Ajker Patrika

সাবলেট প্রতারণা

সম্পাদকীয়
সাবলেট প্রতারণা

অফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না। মাত্র ২ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে বাসায় উঠে এক দিন পার না হতেই ফাতেমা চাচাতো ভাই পরিচয়ে সুমন, হাসান ও রায়হান নামের তিন দুর্বৃত্তকে বাসায় এনে তাদের সহায়তায় রাতেই ফারজানাকে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে এবং হাতমুখ বেঁধে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, পাঁচ-ছয় ভরি স্বর্ণালংকার ও দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যান।

শুধু তা-ই নয়, অপহরণ করা হয় ফারজানার আট মাস বয়সী শিশুকন্যাকেও। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের। কিন্তু এই খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় প্রতারক চক্র সফল হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত র‍্যাব শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। ফাতেমাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‍্যাব জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাতেমা ডাকাতি ও শিশুটিকে অপহরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

এ ঘটনা আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থার গভীর ফাঁকফোকরকে স্পষ্ট করে তুলেছে। অপরিচিত একজনকে বাসায় সাবলেট হিসেবে রাখার আগে কোনো ধরনের পরিচয় যাচাই-বাছাই না করাটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা এ ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো। যদিও শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এ ধরনের অপরাধ কীভাবে নির্মূল করা যাবে।

র‍্যাব জানিয়েছে, অপহরণের মূল উদ্দেশ্য কী, তা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুটির মায়ের সঙ্গে তার বাবার সম্পর্কের টানাপোড়েনও তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি স্পষ্ট করে যে, অপহরণ চক্র পারিবারিক দুর্বলতা ও নিরাপত্তার ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়েছে।

প্রতারক বা অপরাধী চক্র যে কত কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে, এ থেকে সেটাও স্পষ্ট হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজে নিরাপত্তা সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি আইন প্রয়োগে দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সাবলেট ভাড়া বা নতুন পরিচিতদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক আইডি যাচাইয়ের বিধান কার্যকর করা প্রয়োজন। পরিচয়পত্রের অনুলিপি রাখা এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই করার মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

এ ঘটনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সামাজিক সচেতনতা। নাগরিকদের উচিত অপরিচিত কাউকে আশ্রয় দেওয়ার আগে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক থাকা। এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করতে সহায়তা করবে।

আমরা আশা করি, অপহরণ চক্রের সব সদস্যকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং শিশুটির পরিবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে নাগরিক সচেতনতা ও আইনি কাঠামো আরও শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি। নিরাপত্তা শুধুই রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার দায়িত্ব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত