চাঁদাবাজি-দখলবাজি অব্যাহত

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭: ৩৭

তিন মাস হয়ে গেল আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের কেউ কেউ দেশত্যাগ করেছেন, বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন আর বাকিরা প্রায় সবাই আত্মগোপনে আছেন। আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে দৃশ্যপটে না থাকলেও আওয়ামী লীগ শাসনামলের খারাপ সব প্রবণতা কিন্তু ঠিকই রয়ে গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আধিপত্য বিস্তারে নেমে পড়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলের অফিস দখল, শিল্পকারখানার ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা দখল, জমি দখল, চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম এসেছে।

এই সবকিছু গোপনে বা লোকচক্ষুর আড়ালে হচ্ছে, তা-ও নয়। ৬ আগস্ট থেকে প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে বিএনপির পরিচয় দেওয়া কিছু ব্যক্তির দখলবাজির খবর ছাপা হচ্ছে, যেমন ছাপা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কারও কারও অবাধ দুর্নীতির অবিশ্বাস্য সব খবর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই কিন্তু তাদের অনুসৃত লুটপাটের ধারাটি অব্যাহত থাকা খুবই দুঃখজনক।

আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের একটি খবরের শিরোনাম ‘আল্লাহ আমার হাতে লিখে রেখেছে আপনার মৃত্যু’, চাঁদা চেয়ে আ.লীগ নেতাকে বিএনপি নেতার হুমকি এবং আরেকটি খবরের শিরোনাম ‘টেন্ডার নিয়ে বিএনপি নেতার তুলকালাম’।

প্রথম খবরটি থেকে জানা যাচ্ছে, নওগাঁর বদলগাছীতে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ফোনে হুমকি দিয়ে বিএনপি নেতা চাঁদা দাবি করেছেন। এ-সংক্রান্ত একটি অডিও কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

উপজেলা বিএনপির সহযুববিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিন আওয়ামী লীগ নেতা ও বদলগাছীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল আলম খানের নাম একটি মামলা থেকে বাদ দিতে তাঁর কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। ৫ নভেম্বর উপজেলার গোবরচাঁপা বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম খানসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সৌখিন।

দ্বিতীয় খবরটি থেকে জানা যাচ্ছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ৫ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের টেন্ডার নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদকে।

জেলা বিএনপির সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তত্ত্বাবধায়কের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। লাঞ্ছিতের সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

দখলবাজি, চাঁদাবাজির অভিযোগ ইতিমধ্যে বিএনপির বেশকিছু নেতার বিরুদ্ধে উঠেছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ সম্প্রতি এক বক্তৃতায় বলেছেন, কোনো ধরনের দখলবাজি এবং চাঁদাবাজিতে বিএনপির লোকজন জড়াবেন না। আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপিতে ঢুকে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। আপনারা তাদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকবেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবর পড়ে কি কারও এটা মনে হবে যে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সজাগ আছেন?

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত