Ajker Patrika

ডিজিটাল বাংলাদেশ কতটা নিরাপদ

সাহস মোস্তাফিজ
ডিজিটাল বাংলাদেশ কতটা নিরাপদ

বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশ নামে একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হবে। একটি স্বাধীন দেশ। একটি পতাকা। লাল-সবুজ সে পতাকার রং।

স্বাধীনতার সেই স্বপ্নের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১। ২৪ বছরে একটু একটু করে বাঙালির প্রতি পাকিস্তানিদের শোষণ, আর বঞ্চনা ক্ষোভের আগুনে পরিণত হয়েছে। সেই ক্ষোভ শক্তিতে রূপান্তর হয়েছে নিমেষেই। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর অগ্নিঝরা সেই ভাষণ স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে স্বাধীনতার দীক্ষা দিয়েছিল প্রবলভাবে। হাতে অস্ত্র নেই, কিন্তু মনে ভীষণ জেদ। বুকে বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বান—‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব...।’

নয় মাস ধরে পাকিস্তানি হানাদারদের বীভৎস অত্যাচার সহ্য করেছে বাঙালিরা। চোখের সামনে হারিয়েছে অজস্র তাজা প্রাণ। কিন্তু পিছু হটেনি। শোক পরিণত হয়েছে শক্তিতে।

বঙ্গবন্ধু বাংলা দিয়ে গেছেন। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পর্যাপ্ত সময় তাঁকে দেওয়া হয়নি। ১৯৭৫–এর আজকের এই দিনের করুণ কাহিনি সবার জানা। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু নেই, তাও প্রায় ৪৬ বছর হয়ে গেল।

বঙ্গবন্ধু মাথা উঁচু করে বাঁচার প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর দেশের রাজনীতিতে এসেছে অনেক টানাপোড়েন। বুটের আঘাতে বারবার ছিন্নভিন্ন হয়েছে গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্র এখনো হারিয়ে খুঁজছে বাংলার মানুষ।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটা নতুন শব্দ ব্যবহার করেছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে সেই থেকে দেশে নানা কর্মযজ্ঞ চলছে। দ্রুততম সময়ে সবার ঘরে ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছেছে। প্রতিনিয়ত দেশের বাজারে হু হু করে বেড়েছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব, ডেস্কটপের চাহিদা।

এ কথা অনস্বীকার্য, হঠাৎ করে এই ইন্টারনেট বিপ্লব দেশের অগ্রগতিতে একটা নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই যেমন, অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল হয়ে দেশের টিভি চ্যানেলগুলো তাদের লোগোর পাশে লেখা শুরু করল ‘এইচডি’। দেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হলো ফেসবুক ও ইউটিউব। ফেসবুক ও ওয়েব প্ল্যাটফর্মকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে শুরু করল বাণিজ্য। বিজ্ঞাপনের বাজার দখল করল ওয়েব। নতুন অনেক পেশার সৃষ্টি হলো। ফ্রিল্যান্সিং, ওয়েব ডেভেলপার, ইউটিউবার, ফেসবুকার, ব্লগার, ভ্লগার, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে ডেটা ইঞ্জিনিয়ার, কত রকম নতুন পেশা!

প্রায় হারিয়েই গেল দোকানে দোকানে টিঅ্যান্ডটি ফোন, ফ্যাক্স আর চিঠি লেখা। হারিয়ে না গেলেও কমে গেল বাড়িতে বসে টেলিভিশনে আলিফ লায়লা দেখা কিংবা রেডিওতে হারানো দিনের গান শোনা। এটাই হওয়ার কথা অবশ্য। যত দিনে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা এসেছে, তার অনেকে আগেই উন্নত বিশ্ব ইন্টারনেটকে অবলম্বন করে বাঁচা শুরু করেছে। মানুষের কাজ করা শুরু করেছে রোবট। আজকাল তো ঘরে বসেই সব অর্ডার করা যায়। পছন্দমতো খাবার, গয়না, পোশাক, সবজি, মাছ, মাংস অর্ডার দিলেই চলে আসে দুয়ারে। টাকা পাঠানো যায় মোবাইল ফোন দিয়েই। আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইটও হয়েছে। সেটিও অবিনশ্বর বঙ্গবন্ধুর নামেই।

সাইবার প্রযুক্তি মানুষের হাতে হাতে যাওয়ার সুফল পাচ্ছে দেশ। ঘরে বসেই করোনাভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন করছে মানুষ। বিপদে পড়লে ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাস হয়ে উঠছে জীবন বাঁচানোর অবলম্বন। মানুষ অপ্রয়োজনীয় জিনিস ইচ্ছে হলেই বেচে দিতে পারছে অনলাইনে। মাছের ন্যায্য দাম পাচ্ছে চরফ্যাশনের নিভৃতপল্লিতে বসা জেলেরাও।

আজকাল রান্না শেখার জন্য হাপিত্যেশ নেই মানুষের। ইউটিউব জানিয়ে দিচ্ছে ঘরে বসেই পিৎজা তৈরি করে ফেলা যায়। এমনকি চুলায়ও। কোথাও যাওয়ার আগে দেখে নেওয়া যাচ্ছে সেই এলাকার সব তথ্য। লোকেশন দেখে সহজেই অচেনা জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে গাড়ি। এখন আর কাউকে পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে হয় না, ‘চাচা, করিম মাস্টারের বাড়িটা কোথায়?’

এখন গন্তব্য সবার জানা। সবাই সব দেখতে পারে। দেখার ও জানার সেই উন্মুক্ত জানালা দিয়ে আলো-বাতাসের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে পোকামাকড়ও আসছে। সাইবার পৃথিবীর সঙ্গে জন্ম হয়েছে সাইবার অপরাধীরও।

ইন্টারনেটে তথ্য চুরি, গুজব ছড়ানো, ব্ল্যাকমেলিং, পাসওয়ার্ড হ্যাকিং ইত্যাদি নানা অপরাধ এখন নিয়মিত বিষয়। ইন্টারনেট তাই স্বস্তির সঙ্গে নিয়ে এসেছে অস্বস্তিও। এ যেন নতুন আরেক লড়াই।

ডিজিটাল বাংলাদেশ তো হলো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর আরও আধুনিকায়ন হবে, সেটিও নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে এখন বড্ড প্রয়োজন একটি নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ। সময় এখন দেশের সকল মানুষকে ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা। মানুষ সচেতন হলেই কেবল ইন্টারনেটের প্রগতিকে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। ইন্টারনেটের হাত ধরে বাংলাদেশ হাঁটবে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে, যে স্বপ্নটি দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত