আলী আজম
পদ্মায় সেতু হয়েছে। রাজধানীতে ছুটছে মেট্রোরেল। কর্ণফুলীর তলদেশে গাড়ি চলবে কিছুদিন পর। দেশব্যাপী মেরামত হচ্ছে রাস্তাঘাট। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসা এসব অর্জনকে সামনে রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার ছক কষছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ ‘উন্নয়ন দর্শন’ প্রচার করলেও বিরোধী দল বিএনপি চায় ‘রাষ্ট্র মেরামত’। এরই মধ্যে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরেছে দলটি। এই রূপরেখার উপর ভিত্তি করে সামনের দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো করার কথা বলেছ বিএনপি।
মাঠের রাজনীতির যে দশা তাতে বিএনপি কি রাষ্ট্র মেরামতের সুযোগ পাবে? নাকি সরকারের কঠোর দমননীতির কাছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই পরাস্ত হবে? একইভাবে প্রশ্ন ওঠেছে, একদিকে তীব্র ডলার সংকটসহ অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতি, আরেকদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রচারই বা হালে পানি পাবে কতটুকু।
আগামী নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের নির্ধারক কী হবে, ‘রাস্তা মেরামত’ না ‘রাষ্ট্র মেরামত’- এই প্রশ্নের সহজ কোনো উত্তর নেই। তবে কিছু বিষয় গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরে বিএনপি। এই রূপরেখার ভূমিকায় ‘জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার’ লক্ষ্যের কথা বলা হয়।
বিএনপির রাষ্ট্র মেরামত রূপরেখা প্রথম দফাতেই ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে সাংবিধানিক সংস্কার এবং সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পর যে চারটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ণ করা হয়েছিল তা এখন কেবল দলিলে সীমাবদ্ধ।
সংবিধানের মূলনীতিতে জাতীয়তাবাদের কথা বলা হলেও সরকারগুলো অনেক সময়ই প্রভাবশালী দেশগুলোর চাপে জাতীয় স্বার্থের জলাঞ্জলি দিয়েছে। সংবিধানে ধর্মনিরেপক্ষতার কথা বলা আছে, অথচ বিএনপি, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই নিজেদের স্বার্থে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে, আপস করছে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে। আর সংবিধানে উল্লিখিত গণতন্ত্রের হাল কি তা বিগত দুই জাতীয় নির্বাচনেই স্পষ্ট। এখন বিএনপি সংবিধান সংস্কার করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে রূপরেখা দিয়েছে তা শুনতে ভালো, কিন্তু চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস স্থাপনের মতো নয়। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, সংবিধানে এ পর্যন্ত যতগুলো সংশোধনী এসেছে, তাতে জনগণের চেয়ে শাসকশ্রেণীর স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি।
বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো- রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, একব্যক্তির পরপর দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন। সবচেয়ে চমকপ্রদ ধারণা বিএনপি সামনে নিয়ে এসেছে, সেটা হলো- ‘রেইনবো নেশন’ গঠন। এই ধারণা নতুন নয়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গৃহযুদ্ধ বা সামাজিক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে শান্তি ও সংহতি ফেরাতে এই ধারণার প্রয়োগ হয়েছে। বিভাজিত সমাজের জন্য জরুরি এই ধারণার বাস্তবায়ন বাংলাদেশে বিএনপি কীভাবে করবে তা সামনের দিনে পরিষ্কার হবে।
ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করার কথা বলা হয়েছে বিএনপির ২৭ দফায়। এটি তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বহুদিনের দাবি। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আমলাতন্ত্রের খবরদারি যেভাবে বেড়েছে, তাতে এগুলোকে ক্ষমতাবান করার কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের এই রূপরেখা বাস্তবায়ন করবে কীভাবে? সে কথাও বলা হয়েছে ভূমিকায়। দলটি বলেছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই ‘জাতীয় সরকার’ই রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
এখানেই এসে থামতে হয়। কারণ, মাঠের রাজনীতির যে দশা, তাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদৌ হবে কী না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। এছাড়া দল হিসেবে বিএনপি তুমুল জনপ্রিয় হলেও আন্দোলনের মাঠে তারা এখন যথেষ্ট দুর্বল। দলের চেয়ারপারসন সাজাপ্রাপ্ত ও কার্যত বন্দী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশান্তরী এবং মহাসচিব কারাগারে। এই অবস্থায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে কে? সরকার যেভাবে একের পর এক বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, যেভাবে জেলে পুরছে তাতে সরকার হঠাতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন কতদূর এগোতে পারে সেটা সময় বলে দেবে।
বিএনপিকে চাপে রেখে আওয়ামী লীগও যে খুব একটা স্বস্তিতে আছে তা কিন্তু নয়। বিদেশিদের ঋণের টাকায় সরকার একের পর এক মেগাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। বর্তমানে রিজার্ভের যে অবস্থা তাতে এসব ঋণের কিস্তি শোধ করতে হিমশিম খেতে হবে। অর্থনীতি যে ঠিক পথে নেই সে কথা সরকার স্বীকার না করলেও বিশ্লেষকরা ঠিকই সতর্ক করে যাচ্ছেন বারবার। চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহের ব্যাপক ঘাটতির কারণে বেশ কিছু দিন ধরে আমদানি পণ্যের এলসি খোলার ক্ষেত্রে রেশনিং ব্যবস্থা চলছে। এতে সংকটে পড়বে শিল্পোৎপাদন, যার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
সরকার এবছর সবচেয়ে বড় অস্বস্তিতে ছিল লাফিয়ে বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতি নিয়ে। নিত্যপণ্যের বাজারের ওপর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে পারেনি সরকার। এনিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্ট আছে, ক্ষোভও আছে। এখন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রচার করে সেই ক্ষোভ সামাল দেওয়া খুব একটা সহজ নয়। একদিকে জনগণের ভেতর দানা বেঁধে উঠা ক্ষোভ, অন্যদিকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রশ্নে পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রমাগত চাপ সামলাতে সরকার কি কৌশল নিচ্ছে তা সামনের দিনগুলোয় আরও স্পষ্ট হবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যাই করুক না কেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সামনে আরও খারাপ সময় আসছে। রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য এখনই জাতীয় সমঝোতা দরকার। এটি খুবই ভালো লক্ষণ যে, বিএনপি এই সত্যটা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে। এজন্যই বোধহয় রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখায় জাতীয় সমঝোতার বিষয়টিও এনেছে দলটি। নাগরিকদের প্রত্যাশা- সমঝোতা হোক, রক্ষা পাক দেশ।
লেখক: যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
পদ্মায় সেতু হয়েছে। রাজধানীতে ছুটছে মেট্রোরেল। কর্ণফুলীর তলদেশে গাড়ি চলবে কিছুদিন পর। দেশব্যাপী মেরামত হচ্ছে রাস্তাঘাট। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসা এসব অর্জনকে সামনে রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার ছক কষছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ ‘উন্নয়ন দর্শন’ প্রচার করলেও বিরোধী দল বিএনপি চায় ‘রাষ্ট্র মেরামত’। এরই মধ্যে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরেছে দলটি। এই রূপরেখার উপর ভিত্তি করে সামনের দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো করার কথা বলেছ বিএনপি।
মাঠের রাজনীতির যে দশা তাতে বিএনপি কি রাষ্ট্র মেরামতের সুযোগ পাবে? নাকি সরকারের কঠোর দমননীতির কাছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই পরাস্ত হবে? একইভাবে প্রশ্ন ওঠেছে, একদিকে তীব্র ডলার সংকটসহ অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতি, আরেকদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রচারই বা হালে পানি পাবে কতটুকু।
আগামী নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের নির্ধারক কী হবে, ‘রাস্তা মেরামত’ না ‘রাষ্ট্র মেরামত’- এই প্রশ্নের সহজ কোনো উত্তর নেই। তবে কিছু বিষয় গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরে বিএনপি। এই রূপরেখার ভূমিকায় ‘জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার’ লক্ষ্যের কথা বলা হয়।
বিএনপির রাষ্ট্র মেরামত রূপরেখা প্রথম দফাতেই ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে সাংবিধানিক সংস্কার এবং সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পর যে চারটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ণ করা হয়েছিল তা এখন কেবল দলিলে সীমাবদ্ধ।
সংবিধানের মূলনীতিতে জাতীয়তাবাদের কথা বলা হলেও সরকারগুলো অনেক সময়ই প্রভাবশালী দেশগুলোর চাপে জাতীয় স্বার্থের জলাঞ্জলি দিয়েছে। সংবিধানে ধর্মনিরেপক্ষতার কথা বলা আছে, অথচ বিএনপি, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই নিজেদের স্বার্থে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে, আপস করছে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে। আর সংবিধানে উল্লিখিত গণতন্ত্রের হাল কি তা বিগত দুই জাতীয় নির্বাচনেই স্পষ্ট। এখন বিএনপি সংবিধান সংস্কার করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে রূপরেখা দিয়েছে তা শুনতে ভালো, কিন্তু চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস স্থাপনের মতো নয়। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, সংবিধানে এ পর্যন্ত যতগুলো সংশোধনী এসেছে, তাতে জনগণের চেয়ে শাসকশ্রেণীর স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি।
বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো- রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, একব্যক্তির পরপর দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন। সবচেয়ে চমকপ্রদ ধারণা বিএনপি সামনে নিয়ে এসেছে, সেটা হলো- ‘রেইনবো নেশন’ গঠন। এই ধারণা নতুন নয়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গৃহযুদ্ধ বা সামাজিক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে শান্তি ও সংহতি ফেরাতে এই ধারণার প্রয়োগ হয়েছে। বিভাজিত সমাজের জন্য জরুরি এই ধারণার বাস্তবায়ন বাংলাদেশে বিএনপি কীভাবে করবে তা সামনের দিনে পরিষ্কার হবে।
ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করার কথা বলা হয়েছে বিএনপির ২৭ দফায়। এটি তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বহুদিনের দাবি। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আমলাতন্ত্রের খবরদারি যেভাবে বেড়েছে, তাতে এগুলোকে ক্ষমতাবান করার কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের এই রূপরেখা বাস্তবায়ন করবে কীভাবে? সে কথাও বলা হয়েছে ভূমিকায়। দলটি বলেছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই ‘জাতীয় সরকার’ই রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
এখানেই এসে থামতে হয়। কারণ, মাঠের রাজনীতির যে দশা, তাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদৌ হবে কী না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। এছাড়া দল হিসেবে বিএনপি তুমুল জনপ্রিয় হলেও আন্দোলনের মাঠে তারা এখন যথেষ্ট দুর্বল। দলের চেয়ারপারসন সাজাপ্রাপ্ত ও কার্যত বন্দী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশান্তরী এবং মহাসচিব কারাগারে। এই অবস্থায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে কে? সরকার যেভাবে একের পর এক বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, যেভাবে জেলে পুরছে তাতে সরকার হঠাতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন কতদূর এগোতে পারে সেটা সময় বলে দেবে।
বিএনপিকে চাপে রেখে আওয়ামী লীগও যে খুব একটা স্বস্তিতে আছে তা কিন্তু নয়। বিদেশিদের ঋণের টাকায় সরকার একের পর এক মেগাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। বর্তমানে রিজার্ভের যে অবস্থা তাতে এসব ঋণের কিস্তি শোধ করতে হিমশিম খেতে হবে। অর্থনীতি যে ঠিক পথে নেই সে কথা সরকার স্বীকার না করলেও বিশ্লেষকরা ঠিকই সতর্ক করে যাচ্ছেন বারবার। চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহের ব্যাপক ঘাটতির কারণে বেশ কিছু দিন ধরে আমদানি পণ্যের এলসি খোলার ক্ষেত্রে রেশনিং ব্যবস্থা চলছে। এতে সংকটে পড়বে শিল্পোৎপাদন, যার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
সরকার এবছর সবচেয়ে বড় অস্বস্তিতে ছিল লাফিয়ে বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতি নিয়ে। নিত্যপণ্যের বাজারের ওপর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে পারেনি সরকার। এনিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্ট আছে, ক্ষোভও আছে। এখন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রচার করে সেই ক্ষোভ সামাল দেওয়া খুব একটা সহজ নয়। একদিকে জনগণের ভেতর দানা বেঁধে উঠা ক্ষোভ, অন্যদিকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রশ্নে পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রমাগত চাপ সামলাতে সরকার কি কৌশল নিচ্ছে তা সামনের দিনগুলোয় আরও স্পষ্ট হবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যাই করুক না কেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সামনে আরও খারাপ সময় আসছে। রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য এখনই জাতীয় সমঝোতা দরকার। এটি খুবই ভালো লক্ষণ যে, বিএনপি এই সত্যটা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে। এজন্যই বোধহয় রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখায় জাতীয় সমঝোতার বিষয়টিও এনেছে দলটি। নাগরিকদের প্রত্যাশা- সমঝোতা হোক, রক্ষা পাক দেশ।
লেখক: যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা পালাতে পারেননি তাঁদের জনাকয়েক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসনকালে বিএনপিসহ অন্য নেতাদের যেভাবে হেলমেট পরিয়ে জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করা হতো, এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের একই কায়দায়
২১ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিন যত যাচ্ছে, ততই নতুন নতুন কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। প্রশ্নগুলো যে গভীরতর রাজনৈতিক বিষয়সংশ্লিষ্ট, তা বলাই বাহুল্য। অনেক সময়ই প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে সংবাদ সম্মেলন বা সংবাদ ব্রিফিং করে বিষয়গুলো খোলাসার চেষ্টা করা হয়েছে।
২১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ও জনমনে আস্থার সংকটের প্রেক্ষাপটে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১ দিন আগেসম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে অটোরিকশা বন্ধের প্রস্তাবে চালকদের রাস্তায় নেমে আসা এবং শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবরোধে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
২ দিন আগে