অরুণ কর্মকার
এখনই রাজনীতির মাঠের উত্তাপ বাড়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। সম্ভাব্য নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা যত বাড়তে থাকবে এবং রাজনীতির মাঠের উত্তাপ ততই বেশি করে অনুভূত হতে থাকবে। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে। তবে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ধোঁয়াশা এখনো রয়ে গেছে। বিশেষ করে বিএনপি সে কথা স্পষ্ট করেই বলে যাচ্ছে। তারপরও রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁদের বিপরীত অবস্থান, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও অবস্থান প্রকাশ পাচ্ছে। ফলে উত্তাপও বাড়ছে।
কয়েকটি ঘটনা এই দফায় রাজনৈতিক উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমত, এর সূত্রপাত ঘটেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন বলেছেন যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই, তখন থেকেই। এই বিষয়ে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অভিন্ন, তা আমরা আগেও দেখেছি। কিন্তু জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান এর বিপরীত। তাঁরা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করে নিষিদ্ধ ঘোষণার পক্ষে। ফলে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে স্পষ্ট বিভক্তি এবং উভয় পক্ষের বিপরীতমুখী বক্তব্য ঘিরে বেশ একটা উত্তাপের আঁচ আমরা পেয়েছি। এই আঁচ উত্তাপে পরিণত করেছে এনপিসির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে। যেখানে তিনি সেনানিবাসে তাঁদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক করার কথা উল্লেখ করেছেন এবং সেখানেও আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে তো বটেই, আগামী নির্বাচনেও ইনক্লুসিভ করার একটি উদ্যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।
এরপর সারজিস আলমের এক রাজনৈতিক তৎপরতা আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে। সারজিস গত সোমবার ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামেন। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে যান পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে। দেবীগঞ্জ থেকে শতাধিক গাড়ির একটি বহর নিয়ে তিনি জেলার বোদা, পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা সফর করেন। এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনে ভোট প্রার্থনা করে প্রচারণাও চালান। তাঁর এই শোডাউন নিয়ে তাঁর নিজের দল এনসিপিসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তিনিও যথাসম্ভব এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেন। তবে তা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পায়নি বলেই মনে হচ্ছে। ফলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। গত মঙ্গলবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পেইন করতে যায়, তারা কী করবে, সেটা আমরা ভালো করে বুঝি।’
সারজিসের সফর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ হতে না হতেই আবার সামনে চলে আসে নির্বাচনের সময় নিয়ে বিতর্ক। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর পূর্বঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের যেকোনো সময়ের কথা উল্লেখ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপিও তাদের পূর্ব অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যকে অস্পষ্ট বলে উল্লেখ করে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ এবং অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে—এটা অত্যন্ত অস্পষ্ট কথা। ডিসেম্বর থেকে জুন—ছয় মাস সময়। সুতরাং এটা কোনো রোডম্যাপ হতে পারে না। তাঁরা বারবার স্পষ্ট রোডম্যাপ এবং দ্রুত নির্বাচনের কথা বলে আসছেন। তা না হলে যে সংকটগুলো সৃষ্টি হচ্ছে, এগুলো কাটবে না। তাঁরা আশা করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার অতি দ্রুত ন্যূনতম সংস্কারগুলো করে অর্থাৎ যেগুলো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন, তা সম্পন্ন করে নির্বাচনের ঘোষণা দেবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তিনি এটা শুনে অত্যন্ত হতাশ হয়েছেন যে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য রেখেছেন, সেই বক্তব্যে তিনি নির্বাচনের রোডম্যাপের কথা বলেননি। তাঁরা হতাশ হয়েছেন যে, তাঁর বক্তব্যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) নামও একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি। অথচ এটাই ইতিহাস। তাঁরা আবার চান না, আওয়ামী লীগ যে ইতিহাস বিকৃত করেছে, এখন আবার সেই ইতিহাস বিকৃত হোক। প্রকৃত সত্যকে উদ্ঘাটিত করে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা—একটি গণতান্ত্রিক সরকার, সেই গণতান্ত্রিক সরকারে যত দ্রুত ফিরে যাওয়া যাবে, সমস্যাগুলো ততই সমাধান হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
অন্যদিকে এনসিপি সংস্কার এবং গণহত্যার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন মেনে নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সংস্কার ও বিচার ছাড়া কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করা হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। তাদের প্রতিহত করবে এনসিপি। ২৬ মার্চ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘সামনের দিনে আর যেন রক্ত দিতে না হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ করতে চাই। একাত্তর এবং চব্বিশ আলাদা কিছু না। একাত্তরে যা চেয়েছিলাম চব্বিশে তা অর্জন হয়েছে। যারা এটাকে পরস্পরবিরোধী করছে, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।’ তিনি অভিযোগ করেন, জাতির কাঁধে পুরোনো সংবিধান চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদকে আবার পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সংস্কার ও বিচার ছাড়াই দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।
এর বিপরীতে বিএনপির মহসচিব সংস্কার কোনো নতুন জিনিস নয়, মন্তব্য করে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের অনেকগুলো বিশাল পাহাড় নিয়ে এসেছে। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি পক্ষে-বিপক্ষে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এটি নিয়ে আজকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যেন এই প্রক্রিয়া (নির্বাচন) পিছিয়ে যায়, বিলম্বিত হয়, অন্য কারও সাহায্য করা যায়, দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়, সেই কাজগুলো শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে একটা নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তারা গণতন্ত্রের দিকে যেতে চায় না। তাই সকলকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’
এই যে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন দলের বক্তব্য ও অবস্থান, এর মধ্যে সব বিষয়ে সব সময় জামায়াত এবং অন্যান্য দলকে খুঁজে পাওয়া যায় না তাঁদের কৌশলগত কারণে। তবে আমরা তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে জানি। এখন জনপরিসরে প্রশ্ন হলো, ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা ক্ষমতা দখল করা এবং ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য অতীতে যে প্রক্রিয়াগুলো আমরা দেখেছি, এখনো সেগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখছি কি না? এই প্রক্রিয়ায় এ দেশের মানুষ কি সেই অতীত রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে পারবে?
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
এখনই রাজনীতির মাঠের উত্তাপ বাড়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। সম্ভাব্য নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা যত বাড়তে থাকবে এবং রাজনীতির মাঠের উত্তাপ ততই বেশি করে অনুভূত হতে থাকবে। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে। তবে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ধোঁয়াশা এখনো রয়ে গেছে। বিশেষ করে বিএনপি সে কথা স্পষ্ট করেই বলে যাচ্ছে। তারপরও রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁদের বিপরীত অবস্থান, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও অবস্থান প্রকাশ পাচ্ছে। ফলে উত্তাপও বাড়ছে।
কয়েকটি ঘটনা এই দফায় রাজনৈতিক উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমত, এর সূত্রপাত ঘটেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন বলেছেন যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই, তখন থেকেই। এই বিষয়ে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অভিন্ন, তা আমরা আগেও দেখেছি। কিন্তু জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান এর বিপরীত। তাঁরা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করে নিষিদ্ধ ঘোষণার পক্ষে। ফলে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে স্পষ্ট বিভক্তি এবং উভয় পক্ষের বিপরীতমুখী বক্তব্য ঘিরে বেশ একটা উত্তাপের আঁচ আমরা পেয়েছি। এই আঁচ উত্তাপে পরিণত করেছে এনপিসির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে। যেখানে তিনি সেনানিবাসে তাঁদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক করার কথা উল্লেখ করেছেন এবং সেখানেও আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে তো বটেই, আগামী নির্বাচনেও ইনক্লুসিভ করার একটি উদ্যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।
এরপর সারজিস আলমের এক রাজনৈতিক তৎপরতা আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে। সারজিস গত সোমবার ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামেন। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে যান পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে। দেবীগঞ্জ থেকে শতাধিক গাড়ির একটি বহর নিয়ে তিনি জেলার বোদা, পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা সফর করেন। এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনে ভোট প্রার্থনা করে প্রচারণাও চালান। তাঁর এই শোডাউন নিয়ে তাঁর নিজের দল এনসিপিসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তিনিও যথাসম্ভব এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেন। তবে তা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পায়নি বলেই মনে হচ্ছে। ফলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। গত মঙ্গলবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পেইন করতে যায়, তারা কী করবে, সেটা আমরা ভালো করে বুঝি।’
সারজিসের সফর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ হতে না হতেই আবার সামনে চলে আসে নির্বাচনের সময় নিয়ে বিতর্ক। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর পূর্বঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের যেকোনো সময়ের কথা উল্লেখ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপিও তাদের পূর্ব অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যকে অস্পষ্ট বলে উল্লেখ করে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ এবং অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে—এটা অত্যন্ত অস্পষ্ট কথা। ডিসেম্বর থেকে জুন—ছয় মাস সময়। সুতরাং এটা কোনো রোডম্যাপ হতে পারে না। তাঁরা বারবার স্পষ্ট রোডম্যাপ এবং দ্রুত নির্বাচনের কথা বলে আসছেন। তা না হলে যে সংকটগুলো সৃষ্টি হচ্ছে, এগুলো কাটবে না। তাঁরা আশা করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার অতি দ্রুত ন্যূনতম সংস্কারগুলো করে অর্থাৎ যেগুলো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন, তা সম্পন্ন করে নির্বাচনের ঘোষণা দেবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তিনি এটা শুনে অত্যন্ত হতাশ হয়েছেন যে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য রেখেছেন, সেই বক্তব্যে তিনি নির্বাচনের রোডম্যাপের কথা বলেননি। তাঁরা হতাশ হয়েছেন যে, তাঁর বক্তব্যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) নামও একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি। অথচ এটাই ইতিহাস। তাঁরা আবার চান না, আওয়ামী লীগ যে ইতিহাস বিকৃত করেছে, এখন আবার সেই ইতিহাস বিকৃত হোক। প্রকৃত সত্যকে উদ্ঘাটিত করে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা—একটি গণতান্ত্রিক সরকার, সেই গণতান্ত্রিক সরকারে যত দ্রুত ফিরে যাওয়া যাবে, সমস্যাগুলো ততই সমাধান হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
অন্যদিকে এনসিপি সংস্কার এবং গণহত্যার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন মেনে নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সংস্কার ও বিচার ছাড়া কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করা হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। তাদের প্রতিহত করবে এনসিপি। ২৬ মার্চ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘সামনের দিনে আর যেন রক্ত দিতে না হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ করতে চাই। একাত্তর এবং চব্বিশ আলাদা কিছু না। একাত্তরে যা চেয়েছিলাম চব্বিশে তা অর্জন হয়েছে। যারা এটাকে পরস্পরবিরোধী করছে, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।’ তিনি অভিযোগ করেন, জাতির কাঁধে পুরোনো সংবিধান চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদকে আবার পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সংস্কার ও বিচার ছাড়াই দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।
এর বিপরীতে বিএনপির মহসচিব সংস্কার কোনো নতুন জিনিস নয়, মন্তব্য করে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের অনেকগুলো বিশাল পাহাড় নিয়ে এসেছে। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি পক্ষে-বিপক্ষে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এটি নিয়ে আজকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যেন এই প্রক্রিয়া (নির্বাচন) পিছিয়ে যায়, বিলম্বিত হয়, অন্য কারও সাহায্য করা যায়, দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়, সেই কাজগুলো শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে একটা নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তারা গণতন্ত্রের দিকে যেতে চায় না। তাই সকলকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’
এই যে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন দলের বক্তব্য ও অবস্থান, এর মধ্যে সব বিষয়ে সব সময় জামায়াত এবং অন্যান্য দলকে খুঁজে পাওয়া যায় না তাঁদের কৌশলগত কারণে। তবে আমরা তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে জানি। এখন জনপরিসরে প্রশ্ন হলো, ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা ক্ষমতা দখল করা এবং ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য অতীতে যে প্রক্রিয়াগুলো আমরা দেখেছি, এখনো সেগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখছি কি না? এই প্রক্রিয়ায় এ দেশের মানুষ কি সেই অতীত রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে পারবে?
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
চীনের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা পাওয়া গেলে তিস্তা নদীর ড্রেজিং, নদী ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব। চীনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের কৃষি, জ্বালানি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।
৬ ঘণ্টা আগেঢাকার ঈদ উৎসব কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বহু শতাব্দীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতির এক বর্ণিল প্রতিচ্ছবি। মুঘল আমল থেকে শুরু করে আধুনিক সময় পর্যন্ত এই উৎসবের রূপ ও রীতিতে অনেক পরিবর্তন এলেও এর মূল চেতনা আজও বহমান।
১ দিন আগেই-মেইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের যুগেও পাঠক সংবাদপত্রে চিঠি লেখেন—এটাই প্রমাণ করে, মুদ্রিত শব্দের আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি। দ্রুত বদলে যাওয়া যোগাযোগের মাধ্যমের ভিড়েও কিছু কথা থাকে, যা কাগজে ছাপা হয়ে আলো ছড়ায়।
৩ দিন আগেঅপারেশন সার্চলাইটের নৃশংসতায় তখন আকাশে উড়ছে শকুন। রাজপথে চিৎকার করছে কুকুর। আকাশে ‘কা কা’ করে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে কাকেরা বুঝিয়ে দিচ্ছে, সোনার বাংলাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে পাকিস্তানি হানাদারেরা।
৩ দিন আগে