবজাতি উপলব্ধি করেছে যে, ব্যক্তিজীবনে লোভ হিংসা অহং বর্জন করে মানুষ যদি ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে পারত, যদি অন্য মানুষ ও প্রাণীকূলের অধিকার মেনে নিত, তাহলে সামষ্টিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা পেত। তাই নানা শাস্ত্র-ধর্মের বিধান প্রয়োগ করে মানুষকে মানুষ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যক্তিজীবনে এবং ফলশ্রুতিতে সামষ্টিক জীবনে শান্তি আসেনি। এখানেই সাধুগুরুদের সাফল্য।
রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’-এর মতো পাদপ্রদীপের বাইরে, যাকে আমরা ‘অন্ধকার’ বলি, সেই অন্ধকারে থেকেই, বাংলার সাধুগুরু বাউল ফকিরেরা নিজেদের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, সুস্থ-নীরোগ শরীরে দীর্ঘজীবী সকর্মক জীবন, আত্মোন্নয়ন—এই যদি বিশ্বশান্তির মৌলিক প্যারামিটার বা মানমাত্রা হয়ে থাকে, প্রতিটি ব্যক্তিজীবনে সুখসৃষ্টি করাই যদি অধুনা উন্নত নেতৃত্ব বা সংস্থার কর্মপরিকল্পনা হয়, তাহলে এই প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ বাইরে অবস্থান করেও কেবল বাংলার সাধুগুরুদের মধ্যেই সেই কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটেছে। সাধুগুরুরা অতি নীরবে নিজ জীবনে এবং সেই সূত্রে তাঁর নিজ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে সফল হয়েছেন। বিশ্বকে এই খবরটি জানিয়ে দেওয়াও আমাদের কর্তব্য বৈকি।
লেখক: বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা
লালনের গান কেন ভালো লাগে, বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অধিবাসী হিসেবে এই ভালো লাগায় আমার কোনো ব্যক্তিগত পক্ষপাত আছে কি-না, লালনের গানে ব্যবহৃত আঞ্চলিক শব্দ, অর্থ ও উচ্চারণ জানা থাকায় আমার বাড়তি সুবিধার কারণে এই ভালো লাগা কি-না, কিংবা অতি শৈশব থেকে সাধুগুরুদের আখড়ায় বসে গান শোনার, তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আড্ডার কারণে আমার মনে কোনো অযৌক্তিক আগ্রহ তৈরি হয়েছে কি-না ইত্যাদি নিয়ে অনেক ভেবেছি। সেসব ভাবনার ফলাফল নিয়েই আজকের এই লেখা।
লেখাপড়া, চাকরি, আর পারিবারিক কারণে বারবার বিদেশে গেছি। কখনো অল্প সময়, কখনো-বা দু-তিন বছর একটানা বসবাস করেছি; বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে মিশেছি। অজান্তেই তুলনা করেছি নিজেদের সঙ্গে। কী আছে আমাদের, যা ওঁদের নেই? কী আমাকে আলাদা উচ্চতা দিয়েছে? কী আমাকে বিশেষ করে রাখবে আগামীতে? অনেক কিছুর মধ্যে যে বিষয়টা প্রধান বলে মনে হয়েছে, তা হলো বাংলার লোকজ সম্পদ।
এই লোকজ সম্পদই বাঙালির শক্তির আধার। সম্প্রীতির এবং আত্মোন্নতির অমীয় বাণীসমৃদ্ধ ভাববাদি ভক্তিগীতি বা দেহতত্ত্বের গানগুলো হলো এই লোকজ সম্পদের মধ্যে অন্যতম। এই সম্পদই বাঙালিকে পৃথিবীর অন্য সব জাতি থেকে বিশেষ করে রেখেছে। আর লালন শাহ ফকির হলেন বাংলার সেই শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যের প্রধানতম অংশভাক।
আলাদা করে বাউল বা লালন অনুসারীদের চিনতে হয়নি। এঁদের সম্পর্কে আলাদা করে পড়তেও হয়নি। গ্রামে, পাড়ায় বা এমনকি পরিবারে এঁরা আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। এঁদেরকে চিনতাম ‘নাড়ার ফকির’ হিসেবে। ‘নাড়া’ বলতে গ্রামে গাছের ডালপালা কেটে ছেঁটে তাঁকে ছোট করাও বোঝাত। মাথা টাক করাটাও ছিল ‘মাথা নাড়া’ করা। ধান কাটা শেষে মাঠে পড়ে থাকা ধানের অবশিষ্ট অংশকে ‘ধানের নাড়া’ বলত। জসিম উদ্দীনের ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতায় আছে—
‘তুমি যদি যাও সে–সব কুড়ায়ে
নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁয়ো–চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।’
নিঃসন্তান বিধবা নারীদের ‘নাড়া-খাড়া বিধবা’; অর্থাৎ, পিছুটানহীন বিধবা বলা হতো। রাগসংগীত শিক্ষার ক্ষেত্রে শিষ্যের ডান হাতে লাল রংয়ের সুতা; অর্থাৎ, ‘নাড়া’ বেঁধে দিয়ে নিজ ঘরানায় গ্রহণের রেওয়াজটি আজও চালু আছে। গ্রামের বাচ্চাদের কোমরে তাবিজ বাঁধার চিকন সুতাকেও ‘নাড়া’ বলা হতো।
আমাকে একবার দিদার শাহ ফকির* ‘নাড়া’ শব্দের অর্থের সঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা এখলাসের প্রসঙ্গে বলেছিলেন। তাঁর মতে, এই সুরায় আল্লাহ নিজেকে অমুখাপেক্ষী, কারও সঙ্গে সম্পৃক্ত নন অর্থে পরিচয় দিয়েছেন, যার সঙ্গে ‘নাড়া’ অর্থের মিল আছে। লালনের গানেও বেশ কয়েক স্থানে এই নাড়া শব্দের উল্লেখ আছে, যা শুনলে লালন ও তাঁর অনুসারীরা নাড়া বলতে কী বোঝেন, তা বোঝা যায়। লালন নিজেকেও নাড়া হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এমনকি আত্মাকেও নাড়া হিসেবে পরিচিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। যেমন—
-‘একজন নাড়া জগৎ জোড়া, কাজটি তাহার জগৎ ছাড়া’
-‘নাড়ার সঙ্গে হয়ে নাড়ি, পরণে পরেছি ডুরি, দেবনা আঁচির কড়ি, বেড়াবো চৈতন্যের পথে’
-‘কুলের বউ ছিলাম বাড়ি/হলাম ন্যাড়ি ন্যাড়ার সাথে/কুলের আচার কুলের বিচার/আর কি ভুলি সেই ভোলাতে’
-‘দিসনে আর আঁচাই কড়ি, নাড়ার নাড়ি হও যেইরে; থাকবি ভালো, সর্বকাল যাবে দূরে’
-‘তিল পরিমাণ জায়গাতে কী কুদরতিময়! জগতজোড়া নাড়া সেথায় বারাম দেয়, বলবো কী সেই নাড়ার গুন বিচার অমাবস্যা পূর্ণিমা সদায় দীপ্তকার...’
সব মিলিয়ে যা দাঁড়ায়, তা হলো—লালনের মতে, ‘নাড়া’ শব্দটির অর্থ হলো শাখাহীন বা সন্তানহীন। রক্ষণশীল মুসলমানদের কাছে এঁরা গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। তবে সাধারণ অর্থে এঁদের সবাই নির্বিবাদী নিরীহ ভাবুক ধরনের মানুষ মনে করত। ফলে এক ধরনের সাধারণ প্রশ্রয়ের আশ্রয়েই তাঁদের থাকতে দেখেছি, যা ইদানীং কমে গেছে।
আমার চাচির ভাই ‘নাড়ার ফকির’ ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে চাচির আড়ালে অন্যরা যখন কথা বলত, তখন তাতে খুব একটা শ্রদ্ধা দেখেছি, তা নয়। বরং নাড়ার ফকির হয়ে বংশের মান নষ্ট করেছে—এমন অভিযোগ শোনা যেত। কিন্তু উনি যখন বোনের বাড়িতে আসতেন, সাদা আলখেল্লা পরা, কাঁধে একটা ঝোলা, হাতে একটা একতারা, সারাক্ষণ মুখে হাসি, আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতেন, যেন আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। এটা আমার ভালো লাগত। শিশুকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করার এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব আশ্চর্যের ছিল। তাঁর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
গানের গলা ভালো ছিল না। কিন্তু প্রায় সারাক্ষণই গান গাইতেন। পরে জেনেছি, এসব গানকে ভক্তিগান, ভাবগান, বাউলগান যে নামেই ডাকি না কেন, সাধুগুরুদের জীবনে এগুলো এক অনিবার্য উপাদান। খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা, অর্থ বা সম্মানের জন্য তাঁরা গান করেন না। তাঁরা গান করেন আরাধনা বা সাধনার মাধ্যম হিসেবে, জীবনাচরণের অংশ হিসেবে। গানই তাঁদের মন্ত্র, স্তোত্র বা ধর্মবাণী।
জীবন কেমনভাবে যাপন করা হবে, মনুষ্য জন্মের উদ্দেশ্য বা পরিণতি কী, ভালো বা মন্দ কী দিয়ে নির্ধারিত হবে—এমন দার্শনিক বিষয় ছাড়াও এমনকি আহার-নিদ্রা-মৈথুন-সংক্রান্ত প্রাত্যহিক জীবনের নানা প্রশ্নের জবাবও তাঁরা গানের মাধ্যমে অনুসন্ধান করেন। তাই দেখা যায়, নিছক আনন্দ বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে গান গাইতে বসেও ভক্তি আর উপলব্ধির আবেশে তাঁদের চোখ জলে ভরে ওঠে; ভক্তিরসের স্রোতধারায় আনন্দ আর বেদনার অপূর্ব মিলন ঘটে।
সেই আমার লালনের গান শোনা শুরু। আলমডাঙ্গার দিদার শাহ, রইচ উদ্দিনসহ অনেকের গান শুনতাম। আমাদের বাড়ির পাশেই মতলেব নামে এক সাধুর ছোট খুপড়ি ঘরে প্রায় সন্ধ্যায় গানের আসর বসত। আমিই ছিলাম সেই আসরের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। একসময় একুশে পদকপ্রাপ্ত খোদাবক্স সাঁইয়ের স্নেহ-সান্নিধ্য পেলাম। লালন গবেষক ড. ক্যারল সলোমনের সঙ্গে আমেরিকায় বন্ধুত্ব হলো। তাঁর আমেরিকার বাসায় মকছেদ আলী সাঁইয়ের রেকর্ডেড গান শুনলাম। এসব ‘সোনার ধানে’ আমার জীবনের গোলা ভরে গেল। লালনের গানকে প্রতিদিন যেন নতুনভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে বুঝলাম এই গানের সুর ও বাণীর ভেতর দিয়ে নিজস্ব জীবন দর্শন ও ভাববাদী ঔদার্যমণ্ডিত অসাম্প্রদায়িক উদার মানবতাবাদ প্রচারিত হয়েছে। গানের মধ্যে লালন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আত্মিক-দৈহিক সম্পর্ক বর্ণনা করেছেন, করেছেন মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলনের জয়গান।
ক্রমবর্ধমান ভেদ-বিভক্তি অসহিষ্ণুতার এই সময়ে মানুষে-মানুষে মিলনের জয়গান গাওয়ার অংশ হিসেবেই লালনের গান এখন বেশি করে শোনা ও শোনানো দরকার। তবে খেয়াল রাখা দরকার, যেন ‘বাজার’ এই গানের মরমী মাধুর্য নষ্ট না করে।
কারণ ইদানীং লক্ষ্য করছি, একদিকে এই গানের মাহাত্ম্য দেশি-বিদেশি গবেষকদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে, শাহরিক সমাজে এই গান জনপ্রিয় হচ্ছে।
অন্যদিকে, জনপ্রিয়তা বাড়াতে গানগুলো নিয়ে ফিউশন ম্যাশআপ জাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হচ্ছে। তাতে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে গানের সুরের, আর আদর্শের। ব্যাপারটা একটু বিস্তারিত বলা দরকার।
উচ্চপ্রযুক্তি ও উচ্চ তাল-লয়-মাত্রা প্রয়োগ করায় গানগুলো থেকে ভক্তিরস, আর মরমী ঔদার্য যেন হারিয়ে যাচ্ছে। লালনের গানের কথা, আর সুরের পরিবর্তন হচ্ছে। দীর্ঘকাল কপিরাইট থাকার কারণে রবীন্দ্রসংগীতের একটা মান বা স্ট্যান্ডার্ড দাঁড়িয়ে গেছে। আমাদের কান তৈরি হয়ে গেছে। তাই বেসুরো রবীন্দ্রসংগীত ‘বাজার’ পায় না।
কিন্তু লালনের গান ছাপার অক্ষরে সংকলিত এবং স্বরলিপিতে নিবন্ধিত না থাকায় গানের কথায় গরমিল দেখা যাচ্ছে। নিবেদনের ভাব, ভঙ্গি বা সুরেও পরিবর্তন হচ্ছে। এ ছাড়া লালনের গানে যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের বেশ কিছু আঞ্চলিক শব্দ আঞ্চলিক উচ্চারণে ব্যবহৃত হয়েছে, যা অন্য কারও দ্বারা উচ্চারণ করা কঠিন, ঠিকভাবে লেখাও সম্ভব না এবং ওই বিশেষ শব্দ বা শব্দমালার অর্থ জানা না থাকায় এসব শব্দ ঠিকভাবে গীত বা উচ্চারিত হচ্ছে না। তাই পুরো গানের রসভঙ্গ এবং অনর্থ ঘটছে। এই প্রেক্ষাপটে শুদ্ধ শ্রোতা ও সমর্থক তৈরি করা এবং সত্যিকারের সাধুগুরুদের পরিবারে গান যেভাবে চর্চিত এবং গীত হয়, তা শোনার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার বলে মনে হয়।
পাশাপাশি আরও দুটি কাজ শুরু করা দরকার। প্রথমটি হলো—সাধুগুরুদের সম্পর্কে অনেকে ভাবেন যে, তাঁদের সংসার নেই, তাঁরা অবৈজ্ঞানিক, অস্বাস্থ্যকর, নেশাসক্ত, আয়-উপার্জনহীন পরাশ্রয়ী এবং অসামাজিক ও অযাচারী। এমনকি তাঁদের পোশাক আশাক ও শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়েও ভুল ধারণা আছে। যেমন—তাঁরা কমলা বা গেরুয়া রঙের আলখেল্লা ধরনের কাপড় পরেন এবং তাঁদের লম্বা চুল বা মাথায় জট আছে।
আসলে এ রকম ধারণা ভুল। স্বামী-স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাঁদের জীবন আমাদের আর সবার মতোই। কেউ কৃষি করেন, কেউ চাকরি বা ব্যবসা। তাঁদের ঘর-সংসার, সমাজ, সামাজিকতা—সব আছে। সাধারণ গৃহী অ-বাউলদের তুলনায় তাঁরা বরং সমাজের জন্য উপকারী। কারণ, তাঁরা যুগে যুগে কেবল আক্রান্তই হয়েছেন, কখনো আক্রমণ করেননি। যে এলাকায় তাঁদের বসবাস, সেখানকার থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যাবে—কোনো সাধুগুরুর নামে মামলা বা অভিযোগ নেই। যে গ্রামে বা মহল্লায় তাঁদের বসবাস, সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যাবে—তাঁরা কোনো ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত নন। তাঁরা নির্লোভ, তাই নির্বিরোধী। এমনকি পশুর গায়েও তাঁরা হাত তোলেন না। বরং, একটি নির্মল জীবনধারার মধ্যে সংগীতের সুর আর পূর্ববর্তী গুরুদের রচিত গানের বাণীর নির্দেশনা মেনে তাঁদের জীবন অতিবাহিত করেন। তাঁদের জীবনের মূলমন্ত্র নির্মোহ, তথা ‘জিন্দা মরা’ হয়ে জীবনকে উপভোগ করা এবং তা অনেকের সেবায় নিযুক্ত করে শুধু মানুষ হিসেবে নয়, প্রাণী হিসেবেও প্রকৃতির সংসারে মিশে থাকা।
সাধক ও লালন সংগীতজ্ঞ খোদাবক্স সাঁইয়ের ভাষায়, ‘লালনের মূল কথা হলো মানবপ্রেম। মানুষ ভজতে হবে, গুরুর মাধ্যমে দেহ মোকামের খবর জানতে হবে, আমি কে, কোথা থেকে এলাম, কোথায় যাব—এসব বুঝতে হবে। মুর্শিদের স্বরূপ চিনে শুদ্ধ মানুষ হতে হবে।’
আরেকটি জরুরি কাজ হলো—অশান্ত-অসুখী দেশিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সাধুগুরুদের জীবনাদর্শের গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং তা প্রচার করে বিশ্বশান্তি অর্জনের পথ প্রতিষ্ঠা করা।
আমরা সবাই জন্মেই যুদ্ধ দেখেছি। আমাদের আগে যারা এই গ্রহে জন্মেছেন, তারাও যুদ্ধ দেখেছেন, যুদ্ধের শিকার হয়েছেন। আমাদের ছেলেমেয়েরা এবং তাঁদের সন্তানও কি হিংসা, লোভ, আর নির্যাতনের দুনিয়া থেকে রেহাই পাবে না? যুদ্ধই কি মানবজাতির নিয়তি? শান্তি নয়? বহুবার বহুভাবে পৃথিবীতে এই প্রশ্ন উচ্চারিত হয়েছে।
উনিশ পিপে নস্যি ফুরিয়েছে সেই কবে, জাতিপুঞ্জ জাতিসঙ্ঘসহ হাজারো সংস্থার জন্ম হয়েছে, ব্যয়িত হয়েছে অজস্র অর্থ, রচিত হয়েছে ফরমুলা, খচিত হয়েছে তারকার পর তারকা, কিন্তু শান্তির ললিতবাণীর পাথরের মূর্তিতে প্রাণের প্রতিষ্ঠা হয়নি। অবশেষে মানবজাতি উপলব্ধি করেছে যে, ব্যক্তিজীবনে লোভ হিংসা অহং বর্জন করে মানুষ যদি ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে পারত, যদি অন্য মানুষ ও প্রাণীকূলের অধিকার মেনে নিত, তাহলে সামষ্টিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা পেত। তাই নানা শাস্ত্র-ধর্মের বিধান প্রয়োগ করে মানুষকে মানুষ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যক্তিজীবনে এবং ফলশ্রুতিতে সামষ্টিক জীবনে শান্তি আসেনি। এখানেই সাধুগুরুদের সাফল্য।
রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’-এর মতো পাদপ্রদীপের বাইরে, যাকে আমরা ‘অন্ধকার’ বলি, সেই অন্ধকারে থেকেই, বাংলার সাধুগুরু বাউল ফকিরেরা নিজেদের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, সুস্থ-নীরোগ শরীরে দীর্ঘজীবী সকর্মক জীবন, আত্মোন্নয়ন—এই যদি বিশ্বশান্তির মৌলিক প্যারামিটার বা মানমাত্রা হয়ে থাকে, প্রতিটি ব্যক্তিজীবনে সুখসৃষ্টি করাই যদি অধুনা উন্নত নেতৃত্ব বা সংস্থার কর্মপরিকল্পনা হয়, তাহলে এই প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ বাইরে অবস্থান করেও কেবল বাংলার সাধুগুরুদের মধ্যেই সেই কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটেছে। সাধুগুরুরা অতি নীরবে নিজ জীবনে এবং সেই সূত্রে তাঁর নিজ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে সফল হয়েছেন। বিশ্বকে এই খবরটি জানিয়ে দেওয়াও আমাদের কর্তব্য বৈকি।
লেখক: বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি পারবে না, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কি হবে না—এ নিয়ে গরম এখন রাজনীতির মাঠ। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবে দাবিদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি তো আরও একধাপ বেশি। আওয়ামী লীগকে কেবল নির্বাচনের বাইরে রাখাই নয়, দাবি তাদের দেশের প্রাচী
৭ ঘণ্টা আগেহুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওনের ছেলে নিষাদ হুমায়ূনের একটা ভাইরাল ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। বেশ মজা পেলাম। সত্যি বললে মজার চেয়েও ছোট্ট বাচ্চার কথায় ভাবনার উদ্রেক হলো। চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত হলো।
৭ ঘণ্টা আগেপরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সার্কুলার অর্থনীতি বা বৃত্তাকার অর্থনীতি এক নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশে স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কুলার অর্থনীতির বিকল্প নেই।
৭ ঘণ্টা আগেবগুড়ার শিবগঞ্জে ৪২০ টাকা কেজি দরে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে। আজকের পত্রিকায় খবরটি দেখা গেছে ১৮ নভেম্বর। এই দামে বেচাকেনাও হচ্ছে। ক্রেতারাও নাকি এই দামে আলু কিনতে পেরে সন্তুষ্ট!
৭ ঘণ্টা আগে