সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
আমাদের ভূখণ্ডে মুক্তিযুদ্ধ ছিল ওই জনগণেরই যুদ্ধ। তারাই লড়েছে। কোনো একটি রণাঙ্গনে নয়, সর্বত্র, সকল রণাঙ্গনে; কেবল দেশে নয়, বিদেশেও। বলা হয়েছে, যোদ্ধাদের শতকরা ৮০ জন ছিল কৃষক। এ কোনো অতিরঞ্জন নয়। গ্রামে-গ্রামে, প্রান্তে-প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল ওই যুদ্ধ। পাকিস্তানি শাসকদের মধ্যে কুটিল যারা তারা আশা করেছিল সংঘর্ষ সীমাবদ্ধ থাকবে। বেছে বেছে হত্যা করা হবে। কট্টর আওয়ামীপন্থী, ছাত্র, পুলিশ, বিদ্রোহী সেনা—এদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে হত্যাকাণ্ড। কিন্তু পারেনি, নৃশংস সেনাদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তারা বাছবিচার করেনি। আর জনগণও বসে থাকেনি। আক্রমণকে তারা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর ওপর আঘাত হিসেবে দেখেনি, দেখেছে তাদের নিজেদের ওপর আক্রমণ হিসেবে। সেভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অংশ নিয়েছে যুদ্ধে। ভাষা আন্দোলনের সময়েও এ রকমটাই ঘটেছিল। আন্দোলন শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, প্রথম দিকে সীমাবদ্ধ ছিল সেখানেই। কিন্তু বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে যখন ছাত্রহত্যা ঘটল, তখন আন্দোলন ছড়িয়ে গেল সারা দেশে। ছাত্রহত্যাকে দেশবাসী নিজেদের ওপর আক্রমণ হিসেবেই দেখেছে, অন্য কোনোভাবে নয়। এর আগে পুলিশ ধর্মঘট হয়েছিল। হত্যা করা হয়েছিল বেশ কয়েকজন বাঙালি পুলিশকে, কিন্তু সে ঘটনা বায়ান্নর ঘটনার মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে এই যে পুলিশের সঙ্গে জনগণের বিচ্ছিন্নতা ছিল, ছাত্রের সঙ্গে ছিল না। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বেগবান ও সফল হয়েছে জনগণের অংশগ্রহণের ফলে। অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি পেয়েছিল জনগণের কারণে।
জনগণই পাকিস্তান এনেছিল ভোট দিয়ে ১৯৪৬-এ। তারাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলে গেছে বায়ান্নতে। ১৯৫৪-এর নির্বাচনে স্পষ্ট রায় দিয়েছে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে উনসত্তরের অভ্যুত্থান জনগণেরই অভ্যুত্থান বটে। মূল লক্ষ্য একটাই—মুক্তি। মুক্তির এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই একাত্তরের যুদ্ধ, যে যুদ্ধে পরাভূত হয়েছিল দুর্ধর্ষ বলে কথিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। যুদ্ধের পেছনে যে চেতনা সেটা মুক্তির, যে মুক্তির সংজ্ঞা পাওয়া গেছে রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে। মূলনীতিগুলো যুদ্ধে জনগণের অংশগ্রহণ থেকেই বের হয়ে এসেছে, স্বাভাবিকভাবে। নইলে কারও সাধ্য ছিল না তাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে; যেমন যুদ্ধের সময়ে ও তার অব্যবহিত পরে কারও সাধ্য ছিল না তাদের অস্বীকৃতি জানায়। শাসনক্ষমতা যখন জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে গেল, তখনই সম্ভব হয়েছে মূলনীতির সংশোধন। মুক্তির জায়গায় এসেছে স্বাধীনতা।
মুক্তির-যুদ্ধ ছিল একটা স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম। স্বতঃস্ফূর্ততার বহু গুণ ও সীমাবদ্ধতা তার মধ্যে পাওয়া যাবে। প্রধান গুণ হচ্ছে যুদ্ধের শক্তি ও বেগ; প্রধান দুর্বলতা তার সংগঠিত রূপ। যুদ্ধটা সংগঠিত, পরিকল্পিতভাবে শুরু হয়নি। চলেওনি। বিপরীতে পাকিস্তানিরা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সুসজ্জিত। তাদের ছিল বিদেশি শক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন মিত্র বলতে বাঙালির প্রায় কেউই ছিল না। ভারত যে যুক্ত হয়েছে তা আগের কোনো যোগাযোগের কারণে নয়, ঘটনার পরম্পরায়। একে সে প্রতিবেশী, তার ওপরে ছিল শরণার্থীর বোঝা।
এমনকি যারা ছিল নেতৃত্বে সেই আওয়ামী লীগও এ কথা বলেনি যে যুদ্ধ তারা শুরু করেছে। বলেছে যুদ্ধ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ যে ঐক্যবদ্ধ ছিল, তা-ও নয়। সেখানে যেমন তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন, তেমনি ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। তাজউদ্দীন আপসে বিশ্বাসী ছিলেন না, খন্দকার মোশতাক সব সময়ই আপসের পথ খুঁজছিল। কিন্তু তাজউদ্দীনের আশপাশে যারা ছিল তারাও সবাই যে তাঁর সঙ্গে ছিল; তা নয়। বিরোধ ছিল, যে জন্য মুক্তিবাহিনীর সমান্তরালে মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল। খন্দকার মোশতাকরা যে শক্তিহীন ছিল না তা বোঝা গেছে ১৯৭৫-এর নির্মম হত্যাকাণ্ডে। এ-ও তাৎপর্যহীন নয় যে তার আগেই মন্ত্রিসভা থেকে তাজউদ্দীন বাদ পড়ে গেছেন, মোশতাক বাদ পড়েননি। যুদ্ধের সময়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি উঠেছিল। সেটা গৃহীত হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। তবে ছাড় হিসেবে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছিল, কিন্তু সেই পরিষদের একটিরও বেশি বৈঠক হয়নি। জাতীয় সরকার গঠনের দাবি স্বাধীনতার পরেও তোলা হয়েছিল। গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে শত্রু কে ছিল? শত্রু ছিল তারাই যারা জাতীয় মুক্তির বিপক্ষে ছিল। অর্থাৎ আলবদর, রাজাকারসহ সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের সমর্থকেরা। দক্ষিণপন্থীরা। শত্রু ছিল তারা, যারা মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে মনে করেছে এবং নতুন রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগোতে না দিয়ে পেছন দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছে, বড় পাকিস্তান ভেঙে ছোট পাকিস্তান গড়বে ভেবেছে। ১৯৭৮-এর সাংবিধানিক সংশোধনগুলো দক্ষিণপন্থীদেরই কাজ। এরশাদের সময়ে পুঁজিবাদের পথকে আরও প্রশস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ধর্ম প্রবর্তন পশ্চাদ্গমনেচ্ছুদের আরেকটি বিজয় চিহ্ন। দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বিগত সরকারের শাসনামলে ওই ফরমানগুলোকে সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়েছিল।
কিন্তু শেখ মুজিব এই দক্ষিণপন্থীদের প্রধান শত্রু মনে করেননি। বামপন্থীরা তাঁর মিত্র ছিল না এটা ঠিক, কিন্তু তারা তাঁর জন্য তত বড় শত্রু ছিল না, যত বড় শত্রু ছিল তাঁর আশপাশে লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা।
বাঙালিদের দাবির মুখে পাকিস্তানিরা এক মানুষ এক ভোট নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। এর আগে ছিল সংখ্যাসাম্য; অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের ৫৬ জনকে কেটেছেঁটে সমান করে দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের ৪৪ জনের। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দিয়েই করানো হয়েছিল ওই কাজ, নইলে পাকিস্তানিরা নিজেরা পারত না। সংখ্যাসাম্য ভেঙে পড়ল যখন, তখন জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে পূর্ববঙ্গকে দিতে হলো ১৬৯টি, পশ্চিম পাকিস্তান পেল ১৪৪টি। আশা করেছিল ভোটের সময়ে বাঙালিকে বিভক্ত করা যাবে। যখন দেখল পারল না, তখন ঝাঁপিয়ে পড়ল গণহত্যায়।
জনগণ সংগ্রাম করেছে, কিন্তু মুক্তি পায়নি। রাষ্ট্র এখন কতটা স্বাধীন তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যায়। কিন্তু জাতি যে মুক্ত নয়, সেটা সন্দেহাতীত। জাতি বলতে জনগণকেই বোঝায়। সেই জনগণ রাষ্ট্রক্ষমতার ধারেকাছে নেই। দেশে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু উন্নতি মানে বড়জোর ২০ জনের উন্নতি এবং ৮০ জনের অবনতি। ধনী-দরিদ্রের তারতম্য বোঝাতে আকাশপাতালের উপমা অগ্রাহ্য নয়। ওই দুই প্রান্তের মধ্যেই বিভিন্ন স্তরের বিন্যাস। কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম চলছে। সরবে নয় নীরবে। তাকে চলতেই হবে, নইলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী, দাঁড়ানোর জায়গা কোথায়?
আমাদের ভূখণ্ডে মুক্তিযুদ্ধ ছিল ওই জনগণেরই যুদ্ধ। তারাই লড়েছে। কোনো একটি রণাঙ্গনে নয়, সর্বত্র, সকল রণাঙ্গনে; কেবল দেশে নয়, বিদেশেও। বলা হয়েছে, যোদ্ধাদের শতকরা ৮০ জন ছিল কৃষক। এ কোনো অতিরঞ্জন নয়। গ্রামে-গ্রামে, প্রান্তে-প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল ওই যুদ্ধ। পাকিস্তানি শাসকদের মধ্যে কুটিল যারা তারা আশা করেছিল সংঘর্ষ সীমাবদ্ধ থাকবে। বেছে বেছে হত্যা করা হবে। কট্টর আওয়ামীপন্থী, ছাত্র, পুলিশ, বিদ্রোহী সেনা—এদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে হত্যাকাণ্ড। কিন্তু পারেনি, নৃশংস সেনাদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তারা বাছবিচার করেনি। আর জনগণও বসে থাকেনি। আক্রমণকে তারা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর ওপর আঘাত হিসেবে দেখেনি, দেখেছে তাদের নিজেদের ওপর আক্রমণ হিসেবে। সেভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অংশ নিয়েছে যুদ্ধে। ভাষা আন্দোলনের সময়েও এ রকমটাই ঘটেছিল। আন্দোলন শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, প্রথম দিকে সীমাবদ্ধ ছিল সেখানেই। কিন্তু বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে যখন ছাত্রহত্যা ঘটল, তখন আন্দোলন ছড়িয়ে গেল সারা দেশে। ছাত্রহত্যাকে দেশবাসী নিজেদের ওপর আক্রমণ হিসেবেই দেখেছে, অন্য কোনোভাবে নয়। এর আগে পুলিশ ধর্মঘট হয়েছিল। হত্যা করা হয়েছিল বেশ কয়েকজন বাঙালি পুলিশকে, কিন্তু সে ঘটনা বায়ান্নর ঘটনার মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে এই যে পুলিশের সঙ্গে জনগণের বিচ্ছিন্নতা ছিল, ছাত্রের সঙ্গে ছিল না। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বেগবান ও সফল হয়েছে জনগণের অংশগ্রহণের ফলে। অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি পেয়েছিল জনগণের কারণে।
জনগণই পাকিস্তান এনেছিল ভোট দিয়ে ১৯৪৬-এ। তারাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলে গেছে বায়ান্নতে। ১৯৫৪-এর নির্বাচনে স্পষ্ট রায় দিয়েছে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে উনসত্তরের অভ্যুত্থান জনগণেরই অভ্যুত্থান বটে। মূল লক্ষ্য একটাই—মুক্তি। মুক্তির এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই একাত্তরের যুদ্ধ, যে যুদ্ধে পরাভূত হয়েছিল দুর্ধর্ষ বলে কথিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। যুদ্ধের পেছনে যে চেতনা সেটা মুক্তির, যে মুক্তির সংজ্ঞা পাওয়া গেছে রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে। মূলনীতিগুলো যুদ্ধে জনগণের অংশগ্রহণ থেকেই বের হয়ে এসেছে, স্বাভাবিকভাবে। নইলে কারও সাধ্য ছিল না তাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে; যেমন যুদ্ধের সময়ে ও তার অব্যবহিত পরে কারও সাধ্য ছিল না তাদের অস্বীকৃতি জানায়। শাসনক্ষমতা যখন জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে গেল, তখনই সম্ভব হয়েছে মূলনীতির সংশোধন। মুক্তির জায়গায় এসেছে স্বাধীনতা।
মুক্তির-যুদ্ধ ছিল একটা স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম। স্বতঃস্ফূর্ততার বহু গুণ ও সীমাবদ্ধতা তার মধ্যে পাওয়া যাবে। প্রধান গুণ হচ্ছে যুদ্ধের শক্তি ও বেগ; প্রধান দুর্বলতা তার সংগঠিত রূপ। যুদ্ধটা সংগঠিত, পরিকল্পিতভাবে শুরু হয়নি। চলেওনি। বিপরীতে পাকিস্তানিরা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সুসজ্জিত। তাদের ছিল বিদেশি শক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন মিত্র বলতে বাঙালির প্রায় কেউই ছিল না। ভারত যে যুক্ত হয়েছে তা আগের কোনো যোগাযোগের কারণে নয়, ঘটনার পরম্পরায়। একে সে প্রতিবেশী, তার ওপরে ছিল শরণার্থীর বোঝা।
এমনকি যারা ছিল নেতৃত্বে সেই আওয়ামী লীগও এ কথা বলেনি যে যুদ্ধ তারা শুরু করেছে। বলেছে যুদ্ধ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ যে ঐক্যবদ্ধ ছিল, তা-ও নয়। সেখানে যেমন তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন, তেমনি ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। তাজউদ্দীন আপসে বিশ্বাসী ছিলেন না, খন্দকার মোশতাক সব সময়ই আপসের পথ খুঁজছিল। কিন্তু তাজউদ্দীনের আশপাশে যারা ছিল তারাও সবাই যে তাঁর সঙ্গে ছিল; তা নয়। বিরোধ ছিল, যে জন্য মুক্তিবাহিনীর সমান্তরালে মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল। খন্দকার মোশতাকরা যে শক্তিহীন ছিল না তা বোঝা গেছে ১৯৭৫-এর নির্মম হত্যাকাণ্ডে। এ-ও তাৎপর্যহীন নয় যে তার আগেই মন্ত্রিসভা থেকে তাজউদ্দীন বাদ পড়ে গেছেন, মোশতাক বাদ পড়েননি। যুদ্ধের সময়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি উঠেছিল। সেটা গৃহীত হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। তবে ছাড় হিসেবে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছিল, কিন্তু সেই পরিষদের একটিরও বেশি বৈঠক হয়নি। জাতীয় সরকার গঠনের দাবি স্বাধীনতার পরেও তোলা হয়েছিল। গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে শত্রু কে ছিল? শত্রু ছিল তারাই যারা জাতীয় মুক্তির বিপক্ষে ছিল। অর্থাৎ আলবদর, রাজাকারসহ সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের সমর্থকেরা। দক্ষিণপন্থীরা। শত্রু ছিল তারা, যারা মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে মনে করেছে এবং নতুন রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগোতে না দিয়ে পেছন দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছে, বড় পাকিস্তান ভেঙে ছোট পাকিস্তান গড়বে ভেবেছে। ১৯৭৮-এর সাংবিধানিক সংশোধনগুলো দক্ষিণপন্থীদেরই কাজ। এরশাদের সময়ে পুঁজিবাদের পথকে আরও প্রশস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ধর্ম প্রবর্তন পশ্চাদ্গমনেচ্ছুদের আরেকটি বিজয় চিহ্ন। দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বিগত সরকারের শাসনামলে ওই ফরমানগুলোকে সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়েছিল।
কিন্তু শেখ মুজিব এই দক্ষিণপন্থীদের প্রধান শত্রু মনে করেননি। বামপন্থীরা তাঁর মিত্র ছিল না এটা ঠিক, কিন্তু তারা তাঁর জন্য তত বড় শত্রু ছিল না, যত বড় শত্রু ছিল তাঁর আশপাশে লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা।
বাঙালিদের দাবির মুখে পাকিস্তানিরা এক মানুষ এক ভোট নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। এর আগে ছিল সংখ্যাসাম্য; অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের ৫৬ জনকে কেটেছেঁটে সমান করে দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের ৪৪ জনের। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দিয়েই করানো হয়েছিল ওই কাজ, নইলে পাকিস্তানিরা নিজেরা পারত না। সংখ্যাসাম্য ভেঙে পড়ল যখন, তখন জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে পূর্ববঙ্গকে দিতে হলো ১৬৯টি, পশ্চিম পাকিস্তান পেল ১৪৪টি। আশা করেছিল ভোটের সময়ে বাঙালিকে বিভক্ত করা যাবে। যখন দেখল পারল না, তখন ঝাঁপিয়ে পড়ল গণহত্যায়।
জনগণ সংগ্রাম করেছে, কিন্তু মুক্তি পায়নি। রাষ্ট্র এখন কতটা স্বাধীন তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যায়। কিন্তু জাতি যে মুক্ত নয়, সেটা সন্দেহাতীত। জাতি বলতে জনগণকেই বোঝায়। সেই জনগণ রাষ্ট্রক্ষমতার ধারেকাছে নেই। দেশে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু উন্নতি মানে বড়জোর ২০ জনের উন্নতি এবং ৮০ জনের অবনতি। ধনী-দরিদ্রের তারতম্য বোঝাতে আকাশপাতালের উপমা অগ্রাহ্য নয়। ওই দুই প্রান্তের মধ্যেই বিভিন্ন স্তরের বিন্যাস। কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম চলছে। সরবে নয় নীরবে। তাকে চলতেই হবে, নইলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী, দাঁড়ানোর জায়গা কোথায়?
২০২৪ সালটি চিহ্নিত হয়ে থাকবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের জন্য। সেনা অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সরকারের পতন তো আরও কয়েকবার হয়েছে। মাঝে নব্বইয়ের ‘গণ-আন্দোলনে’ অবসান ঘটে সেনাশাসনের। তারপর আর সেনাশাসন না এলেও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল।
১৪ ঘণ্টা আগেডিসেম্বর চলে যাচ্ছে। বছর শেষ হচ্ছে। চূড়ান্তভাবে খেলাপি ঋণের হিসাবকিতাবও তৈরি হবে এই ডিসেম্বরেই। বছরে চারবার ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এই হিসাব করা হয়ে থাকে। মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বরে। ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় (গ্রেস পিরিয়ড) পরও যদি ঋণটি পরিশোধিত না হয়, তাহলে ঋণটিকে খেলাপি হিসেবে..
১৪ ঘণ্টা আগেপ্রতিবছরের শুরুতে সারা দেশে বসে বইমেলা। রাজধানী ঢাকা শহরে ফেব্রুয়ারি মাসে হয় মাসব্যাপী বইমেলা। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা শহরগুলোতেও এ সময়ে বইমেলার হিড়িক পড়ে। মেলা উপলক্ষে নির্ধারিত এলাকা অপূর্ব সাজে সেজে ওঠে।
১৪ ঘণ্টা আগেদেশের উন্নয়নের প্রধান সোপান হলো সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তি রচিত হয়। তবে শুধু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়; নির্বাচন-পূর্ববর্তী সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐক্য তার সহায়ক হাতিয়ার।
১৪ ঘণ্টা আগে