মাসুমা হক প্রিয়াংকা
গতকাল ২০ মার্চ ছিল বিশ্ব সুখ দিবস। সুখ কি কোনো বিশেষ দিনের বিষয়? সুখের সংজ্ঞা, উৎস এবং তার নাগাল পাওয়া নিয়ে কিছু ভাবনা ভাবতে দোষের কি! সুখ কি কেবলই বৈষয়িক সচ্ছলতা? নাকি এটি মানসিক প্রশান্তি, সম্পর্কের উষ্ণতা, নাকি এক নিখাদ অনুভূতি, যা ধরা দেয় ক্ষণিকের জন্য? সুখের সন্ধানে মানুষ প্রতিনিয়ত দৌড়াচ্ছে—উন্নত জীবন, ভালো চাকরি, অর্থ, খ্যাতি কিংবা সামাজিক স্বীকৃতি লাভের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করছে। কিন্তু সুখ কি আদৌ ধরা দেয়? নাকি আমরা ভুল দিকেই ছুটছি?
সুখের স্বরূপ নিয়ে দার্শনিক, বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, ‘সুখ হলো জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য’। অথচ এই লক্ষ্য নির্ধারণেই বিভ্রান্তি সবচেয়ে বেশি। কেউ সুখকে দেখতে পান সম্পদের মাঝে, কেউবা ভালোবাসার সম্পর্কে। কেউ মনে করেন স্বাধীনতাই প্রকৃত সুখ, কেউবা নিঃস্বার্থ সেবায় খুঁজে পান প্রশান্তি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সুখের সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। সমাজ আমাদের শেখায়, সফলতাই সুখ এনে দেয়। কিন্তু আমরা কি সত্যিই সফলতার মাধ্যমে সুখ পাই, নাকি সুখের চাপে সাফল্যের দৌড়ে হাঁপিয়ে উঠি?
আধুনিক বিশ্বে সুখ মাপার জন্যও সূচক নির্ধারিত হয়েছে। জাতিসংঘ প্রতিবছর প্রকাশ করে ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’, যেখানে মানুষের গড় আয়ু, সামাজিক নিরাপত্তা, আর্থিক সচ্ছলতা, স্বাধীনতা, দুর্নীতির হার এবং জীবনযাত্রার মানের ওপর ভিত্তি করে সুখের মাত্রা নির্ধারিত হয়। তবে এই সূচক কি সত্যিকার সুখ বোঝায়? কেননা দেখা যায়, অনেক উন্নত দেশ যেখানে জীবনযাত্রার মান উচ্চতর, সেখানেও হতাশা, মানসিক চাপ এবং আত্মহত্যার হার বেশি। তাহলে কি কেবল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই সুখের মূল চাবিকাঠি নয়?
সুখের সন্ধানে আমরা ছোটবেলা থেকে শিখি ভালো রেজাল্ট করতে হবে, ভালো চাকরি পেতে হবে, সামাজিক মর্যাদা অর্জন করতে হবে—এসব করলেই সুখ আসবে! কিন্তু যখন আমরা একের পর এক লক্ষ্য অর্জন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন টের পাই—সুখ যেন আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সুখ কি তবে ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্ন, যা কখনোই বাস্তবে ধরা দেয় না? নাকি এটি একেবারে ব্যক্তিগত অনুভূতি, যা নির্ভর করে আমাদের মানসিক অবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর?
গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তকে উপভোগ করতে জানেন, তাঁদের সুখবোধ বেশি। সুখ মানে বড় কোনো সাফল্য নয়, বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট আনন্দ। পরিবারের সঙ্গে বসে একসঙ্গে খাওয়া, বৃষ্টির দিনে প্রিয় বই হাতে নিয়ে সময় কাটানো, অন্যকে একটু সাহায্য করা—এসব মুহূর্তেই সুখের প্রকৃত সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা কি তা উপলব্ধি করি?
আজকের এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা সুখের সংজ্ঞা পাল্টে ফেলেছি। আমাদের বিশ্বাস, যে বেশি উপার্জন করে, সে বেশি সুখী। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, যাদের ভোগের সামর্থ্য সবচেয়ে বেশি, তাদের মধ্যেই অতৃপ্তি বেশি। সুখের জন্য শুধু বাহ্যিক সফলতা নয়, প্রয়োজন মানসিক পরিতৃপ্তি। অর্থ, খ্যাতি, ক্ষমতা সুখের সহায়ক হতে পারে, কিন্তু এগুলোই যদি একমাত্র লক্ষ্য হয়, তাহলে সুখ আমাদের কাছে অধরা থেকে যাবে।
বিশ্ব সুখ দিবসে তাই আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কীভাবে সুখী হতে পারি। সুখ আসলে আমাদের চারপাশেই আছে, কিন্তু আমরা তা খুঁজতে গিয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। সুখ মানে কেবল বড় কিছু পাওয়া নয়, বরং যা আছে তা উপভোগ করা। ছোট ছোট আনন্দ, সম্পর্কের উষ্ণতা, আত্মার প্রশান্তি এবং কৃতজ্ঞতা—এগুলোই প্রকৃত সুখ এনে দেয়। সুখ কোনো গন্তব্য নয়, বরং এটি একটি যাত্রা। আমরা যদি প্রতিদিনের মুহূর্তগুলোকে ভালোবাসতে শিখি, যদি অতৃপ্তি নয়, বরং সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিই, তাহলে হয়তো সুখ আর খুঁজতে হবে না
—এটি আমাদের জীবনেই থাকবে, নীরবে, অবিরাম।
লেখক: মাসুমা হক প্রিয়াংকা
সমাজকর্মী ও গবেষক
গতকাল ২০ মার্চ ছিল বিশ্ব সুখ দিবস। সুখ কি কোনো বিশেষ দিনের বিষয়? সুখের সংজ্ঞা, উৎস এবং তার নাগাল পাওয়া নিয়ে কিছু ভাবনা ভাবতে দোষের কি! সুখ কি কেবলই বৈষয়িক সচ্ছলতা? নাকি এটি মানসিক প্রশান্তি, সম্পর্কের উষ্ণতা, নাকি এক নিখাদ অনুভূতি, যা ধরা দেয় ক্ষণিকের জন্য? সুখের সন্ধানে মানুষ প্রতিনিয়ত দৌড়াচ্ছে—উন্নত জীবন, ভালো চাকরি, অর্থ, খ্যাতি কিংবা সামাজিক স্বীকৃতি লাভের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করছে। কিন্তু সুখ কি আদৌ ধরা দেয়? নাকি আমরা ভুল দিকেই ছুটছি?
সুখের স্বরূপ নিয়ে দার্শনিক, বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, ‘সুখ হলো জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য’। অথচ এই লক্ষ্য নির্ধারণেই বিভ্রান্তি সবচেয়ে বেশি। কেউ সুখকে দেখতে পান সম্পদের মাঝে, কেউবা ভালোবাসার সম্পর্কে। কেউ মনে করেন স্বাধীনতাই প্রকৃত সুখ, কেউবা নিঃস্বার্থ সেবায় খুঁজে পান প্রশান্তি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সুখের সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। সমাজ আমাদের শেখায়, সফলতাই সুখ এনে দেয়। কিন্তু আমরা কি সত্যিই সফলতার মাধ্যমে সুখ পাই, নাকি সুখের চাপে সাফল্যের দৌড়ে হাঁপিয়ে উঠি?
আধুনিক বিশ্বে সুখ মাপার জন্যও সূচক নির্ধারিত হয়েছে। জাতিসংঘ প্রতিবছর প্রকাশ করে ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’, যেখানে মানুষের গড় আয়ু, সামাজিক নিরাপত্তা, আর্থিক সচ্ছলতা, স্বাধীনতা, দুর্নীতির হার এবং জীবনযাত্রার মানের ওপর ভিত্তি করে সুখের মাত্রা নির্ধারিত হয়। তবে এই সূচক কি সত্যিকার সুখ বোঝায়? কেননা দেখা যায়, অনেক উন্নত দেশ যেখানে জীবনযাত্রার মান উচ্চতর, সেখানেও হতাশা, মানসিক চাপ এবং আত্মহত্যার হার বেশি। তাহলে কি কেবল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই সুখের মূল চাবিকাঠি নয়?
সুখের সন্ধানে আমরা ছোটবেলা থেকে শিখি ভালো রেজাল্ট করতে হবে, ভালো চাকরি পেতে হবে, সামাজিক মর্যাদা অর্জন করতে হবে—এসব করলেই সুখ আসবে! কিন্তু যখন আমরা একের পর এক লক্ষ্য অর্জন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন টের পাই—সুখ যেন আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সুখ কি তবে ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্ন, যা কখনোই বাস্তবে ধরা দেয় না? নাকি এটি একেবারে ব্যক্তিগত অনুভূতি, যা নির্ভর করে আমাদের মানসিক অবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর?
গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তকে উপভোগ করতে জানেন, তাঁদের সুখবোধ বেশি। সুখ মানে বড় কোনো সাফল্য নয়, বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট আনন্দ। পরিবারের সঙ্গে বসে একসঙ্গে খাওয়া, বৃষ্টির দিনে প্রিয় বই হাতে নিয়ে সময় কাটানো, অন্যকে একটু সাহায্য করা—এসব মুহূর্তেই সুখের প্রকৃত সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা কি তা উপলব্ধি করি?
আজকের এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা সুখের সংজ্ঞা পাল্টে ফেলেছি। আমাদের বিশ্বাস, যে বেশি উপার্জন করে, সে বেশি সুখী। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, যাদের ভোগের সামর্থ্য সবচেয়ে বেশি, তাদের মধ্যেই অতৃপ্তি বেশি। সুখের জন্য শুধু বাহ্যিক সফলতা নয়, প্রয়োজন মানসিক পরিতৃপ্তি। অর্থ, খ্যাতি, ক্ষমতা সুখের সহায়ক হতে পারে, কিন্তু এগুলোই যদি একমাত্র লক্ষ্য হয়, তাহলে সুখ আমাদের কাছে অধরা থেকে যাবে।
বিশ্ব সুখ দিবসে তাই আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কীভাবে সুখী হতে পারি। সুখ আসলে আমাদের চারপাশেই আছে, কিন্তু আমরা তা খুঁজতে গিয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। সুখ মানে কেবল বড় কিছু পাওয়া নয়, বরং যা আছে তা উপভোগ করা। ছোট ছোট আনন্দ, সম্পর্কের উষ্ণতা, আত্মার প্রশান্তি এবং কৃতজ্ঞতা—এগুলোই প্রকৃত সুখ এনে দেয়। সুখ কোনো গন্তব্য নয়, বরং এটি একটি যাত্রা। আমরা যদি প্রতিদিনের মুহূর্তগুলোকে ভালোবাসতে শিখি, যদি অতৃপ্তি নয়, বরং সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিই, তাহলে হয়তো সুখ আর খুঁজতে হবে না
—এটি আমাদের জীবনেই থাকবে, নীরবে, অবিরাম।
লেখক: মাসুমা হক প্রিয়াংকা
সমাজকর্মী ও গবেষক
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছিলেন কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের সেসব বক্তব্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি, নির্বাচনের নামে বারবার তামাশা...
১৯ ঘণ্টা আগেধর্ষণ বন্ধ হবে কী করে? বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধর্ষণকে ‘না’ বলে না। বহু অভিযোগ বিচারে না এনে উঠিয়ে নিতে বলা হয়। এখানে নারীদের ওপর নির্যাতন প্রতিনিয়ত চলতে থাকে। তা নিয়ে উপহাস, ট্রল হয়।
১৯ ঘণ্টা আগেবাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় পানীয়জলে আর্সেনিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এখানকার ৪৯ দশমিক ১৪ শতাংশ নলকূপে আর্সেনিকের মাত্রা অনুমোদিতসীমার চেয়ে অনেক বেশি।
১৯ ঘণ্টা আগেড. জোবাইদা নাসরীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। জাপানের হিরোশিমা ইউনিভার্সিটি থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং যুক্তরাজ্যের ডারহাম ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠনসহ নানা বিষয় নিয়ে...
২ দিন আগে