সন্তানের চোখ বাঁচান

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ২০
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ২৫

প্রযুক্তি আমাদের অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে। নিত্যদিন আমাদের কাজের বেশির ভাগ 
সময়ই কাটে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন ডিভাইসের সঙ্গে। বিশেষ করে স্মার্টফোন এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। ভোর থেকে ঘুমানোর আগপর্যন্ত আমরা নানা কারণে স্মার্টফোন কিংবা ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমরা কি জানি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে তথ্যপ্রযুক্তির ডিভাইস উপকারের পাশাপাশি আমাদের অনেক ক্ষতিও করছে?

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের। তারা কোনো প্রয়োজনে স্মার্টফোন বা ডিভাইস ব্যবহার করে না। তারা সাধারণত গেমস খেলা, আনন্দ, বিনোদন কিংবা মজা পাওয়ার জন্য ডিভাইস ব্যবহার করে। মা-বাবা অনেক সময় শিশুকে কথা শোনানোর জন্য, কখনো খাবার খাওয়ানোর জন্য বা আবদার মেটানোর জন্য তাদের হাতে ডিভাইস দিচ্ছেন। তবে করোনা আসার পর অনলাইন ক্লাসের কারণেও শিশুরা মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার বাড়িয়েছে। কিন্তু এটা এখন তাদের আসক্তিতে পরিণত হওয়ায় তারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। বিশেষ করে চোখে ভয়ংকর প্রভাব পড়ায় অনেকে ক্ষীণদৃষ্টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের একটি তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, করোনার আগে ওই হাসপাতালে সেবা নেওয়া মাইয়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন রোগীর সংখ্যা গত প্রায় দুই বছরে ১০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে সেবা নিতে আসা ৩৩ শতাংশই ক্ষীণদৃষ্টিজনিত রোগের শিকার। দীর্ঘ মেয়াদে ডিভাইস ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব খুব খারাপ হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।  করোনায় বিধিনিষেধ চলাকালে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে দৈনিক ৪০-৫০ জন রোগী আসত। বর্তমানে তা তিন থেকে চার শতে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ৩৩ শতাংশই দূরে দেখার সমস্যায় ভুগছে। আর এদের বেশির ভাগই শিশু।

চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনায় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকায় এবং অনলাইনকেন্দ্রিক পড়াশোনার কারণে শিশুদের মোবাইল আসক্তি বেড়েছে। অনেক অভিভাবক শিশুদেরও মোবাইল থেকে শুরু করে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও নোটবুক কিনে দিচ্ছেন। ফলে খেলাধুলা ও শারীরিক কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিশুরা। আর এতেই শিশুদের ‘মাইয়োপিয়া’ বা চোখের ক্ষীণদৃষ্টিজনিত রোগ বাড়ছে প্রকট আকারে। একটি শিশুর আট বছর পর্যন্ত চোখের গঠনগত পরিবর্তন হতে থাকে। এই বয়সেই যদি দূরের জিনিস না দেখে, তাহলে আস্তে আস্তে দূরের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলবে। বড় হলেও এটি থেকে যাবে।

খবরটি অত্যন্ত ভয়ংকর। এ ব্যাপারে প্রথমেই সতর্ক হতে হবে পরিবারকে। মা-বাবা, ভাই-বোনসহ নিকটাত্মীয়রা শিশুদের যতটা পারা যায়, মোবাইল ডিভাইস থেকে দূরে রাখতে হবে। শিশুদের প্রতি আরও মনোযোগ দিতে হবে। তাদের হাতে ডিভাইস দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হলে চলবে না। অল্প বয়সে যদি শিশুরা দৃষ্টি হারায়, তবে জীবনের বাকি দিনগুলো তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। শিশুদের খেলাধুলায় মনোযোগ বাড়াতে হবে। তাদের যেকোনো মূল্যে মোবাইল ডিভাইসের আসক্তি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, সামান্য আবদার মেটানোর জন্য তার জীবনকে যেন আমরা ধ্বংসের দিকে ঠেলে না দিই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত