Ajker Patrika

মহালয়া, আনন্দবাজার ও শান্তিনিকেতন

আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২: ০১
মহালয়া, আনন্দবাজার  ও শান্তিনিকেতন

রাত করে ঘুমানো যাবে না, সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ার নির্দেশ এল। আগামীকাল মহালয়া। ভোর না হতেই যেতে হবে শান্তিনিকেতনের পাঠভবনের মাঠে। শান্তিনিকেতন মানেই দুর্বার আকর্ষণ! একটা মোহ টেনে নিয়ে যায় লাল মাটির গন্ধে মেশানো সবুজ প্রকৃতিতে। তাই শরীর ক্লান্ত হলেও এবার যেতেই হবে।

বেশ তা-ই হলো। ঘুম থেকে উঠেই নাকে-মুখে চায়ের পর্ব সেরে ছুটলাম পাঠভবনের দিকে। বোলপুর শহরের এলোমেলো গলি পেরিয়ে একেবারে পৌঁছালাম পাঠভবনের পেছনে। তার খানিকটা পথ হেঁটে পাঠভবনের মাঠে। ছেলেমেয়েরা দুর্দান্ত নেচে চলছে। ক্লান্তিহীন। ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর। তবু থামা নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে ছুটে এসে যোগ দিচ্ছে নাচে। তারুণ্যে উচ্ছ্বাসে ভরা যৌবনাদীপ্ত কণ্ঠের হো হো শব্দ আর ছন্দে ছন্দে নেচে যাওয়ার দৃশ্য যেন মাতাল করে তুলছে পুরো পাঠভবন।

শরতের কুয়াশা পাঠভবনের সারি সারি ছাতিমগাছের গা ছুঁয়ে নেমে আসছে পাঠভবনে। ছাত্রছাত্রীরা ছুটছে, নাচছে, গাইছে। একেবারে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ শিক্ষার্থী—সবাই ছুটে এসেছে দিনটি উদ্‌যাপনের জন্য। কথা হলো প্রাক্তন ছাত্রী বন্যা, সৌম, মাধুরীমা, রাজ্যশ্রী ও শিল্পীর সঙ্গে। দিনটি একসঙ্গে কাটানোর জন্য এরা এসেছে। পুরাতনের সঙ্গে নতুনের মেলবন্ধন, নতুন সুতোয় আবার নতুন করে জুড়ে দেওয়ার শুভপ্রয়াসে সবাই এই শরৎ সকালে মিলনমেলায় হাজির।

পাঠভবনজুড়ে রয়েছে ছাতিম, বকুল ও শালবীথি, যা পাঠভবনের অংশ। ছাতিমতলার ঠিক দক্ষিণে রয়েছে বকুলবীথি। এখানে রয়েছে প্রচুর বকুলগাছ আর তার থেকেই এর নাম হয়েছে বকুলবীথি। বেশ কয়েকটি গাছের নিচে কাঁকর বিছানো আর বেদি করা, এখানেই হয় পাঠভবনের ক্লাস। পাঠভবনের দক্ষিণে রয়েছে ঘণ্টিতলা। যেখানে প্রতি ঘণ্টা মনে করিয়ে দেয় জীবনের হিসাব।

পাঠভবনের শিক্ষক পার্থ বাবুর সঙ্গে কথা হলো। জানতে চাইলাম এই আনন্দবাজার কবে থেকে চালু হলো। তিনি বলেন, কবে থেকে যে শুরু হলো তা তিনি জানেন না। তবে জানেন মহালয়ার দিন সব ছাত্রছাত্রী এখানে ভোরে আসে এবং আনন্দের বন্যায় নিজেদের ভাসিয়ে দেয়। বিকেলে পাঠভবনের মাঠজুড়ে বসে মেলা। মেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিজেদের তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। এই বিক্রয়লব্ধ অর্থ নিজেরা নেয় না। সব অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয় এবং কর্তৃপক্ষ এই টাকা দিয়ে সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে।

পার্থ বাবু বললেন, এই কাজের মধ্য দিয়ে তাদের উদ্ভাবনী মেধার বিকাশ ও সৃজনশীল কাজের প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয় এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ জন্মায়। যেসব পণ্য এখানে বিক্রি হয়, সবই তাদের উদ্ভাবনী মেধার বিকাশের ফসল। এ মেলার নাম আনন্দবাজার, কারণ মনের আনন্দে সবাই এ বাজারে পসরা নিয়ে আসে। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্থীদের সৃজনমূলক কাজের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। এখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করারও ব্যবস্থা করেন। তিনি বলতেন, এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে।

সারা দিনের আনন্দ উৎসব শেষে এবার তাদের পুজোর ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পালা। মূলত মহালয়ার দিনে সকালে আনন্দ উৎসব ও বিকেলে আনন্দমেলায় আনন্দ উৎসব করে যার যার বাড়ির পানে ছুটে চলা।

এই আনন্দবাজারে শুধুই বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা নয়, শহরের নানা পাড়া থেকে সবাই এসে যোগ দেয়। পাঠভবন যেন এক আনন্দযজ্ঞের মহা সমাধিস্থল।

কবে কখন শুরু, কেউ জানে না। এ যেন এক রথের রশি শুরু কোথায় কেউ যানে না, সবাই টেনে নিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। হয়তো চলবে অনন্তকাল। এই সুতোয় বাঁধা থাকবে মহালয়া, আনন্দবাজার ও শান্তিনিকেতন।

নরেশ মধু সাধারণ সম্পাদক সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত