Ajker Patrika

১৫ আগস্টের নৃশংসতা ও পরবর্তী দিনগুলো

আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত
১৫ আগস্টের নৃশংসতা ও পরবর্তী দিনগুলো

সদ্য স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের ক্ষত মেটাতে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহচরেরা। স্বাধীনতা বিরোধীরা যে সেদিনও ওত পেতে বসে থাকবে, তা বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসে ছিল না। আমার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি হিসেবে নয়, বরং এক নীতিমান রাজনৈতিক নেতা ও দেশপ্রেমিক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। দলের ভেতর তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা ও নৈতিকতা জাতির জনককে বিমোহিত করেছিল। কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাই শুধু নয়, ওই সময়ে তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ও সামলাচ্ছিলেন। বাবাকে খুব কাছে থেকে পেয়েছি আমি। বাবাও আমাকে রাজনৈতিক নানা গল্প, মামা বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতার ঘটনাগুলো বলতেন একটু কাজের ফাঁক পেলেই। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম তাঁর কথা। বঙ্গবন্ধুর অতি আস্থাভাজন হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারও ঘাতকদের টার্গেট হয়। প্রাণ দিতে হয় আমার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতসহ আমাদের পরিবারের অনেককেই। সৃষ্টিকর্তার অশেষ মহিমায় গুলিবিদ্ধ হয়েও সেদিন বেঁচে যাই আমি।

স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকদের এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ছিল দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। ঘটনার আগের দিন ১৪ আগস্ট ছিল আমার দাদির মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩ আগস্ট তাই সপরিবারে দাদির মৃত্যুদিন পালনের জন্য আমাদের বরিশাল যাওয়ার কথা। কিন্তু বাবার ব্যক্তিগত সচিব জানালেন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। বাবার কাছে দুনিয়ার সব কাজের আগে থাকত দেশের হয়ে তিনি যে দায়িত্ব পালন করছেন, সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করা। তাই আমাদের বরিশাল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। ঘরোয়া পরিবেশে ১৪ আগস্ট আমাদের মিন্টো রোডের বাসায় (সরকারি বাসভবন) একটি মিলাদের আয়োজন করলেন। সেখানে আমাদের নিকটাত্মীয়দের বলা হলো। দুপুরের পর থেকেই বাড়িতে নিমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে থাকেন। দোয়া মাহফিল হলেও ঢাকার প্রায় সব আত্মীয় একত্রিত হওয়াতে আনন্দমুখর পরিবেশ ছিল। সেদিন আমার মামি; অর্থাৎ, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, সুলতানা কামাল, শেখ রাসেল, শেখ মনি, আরজু মণি, শেখ পরশ, শেখ তাপস, শেখ জামাল, রোজি জামাল, শেখ আবু নাসেরসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আমরা পারিবারিক আবহে দারুণ সময় উপভোগ করি। আমাদের আড্ডা-গল্প চলে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত। এর পর অতিথিরা তাঁদের বাসার উদ্দেশ্যে চলে যান। খুবই স্বাভাবিক ছিল সে সময়টি।

সবাই চলে যাওয়ার পর আমরা সেদিন একটু বেশি রাতেই ঘুমাতে যাই। আনুমানিক ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে হবে, তখন বাইরে গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। ঘাতকেরা তাদের পরিকল্পনা সফল করতে হেভি মেশিনগান সংযোজিত দ্রুতগতির জিপ, প্রচুর পরিমাণে অ্যামুনিশনসহ এক প্লাটুন ল্যান্সার সৈন্য নিয়ে শুরু করে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ। গুলির শব্দে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে যায়। তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আমরা ভাইবোনেরা নিজেদের রুম থেকে বের হয়ে বাবার রুমে যাই। তখন বাবাকে দেখলাম খুবই বিচলিত এবং আমার মা (বঙ্গবন্ধুর বোন) বলেন, ‘ভাইজানকে ফোন দাও।’

বাবা তখন মামাকে (বঙ্গবন্ধু) ফোন দিয়ে পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তখন ফোনের অপর প্রান্ত থেকে মামা (বঙ্গবন্ধু) বলেন, তিনি বিষয়টি দেখেছেন। আমিসহ আরও অনেকেই আমার বাবার রুমে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উপস্থিত হলাম। খানিক পরেই কয়েকজন সেনা সদস্য আমাদের বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা সশস্ত্র অবস্থায় আমার বাবাসহ সবাইকে নিচতলায় নামার জন্য বলে। আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি এবং তাদের নির্দেশে আমরা নিচতলার ড্রয়িং রুমে জড়ো হই। আমার বাবা তখন তাদের কমান্ডিং অফিসারের বিষয়ে জানতে চান। আমাদের পরিবারের সদস্যসহ অন্য আত্মীয়-স্বজনদের ঘাতকেরা একটি কক্ষে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এ সময় আমার মা ঘাতকদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘বাবা তোমরা কি আমাদের মাইরা ফেলবা?’ এর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ঘাতকদের নির্মম ব্রাশফায়ার। আমার পায়ে এসে গুলি লাগে এবং আমি লুটিয়ে পড়ি। আমার দুপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায় আমার বোন বেবি সেরনিয়াবাত এবং ভাই আরিফ সেরনিয়াবাত। দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাবা, মা, ভাবি সাহান আরা বেগম, ভাই শহীদ সেরনিয়াবাত ও কোলে থাকা চার বছরের ভাতিজা সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতসহ অন্যরা। কোমরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাহান আরা বেগমসহ অন্যরা কাতরাচ্ছিলেন। ঘাতকেরা এ অবস্থায় চলে যায়। এ সময় আহত বিউটি সেরনিয়াবাত রক্তাক্ত অবস্থায় বাবাকে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলে ঘাতকেরা ফিরে এসে দ্বিতীয় দফায় গুলি চালায়। ঘাতকের নির্মম ১৬টি বুলেট বিদ্ধ হয় আমার বোন বেবী সেরনিয়াবাতের শরীরে। যখন আমার মনে হলো সেনারা আমাদের বাসা থেকে প্রস্থান করেছে, তখন আমি উঠে দেখি, আমার বাবা-মা, ছোট ভাই, বোনসহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে স্থানীয় থানার একটি পুলিশের গাড়ি আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং আহতদের রুম থেকে বের করে নিয়ে যায়।

আবদুর রব সেরনিয়াবাতআমি তখন বাইরে বের হয়ে দেখি সকাল হয়েছে। আশপাশের লোকজন জড়ো হয়েছে। কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। নিরাপদ কোথাও ছুটে যেতে চাচ্ছিলাম। উৎসুক জনতা ছিল। এর মধ্যে কয়েকজন আমাকে রিকশায় তুলে দিল। আমি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমার বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মেয়ে কান্তা এবং ছেলে সাদিককে (রসিক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ) নিয়ে একটি রিকশায় চড়ে পুরান ঢাকায় চলে আসি। সেখানে এক আত্মীয়ের বাসায় কান্তা এবং সাদিককে নিরাপদে রেখে আমি আমার বোনের শ্বশুর বাড়ি পক্ষের এক আত্মীয়ের ‘ইউনিভার্সাল’ নামে একটি প্রিন্টিং প্রেসে আশ্রয় নিই। কোনো আত্মীয়ের বাসার চেয়ে আমার এই জায়গাটাকেই নিরাপদ মনে হয়েছিল। যেহেতু আমার পায়ে গুলি ছিল, সেখানে আমার চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়ে। গোপনে ডাক্তার ডাকা হলো। আমার পায়ে মূলত দুটি গুলি লাগে। ডাক্তার একটি বের করতে পারলেন, আরেকটি গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। আমি সপ্তাহখানেক সেখানে অবস্থান করি। আমার বোনজামাই মাঝেমধ্যে এসে খুব গোপনে খাবার দিয়ে যেতেন। আমার দিন চলে অর্ধাহারে-অনাহারে। আমার সাথে বাড়তি কাপড়ও ছিল না। এক কাপড় পরতে থাকলাম। তখন সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। সেখান থেকেই আমি চট্টগ্রামে চলে যাই।

আমার এক গণিত শিক্ষক আমার বোন মারফত খবর পেয়ে আমাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যান। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে কাঠ পরিবহন করা একটি ট্রাকে আমি ও আমার গণিত শিক্ষক রাতে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করি। ১৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া ঘটনার ১৮ দিন পর আমার ঢাকার বাইরে যাত্রা। আমরা সকালের দিকে চট্টগ্রামের মীরসরাই নামি। সেখান থেকে গ্রামের সরু রাস্তা ধরে গ্রামের ভেতর প্রবেশ করি এবং আমার শিক্ষকের পরিচিত একজনের বাসায় আশ্রয় নিই। সেখানে থেকে কয়েক দিন পর ফেনী নদীর পাশে আলীপুর নামক এক গ্রামে ৮-১০ দিন অবস্থান করি। তাঁরা আমার পরিচয় জানতে না পারলেও হয়তো কিছুটা অনুমান করতে পেরেছিলেন। এ ছাড়া দেশব্যাপী সেনাবাহিনী কিন্তু আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের খুঁজতে তল্লাশি শুরু করে। ফলে আমি নিজেকে অনিরাপদ বোধ করি। যে বাড়িতে অবস্থান করছিলাম সে বাড়ির সবুজ নামের এক যুবকের সহযোগিতায় কলা গাছের মাধ্যমে সাঁতার কেটে ফেনী নদী পার হয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া এসে এক বাড়িতে আশ্রয় নিই। পরবর্তীতে আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে নিউমার্কেটের পাশে সুখতারা হোটেলে অবস্থান করি। আমার সেই শিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি।

আমার ওই শিক্ষক আমাকে ভারত যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং তিনি নিজেই আমার যাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেন। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে ৪-৫ দিন পর ফেনীর ছাগলনাইয়া ফিরে এসে অক্টোবরের ১২-১৩ তারিখ বর্ডার অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করি। ভারতের নলুয়া নামক স্থানে বিএসএফের হাতে আটক হই। পরিচয় দেওয়ার পর তাঁরা আমাকে তাঁদের ক্যাম্পে নিয়ে যান। এর একদিন পর বিএসএফ আমাকে আগরতলা নিয়ে যান। সেখানে হাসপাতালে ভর্তি করে আমার গুলিবিদ্ধ পায়ের অপারেশন করে অপর একটি গুলি বের করা হয়। হাসপাতালে ২২-২৩ দিন কাটানোর পর কার্গো বিমানে করে কলকাতা আসি এবং দমদম বিমানবন্দর থেকে বরিশালের চিত্তরঞ্জন সুতার কলকাতার বাড়িতে আশ্রয় নিই।

আমি কলকাতা যাওয়ার আগে অন্যদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল না। যদিও সেদিনের হামলার বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম। আমার দুই বোন হেনা সেরনিয়াবাত এবং বিউটি সেরনিয়াবাত সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যায়। আজও তাঁরা গুলির ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। আমি তাঁদের সঙ্গেও সেভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমার মামা বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ কামাল, সুলতানা কামাল, শেখ রাসেল, শেখ জামাল, রোজি জামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং আমার ছোট মামা শেখ আবু নাসেরও ঘাতকের বুলেটে মারা যায়। এ ছাড়া আমার বোন আরজু মণির বাড়িতে আক্রমণ হয়। আমার বোন আরজু মণি এবং আমার বোনজামাই শেখ ফজলুল হক মণি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান, যা আমি প্রেসে অবস্থানকালে জানতে পারি। আমার বোনের পরিবার এবং বিশেষ করে আমার ভাগনে শেখ পরশ (বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান) এবং শেখ তাপসের (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র) মায়াবী মুখ মনে পড়ছিল শুধু, যা আমাকে আরও বেশি ব্যথিত করে তোলে।

ঘটনা জানলেও যোগাযোগ না থাকার কারণ হলো আমি তখন নিজের জীবন বাঁচানোর শঙ্কা নিয়ে অনেকটা আত্মগোপনে ছিলাম। কলকাতা যাওয়ার পর কলকাতার নর্দান পার্কে চিত্তরঞ্জনের বাড়িতে শেখ সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। কলকাতা থিয়েটার রোডে থাকা আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়। কলকাতার লেক টাউনে বিএফএফের ক্যাম্পে ৫ম এবং ৬ষ্ঠ তলা দুটি ফ্লোরে বাংলাদেশ থেকে আমরা যারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য এসেছিলাম, তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। পরে দিল্লিতে ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি, সেলিম ভাই ও শেখ মারুফ দিল্লি গিয়ে হাসিনা আপা এবং রেহানার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তখন এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অন্যরা দিল্লি থেকে চলে গেলেও আমি হাসিনা আপা এবং রেহানার সঙ্গে দিল্লিতে ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত একসঙ্গে অবস্থান করি।

তখনকার সময়ে চলমান সংকটে আমি বা আমাদের পরিবারের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্তদের পরিস্থিতি অনেকটা সংকটকালীন সময়ের মতো ছিল। ফলে অনেকের আমাদের সহযোগিতা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে ইউনিভার্সাল প্রেসে অবস্থানকালে টেলিভিশন সংবাদের মারফতে জানতে পারি তৎকালীন খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের প্রায় ৬০-৭০ জন যোগ দেন, যা আমাকে ব্যথিত করে। মনে আছে, নানু (বঙ্গবন্ধুর মা) মারা যাওয়ার পর আমি মামার (বঙ্গবন্ধু) সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। মামার সঙ্গে মোশতাক ছিল। সেদিন লঞ্চে মামাকে জড়িয়ে কি অঝোরে কেঁদেছিল লোকটা! মামাকে হত্যার পর তাঁর এমন রূপ দেখব ভাবিনি।

আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতএক বছর কেটে গেল চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। তখন দিল্লিতে শেখ হাসিনা আপা এবং রেহানার সঙ্গে আমিই ছিলাম। কারওরই মনের অবস্থা ভালো নেই। আপার কথামতোই আমি হাসিনা আপা এবং রেহানা একসঙ্গে আজমীর শরিফ গেলাম। সেখানে প্রথম ১৫ আগস্ট উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খাদেম কলিমউদ্দিন আমাদের নিয়ে দোয়া করেন। সেদিন রেহানা ও আমি কান্না করছিলাম। শেখ হাসিনা আপাকেও দেখি কান্না করতে। তবে তিনি বারবার আমাদের থেকে কান্না লুকাতে চান, আর সান্ত্বনা দেন।

আমি রাজনৈতিক আশ্রয় শেষে চার বছর পর দেশে ফিরি। প্রথমে ঢাকা আসি। এর পর বরিশালের কালিবাড়ি আমাদের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। কিন্তু তখন জিয়াউর রহমান সরকার বাড়িটি সিজ করে নেন। ফলে আমাদের বাড়িতে আমাদের প্রবেশাধিকার না থাকায় সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এ বাড়ি-ও বাড়ি করে আমাকে নিদারুণ কষ্টে সময় পার করতে হয়েছিল সে সময়। আমার বাবা নীতিমান রাজনীতিক হওয়ায় আমাদের জন্য বিশেষ ধন-সম্পদ রেখে যেতে পারেননি। স্বভাবতই অর্থনৈতিক চাপ এসে পড়ে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমি খুলনায় নিজের পরিচয় গোপন রেখে ব্যবসা শুরু করি। এ ছাড়া তৎকালীন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকায় আমাদের পরিবারের ওপর যথেষ্ট চাপ ছিল। স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারছিলাম না।

সেখান থেকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের মাধ্যমে আজকের বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে, বারবার প্রমাণ করেছে। যে মানুষগুলোকে সেদিন আমরা হারিয়েছি, ঘাতকেরা হয়তো তাদের নাম, স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে চেয়েছিল সেদিন। কিন্তু এটি তাদের আরও মৃত্যুঞ্জয়ী করে গেছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সুযোগ্য কন্যাদ্বয় রেখে গেছেন। তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা সামনে দাঁড়িয়ে পিতার সোনার বাংলা বাস্তবায়নে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। বাবার মতোই জনদরদি এমন নেত্রী দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেওয়ার ব্রত গ্রহণ করেছেন। শেখ পরিবার এবং সেরনিয়াবাত পরিবার সেদিন পথভ্রষ্ট কিছু সেনা কর্মকর্তা দ্বারা যে ক্ষতির শিকার হয়েছে, তা কোনো দিন পূরণ হওয়ার নয়। সেদিনের একজন ভুক্তভোগী হয়েও সর্বদা এ দেশের মঙ্গল কামনা করি। দেশের যেকোনো প্রয়োজনে নিজেকে উজাড় করে দিতে সর্বদা প্রস্তুত আমি এই মাটিকে ভীষণ ভালোবাসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ