হকার উচ্ছেদ ও বাস্তবতা

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।

কিন্তু এ ধরনের উচ্ছেদ অভিযানের পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালো নয়। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় বটে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই যেই লাউ সেই কদু অবস্থার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ উচ্ছেদ হকাররা আবার ফিরে আসেন তাঁদের ব্যবসাক্ষেত্রে।

প্রশ্ন হলো, কেন এমনটা হয়ে আসছে? মূলত হকাররা সেখানে বসতে পারেন স্থানীয় নেতা ও কর্তৃপক্ষের অসাধুতার কারণে। এই হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হয়।

চাঁদাবাজিতে সরকারি দলের নেতারা আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকেও রয়েছে অভিযোগের আঙুল। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। ফুটপাতের যেকোনো অবৈধ দোকানিকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে, কী করে তাঁরা এসব জায়গায় বসতে পারেন এবং নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন।

হকার উচ্ছেদের ব্যাপারটি বর্তমান সরকারের সংস্কারের আওতায় যদি পড়ে থাকে, তাহলে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব সেই সংস্কার কার্যের সফলতার জন্য। কিন্তু রাজধানীর কোনো কোনো এলাকা হকারমুক্ত করার আগে এর ভালো-মন্দ সব দিক ভেবে দেখা হয়েছে কি না, সেটা জানা দরকার।

হকাররা আমাদের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে থাকেন। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তাঁরা বেচাকেনা করতে পারেন। তাঁদের সীমিত আয়ের ওপর নির্ভর করে থাকে তাঁদের পরিবার-পরিজন। নিজের পরিশ্রম দিয়েই তাঁরা আর্থিক দৈন্য কাটিয়ে উঠতে চান।

বলে রাখা ভালো, পৃথিবীর বহু দেশেই হকার রয়েছে। আমাদের উপমহাদেশ তো বটেই, পৃথিবীর রাজধানী নামে খ্যাত নিউইয়র্কেও রয়েছে হকার। হকার রয়েছে লন্ডনের মতো বিশাল নগরে। কিন্তু সেসব জায়গায় হকারদের বসারও একটা নিয়মনীতি আছে। যানবাহন কিংবা পথচারী চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে সেখানে হকার বসতে দেওয়া হয় না। একটা সীমারেখার মধ্যে তাঁদের থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে জনগণকে বিপদে ফেলেই রাস্তা বা ফুটপাত দখল করে হকাররা বসে যান। এই অবস্থার অবসান দরকার।

উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে এইসব এলাকা কতটা হকারমুক্ত করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। ঐতিহ্য অনুযায়ী কিছু টাকা খরচ করে ক্ষমতাশালীদের হাতে রেখে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতে পারেন হকাররা। আমাদের জনবহুল দেশে এটাই হলো বাস্তবতা। কখনো দোকান বানিয়ে হকারদের বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়, কিন্তু সব হকার তার সুফল পান না। নির্দিষ্ট কিছু রাস্তার চিহ্নিত স্থানে হকারদের বসার ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়। কাজটা এমনভাবে করতে হবে যেন যানবাহন আর পথচারীর চলাচলে সমস্যা না হয়।

সেই পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা সহজ, যে পরিকল্পনায় সব পক্ষই লাভবান হয়। হকার উচ্ছেদে এই কথাটা বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত