শাইখ সিরাজ
রংপুরের ঈশ্বরপুর গ্রামে যতদূর চোখ যায় চোখে পড়ে মাঠে মাঠে বিভিন্ন জাতের আলুর গাছ। মূলত সেখানে উৎপাদন হচ্ছে আলুবীজ। আর সেখান থেকে উৎপাদিত আলুবীজ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এখন দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি আলুর চাষ হয়।
প্রায় ৪০০ বছর আগে ইউরোপীয় বণিকদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে আলু প্রবেশ করলেও বাংলাদেশে আলুর বাণিজ্যিক আবাদের ইতিহাস খুব একটা পুরোনো নয়। ব্রিটিশদের হাত ধরে বাঙালি খাদ্যে আলুর সংযোজন ঘটলেও এ দেশে আলু চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নেদারল্যান্ডসের আলুবীজে। পুষ্টি উপাদানে আলু হচ্ছে ভাতের সমগোত্রীয়, কিন্তু ভাতপ্রিয় বাঙালির খাদ্যতালিকায় আলু জায়গা করে নিয়েছে সবজি হিসেবে। আর ক্রমেই আলু হয়ে উঠেছে সব সবজির সেরা। তবে গরম ভাতের সঙ্গে সরিষার তেলে মাখানো আলুভর্তা এ দেশের ধনী-গরিব প্রায় সব মানুষের প্রিয় খাবার। রান্নায় প্রায় সব তরকারির সঙ্গেই আলু নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে খুব কম সময়ে। আলু হয়ে উঠেছে খুবই প্রয়োজনীয় এক খাদ্যপণ্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৮০ লাখ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টনের কাছাকাছি। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে বাংলাদেশে আলু উৎপাদন হয়েছিল চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ টন বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য নির্ভুল হলে উৎপাদনের ১৫ শতাংশ নষ্ট হওয়ার পরও দেশে উদ্বৃত্ত আলু থাকার কথা। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলু আমদানি করতে হয়েছে ৯৮ হাজার ৭৩১ টন। যদিও বিপরীতে একই সময়ে আলু রপ্তানি হয়েছে ১২ হাজার ৩৫২ টন। আলুর উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানির এইসব তথ্য-উপাত্তে হিসাব মেলানো খুব কঠিন।
তবে এ ব্যাপরে স্টাডি করতে গিয়ে একটি বিষয় আমরা লক্ষ করেছি, তা হলো রান্নার বাইরেও আলুর ব্যবহার বেড়েছে। এ দেশের মানুষের কাছে চিপস ও ফ্রেঞ্চফ্রাইয়ের চাহিদা বাড়ছে। আমরা সাধারণত যে আলু উৎপাদন করি তার বেশির ভাগই টেবিল পটেটো অর্থাৎ রান্নার কাজে ব্যবহার হয়। আলু প্রসেসিং শিল্পে ব্যবহার হয় ভিন্ন জাতের আলু। যার অধিকাংশই আমদানিনির্ভর। এই আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে বাংলাদেশে যে কয়টি আলুবীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের একটি ইস্টার্ন ট্রেড করপোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুল হক প্রসেসিং শিল্পে ব্যবহৃত আলুর সম্ভাবনার কথা বললেন।
চ্যানেল আই স্টুডিওতে উপস্থিত হয়ে একই কথা বলেছিলেন নেদারল্যান্ডসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স থ্রাইস ভদস্ত্রা। তিনি বলেন, ‘১০-১২টি ডাচ কোম্পানি রয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বীজ আলু সরবরাহ করছে। আমরা বাংলাদেশে আলুর ফলনে অসাধারণ সাফল্য দেখছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী আলু উৎপাদনে সপ্তম। নেদারল্যান্ডস রয়েছে একাদশে। অর্থাৎ, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নেদারল্যান্ডসকে এ ব্যাপারে অতিক্রম করে ফেলেছে। তবে, নেদারল্যান্ডসে প্রতি হেক্টরে ৪০ টন আলু উৎপাদন হয়, যেখানে বাংলাদেশ তার অর্ধেক উৎপাদন করে, প্রতি হেক্টরে মাত্র ২০ টন। সুতরাং, ফসল বৃদ্ধির এবং বাংলাদেশের পুষ্টি ও খাদ্যে অবদান রাখার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সে জন্য দরকার উচ্চফলনশীল আলুবীজ। আপনাকে আলুর জাত উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। আপনাকে স্টোরেজ ব্যবস্থাপনায়ও বিনিয়োগ করতে হবে। ডাচ কোম্পানিগুলো সে ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা নিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাতসহিষ্ণু ও পরিবেশবান্ধব মানসম্পন্ন আলু উৎপাদনে এবং উচ্চফলনশীল জাত সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস যৌথভাবে কাজ করছে। এটি বাংলাদেশের জনগণকে উন্নত পুষ্টি সরবরাহ করতেও সহায়তা করবে।’
স্ট্যাটিস্টার তথ্য বলছে, পৃথিবীজুড়ে আলুর চিপসের বাজারের আকার ৫ হাজার কোটি ইউএস ডলারের বেশি। ফরচুন বিজনেস ইনসাইটের তথ্যমতে পৃথিবীতে ফ্রেঞ্চফ্রাইয়ের বাজার দেড় হাজার কোটি ইউএস ডলারেরও বেশি। আর এর আকার দিন দিন বড় হচ্ছে। আলু নিয়ে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করতে হলে আমাদের অবশ্যই প্রসেসিং ভ্যারাইটির আলুই উৎপাদন করতে হবে।
কৃষক আলু চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আলু চাষের জন্য সুখ্যাত জেলা মুন্সিগঞ্জ। সেখানে বিশাল চরে আলুর বাণিজ্যিক চাষ দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। দেখেছি ইউরোপ-আমেরিকার মতো বিশাল বিশাল মাঠে আলু চাষ হতে। তবে বেশির ভাগ আলুর জাতই রান্নার আলু। কৃষক স্বভাবতই নতুন জাতের আলু চাষের ঝুঁকি নিতে চান না। তবে উৎপাদিত আলুর বাজার ও লাভ নিশ্চিত করতে পারলে নতুন নতুন জাতের আলু চাষেও কৃষক উৎসাহী হবেন।
খাদ্যনিরাপত্তায় আলু হতে পারে প্ল্যান বি। যে হারে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো না গেলে খাদ্যসংকট বা দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা কঠিন হয়ে যাবে। পৃথিবীর গবেষকেরা খাদ্যসংকট মোকাবিলায় আলুকে বেছে নিয়েছেন। কারণ, পৃথিবীর ১৫৯টি দেশে আলু চাষ হয়। এটি উপাদেয়, পুষ্টিকর এবং অধিক উৎপাদনশীল। যাতে রয়েছে ভিটামিনসহ সব ধরনের পুষ্টি উপাদান। আলুকে বলা হয় ‘কিং অব ভেজিটেবল’। সারা পৃথিবীতেই আলুর রয়েছে নানাবিধ মুখরোচক ব্যবহার। ফলে খাদ্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। আবার এর উৎপাদনশীলতাও বেশি। হেক্টরপ্রতি আলুর গড় ফলন ২০ টন; অন্যদিকে ধান ৩ টন আর গম ৩.৩ টন। সুতরাং এই বিবেচনায় আলু অন্যান্য প্রধান ফসলের চেয়ে বেশ এগিয়ে। এ চিন্তা থেকেই চীন আলু উৎপাদনে নজর দিয়েছে। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিন বছরের ‘গ্রেট চায়না ফেমিন’-এর পর আলু উৎপাদন বাড়াতে শুরু করে দেশটি। এখন পৃথিবীর শতকরা ২২ ভাগ আলুই উৎপাদন হয় চীনে। প্রতিবছর ৯ থেকে ১০ কোটি টন আলু উৎপাদন করে চীন বিশ্বের আলু উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করছে।
হোয়াজং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলু নিয়ে গবেষণা বিস্তর। এ ক্ষেত্রে প্ল্যান বি হিসেবে আলুকে রেখেছে চীন। আলুর স্টার্চ হচ্ছে আলু থেকে তৈরি ময়দা বা আটা। হোয়াজং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নি বিহুয়ার মতে, সাধারণ গম বা চালের আটা যেখানে তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়, সেখানে আলুর স্টার্চ সংরক্ষণ করা যায় ১০ বছরের বেশি সময়। তাই খাদ্যনিরাপত্তার বলয় তৈরিতে তারা আলুকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
খাদ্যনিরাপত্তার পাশাপাশি আলু থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে চাইলে প্রসেসিং শিল্পে ব্যবহার করা হয়—এমন জাতের আলুর চাষ বাড়াতে হবে। বিশ্বখ্যাত ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ড অনুমোদিত অ্যালভারস্টোন রুসেট আলুর বীজ উৎপাদনে কাজ করছে আরিফুল হকের প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে এ জাতটি নিয়ে কৃষকপর্যায়েও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
আমরা আলু উৎপাদনে পৃথিবীতে সপ্তম হলেও রপ্তানিতে পিছিয়ে আছি অনেকখানি। শুধু রান্নার উপযোগী আলু উৎপাদন করে আলুর অর্থনীতিতে এগিয়ে থাকা সম্ভব নয়। মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে আলুর বহুবিদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন প্রসেসিং শিল্পের বিকাশ। পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য আলু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন প্রচলিত জাতের বাইরে নতুন জাতের আলুর চাষ বাড়ানো এবং আলু চাষে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করা। আগামীর পৃথিবীতে কৃষিশিল্প রচনা করবে বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ভিত। বৈশ্বিক কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে আমাদের কৃষি গবেষণা বাড়াতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে নতুন জাত উদ্ভাবনে। কাজ করতে হবে নতুন দিনের কৃষি নিয়ে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
রংপুরের ঈশ্বরপুর গ্রামে যতদূর চোখ যায় চোখে পড়ে মাঠে মাঠে বিভিন্ন জাতের আলুর গাছ। মূলত সেখানে উৎপাদন হচ্ছে আলুবীজ। আর সেখান থেকে উৎপাদিত আলুবীজ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এখন দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি আলুর চাষ হয়।
প্রায় ৪০০ বছর আগে ইউরোপীয় বণিকদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে আলু প্রবেশ করলেও বাংলাদেশে আলুর বাণিজ্যিক আবাদের ইতিহাস খুব একটা পুরোনো নয়। ব্রিটিশদের হাত ধরে বাঙালি খাদ্যে আলুর সংযোজন ঘটলেও এ দেশে আলু চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নেদারল্যান্ডসের আলুবীজে। পুষ্টি উপাদানে আলু হচ্ছে ভাতের সমগোত্রীয়, কিন্তু ভাতপ্রিয় বাঙালির খাদ্যতালিকায় আলু জায়গা করে নিয়েছে সবজি হিসেবে। আর ক্রমেই আলু হয়ে উঠেছে সব সবজির সেরা। তবে গরম ভাতের সঙ্গে সরিষার তেলে মাখানো আলুভর্তা এ দেশের ধনী-গরিব প্রায় সব মানুষের প্রিয় খাবার। রান্নায় প্রায় সব তরকারির সঙ্গেই আলু নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে খুব কম সময়ে। আলু হয়ে উঠেছে খুবই প্রয়োজনীয় এক খাদ্যপণ্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৮০ লাখ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টনের কাছাকাছি। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে বাংলাদেশে আলু উৎপাদন হয়েছিল চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ টন বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য নির্ভুল হলে উৎপাদনের ১৫ শতাংশ নষ্ট হওয়ার পরও দেশে উদ্বৃত্ত আলু থাকার কথা। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলু আমদানি করতে হয়েছে ৯৮ হাজার ৭৩১ টন। যদিও বিপরীতে একই সময়ে আলু রপ্তানি হয়েছে ১২ হাজার ৩৫২ টন। আলুর উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানির এইসব তথ্য-উপাত্তে হিসাব মেলানো খুব কঠিন।
তবে এ ব্যাপরে স্টাডি করতে গিয়ে একটি বিষয় আমরা লক্ষ করেছি, তা হলো রান্নার বাইরেও আলুর ব্যবহার বেড়েছে। এ দেশের মানুষের কাছে চিপস ও ফ্রেঞ্চফ্রাইয়ের চাহিদা বাড়ছে। আমরা সাধারণত যে আলু উৎপাদন করি তার বেশির ভাগই টেবিল পটেটো অর্থাৎ রান্নার কাজে ব্যবহার হয়। আলু প্রসেসিং শিল্পে ব্যবহার হয় ভিন্ন জাতের আলু। যার অধিকাংশই আমদানিনির্ভর। এই আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে বাংলাদেশে যে কয়টি আলুবীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের একটি ইস্টার্ন ট্রেড করপোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুল হক প্রসেসিং শিল্পে ব্যবহৃত আলুর সম্ভাবনার কথা বললেন।
চ্যানেল আই স্টুডিওতে উপস্থিত হয়ে একই কথা বলেছিলেন নেদারল্যান্ডসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স থ্রাইস ভদস্ত্রা। তিনি বলেন, ‘১০-১২টি ডাচ কোম্পানি রয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বীজ আলু সরবরাহ করছে। আমরা বাংলাদেশে আলুর ফলনে অসাধারণ সাফল্য দেখছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী আলু উৎপাদনে সপ্তম। নেদারল্যান্ডস রয়েছে একাদশে। অর্থাৎ, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নেদারল্যান্ডসকে এ ব্যাপারে অতিক্রম করে ফেলেছে। তবে, নেদারল্যান্ডসে প্রতি হেক্টরে ৪০ টন আলু উৎপাদন হয়, যেখানে বাংলাদেশ তার অর্ধেক উৎপাদন করে, প্রতি হেক্টরে মাত্র ২০ টন। সুতরাং, ফসল বৃদ্ধির এবং বাংলাদেশের পুষ্টি ও খাদ্যে অবদান রাখার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সে জন্য দরকার উচ্চফলনশীল আলুবীজ। আপনাকে আলুর জাত উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। আপনাকে স্টোরেজ ব্যবস্থাপনায়ও বিনিয়োগ করতে হবে। ডাচ কোম্পানিগুলো সে ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা নিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাতসহিষ্ণু ও পরিবেশবান্ধব মানসম্পন্ন আলু উৎপাদনে এবং উচ্চফলনশীল জাত সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস যৌথভাবে কাজ করছে। এটি বাংলাদেশের জনগণকে উন্নত পুষ্টি সরবরাহ করতেও সহায়তা করবে।’
স্ট্যাটিস্টার তথ্য বলছে, পৃথিবীজুড়ে আলুর চিপসের বাজারের আকার ৫ হাজার কোটি ইউএস ডলারের বেশি। ফরচুন বিজনেস ইনসাইটের তথ্যমতে পৃথিবীতে ফ্রেঞ্চফ্রাইয়ের বাজার দেড় হাজার কোটি ইউএস ডলারেরও বেশি। আর এর আকার দিন দিন বড় হচ্ছে। আলু নিয়ে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করতে হলে আমাদের অবশ্যই প্রসেসিং ভ্যারাইটির আলুই উৎপাদন করতে হবে।
কৃষক আলু চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আলু চাষের জন্য সুখ্যাত জেলা মুন্সিগঞ্জ। সেখানে বিশাল চরে আলুর বাণিজ্যিক চাষ দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। দেখেছি ইউরোপ-আমেরিকার মতো বিশাল বিশাল মাঠে আলু চাষ হতে। তবে বেশির ভাগ আলুর জাতই রান্নার আলু। কৃষক স্বভাবতই নতুন জাতের আলু চাষের ঝুঁকি নিতে চান না। তবে উৎপাদিত আলুর বাজার ও লাভ নিশ্চিত করতে পারলে নতুন নতুন জাতের আলু চাষেও কৃষক উৎসাহী হবেন।
খাদ্যনিরাপত্তায় আলু হতে পারে প্ল্যান বি। যে হারে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো না গেলে খাদ্যসংকট বা দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা কঠিন হয়ে যাবে। পৃথিবীর গবেষকেরা খাদ্যসংকট মোকাবিলায় আলুকে বেছে নিয়েছেন। কারণ, পৃথিবীর ১৫৯টি দেশে আলু চাষ হয়। এটি উপাদেয়, পুষ্টিকর এবং অধিক উৎপাদনশীল। যাতে রয়েছে ভিটামিনসহ সব ধরনের পুষ্টি উপাদান। আলুকে বলা হয় ‘কিং অব ভেজিটেবল’। সারা পৃথিবীতেই আলুর রয়েছে নানাবিধ মুখরোচক ব্যবহার। ফলে খাদ্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। আবার এর উৎপাদনশীলতাও বেশি। হেক্টরপ্রতি আলুর গড় ফলন ২০ টন; অন্যদিকে ধান ৩ টন আর গম ৩.৩ টন। সুতরাং এই বিবেচনায় আলু অন্যান্য প্রধান ফসলের চেয়ে বেশ এগিয়ে। এ চিন্তা থেকেই চীন আলু উৎপাদনে নজর দিয়েছে। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিন বছরের ‘গ্রেট চায়না ফেমিন’-এর পর আলু উৎপাদন বাড়াতে শুরু করে দেশটি। এখন পৃথিবীর শতকরা ২২ ভাগ আলুই উৎপাদন হয় চীনে। প্রতিবছর ৯ থেকে ১০ কোটি টন আলু উৎপাদন করে চীন বিশ্বের আলু উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করছে।
হোয়াজং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলু নিয়ে গবেষণা বিস্তর। এ ক্ষেত্রে প্ল্যান বি হিসেবে আলুকে রেখেছে চীন। আলুর স্টার্চ হচ্ছে আলু থেকে তৈরি ময়দা বা আটা। হোয়াজং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নি বিহুয়ার মতে, সাধারণ গম বা চালের আটা যেখানে তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়, সেখানে আলুর স্টার্চ সংরক্ষণ করা যায় ১০ বছরের বেশি সময়। তাই খাদ্যনিরাপত্তার বলয় তৈরিতে তারা আলুকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
খাদ্যনিরাপত্তার পাশাপাশি আলু থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে চাইলে প্রসেসিং শিল্পে ব্যবহার করা হয়—এমন জাতের আলুর চাষ বাড়াতে হবে। বিশ্বখ্যাত ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ড অনুমোদিত অ্যালভারস্টোন রুসেট আলুর বীজ উৎপাদনে কাজ করছে আরিফুল হকের প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে এ জাতটি নিয়ে কৃষকপর্যায়েও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
আমরা আলু উৎপাদনে পৃথিবীতে সপ্তম হলেও রপ্তানিতে পিছিয়ে আছি অনেকখানি। শুধু রান্নার উপযোগী আলু উৎপাদন করে আলুর অর্থনীতিতে এগিয়ে থাকা সম্ভব নয়। মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে আলুর বহুবিদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন প্রসেসিং শিল্পের বিকাশ। পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য আলু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন প্রচলিত জাতের বাইরে নতুন জাতের আলুর চাষ বাড়ানো এবং আলু চাষে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করা। আগামীর পৃথিবীতে কৃষিশিল্প রচনা করবে বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ভিত। বৈশ্বিক কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে আমাদের কৃষি গবেষণা বাড়াতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে নতুন জাত উদ্ভাবনে। কাজ করতে হবে নতুন দিনের কৃষি নিয়ে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
দেশের সংবিধান, পুলিশ, স্থানীয় সরকার, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের নানা আলাপ হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু এই সময়ে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে খুব বেশি কিছু করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারেরই গঠন করা শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
১৯ ঘণ্টা আগেঈশ্বরকে এখনো বুঝে উঠতে পারিনি আমরা। এ কারণে মানবদেহ থাকলেও মনুষ্যত্ব, মানবিকতা নেই কিংবা মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি। ঈশ্বরকে বোঝার জন্য আমরা দায়বদ্ধ নই, যদিও আমাদের দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গটি এখানে আসার কথা ছিল না। শব্দটি প্রযোজ্য নয় এখানে। কিন্তু জন্ম, মৃত্যু ও ধর্মকে পুঁজি করে এক অদৃশ্য নাগপাশে বাঁধা পড়ে
১৯ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও কার্যপরিধি নিয়ে রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। এক অংশ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নির্বাচন পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়; বিচার বিভাগে সংস্কার, হাসিনা সরকারের হত্যা-নির্যাতন, গুম-খুন ও দুর্নীতির বিচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষকরণসহ নানা
২০ ঘণ্টা আগেঢাকা শহরে পরিবহনের অব্যবস্থাপনার কারণে নগরবাসী কাহিল অনেক আগে থেকেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যানজটের অসহনীয় যন্ত্রণা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের কিছু উদ্যোগ গ্রহণের কারণে মানুষ আশার আলো দেখতে পেলেও সময়ের সঙ্গে সেই আশাও নিরাশায় পরিণত হয়েছে। মূলত পরিবহনমালিক ও নেতাদের অসহযোগিতার কারণে
২০ ঘণ্টা আগে