অবরুদ্ধ দেশের সাংবাদিকতা
জাহীদ রেজা নূর
নভেম্বর মাসে ঢাকা শহরের অবস্থা কতটা অরক্ষিত ছিল, সেটা বোঝা যাবে ১১ নভেম্বর প্রকাশিত একটি সংবাদে। সংক্ষেপে সে খবরটি এ রকম:
রোকেয়া হলে ডাকাতি
গত মঙ্গলবার দিবাগত শেষ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এক মারাত্মক ডাকাতি সংঘটিত হয়। দুষ্কৃতিকারীরা হলের প্রভোষ্ট ও হলে অবস্থানকারী ছাত্রীদের হাজার হাজার টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র লইয়া উধাও হয়।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ রাত প্রায় সোয়া দুইটার সময় আনুমানিক ৬০-৭০ জন দুষ্কৃতিকারী রিভলবার, লোহার রড ও অনেক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া জোরপূর্বক রোকেয়া হলে প্রবেশ করে। তারপর তাহারা গেটে প্রহরারত ৪/৫ জন দারোয়ানকে বেদম প্রহার করে এবং তাহাদের বাঁধিয়া ফেলে। তাহারা হলের টেলিফোনের তার কাটিয়া ফেলে ও বিজলী বাতির মেইন সুইচ অফ করিয়া দেয়। অতঃপর দুষ্কৃতিকারীরা দুষ্কর্ম সাধনের জন্য ছাত্রীদের হোস্টেলের দিকে ধাবিত হয়। একতলা হোস্টেলটিতে ৩০ জন ছাত্রী অবস্থান করিতেছিল, ডাকাতরা প্রথমে সেখানে হামলা চালায়। সেহরির সময় একজন ছাত্রী হাতমুখ ধোয়ার জন্য রুম হইতে বাহির হইয়া বারান্দা দিয়া বাথরুমে যাইতেছিল, ২/৩ জন দুষ্কৃতিকারী ছাত্রীকে চাপিয়া ধরে। দুষ্কৃতিকারীরা সেই অবস্থায় তাহাকে তাহার রুমে লইয়া যায় এবং তাহার ঘড়ি কলম টাকা পয়সা ও গায়ের অলঙ্কার ছিনাইয়া নেয়। ইহার পর দুষ্কৃতিকারীরা ৭/৮ জন করিয়া বিভক্ত হইয়া প্রত্যেক ছাত্রী রুমে প্রবেশ করে এবং পিস্তল ও ছোরার ভয় দেখাইয়া তাহাদের ঘড়ি, কলম, অলঙ্কারাদী ও জিনিসপত্র লইয়া যায়।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উক্ত হোস্টেলে তিনজন ছাত্রী সাংবাদিকদের নিকট উপরোক্ত ঘটনাবলী বর্ণনা করেন। দুষ্কৃতিকারীরা তালা ভাংগিয়া ছাত্রীদের কমনরুমে প্রবেশ করে এবং সেখান হইতে রেডিও ও টেলিভিশন সেটও লইয়া গিয়াছে।
(দৈনিক আজাদ, ১১ নভেম্বর ১৯৭১)
খবরটি আরও বড় এবং পত্রিকাগুলো সেটি গুরুত্ব দিয়েই ছাপে। সেদিন ইত্তেফাক কোন খবরগুলো ছেপেছিল? ভাঁজের ওপরেই শেষ কলামে ছাপা হয়েছিল একটি খবর। পরে ইতিহাস পাঠ করে জানা গেছে, এপিপি পরিবেশিত খবরটি ছিল ভুয়া। এপিপি এভাবেই পাকিস্তান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিত এবং তা পরিবেশন করতে বাধ্য হতো পত্রিকাগুলো। সংবাদটির শিরোনাম ছিল:
জেনারেল নিয়াজীর ফেনী ও বিলোনিয়া সফর
এপিপি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়: ইস্টার্ন কম্যান্ডের কমান্ডার এবং খ এলাকার সামরিক আইন পরিচালক লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি গতকাল (বুধবার) ফেনী, বিলোনিয়া ও চট্টগ্রাম সফর করেন এবং সেখানে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার ও জওয়ানদের সহিত সাক্ষাৎ করেন।
ফেনী গমন করিলে স্থানীয় কমান্ডার তাহাকে সম্বর্ধনা জানান এবং তাহার কাছে সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। কম্যান্ডার জেনারেল নিয়াজীর কাছে জানান যে, সীমান্তের গ্রামগুলির উপর বিনা উস্কানিতে ভারতীয় গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় সেখানে নিরীহ নর-নারী ও শিশুরা হতাহত হইতেছে।
সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সৈন্য ও তাহার এজেন্টদের চাপ বৃদ্ধি পাইয়াছে বলিয়াও তিনি জানান।
জেনারেল নিয়াজী বিলোনিয়ায় সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের সহিতও সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রামে এক সংক্ষিপ্ত সফরে গমন করেন।
(দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ নভেম্বর, ১৯৭১)
খবরটি যে ডাহা মিথ্যা, তার প্রমাণ পাওয়া যায় যুদ্ধ শেষ হলে। ১৯৭১-এর ৫ নভেম্বর, মধ্যরাতে একদিক থেকে দশম রেজিমেন্ট, আরেক দিক থেকে দ্বিতীয় রেজিমেন্ট গোপনে ভারতের অংশ থেকে বাংলাদেশের মাটিতে প্রবেশ শুরু করে। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় পাকিস্তানিদের সঙ্গে। ১১ নভেম্বর বিলোনিয়া মুক্ত হয়। পাকিস্তানিদের হটিয়ে দেওয়া হয়, গ্রেপ্তার করা হয় অনেককে। সেই ভয়াবহ যুদ্ধের সময় নিয়াজি বিলোনিয়ায় গেছেন, এ রকম বানোয়াট খবরও তখন এপিপির বরাতে ছাপা হতো।
ইত্তেফাকে এভাবে ছাপা হয়েছে আরেকটি খবর:
ইন্দিরা বাংলা দেশের স্বাধীনতা চান
প্যারিস, ১০ই নভেম্বর (এপিপি/রয়টার) ফরাসী সম্পাদকদের দ্বারা কোনঠাসা হইয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী সোমবারে স্বীকার করেন যে, তিনি ‘বাংলা দেশের’ স্বাধীনতার পক্ষে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন যে, সংকটের যে-কোন সমাধানের শর্ত হইতেছে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি। তিনি ইহাও পরিস্কার করিয়া বলেন যে, শেখ মুজিবের মুক্তি ছাড়া ভারত উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দিবে না।
ফ্রান্সের নেতৃস্থানীয় সম্পাদকদের সহিত এই টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিসেস গান্ধীকে সীমান্ত হইতে সৈন্য প্রত্যাহারে তাঁহার অসম্মতির বিষয়ে বার বার প্রশ্ন করা হয়। গেরিলাদের ট্রেনিং দান, গেরিলাদের ভারতীয় অস্ত্র সরবরাহ এবং তাঁহার বিবেচনায় পূর্ব পাকিস্তানের চূড়ান্ত সমাধান সম্পর্কে বার বার প্রশ্ন করা হয়।
টেলিভিশনের বৈদেশিক দফতরের প্রধান সমালোচনামূলক প্রশ্নের এই ধারা শুরু করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক গৃহীত এবং মিসেস গান্ধী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত বিভিন্ন প্রস্তাবের উপর আলোকপাত করিয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে মন্তব্য করিতে বলেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ‘স্বাধীনতাই পূর্ব বাংলার একমাত্র সমাধান এবং আগে হউক পরে হউক ইহা আসিবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, ‘হ্যাঁ, স্বাধীন বাংলা দেশই একমাত্র সমাধান এবং এই স্বাধীনতা অবশ্যম্ভাবী।’
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সহিত সাক্ষাৎ করিতে তিনি অসম্মতি জানাইয়াছেন কেন—এই প্রশ্নের জবাবে মিসেস গান্ধী বলেন যে তিনি তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে এবং পাক-ভারত সমস্যাবলী লইয়া আলোচনা করিতে ইচ্ছুক আছেন। কিন্তু বাংলার সমস্যা সমাধান ‘বাংলা দেশের’ জনসাধারণকেই করিতে হইবে।
(দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ নভেম্বর, ১৯৭১)
এই প্রতিবেদনে কিছুই লুকানো নেই। পাকিস্তানি সংবাদ সংস্থা যদিও ইন্দিরা গান্ধীর এই বক্তব্যকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাংলার পাঠক এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জেনে গেছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভারতের অবস্থানের কথা, মুক্তিবাহিনীকে ভারত কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেওয়ার কথা। এই সংবাদ ছাপা হওয়ায় পাকিস্তানি দালালেরা ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি বিষোদ্গার করা শুরু করলেও মুক্তিকামী বাংলা বুঝে গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিবাহিনী সক্রিয় রয়েছে। ভারতও তাদের সহায়তা করছে।
অপরদিকে অবরুদ্ধ বাংলায় পাকিস্তানের দালাল সংবাদপত্রগুলো পাকিস্তানের পক্ষে এবং পাকিস্তানের তাঁবেদারদের পক্ষে যে সংবাদগুলো ছেপে চলেছিল, সেগুলো দেখেই পরে হানাদার বাহিনী ও তার এদেশীয় দোসরদের নৃশংসতার প্রমাণ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
নভেম্বর মাসে ঢাকা শহরের অবস্থা কতটা অরক্ষিত ছিল, সেটা বোঝা যাবে ১১ নভেম্বর প্রকাশিত একটি সংবাদে। সংক্ষেপে সে খবরটি এ রকম:
রোকেয়া হলে ডাকাতি
গত মঙ্গলবার দিবাগত শেষ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এক মারাত্মক ডাকাতি সংঘটিত হয়। দুষ্কৃতিকারীরা হলের প্রভোষ্ট ও হলে অবস্থানকারী ছাত্রীদের হাজার হাজার টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র লইয়া উধাও হয়।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ রাত প্রায় সোয়া দুইটার সময় আনুমানিক ৬০-৭০ জন দুষ্কৃতিকারী রিভলবার, লোহার রড ও অনেক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া জোরপূর্বক রোকেয়া হলে প্রবেশ করে। তারপর তাহারা গেটে প্রহরারত ৪/৫ জন দারোয়ানকে বেদম প্রহার করে এবং তাহাদের বাঁধিয়া ফেলে। তাহারা হলের টেলিফোনের তার কাটিয়া ফেলে ও বিজলী বাতির মেইন সুইচ অফ করিয়া দেয়। অতঃপর দুষ্কৃতিকারীরা দুষ্কর্ম সাধনের জন্য ছাত্রীদের হোস্টেলের দিকে ধাবিত হয়। একতলা হোস্টেলটিতে ৩০ জন ছাত্রী অবস্থান করিতেছিল, ডাকাতরা প্রথমে সেখানে হামলা চালায়। সেহরির সময় একজন ছাত্রী হাতমুখ ধোয়ার জন্য রুম হইতে বাহির হইয়া বারান্দা দিয়া বাথরুমে যাইতেছিল, ২/৩ জন দুষ্কৃতিকারী ছাত্রীকে চাপিয়া ধরে। দুষ্কৃতিকারীরা সেই অবস্থায় তাহাকে তাহার রুমে লইয়া যায় এবং তাহার ঘড়ি কলম টাকা পয়সা ও গায়ের অলঙ্কার ছিনাইয়া নেয়। ইহার পর দুষ্কৃতিকারীরা ৭/৮ জন করিয়া বিভক্ত হইয়া প্রত্যেক ছাত্রী রুমে প্রবেশ করে এবং পিস্তল ও ছোরার ভয় দেখাইয়া তাহাদের ঘড়ি, কলম, অলঙ্কারাদী ও জিনিসপত্র লইয়া যায়।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উক্ত হোস্টেলে তিনজন ছাত্রী সাংবাদিকদের নিকট উপরোক্ত ঘটনাবলী বর্ণনা করেন। দুষ্কৃতিকারীরা তালা ভাংগিয়া ছাত্রীদের কমনরুমে প্রবেশ করে এবং সেখান হইতে রেডিও ও টেলিভিশন সেটও লইয়া গিয়াছে।
(দৈনিক আজাদ, ১১ নভেম্বর ১৯৭১)
খবরটি আরও বড় এবং পত্রিকাগুলো সেটি গুরুত্ব দিয়েই ছাপে। সেদিন ইত্তেফাক কোন খবরগুলো ছেপেছিল? ভাঁজের ওপরেই শেষ কলামে ছাপা হয়েছিল একটি খবর। পরে ইতিহাস পাঠ করে জানা গেছে, এপিপি পরিবেশিত খবরটি ছিল ভুয়া। এপিপি এভাবেই পাকিস্তান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিত এবং তা পরিবেশন করতে বাধ্য হতো পত্রিকাগুলো। সংবাদটির শিরোনাম ছিল:
জেনারেল নিয়াজীর ফেনী ও বিলোনিয়া সফর
এপিপি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়: ইস্টার্ন কম্যান্ডের কমান্ডার এবং খ এলাকার সামরিক আইন পরিচালক লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি গতকাল (বুধবার) ফেনী, বিলোনিয়া ও চট্টগ্রাম সফর করেন এবং সেখানে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার ও জওয়ানদের সহিত সাক্ষাৎ করেন।
ফেনী গমন করিলে স্থানীয় কমান্ডার তাহাকে সম্বর্ধনা জানান এবং তাহার কাছে সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। কম্যান্ডার জেনারেল নিয়াজীর কাছে জানান যে, সীমান্তের গ্রামগুলির উপর বিনা উস্কানিতে ভারতীয় গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় সেখানে নিরীহ নর-নারী ও শিশুরা হতাহত হইতেছে।
সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সৈন্য ও তাহার এজেন্টদের চাপ বৃদ্ধি পাইয়াছে বলিয়াও তিনি জানান।
জেনারেল নিয়াজী বিলোনিয়ায় সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের সহিতও সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রামে এক সংক্ষিপ্ত সফরে গমন করেন।
(দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ নভেম্বর, ১৯৭১)
খবরটি যে ডাহা মিথ্যা, তার প্রমাণ পাওয়া যায় যুদ্ধ শেষ হলে। ১৯৭১-এর ৫ নভেম্বর, মধ্যরাতে একদিক থেকে দশম রেজিমেন্ট, আরেক দিক থেকে দ্বিতীয় রেজিমেন্ট গোপনে ভারতের অংশ থেকে বাংলাদেশের মাটিতে প্রবেশ শুরু করে। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় পাকিস্তানিদের সঙ্গে। ১১ নভেম্বর বিলোনিয়া মুক্ত হয়। পাকিস্তানিদের হটিয়ে দেওয়া হয়, গ্রেপ্তার করা হয় অনেককে। সেই ভয়াবহ যুদ্ধের সময় নিয়াজি বিলোনিয়ায় গেছেন, এ রকম বানোয়াট খবরও তখন এপিপির বরাতে ছাপা হতো।
ইত্তেফাকে এভাবে ছাপা হয়েছে আরেকটি খবর:
ইন্দিরা বাংলা দেশের স্বাধীনতা চান
প্যারিস, ১০ই নভেম্বর (এপিপি/রয়টার) ফরাসী সম্পাদকদের দ্বারা কোনঠাসা হইয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী সোমবারে স্বীকার করেন যে, তিনি ‘বাংলা দেশের’ স্বাধীনতার পক্ষে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন যে, সংকটের যে-কোন সমাধানের শর্ত হইতেছে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি। তিনি ইহাও পরিস্কার করিয়া বলেন যে, শেখ মুজিবের মুক্তি ছাড়া ভারত উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দিবে না।
ফ্রান্সের নেতৃস্থানীয় সম্পাদকদের সহিত এই টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিসেস গান্ধীকে সীমান্ত হইতে সৈন্য প্রত্যাহারে তাঁহার অসম্মতির বিষয়ে বার বার প্রশ্ন করা হয়। গেরিলাদের ট্রেনিং দান, গেরিলাদের ভারতীয় অস্ত্র সরবরাহ এবং তাঁহার বিবেচনায় পূর্ব পাকিস্তানের চূড়ান্ত সমাধান সম্পর্কে বার বার প্রশ্ন করা হয়।
টেলিভিশনের বৈদেশিক দফতরের প্রধান সমালোচনামূলক প্রশ্নের এই ধারা শুরু করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক গৃহীত এবং মিসেস গান্ধী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত বিভিন্ন প্রস্তাবের উপর আলোকপাত করিয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে মন্তব্য করিতে বলেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ‘স্বাধীনতাই পূর্ব বাংলার একমাত্র সমাধান এবং আগে হউক পরে হউক ইহা আসিবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, ‘হ্যাঁ, স্বাধীন বাংলা দেশই একমাত্র সমাধান এবং এই স্বাধীনতা অবশ্যম্ভাবী।’
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সহিত সাক্ষাৎ করিতে তিনি অসম্মতি জানাইয়াছেন কেন—এই প্রশ্নের জবাবে মিসেস গান্ধী বলেন যে তিনি তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে এবং পাক-ভারত সমস্যাবলী লইয়া আলোচনা করিতে ইচ্ছুক আছেন। কিন্তু বাংলার সমস্যা সমাধান ‘বাংলা দেশের’ জনসাধারণকেই করিতে হইবে।
(দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ নভেম্বর, ১৯৭১)
এই প্রতিবেদনে কিছুই লুকানো নেই। পাকিস্তানি সংবাদ সংস্থা যদিও ইন্দিরা গান্ধীর এই বক্তব্যকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাংলার পাঠক এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জেনে গেছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভারতের অবস্থানের কথা, মুক্তিবাহিনীকে ভারত কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেওয়ার কথা। এই সংবাদ ছাপা হওয়ায় পাকিস্তানি দালালেরা ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি বিষোদ্গার করা শুরু করলেও মুক্তিকামী বাংলা বুঝে গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিবাহিনী সক্রিয় রয়েছে। ভারতও তাদের সহায়তা করছে।
অপরদিকে অবরুদ্ধ বাংলায় পাকিস্তানের দালাল সংবাদপত্রগুলো পাকিস্তানের পক্ষে এবং পাকিস্তানের তাঁবেদারদের পক্ষে যে সংবাদগুলো ছেপে চলেছিল, সেগুলো দেখেই পরে হানাদার বাহিনী ও তার এদেশীয় দোসরদের নৃশংসতার প্রমাণ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
১৫ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার। ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে বের হওয়ার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত খুব প্রয়োজন। সেই বন্দোবস্তের রূপরেখাটা কেমন হবে, সেটা নিয়ে বহু বছর ধরে কথা হচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগেযেকোনো সরকারের অজনপ্রিয় তথা জনবিচ্ছিন্ন হওয়া এবং তার পরিণতিতে পতনের পেছনে আমলাতন্ত্রের বিরাট ভূমিকা থাকে। বিপরীতে সরকারের জনপ্রিয় হওয়ার পেছনেও প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে তার প্রশাসনযন্ত্র। কেননা, সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা এবং তার রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয় প্রশাসনের লোকজনের মাধ্যমেই
৬ ঘণ্টা আগেপ্রতিকূলে চলা মানুষেরাই। আমাদের খাই খাই স্বভাবের সমাজে একজন ব্যতিক্রমী মানুষের উদাহরণ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলী। তিনি একাই ১ লাখ ১০ হাজার তালগাছ রোপণ করেছেন। এ জন্য তিনি নিজের জমি বিক্রি করতেও কার্পণ্য করেননি। আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নন খোরশেদ। অভাব-অনটন তাঁর সংসারে
৬ ঘণ্টা আগেবিজয় দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া একটি পোস্ট নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি
১ দিন আগে