কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেসব নারী শিক্ষার্থী অগ্রভাগে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম উমামা ফাতেমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি স্মাতক শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলেছিল। কিন্তু সেই রূপরেখা আপনারা এখনো দেননি, কারণ কী?
১৫ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার। ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে বের হওয়ার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত খুব প্রয়োজন। সেই বন্দোবস্তের রূপরেখাটা কেমন হবে, সেটা নিয়ে বহু বছর ধরে কথা হচ্ছে। গত ৬ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে একটি রূপরেখা প্রণয়নের ঘোষণা দেন।
আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমাদের কাছে এটা জরুরি হয়ে পড়েছে যে একটা রূপরেখা দিতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে চেষ্টা আছে। তবে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। আমরা রাষ্ট্রটা কেমন চাই, সেটার জন্য একটা সম্মিলিত ভিশন প্রয়োজন। যেহেতু এখানে নানা মত-পথের মানুষ আছে। সবার মত ও চিন্তাকে একত্র করে আমরা সেটা করতে চাই। কাজটা কঠিন। তবু আমরা সেটা করতে চাই।
আপনাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনেরও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আপনারা রাজনৈতিক দল গঠন করলে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ ও রূপরেখা কী হবে?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে যখন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তখন আমরা বলেছিলাম, এই প্ল্যাটফর্মকে কখনো রাজনৈতিক দলে পরিণত করব না। এটা ছিল আমাদের একটা রাজনৈতিক অবস্থান। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মের কেউ যদি নতুন কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণ করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়, তবে সেই উদ্যোগকে আমরা বাধাগ্রস্ত করব না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হলো একটা গণ-অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম। তাই এটাকে গণ-অভ্যুত্থানের মর্যাদায় সমুন্নত রাখাটাই যথার্থ হবে। সেই কমিটমেন্ট থাকাটা জরুরি।
গণ-অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম থেকেই জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। এই দুই সংগঠনের মধ্যে সম্পর্কের জায়গাটা কেমন?
জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর। কিন্তু তার আগে থেকে কথা উঠেছিল, একটা নাগরিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের বিষয়ে। শেখ হাসিনা হঠাৎ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে অনেক পরিকল্পনাই সম্মিলিতভাবে গ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। সেই সময় সেটা আমাদের ভাবনার মধ্যে থাকলেও, বাস্তব অবস্থার কারণে সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
আপনি যদি গণ-অভ্যুথানটির দিকে তাকান তাহলে দেখা যাবে এই আন্দোলনে ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সব অংশের মানুষ অংশ নিয়েছিল। এই ভাবনা থেকে গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। যাঁদের বয়স ২৮ বছরের বেশি তাঁদের নিয়ে এই নাগরিক কমিটিটা গঠন করা হয়। তাঁরা কিন্তু স্বাধীনভাবে এ প্ল্যাটফর্মটি গঠন করেছিলেন।
তবে এখন পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওই ধরনের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু যেহেতু একটা গণ-অভ্যুথানের মধ্য দিয়ে দুটি প্ল্যাটফর্মই যাত্রা শুরু করেছিল, তাই দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তা একই ধরনের হয়ে থাকে। মানে দার্শনিক ভাবনায় আমাদের সাদৃশ্য আছে। সেটা বিভিন্ন সময়ে দুই প্ল্যাটফর্মের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে যখন পাঁচ দফা দেওয়া হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে?
যেদিন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেদিন স্পষ্ট করে বলা হয়েছি—আমরা এই সরকারের সঙ্গে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের সম্পর্ক নির্মাণ করতে চাই। তাই আমরা কিন্তু সরকারের অনেক উদ্যোগের সমালোচনা করেছি। যেমন এ সরকার যখন আন্দোলনে আহত-নিহতের জন্য যথার্থ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছিল না, তখন আমরা এটার সমালোচনা করেছি। আবার যখন সরকারের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কোনো ধরনের ভ্রূক্ষেপ নেই বা যথেষ্ট পরিমাণ চেষ্টা নেই, তখন কিন্তু আমরা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি।
আবার সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে একটা দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে, সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। শুধু আমরাই নই, সারা দেশের জনগণ এটাকে সাপোর্ট করেছে।
আমরা আসলে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করি না, আমরা জনগণের প্রতিনিধি। আমরা সব সময় সরকারকে সমালোচনার মধ্যে রাখতে চাই। সরকার যেন জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটায়, সেটার চাপ প্রয়োগ করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব বলে মনে করি।
আপনারা এই সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির নিয়োগের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু সমালোচনাটা একটা সময় গিয়ে থেমে যায় কেন?
আমাদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তুলেছিলাম, যখন বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়াটা মূল সমস্যা না। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী উপদেষ্টা নিয়োগ দিতেই পারে। নিজেদের বিচার-বিবেচনা থেকে তারা উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার আগে কেন তাঁকে যোগ্য মনে করা হয়েছে, সেটা জনগণের জানার অধিকার আছে। যখন একজনকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কেন তাঁকে নির্বাচন করা হয়েছে আর একজনকে কেন নির্বাচন করা হয়নি, সেটা সরকারের পক্ষ থেকে খোলাসা করা দরকার ছিল। কিন্তু সরকার যথার্থ কারণ দেখাতে পারেনি। তখন আমাদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করেছিল।
এখন এসব নিয়েই যদি পড়ে থাকি, তাহলে আমাদের অন্য কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হবে। আর একটা বিষয় হলো, বিশাল আয়তনের ভারত কিন্তু বাংলাদেশকে শত্রু দেশ হিসেবে দেখে থাকে। এই সময়ে আমাদের জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি ধরে রাখাটা খুব জরুরি। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে বাদ দিয়ে দিন-রাত অন্য বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে আমাদের অন্য কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।
জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে গেলে অনেক বিষয়েই বিবেচনা করতে হয়। কোন কাজগুলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সে বিবেচনাও জরুরি। আমরা উপদেষ্টাদের বিষয়ে বলেছি, আমরা এসব নিয়োগে সন্তুষ্ট না। পাশাপাশি সরকার যেন বহিঃশক্তির কাছে কোনো রকম বিপদের মধ্যে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব।
হাসিনা সরকারের প্রতি জনগণ বিক্ষুব্ধ ছিল জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির কারণে। এ সরকার এখনো এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন?
সরকার আসলে যেভাবে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির মোকাবিলা করতে চাচ্ছে, সেটা সফল হচ্ছে না।
আমদানি এবং বাজার মনিটরিং করার মাধ্যমে তারা সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের
ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ তো ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট।
গত সরকারের সময়ের সব ধরনের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগীরা এখনো সচল ও সরব আছে। তারাই এ সরকারকে বিপাকে ফেলছে। এখন এ সরকার যদি তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারে, তাহলে তো দ্রব্যমূল্য আরও ঊর্ধ্বমুখী হতেই থাকবে। পুরোনো ও নতুন আলুর কেজি এখনো ৭০-৮০ টাকা। এ রকম পরিস্থিতিতে তো মানুষের চলাই মুশকিল হয়ে গেছে। পেঁপে ও লাউ ছাড়া মানুষ আর কিছুই খেতে পারে না।
আমাদেরও প্রশ্ন, সরকার কবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? এখন শীতকাল চলছে, সামনে রমজান মাস আসছে। জিনিসপত্রের দাম যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে রমজানে সবকিছুর দাম আরও বেড়ে যাবে। সরকার কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে? সরকার যদি সংস্কার কাজগুলো এবং ক্ষমতায় আরও কিছুদিন থাকতে চায়, সেটার জন্য সবার আগে দরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। আমার কাছে মনে হয়, সরকার এ ক্ষেত্রে বেশি ব্যর্থ হচ্ছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলেছিল। কিন্তু সেই রূপরেখা আপনারা এখনো দেননি, কারণ কী?
১৫ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার। ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে বের হওয়ার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত খুব প্রয়োজন। সেই বন্দোবস্তের রূপরেখাটা কেমন হবে, সেটা নিয়ে বহু বছর ধরে কথা হচ্ছে। গত ৬ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে একটি রূপরেখা প্রণয়নের ঘোষণা দেন।
আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমাদের কাছে এটা জরুরি হয়ে পড়েছে যে একটা রূপরেখা দিতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে চেষ্টা আছে। তবে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। আমরা রাষ্ট্রটা কেমন চাই, সেটার জন্য একটা সম্মিলিত ভিশন প্রয়োজন। যেহেতু এখানে নানা মত-পথের মানুষ আছে। সবার মত ও চিন্তাকে একত্র করে আমরা সেটা করতে চাই। কাজটা কঠিন। তবু আমরা সেটা করতে চাই।
আপনাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনেরও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আপনারা রাজনৈতিক দল গঠন করলে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ ও রূপরেখা কী হবে?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে যখন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তখন আমরা বলেছিলাম, এই প্ল্যাটফর্মকে কখনো রাজনৈতিক দলে পরিণত করব না। এটা ছিল আমাদের একটা রাজনৈতিক অবস্থান। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মের কেউ যদি নতুন কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণ করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়, তবে সেই উদ্যোগকে আমরা বাধাগ্রস্ত করব না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হলো একটা গণ-অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম। তাই এটাকে গণ-অভ্যুত্থানের মর্যাদায় সমুন্নত রাখাটাই যথার্থ হবে। সেই কমিটমেন্ট থাকাটা জরুরি।
গণ-অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম থেকেই জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। এই দুই সংগঠনের মধ্যে সম্পর্কের জায়গাটা কেমন?
জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর। কিন্তু তার আগে থেকে কথা উঠেছিল, একটা নাগরিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের বিষয়ে। শেখ হাসিনা হঠাৎ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে অনেক পরিকল্পনাই সম্মিলিতভাবে গ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। সেই সময় সেটা আমাদের ভাবনার মধ্যে থাকলেও, বাস্তব অবস্থার কারণে সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
আপনি যদি গণ-অভ্যুথানটির দিকে তাকান তাহলে দেখা যাবে এই আন্দোলনে ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সব অংশের মানুষ অংশ নিয়েছিল। এই ভাবনা থেকে গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। যাঁদের বয়স ২৮ বছরের বেশি তাঁদের নিয়ে এই নাগরিক কমিটিটা গঠন করা হয়। তাঁরা কিন্তু স্বাধীনভাবে এ প্ল্যাটফর্মটি গঠন করেছিলেন।
তবে এখন পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওই ধরনের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু যেহেতু একটা গণ-অভ্যুথানের মধ্য দিয়ে দুটি প্ল্যাটফর্মই যাত্রা শুরু করেছিল, তাই দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তা একই ধরনের হয়ে থাকে। মানে দার্শনিক ভাবনায় আমাদের সাদৃশ্য আছে। সেটা বিভিন্ন সময়ে দুই প্ল্যাটফর্মের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে যখন পাঁচ দফা দেওয়া হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে?
যেদিন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেদিন স্পষ্ট করে বলা হয়েছি—আমরা এই সরকারের সঙ্গে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের সম্পর্ক নির্মাণ করতে চাই। তাই আমরা কিন্তু সরকারের অনেক উদ্যোগের সমালোচনা করেছি। যেমন এ সরকার যখন আন্দোলনে আহত-নিহতের জন্য যথার্থ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছিল না, তখন আমরা এটার সমালোচনা করেছি। আবার যখন সরকারের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কোনো ধরনের ভ্রূক্ষেপ নেই বা যথেষ্ট পরিমাণ চেষ্টা নেই, তখন কিন্তু আমরা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি।
আবার সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে একটা দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে, সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। শুধু আমরাই নই, সারা দেশের জনগণ এটাকে সাপোর্ট করেছে।
আমরা আসলে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করি না, আমরা জনগণের প্রতিনিধি। আমরা সব সময় সরকারকে সমালোচনার মধ্যে রাখতে চাই। সরকার যেন জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটায়, সেটার চাপ প্রয়োগ করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব বলে মনে করি।
আপনারা এই সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির নিয়োগের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু সমালোচনাটা একটা সময় গিয়ে থেমে যায় কেন?
আমাদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তুলেছিলাম, যখন বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়াটা মূল সমস্যা না। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী উপদেষ্টা নিয়োগ দিতেই পারে। নিজেদের বিচার-বিবেচনা থেকে তারা উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার আগে কেন তাঁকে যোগ্য মনে করা হয়েছে, সেটা জনগণের জানার অধিকার আছে। যখন একজনকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কেন তাঁকে নির্বাচন করা হয়েছে আর একজনকে কেন নির্বাচন করা হয়নি, সেটা সরকারের পক্ষ থেকে খোলাসা করা দরকার ছিল। কিন্তু সরকার যথার্থ কারণ দেখাতে পারেনি। তখন আমাদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করেছিল।
এখন এসব নিয়েই যদি পড়ে থাকি, তাহলে আমাদের অন্য কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হবে। আর একটা বিষয় হলো, বিশাল আয়তনের ভারত কিন্তু বাংলাদেশকে শত্রু দেশ হিসেবে দেখে থাকে। এই সময়ে আমাদের জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি ধরে রাখাটা খুব জরুরি। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে বাদ দিয়ে দিন-রাত অন্য বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে আমাদের অন্য কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।
জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে গেলে অনেক বিষয়েই বিবেচনা করতে হয়। কোন কাজগুলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সে বিবেচনাও জরুরি। আমরা উপদেষ্টাদের বিষয়ে বলেছি, আমরা এসব নিয়োগে সন্তুষ্ট না। পাশাপাশি সরকার যেন বহিঃশক্তির কাছে কোনো রকম বিপদের মধ্যে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব।
হাসিনা সরকারের প্রতি জনগণ বিক্ষুব্ধ ছিল জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির কারণে। এ সরকার এখনো এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন?
সরকার আসলে যেভাবে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির মোকাবিলা করতে চাচ্ছে, সেটা সফল হচ্ছে না।
আমদানি এবং বাজার মনিটরিং করার মাধ্যমে তারা সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের
ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ তো ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট।
গত সরকারের সময়ের সব ধরনের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগীরা এখনো সচল ও সরব আছে। তারাই এ সরকারকে বিপাকে ফেলছে। এখন এ সরকার যদি তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারে, তাহলে তো দ্রব্যমূল্য আরও ঊর্ধ্বমুখী হতেই থাকবে। পুরোনো ও নতুন আলুর কেজি এখনো ৭০-৮০ টাকা। এ রকম পরিস্থিতিতে তো মানুষের চলাই মুশকিল হয়ে গেছে। পেঁপে ও লাউ ছাড়া মানুষ আর কিছুই খেতে পারে না।
আমাদেরও প্রশ্ন, সরকার কবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? এখন শীতকাল চলছে, সামনে রমজান মাস আসছে। জিনিসপত্রের দাম যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে রমজানে সবকিছুর দাম আরও বেড়ে যাবে। সরকার কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে? সরকার যদি সংস্কার কাজগুলো এবং ক্ষমতায় আরও কিছুদিন থাকতে চায়, সেটার জন্য সবার আগে দরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। আমার কাছে মনে হয়, সরকার এ ক্ষেত্রে বেশি ব্যর্থ হচ্ছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
যেকোনো সরকারের অজনপ্রিয় তথা জনবিচ্ছিন্ন হওয়া এবং তার পরিণতিতে পতনের পেছনে আমলাতন্ত্রের বিরাট ভূমিকা থাকে। বিপরীতে সরকারের জনপ্রিয় হওয়ার পেছনেও প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে তার প্রশাসনযন্ত্র। কেননা, সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা এবং তার রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয় প্রশাসনের লোকজনের মাধ্যমেই
৬ ঘণ্টা আগেনভেম্বর মাসে ঢাকা শহরের অবস্থা কতটা অরক্ষিত ছিল, সেটা বোঝা যাবে ১১ নভেম্বর প্রকাশিত একটি সংবাদে। সংক্ষেপে সে খবরটি এ রকম: রোকেয়া হলে ডাকাতি গত মঙ্গলবার দিবাগত শেষ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এক মারাত্মক ডাকাতি সংঘটিত হয়। দুষ্কৃতিকারীরা হলের প্রভোষ্ট ও হলে অবস্থানকারী ছাত্রীদের হাজার হাজার
৬ ঘণ্টা আগেপ্রতিকূলে চলা মানুষেরাই। আমাদের খাই খাই স্বভাবের সমাজে একজন ব্যতিক্রমী মানুষের উদাহরণ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলী। তিনি একাই ১ লাখ ১০ হাজার তালগাছ রোপণ করেছেন। এ জন্য তিনি নিজের জমি বিক্রি করতেও কার্পণ্য করেননি। আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নন খোরশেদ। অভাব-অনটন তাঁর সংসারে
৬ ঘণ্টা আগেবিজয় দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া একটি পোস্ট নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি
১ দিন আগে