জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের নাম অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তকে ‘অপরিণামদর্শী’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন 
তিনি। 

আজ শনিবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘকে যে প্রতিনিধি দলের তালিকা প্রদান করে, সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বৈধতা প্রদানের চেষ্টা করেছে। আমরা বিস্ময় ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম জাতিসংঘের প্রতিনিধি হিসবে আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত এই অপরাধীকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করল, তারা তাদের হিংস্র মানবতাবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে যাবে; বিশ্ববিবেক ও মতামতকে তোয়াক্কা না করে। সরকারের এই অপরিণামদর্শী ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্তের দায়-দায়িত্ব কেবল সরকারকেই বহন করতে হবে।’ 

বেনজীর আহমেদের ভিসা পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্রে শর্ত সাপেক্ষে ভিসা প্রদান করায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাতিসংঘের ১৯৪৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি শুধু জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট ওই সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন এবং তাঁর অবস্থান সীমিত থাকবে জাতিসংঘ প্রাঙ্গণে। আমরা মনে করি, এই ধরনের শর্তসাপেক্ষে ভিসা প্রদান বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর। সরকারের এই ধরনের দায়-দায়িত্বহীন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।’ 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোলায় গুলি করে দুজনকে হত্যা, ঢাকা ও কুমিল্লায় পুলিশের হেফাজতে দুজনের মৃত্যু এবং সারা দেশে জ্বালানি তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির প্রতিবাদে বিএনপির চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলাতে এটা প্রতীয়মান হয় যে, এই সরকারের এই অপরিণামদর্শী ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্তের দায় কেবল সরকারকেই নিতে হবে।’ 

গত ২২ আগস্ট থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে হামলার চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৫০ টির অধিক স্থানে হামলা হয়েছে, আহত হয়েছে তিন শতাধিক ও গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে প্রায় ২০ টির মতো জায়গায়, আসামি করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার মানুষকে এবং মামলা করা হয়েছে ১৫টার ওপরে।’ 

এই হামলার পর বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবে কি না, এ প্রশ্নে  মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপি তো আন্দোলন শুরুই করেছে। আমাদের লক্ষ্য একটাই এই ভয়াবহ দানবীয় একটা শক্তি যারা ক্ষমতায় বসে আছে এদের সরানো এবং এদের সরিয়ে গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’ 

‘সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়াই বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে’-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এমন দাবিকে ‘সত্যের অপলাপ’ হিসেবে আখ্যা দেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) অপব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং সত্যের অপলাপ করেছেন। ইউএস হিউম্যান রাইটসের যে রিপোর্ট, সেই রিপোর্টে আজকে না, পর-পর গত চার-পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উঠে আসছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্টেও তা উঠে এসেছে। মিশেল ব্যাচেলেটের যে সংবাদ সম্মেলন, সেখানে পরিষ্কার করে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে এবং এটাও বলা হয়েছে যে, এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন যদি চলতে থাকে এবং এর সঙ্গে যদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কেউ জড়িত থাকেন সে বিষয়টা তারা উল্লেখ করেছেন। তাহলে সে ব্যাপারেও সেটাকে দেখার জন্য একটা ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত। সব শেষে গুরুত্বপূর্ণ যে কথা যেটা বলেছেন, এটার জন্য একটা সম্পূর্ণ স্বাধীন সংস্থা তৈরি করতে হবে যারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তদন্ত করবে।’ 

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তারপরও যদি এদের (সরকার) মাথায় এই বিষয়টা না ঢুকে, তাহলে তাদের মাথা ড্রিল করার ছাড়া উপায় নাই।’ 

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান উপস্থিত ছিলেন।