পলিথিন পোড়ানোই কি সমাধান

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭: ২৫

অন্তর্বর্তী সরকার যে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়তে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে, তা নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করবেন না। বিশেষ করে প্লাস্টিক বা পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

আজকের পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি বন্ধে অভিযানের খবর। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের ঘোষণা অনুযায়ী ৩ নভেম্বর থেকে সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদনকারী কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ধরনের খবর নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সাহায্য করে।

তবে এসব ইতিবাচক খবরের মধ্যেও একটা ‘কিন্তু’ থেকে যায়। সোমবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার কাঁচাবাজারে অভিযান চালিয়ে দেড় মণের বেশি পলিথিন ব্যাগ জব্দ এবং সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। খবরের সঙ্গে যে ছবিটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে, সেই ছবিটিও প্রমাণ দেয় যে ব্যাগগুলো আগুনে পোড়ানো হয়েছে। এখানেই আসে ‘কিন্তু’র প্রসঙ্গটি। পলিথিন ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আগুনে পুড়িয়ে মাটি ও বায়ুদূষণও করা হয়েছে।

পলিথিন তৈরি হয় প্লাস্টিক থেকে। বাতাস, মাটি ও পানির ওপর রয়েছে এই প্লাস্টিকের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব। পলিথিন ও প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে প্রচণ্ড দূষণ জাপটে ধরে বায়ু ও মাটিকে। অন্তর্জালে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই কপালে ভাঁজ ফেলার মতো তথ্য পাওয়া যায়—খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে যে প্লাস্টিক সংশ্লেষিত হয়, তা সহজে পচনশীল নয়। প্লাস্টিক কণা মাটিতে বা পরিবেশে টিকে থাকতে পারে ৪০০ বছরের বেশি সময়। প্লাস্টিক পোড়ালে তাপমাত্রা, অণুজীব এবং পরিবেশে বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়ার কারণে সেগুলো ভেঙে বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিকে পরিণত হয়।

সেগুলোও আবার পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ক্ষয় হয়ে পরিণত হয় আরও ছোট ছোট প্লাস্টিক কণা, পাউডার কণা বা অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায়। বিজ্ঞান যেগুলোকে নাম দিয়েছে ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’ বা ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক ফাইবার’। সম্ভবত অনেকেই এই নামের সঙ্গে পরিচিত। এবং সহজ করে এ-ও হয়তো অনেকের জানা যে এই কণাগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম কারণ।

অতএব, পলিথিন ব্যাগ জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা যে কোনো সমাধান নয় বরং তাতে পরিবেশের ক্ষতি হয়—এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। চকরিয়ার ওই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফখরুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দীন। তাঁরা পলিথিন ব্যাগ জব্দ করে তিন ব্যবসায়ীকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা এবং বাকি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা নিজেরা সচেতন ছিলেন না। নয়তো একজন রেঞ্জ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পরিবেশদূষণের বিরুদ্ধে একটি অভিযানের নেতৃত্বদানকারী কী করে পরিবেশদূষণ করলেন? পরিবেশ অধিদপ্তর এই ‘ভুলের’ কোনো জরিমানা দেবে কি?

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত