
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, সংস্কারপ্রক্রিয়া এবং বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও এর সমাধান নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত ফাহাদ।
সাখাওয়াত ফাহাদ

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, সংস্কার প্রক্রিয়া এবং বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও এর সমাধান নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত ফাহাদ।
আজকের পত্রিকা: শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার গত পাঁচ মাসে তা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছে?
জোনায়েদ সাকি: মানুষ পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাটার খোলনলচে বদলে দিতে চায়। মানুষ একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়, যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে। সুযোগের সমতা থাকবে, সবাই নিজেকে একটা বিকাশ বা উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। একটা ব্যবস্থা যেখানে সবাইকে ধারণ করা হবে। এ রকম রাষ্ট্রব্যবস্থা তো রাতারাতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। অনেকে ভেবেছিলেন একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। সংবিধান স্থগিত করে দেওয়া হবে, প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দিয়ে নতুন করে গঠন করা হবে। সেই রকম বাস্তবতাটা তৈরি হয়নি। তা না হওয়ার ফলে বিদ্যমান ব্যবস্থা রেখেই কয়েকটা পরিবর্তনে যেতে হবে। সরকার অনেকগুলো কমিশন গঠন করেছে। তারা প্রস্তাব তৈরি করছে এবং রিপোর্টও পেশ করেছে। সেসব নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, নানান শ্রেণি–পেশার অংশীজনসহ সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গেই কথা বলবেন। এই কথা বলার মত দিয়ে একটা ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হবে যে, কোন কোন সংস্কার বা পরিবর্তনগুলো সামনে আসবে। সেই পরিবর্তনগুলো তখন কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, অনেকগুলো হচ্ছে নির্বাচনের আগেই হয়তো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আবার অনেকগুলো মৌলিক কাঠামোগত প্রশ্ন আছে, যেগুলো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। ফলে সংস্কার ব্যাপারটা যেমন নির্বাচনের জন্য দরকার, আবার সংস্কারের জন্যও নির্বাচন দরকার। এই পুরো প্রচেষ্টা চলমান আছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, এটা বলব না কিন্তু; এটা বলব মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথটা এগিয়ে চলেছে।
আজকের পত্রিকা: অভ্যুত্থানের সময় নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন?
জোনায়েদ সাকি: এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, বিব্রতকর। জুলাই–আগস্টে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, তাঁদের যথাযথ জাতীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা এবং তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করা, আহতদের চিকিৎসা নয়, তাদের পুরো ভবিষ্যতের দায়িত্ব গ্রহণ করা—এটা সরকারের অগ্রাধিকার হতে হবে। যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই অভ্যুত্থান তৈরি হয়েছে এবং এই সরকারও গঠিত হয়েছে, তারা নিঃসন্দেহে অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা দরকার। বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো আমরা জানি, কিন্তু এই দুর্বলতার কথা বলে আহতদের যদি আহাজারি করতে হয়, তাহলে সেটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক একটা জায়গা হবে। অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কাজ করছে না, একেবারে তা নয়। কিন্তু তারপরও আহতের সংখ্যা এতই বেশি যে অনেকেই আওতার বাইরে থাকছেন। ফলে আরও অধিকতর মনোযোগ, প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান দরকার।
আজকের পত্রিকা: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে, এমন অভিযোগ উঠছে। আপনার কি মনে হয়, সরকারের কথা সংশ্লিষ্টরা শুনছে না?
জোনায়েদ সাকি: তিনটা দিক আছে। প্রথমত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান অংশ ‘পুলিশ’। এই বাহিনীটাকে জনগণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের নৈতিক জায়গাটা ভেঙে পড়েছিল। একটা দেশে পুলিশ কতটা অনাস্থার জায়গায়, সেটা পুলিশ নিজেরাই অনুভব করছে। তারা জনগণের মুখোমুখি হতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, এই ভেঙে পড়া বাহিনীকে পুনর্গঠনের কাজটা শক্ত কাজ এবং মনে রাখা দরকার—এর মধ্যে অনেক ব্যক্তিরাই আছেন, যারা সরাসরি পতিত সরকারের একেবারেই এমন দোসর ছিলেন—যারা আইন, নিয়মকানুন, প্রাতিষ্ঠানিক বিধিমালা—এগুলো সব পায়ে দলিয়ে জনগণের ওপর অত্যাচার করেছে। ফলে এই লোকগুলোকে চিহ্নিত করা এবং পুরো প্রতিষ্ঠানটাকে আবার পুনর্গঠনের কাজটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
যারা পতিত সরকারের দোসর ছিল, তারা ঠিকঠাক মতন কাজ করছেন কি না—সেটা প্রশ্ন হিসেবে থেকেই যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তার মধ্য দিয়ে একটা পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা, সরকারকে ব্যর্থ দেখানোর চেষ্টাও দেখা গেছে। শেষ দিকটা হচ্ছে, এতগুলো বাস্তবতার মোকাবিলা করেই পুনর্গঠন করতে হবে এবং পুলিশকে কার্যকর করতে হবে। পুলিশ এবং জনগণের মধ্যে ন্যূনতম যে আস্থার জায়গা দরকার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য সেই জায়গাটাতে আমাদের পৌঁছাতে হবে।
আজকের পত্রিকা: গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে, এমন অভিযোগ অনেকের। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
জোনায়েদ সাকি: যাদের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বলা হচ্ছে, তারা হঠাৎ করে আসেনি। তারা আগে থেকেই এখানে অবস্থান করছিল। বর্তমান সরকারের দিক থেকে যেহেতু তুলনামূলকভাবে দমন–পীড়নের মাধ্যমে শাসন কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনা কম করা হচ্ছে, তুলনামূলক স্বাধীন পরিস্থিতি আছে ফলে সবাই সারফেসে এসেছে। সমাজে প্রকৃত বাস্তবতা, যা তা সামনে আসাই উত্তম এবং সেই অনুযায়ীই সমাজের বাকিদের ভূমিকার জায়গাটা তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ একটা উদার গণতান্ত্রিক জায়গা চায়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাস কিংবা জীবনচর্চা, ধর্ম, জাতি, লিঙ্গীয় পরিচয়ের পার্থক্য আছে, ফলে বহু রকম যে পার্থক্য, সেটা বাস্তব এবং তা থাকবে। কিন্তু সেই পার্থক্যের মধ্যে আমরা কীভাবে সহাবস্থান করতে পারব, একটা মিলনাত্মক সমাজের মধ্যে থাকতে পারব—সেইটা আমাদের লক্ষ্য। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেই অবস্থাটা বজায় রাখা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে কাউকে হয়তো দমন করতে পারেন, কিছুটা সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখতে পারেন, বাস্তবতাকে তাতে বাস্তবতার বদল ঘটে না। বরং এ ধরনের পদ্ধতিতে যেটা হয়, যাদের আপনি দমন করতে চাইছেন, তারাই তলে তলে আরও বেড়ে ওঠে।
আজকের পত্রিকা: জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
জোনায়েদ সাকি: জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের যে জন আকাঙ্ক্ষা এবং বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কোন দিকে যাবে, সেটার একটা দিকনির্দেশনা অভ্যুত্থানের মধ্যে ছিল। সেগুলো যদি কোনো একটা রাজনৈতিক দলিলে সন্নিবেশিত হয়, যেটা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য একটি রেফারেন্স পয়েন্ট হতে পারে, সেটা তো জরুরি মনে করি। কিন্তু সেটা সবাই মিলে তৈরি হওয়া দরকার। এ রকম একটা জায়গা কেউ এককভাবে তৈরি করাটা ঠিক হবে না। যখন আপনি একটা জাতীয় কিংবা সম্মিলিত ঘোষণা আকারে গ্রহণ করতে চাইবেন, তখন সেটাতে সকলের মতামতের ভিত্তিতেই হতে হবে।
কী ধরনের ঘোষণা হবে, সেটাও নির্ধারণ করতে হবে। এটা কি কোন ঘোষণা হবে, নাকি প্রোক্লেমেশন যে অর্থে ব্যবহৃত হয় রাজনৈতিকভাবে, আইনের দিক থেকে। প্রোক্লেমেশন হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। সেটার মধ্য দিয়ে আমাদের এই রাষ্ট্র পত্তন হয়েছিল। আমরা কি আরেকটা নতুন রাষ্ট্র পত্তন করতে চাচ্ছি? সেইটা প্রশ্ন আকারে আসবে। প্রোক্লেমেশনের যে আইনি ভিত্তি, সেটা নিয়ে এখন ঐক্য তৈরি হবে কি না—রাজনৈতিকভাবে সেটাও একটা প্রশ্ন। ফলে ওই আইনি দিকের বাইরে যদি একটা ঘোষণা থাকে যে ঘোষণা ভবিষ্যতের রাজনীতি রেফারেন্স এবং অভ্যুত্থানের একটা আকাঙ্ক্ষা সংবলিত জনগণের দলিল হিসেবে থাকবে, সে ক্ষেত্রে এটা তৈরি হতে আমি বাধা দেখি না। কিন্তু প্রয়োজনীয় যে সময় এবং উদ্যোগ সেটা দরকার।
আজকের পত্রিকা: গত ৫ আগস্টের আগের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় দলগুলোর মধ্যে একধরনের ঐক্য ছিল। এখন কয়েকটি দল ও সংগঠনের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। এই বিরোধকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
জোনায়েদ সাকি: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানে অনেক রাজনৈতিক দল থাকবে। আর অনেক রাজনৈতিক দল থাকা মানে রাজনৈতিকভাবে যে মতপার্থক্য আছে, সেটাও কাজ করবে। সেটা প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রূপ নেবে—এমনি বিরোধেও রূপ নিতে পারে। এটা গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই কিন্তু ঘটে। একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শক্তির পরীক্ষা হয়, এই প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বিরোধকে কীভাবে ব্যবস্থা ধারণ করে। যত বেশি ধারণ করতে পারে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তত শক্তিশালী হয়। আমরা এখন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণ করতে চাইছি।
এটা মনে রাখা দরকার যে এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব আমাদের আছে যে একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্মাণ করতে হবে, একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে পৌঁছাতে হবে এবং সেটাকে কার্যকর করে তুলতে আমাদের ঐক্যের জায়গাটা দরকার। এই নতুন বন্দোবস্ত বা ব্যবস্থাটা আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য। ফলে রুলস অব দ্য গেম তৈরির যে ঐতিহাসিক দায় তা আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য। সে জন্য আমাদের ঐক্য দরকার আবার রাজনৈতিক কারণেই প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুটো একসঙ্গে যদি চলে তাহলে এমন অনেক সময় হয়, ঐক্যের জায়গাটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেটা সতর্ক থাকা দরকার।
আজকের পত্রিকা: এই বিরোধ থেকে দলগুলোর মধ্যে সংঘাত হতে পারে, এমন আশঙ্কা কি আপনি দেখেন?
জোনায়েদ সাকি: বিরোধের দিকটা যেমন আছে, তেমনি ঐক্যের আওয়াজটাও আছে। আমরা শুরু থেকেই কথা বলছি এবং স্পষ্টভাবে ঐক্যের জায়গাটাকে মানুষের মধ্যে হাজির করার চেষ্টা করছি। মানুষের মধ্যে সেই ঐক্যের আগ্রহের ধারাটাও আছে বলেই এখনো ঐক্য ভেঙে পড়েনি। কাজেই যারা ঐক্যের দিকটি খেয়াল রাখবেন না, দায়িত্বের জায়গাটাকে ভুলে যাবেন, নিজেদের প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকেই বড় করে তুলবেন, তাঁরা তো আসলে মানুষের কাছে দায়ী থাকবেন এবং মানুষ তাঁদের গ্রহণ করবে না। কেউ যদি মনে করে, আমরা যা বলছি সেটাই একমাত্র জন–আকাঙ্ক্ষা, সবচেয়ে ভালো কর্মসূচি এবং সেটাই বাস্তবায়ন, গ্রহণ করতে হবে তাহলে সেই আচরণটা গণতান্ত্রিক হবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানেই হচ্ছে, অন্যকে স্বীকার করে নিয়েই আপনাকে এগোতে হবে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ দলটির এ অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, সরকারে ও সাংবিধানিক পদে নিয়োগে তদবির ও চাপ প্রয়োগ করছে দলগুলো। এমন বক্তব্য সরকারের অবস্থানকে দুর্বল করে কি না?
জোনায়েদ সাকি: অনেকেই তো অনেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন, সব বক্তব্য নিয়ে তো আর বক্তব্য দেওয়া সব সময় আমি ঠিক সমীচীন মনে করি না। একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে সরকারের ভূমিকা কী রকম? মানুষ মনে করে যে সরকার নিজে কোনো পক্ষ নয়। রাজনৈতিকভাবে সকল পক্ষের মধ্যে একটা কার্যকর নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তারা আগামী যে রাজনৈতিক উত্তরণের কাজটি করবেন, সেটা সংস্কার এবং নির্বাচন সব দিক থেকে। ফলে এই সরকারের ভূমিকা যাতে পক্ষপাতদুষ্ট হচ্ছে, এমন কোনো পরিস্থিতি না হয়—সেটাই মানুষ আকাঙ্ক্ষা করে। সেটা কখন হতে পারে?
যেহেতু শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা একটা রাজনৈতিক দল করবে, রাজনৈতিক দল ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু রাজনৈতিক দল গঠনটা তো জনগণের ভেতর থেকে হওয়া উচিত। ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে, মানুষের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হলে তো এটা নতুন দলের জন্যও ইতিবাচক হবে না। শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে মানুষের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি না হয়। ফলে রাজনৈতিক দল গঠন করলে বর্তমানে যারা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আকারে সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁরা কী করবেন তাঁদের ভাবা দরকার। তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, তাঁরা আসলে কোথায় অবস্থান করবেন। রাজনৈতিক দল হয়ে যাওয়ার পরে সেই দলের সমর্থকেরা যখন সরকারে থাকেন, তখন অন্য দলের সমর্থকেরাও বলেন, সরকারে তো আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সেখানে পক্ষপাতের প্রশ্নও উঠতে পারে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে একটি নতুন দল আগামী ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এই দলে আপনার সংগঠনেরও কয়েকজন আছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
জোনায়েদ সাকি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা জাতীয় নাগরিক কমিটি কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল না। দুটোই প্ল্যাটফর্ম। আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে, যেখানে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছিল, এখনো আছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি যখন গঠন করা হয় তখনো একই কথা বলা হয়েছিল, এটা একটা কমন প্ল্যাটফর্ম হবে, যেখানে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরাও থাকতে পারেন। এখন এটা থেকে যখন একটা রাজনৈতিক দল গঠিত হবে, তখন এখান থেকে অনেকেই হয়তো সেই রাজনৈতিক দলে যেতে পারেন। কিন্তু সবাই যাবেন, এমনটা হয়তো নয়। ফলে রাজনৈতিক দল গঠনের পরে আসলে বোঝা যাবে, কারা আসলে ঠিক কমন প্ল্যাটফর্মে থাকতে চান এবং কারা একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলে যেতে চান।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকার দুই দফা সর্বদলীয় বৈঠক করেছে? এমন বৈঠক বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগছে কি? কীভাবে?
জোনায়েদ সাকি: অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে কয়েকবার বসেছে, সেগুলো নির্দিষ্ট ইস্যুভিত্তিক। আমরা যেটা শুরু থেকে বলেছিলাম, একটা কাঠামো তৈরি করলে সরকারের জন্য ভালো হতো। জাতীয় ঐকমত্য তৈরির যে দায়িত্বটা আমাদের আছে, সেটা বজায় রাখতেও সুবিধা হতো। একটা ‘জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল’ গঠন করা যায় কি না। আন্দোলনের যত স্টেকহোল্ডার আছে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে নিয়ে সরকার একটা জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠন করলে যেটা নিয়মিত বিরতিতে সভা করবে, দৈনন্দিন যে রাষ্ট্র পরিচালনা, তাতে তারা মতামত দিতে পারবে—অন্যদিকে রাজনৈতিক উত্তরণের যে কাজ, সেই কাজেও একটা ঐকমত্য তৈরির জায়গাটা সুবিধাজনক হবে। সেটা আসলে করা এখনো হয়নি। একটা জায়গা দেখা যাচ্ছে যে যত আলোচনা হওয়া দরকার সেটা হচ্ছে না। ফলে একটা দূরত্বের জায়গা তৈরি হচ্ছে। এই দূরত্বটা যাতে বেশি না হয়ে যায়। তাহলে আমরা যে উত্তরণের জায়গায় যেতে চাচ্ছি, তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আজকের পত্রিকা: চারটি সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনের প্রধান কোন কোন প্রস্তাবের সঙ্গে আপনি একমত?
জোনায়েদ সাকি: দুটি বড় ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে, বিদ্যমান সংবিধান একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারছে কি না। আমাদের দেশে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গীয় পরিচয়, রাজনৈতিক বিশ্বাস কিংবা জীবনচর্চা নির্বিশেষে প্রত্যেকে নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ তৈরি করতে পারব। এইটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানের দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন বা আদর্শ সেই জায়গাটা সেভাবেই থাকা দরকার। অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১০ এপ্রিলের প্রথম ঘোষণাপত্র, আমাদের প্রথম সংবিধান, জাতীয় ঐকমত্য, সেইটার ভিত্তিতেই আমাদের ’২৪–এর অভ্যুত্থানকে ধারণ করা দরকার। দ্বিতীয় হচ্ছে, ক্ষমতা কাঠামো, যেটা ছিল মূলত আমাদের বড় সমস্যার জায়গায়। ক্ষমতা কাঠামোটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সব ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত। তাকে সংবিধানের ঊর্ধ্বেই জায়গা দেওয়া হয়েছে, ন্যূনতম কোনো জবাবদিহির জায়গা নেই। এটার বিপরীত জায়গাটা আমাদের তৈরি করতে হবে। জবাবদিহিপূর্ণ একটা সরকারব্যবস্থা যদি তৈরি হয়, সরকার যারাই হবে, জনগণের কাছে যাতে তাদের জবাবদিহি করতে হয়। সেই ব্যবস্থাটা সৃষ্টি করা দরকার।
আজকের পত্রিকা: কোন কোন প্রস্তাব দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের দিক থেকে ক্ষতিকর হতে পারে?
জোনায়েদ সাকি: যেগুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলো সকলের মতামতের ভিত্তিতেই হবে। ফলে প্রস্তাব নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু আছে। প্রস্তাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার চেয়ে আমাদের উচিত ন্যূনতম যে জাতীয় ঐকমত্য হবে, সেখানে দাঁড়ানো এবং ঐকমত্য কীভাবে বাস্তবায়ন হবে—এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগামী সংসদ নির্বাচনটা যদি একটা সাধারণ সংসদ হয়, তাহলে এই ঐকমত্যের জায়গাটা বাস্তবায়ন করতে হবে সংশোধনী আকারে। সংশোধনী করলে আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। কারণ, আদালত সংবিধানের অভিভাবক। তাই এই সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে একটা জাতীয় ঐকমত্য দরকার। এটা যে জনগণের অভিপ্রায়, সেটা আমাদের প্রকাশ করার জন্য সংসদ নির্বাচনটাকে একটা সংবিধান সংস্কার সভার নির্বাচন আকারে দেখা দরকার।
গণপরিষদ হিসেবেও গঠন করা যেতে পারে। গণপরিষদের একটা বিষয় হচ্ছে, অনেকে মনে করেন সংবিধান স্থগিত করে গণপরিষদ গঠন করতে হবে। কিন্তু সংবিধান সংস্কার সভা যদি আমরা করি, তাহলে সে ক্ষেত্রে সংবিধান স্থগিত না করেই সংবিধানের যে সংস্কারগুলো হবে, সেটা একটা জনগণের ইচ্ছা এবং অভিপ্রায় হিসেবেই গণ্য হবে। ফলে সংস্কারকৃত সংবিধানটির সুরক্ষা দেওয়া আদালতের কাজ হবে। এই জায়গা থেকেই আমাদের পদ্ধতিটা নিয়ে চিন্তা করা দরকার।
আজকের পত্রিকা: শেখ হাসিনার সরকারের সময় দুর্নীতি, গুম, খুন ও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে অনেকটা একই ধাঁচে মামলা হচ্ছে। আপনার কি মনে হয়, এ অভিযোগগুলো আদালতে প্রমাণ করা যাবে?
জোনায়েদ সাকি: মামলার ধরনগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে যে পুরোনো কায়দাটা বজায় রাখা হয়েছে। যারা মামলা করছেন, নিচ্ছেন, পুলিশ এবং এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো তারা আগের মতোই কাজ করছেন। এখানে নতুন ব্যবস্থা আসা দরকার। না হলে অনেক দুর্বলতা নিয়েই এই বিচারের প্রশ্নটা এগোবে। অথচ মানুষ ন্যায়বিচার চায়। ন্যায়বিচার আমাদের নতুন যাত্রার প্রধান ভিত্তি হওয়া দরকার। বাংলাদেশের মানুষ লুটপাট, দুর্নীতি, গুম, খুন এবং শেষ পর্যন্ত জুলাই আগস্টের নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড এই সবকিছুর বিচার চায়। শুধু এগুলোর জন্য নয়, একটা ন্যায়বিচারের কাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে আমাদের পুরোনো বিচারগুলোও ঠিকঠাক হয়। মানুষ আস্থা আনতে পারে। এখানে অপরাধীদেরও আস্থার জায়গাটা দরকার। তাহলেই আপনি সমাজে একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে পারবেন। তবে যে প্রথাগত পদ্ধতিতে চলছে এবং এটাই যদি বহাল থাকে, তাহলে আমাদের অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।
আজকের পত্রিকা: শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আচরণকে কীভাবে দেখেন?
জোনায়েদ সাকি: ৫ আগস্টের আগে এবং পরে ভারতের যে ভূমিকা, সেটা পরিষ্কারভাবেই বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যাচ্ছে না। তারা বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কোনো রকম গুরুত্ব না দিয়েই তাদের নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে একটি বিশেষ দলকে ক্ষমতায় রাখতে যেভাবে তারা তাদের অবস্থান ঘোষণা করেছে, সেইটা মানুষ গ্রহণ করেনি। জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থান পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, আমাদের দেশের রাজনীতি আমরাই নিয়ন্ত্রণ করব। ভারত এখানে আমাদের রাজনীতি নির্ধারণের জায়গায় যাবে না। ভারতের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক চাই, কিন্তু সেটা আমাদের স্বার্থের ভিত্তিতে। শুধু ভারতের বিষয়ে নয়, সারা দুনিয়ার সঙ্গেই। ভারত যত দ্রুত এর সঙ্গে মানিয়ে নেবে, নতুন বাস্তবতায় ভারত সুসম্পর্ক করতে চাইবে, তত উভয় দেশের জন্য স্বস্তিকর।
আজকের পত্রিকা: গণ-অভ্যুত্থানের পর মাজার, মন্দিরসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে, এই বিষয়গুলোর বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
জোনায়েদ সাকি: ৫ আগস্টের পর থেকে একদিকে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে কিছু হামলার ঘটনা, মাজারে হামলা, মেয়েদের ওপরে হামলা, হয়রানি, পাহাড়ে অন্যান্য জাতির ওপরে হামলা দেখেছি, এটা যেমন বাস্তবতা; আবার একই সঙ্গে এসব ঘটনাকে শত গুণ রং চড়িয়ে ভারতীয় মিডিয়াতে এর একটা প্রচার দেখেছি। এটা নিয়ে ভারতের একধরনের রাজনীতিও চলছে। তারা সারা দুনিয়ার সামনে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশকে এভাবে উপস্থাপন করতে চাইছে। এই যে অসত্য প্রচার করা হচ্ছে, সেটাকে আমাদের সত্য দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। সত্য মোকাবিলা করতে হলে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, প্রত্যেকটা ঘটনার সুনির্দিষ্ট তদন্ত করতে হবে।
ভারতের মিডিয়ার একাংশ এবং তাদের শাসক দল যেভাবে শত গুণ বাড়িয়ে প্রচার করছে। তাদের নিশ্চয়ই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। বাংলাদেশে এটা যারা করছে, তারা যে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখে না, জনগণের স্বার্থ দেখে না, ভারতীয় কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করছে—তা পরিষ্কার রাজনৈতিকভাবে। সরকারের দিক থেকে যখন প্রতিরোধ থাকে এবং বন্ধ করার ব্যাপারে অঙ্গীকার থাকে, তখন এই ঘটনাগুলো কিন্তু ঘটে না।
জনগণের প্রতিরোধের পাশাপাশি যদি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে, তাহলে এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটবে না। যেখানে ভারতীয় মিডিয়া এই ঘটনাগুলো ফলাও করে প্রচার করছে, সেখানে বাংলাদেশে বসে যারা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, তারা কারা? অনেকের আছে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট থেকে এখানে উপস্থিত আছে, কিন্তু এর উসকানিদাতা বা পেছনের কারিগর যারা, তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই কাজ করছে। মানুষের ধর্ম চেতনাকে ব্যবহার করছে একদল, অপর দল বা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচন হলে, তা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ আছে কি?
জোনায়েদ সাকি: আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হবে, নাকি তাদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকা হবে, নাকি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে—এই প্রশ্নগুলোর আগে বিচার প্রক্রিয়াটা দ্রুত শুরু হওয়া দরকার। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে তার দায় কতটুকু এবং তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে। জনগণই ঠিক করবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী হবে। তবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক হওয়ার জন্য আবার ন্যায়বিচারের জন্য এখনো প্রক্রিয়াটা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাচ্ছে না, মানুষ আরও দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছে।
আজকের পত্রিকা: ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কতটুকু আশাবাদী আপনি? ছাত্ররাজনীতি ইতিবাচক ধারায় ফেরার সম্ভাবনা কতটা?
জোনায়েদ সাকি: প্রথমত, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের যে গণতান্ত্রিক চর্চা, সেটা থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত, ছাত্ররাজনীতিকে অভিযুক্ত করা হয়, ছাত্ররাজনীতিকে ব্যবহার করে বা ছায়াতলে নানা ধরনের দখলদারিত্ব, সন্ত্রাস—এসব ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে সরকারের সহযোগিতাতেই। সরকার সেটা করতে পারে প্রশাসনের সহযোগিতাতেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করা হবে না—এই বিষয়েও একটা জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। প্রশাসন যদি চায়, এখানে এমন পরিবেশ বজায় রাখতে হবে, যেখানে কেউ দখলদারির পরিবেশ কায়েম করতে পারবে না—তাহলে সেটা সম্ভব।
আজকের পত্রিকা: বাম জোট কেন ছাড়লেন?
জোনায়েদ সাকি: আওয়ামী লীগের যে ফ্যাসিস্ট শাসন, তার বিরুদ্ধে একটা বৃহত্তর আন্দোলনের কথা ২০১৪ সালের পর থেকেই বলে আসছি। বিশেষভাবে বাম জোটে ’১৬-১৭–এর দিকে এই আলোচনা তুলেছিলাম যে এখানে জনগণের বৃহত্তম ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নটিকে সামনে আনতে হবে, না হলে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করা সম্ভব হবে না। বাম গণতান্ত্রিক জোটে জনগণের বৃহত্তর ঐক্যের ডাকের বিষয়টা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। কেননা, বৃহত্তর শব্দের মধ্য দিয়ে তারা ভেবেছে, বিএনপির সঙ্গে হয়তো ঐক্য হয়ে যাবে। অনেকেই সেখানে বলেছিলেন, দ্বিদলীয় বৃত্তের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। আমরা বলেছিলাম, একদলীয় একটা শাসন চলছে। এর বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্য করতে গেলে জনগণের সে বৃহত্তর সংগঠিত অংশগুলো আছে, তার মধ্যে কোনো–না কোনো একটা ঐক্যের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা সব সময় এক মঞ্চে এসে হবে না, যুগপৎ ধারায় হতে পারে, আবার যার যার অবস্থান থেকেও হতে পারে। একটা চূড়ান্ত রাজনৈতিক পার্থক্যের মধ্যেও ঐক্য হতে পারে। কারণ, পার্থক্য আছে বলেই ঐক্যের প্রশ্নটা আসে। কাজেই আমরা বলেছিলাম, যারা পারব, এক মঞ্চে আসব, যেমন পরবর্তীতে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করেছি। অনেকের সঙ্গে যুগপৎ করেছি। ষাট, আশির দশকে এমন ধারায় আন্দোলন হয়েছে। সেই কাঠামোটাকেই আমরা তৈরি করতে চেয়েছি জনগণের বৃহত্তর ঐক্যের মধ্য দিয়ে। এটা বাম জোটের কর্মপদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে আমরা একটা পর্যায়ে বাম জোট ছেড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ তৈরি করেছি। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের কৌশলে আমরা আমাদের যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সেটা বাস্তবায়নের জন্য আমরা দৃঢ় ছিলাম, সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন। এ দলটির সঙ্গে আপনাদের আদর্শগত মিল কতটুকু?
জোনায়েদ সাকি: বিএনপির সঙ্গে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যের প্রয়োজনটা বোধ করেছি। আবার আদর্শের দিক থেকে, কর্মসূচিগত অনেক পার্থক্যের জায়গা আছে। তবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে জায়গায় আছি, এখানে কিন্তু আমাদের সকলকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের পার্থক্য সত্ত্বেও এমন একটা রুলস অব দি গেমে পৌঁছাতে হচ্ছে, যেখানে আমরা সবাই তার অংশীদার। এখানে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা সেটার জন্য কাজ করছি। এটা আমাদের দলের দায়িত্ব মনে করি। কারণ, এটা একটা জাতীয় ঘটনা। এই ঐক্য এবং সংগ্রাম দুটিই এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে বহাল আছে।
আজকের পত্রিকা: গণতন্ত্র মঞ্চ কি নির্বাচনী জোট হিসেবে থাকবে? না দলগুলো এককভাবে ভোটে আসবে?
জোনায়েদ সাকি: এখন পর্যন্ত এক মঞ্চে আছি, আশা করি এই মঞ্চ টিকে থাকবে। এই মঞ্চ আরও বিকশিত হবে। সেই অর্থে নির্বাচন, সংগ্রাম যথাসম্ভব ঐক্যবদ্ধভাবেই মোকাবিলা করতে চাই।
আজকের পত্রিকা: আপনি সামনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা করছেন। আপনার দল গণসংহতি আন্দোলনকে আপনি আগামী কোন অবস্থানে দেখতে চান?
জোনায়েদ সাকি: আমরা একটা গণতান্ত্রিক, গণমানুষের রাজনৈতিক দল, মুক্তিকামী গণতন্ত্রের আদর্শিক জায়গা থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছি এবং রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি অনুযায়ী পরিবর্তন ঘটানোর কাজ করে যাচ্ছি। যাতে সব মানুষের মর্যাদা, অধিকার এবং তাদের স্বাধীনতা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। সেই জায়গাগুলোতে আমাদের একটা অগ্রগতি আছে, আমরা ধারাবাহিক সংগ্রাম করার মধ্য দিয়ে মানুষের কিছুটা আস্থার জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাবে আমাদের দল এখনো কাঙ্ক্ষিত বিকাশের জায়গায় যেতে পারেনি। কিন্তু আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে বিকশিত হচ্ছি। আমরা মনে করি, বিকাশের ধারায় আমরা একটা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি, দল হিসেবে আমরা হাজির হতে পারব। এই দলকে আমরা একসময় রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার জায়গাতে নিয়ে যেতে পারব।
আজকের পত্রিকা: সরকারের স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা কতটুকু?
জোনায়েদ সাকি: অন্তর্বর্তী সরকার তার যে দায়িত্ব দৈনন্দিন রাষ্ট্র পরিচালনা এবং রাজনৈতিক উত্তরণের কাজ। এইটা একটা বিরাট গণ–অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এই পর্বে এসেছি। এই গণ–অভ্যুত্থানই আমাদের শক্তি। এই প্রক্রিয়াটা আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। আমার যে জায়গায় ভরসা রাখতে চাই, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটাই এখানে সফল হবে। অন্য কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, সংস্কার প্রক্রিয়া এবং বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও এর সমাধান নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত ফাহাদ।
আজকের পত্রিকা: শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার গত পাঁচ মাসে তা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছে?
জোনায়েদ সাকি: মানুষ পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাটার খোলনলচে বদলে দিতে চায়। মানুষ একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়, যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে। সুযোগের সমতা থাকবে, সবাই নিজেকে একটা বিকাশ বা উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। একটা ব্যবস্থা যেখানে সবাইকে ধারণ করা হবে। এ রকম রাষ্ট্রব্যবস্থা তো রাতারাতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। অনেকে ভেবেছিলেন একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। সংবিধান স্থগিত করে দেওয়া হবে, প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দিয়ে নতুন করে গঠন করা হবে। সেই রকম বাস্তবতাটা তৈরি হয়নি। তা না হওয়ার ফলে বিদ্যমান ব্যবস্থা রেখেই কয়েকটা পরিবর্তনে যেতে হবে। সরকার অনেকগুলো কমিশন গঠন করেছে। তারা প্রস্তাব তৈরি করছে এবং রিপোর্টও পেশ করেছে। সেসব নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, নানান শ্রেণি–পেশার অংশীজনসহ সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গেই কথা বলবেন। এই কথা বলার মত দিয়ে একটা ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হবে যে, কোন কোন সংস্কার বা পরিবর্তনগুলো সামনে আসবে। সেই পরিবর্তনগুলো তখন কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, অনেকগুলো হচ্ছে নির্বাচনের আগেই হয়তো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আবার অনেকগুলো মৌলিক কাঠামোগত প্রশ্ন আছে, যেগুলো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। ফলে সংস্কার ব্যাপারটা যেমন নির্বাচনের জন্য দরকার, আবার সংস্কারের জন্যও নির্বাচন দরকার। এই পুরো প্রচেষ্টা চলমান আছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, এটা বলব না কিন্তু; এটা বলব মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথটা এগিয়ে চলেছে।
আজকের পত্রিকা: অভ্যুত্থানের সময় নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন?
জোনায়েদ সাকি: এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, বিব্রতকর। জুলাই–আগস্টে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, তাঁদের যথাযথ জাতীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা এবং তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করা, আহতদের চিকিৎসা নয়, তাদের পুরো ভবিষ্যতের দায়িত্ব গ্রহণ করা—এটা সরকারের অগ্রাধিকার হতে হবে। যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই অভ্যুত্থান তৈরি হয়েছে এবং এই সরকারও গঠিত হয়েছে, তারা নিঃসন্দেহে অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা দরকার। বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো আমরা জানি, কিন্তু এই দুর্বলতার কথা বলে আহতদের যদি আহাজারি করতে হয়, তাহলে সেটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক একটা জায়গা হবে। অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কাজ করছে না, একেবারে তা নয়। কিন্তু তারপরও আহতের সংখ্যা এতই বেশি যে অনেকেই আওতার বাইরে থাকছেন। ফলে আরও অধিকতর মনোযোগ, প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান দরকার।
আজকের পত্রিকা: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে, এমন অভিযোগ উঠছে। আপনার কি মনে হয়, সরকারের কথা সংশ্লিষ্টরা শুনছে না?
জোনায়েদ সাকি: তিনটা দিক আছে। প্রথমত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান অংশ ‘পুলিশ’। এই বাহিনীটাকে জনগণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের নৈতিক জায়গাটা ভেঙে পড়েছিল। একটা দেশে পুলিশ কতটা অনাস্থার জায়গায়, সেটা পুলিশ নিজেরাই অনুভব করছে। তারা জনগণের মুখোমুখি হতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, এই ভেঙে পড়া বাহিনীকে পুনর্গঠনের কাজটা শক্ত কাজ এবং মনে রাখা দরকার—এর মধ্যে অনেক ব্যক্তিরাই আছেন, যারা সরাসরি পতিত সরকারের একেবারেই এমন দোসর ছিলেন—যারা আইন, নিয়মকানুন, প্রাতিষ্ঠানিক বিধিমালা—এগুলো সব পায়ে দলিয়ে জনগণের ওপর অত্যাচার করেছে। ফলে এই লোকগুলোকে চিহ্নিত করা এবং পুরো প্রতিষ্ঠানটাকে আবার পুনর্গঠনের কাজটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
যারা পতিত সরকারের দোসর ছিল, তারা ঠিকঠাক মতন কাজ করছেন কি না—সেটা প্রশ্ন হিসেবে থেকেই যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তার মধ্য দিয়ে একটা পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা, সরকারকে ব্যর্থ দেখানোর চেষ্টাও দেখা গেছে। শেষ দিকটা হচ্ছে, এতগুলো বাস্তবতার মোকাবিলা করেই পুনর্গঠন করতে হবে এবং পুলিশকে কার্যকর করতে হবে। পুলিশ এবং জনগণের মধ্যে ন্যূনতম যে আস্থার জায়গা দরকার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য সেই জায়গাটাতে আমাদের পৌঁছাতে হবে।
আজকের পত্রিকা: গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে, এমন অভিযোগ অনেকের। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
জোনায়েদ সাকি: যাদের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বলা হচ্ছে, তারা হঠাৎ করে আসেনি। তারা আগে থেকেই এখানে অবস্থান করছিল। বর্তমান সরকারের দিক থেকে যেহেতু তুলনামূলকভাবে দমন–পীড়নের মাধ্যমে শাসন কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনা কম করা হচ্ছে, তুলনামূলক স্বাধীন পরিস্থিতি আছে ফলে সবাই সারফেসে এসেছে। সমাজে প্রকৃত বাস্তবতা, যা তা সামনে আসাই উত্তম এবং সেই অনুযায়ীই সমাজের বাকিদের ভূমিকার জায়গাটা তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ একটা উদার গণতান্ত্রিক জায়গা চায়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাস কিংবা জীবনচর্চা, ধর্ম, জাতি, লিঙ্গীয় পরিচয়ের পার্থক্য আছে, ফলে বহু রকম যে পার্থক্য, সেটা বাস্তব এবং তা থাকবে। কিন্তু সেই পার্থক্যের মধ্যে আমরা কীভাবে সহাবস্থান করতে পারব, একটা মিলনাত্মক সমাজের মধ্যে থাকতে পারব—সেইটা আমাদের লক্ষ্য। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেই অবস্থাটা বজায় রাখা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে কাউকে হয়তো দমন করতে পারেন, কিছুটা সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখতে পারেন, বাস্তবতাকে তাতে বাস্তবতার বদল ঘটে না। বরং এ ধরনের পদ্ধতিতে যেটা হয়, যাদের আপনি দমন করতে চাইছেন, তারাই তলে তলে আরও বেড়ে ওঠে।
আজকের পত্রিকা: জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
জোনায়েদ সাকি: জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের যে জন আকাঙ্ক্ষা এবং বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কোন দিকে যাবে, সেটার একটা দিকনির্দেশনা অভ্যুত্থানের মধ্যে ছিল। সেগুলো যদি কোনো একটা রাজনৈতিক দলিলে সন্নিবেশিত হয়, যেটা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য একটি রেফারেন্স পয়েন্ট হতে পারে, সেটা তো জরুরি মনে করি। কিন্তু সেটা সবাই মিলে তৈরি হওয়া দরকার। এ রকম একটা জায়গা কেউ এককভাবে তৈরি করাটা ঠিক হবে না। যখন আপনি একটা জাতীয় কিংবা সম্মিলিত ঘোষণা আকারে গ্রহণ করতে চাইবেন, তখন সেটাতে সকলের মতামতের ভিত্তিতেই হতে হবে।
কী ধরনের ঘোষণা হবে, সেটাও নির্ধারণ করতে হবে। এটা কি কোন ঘোষণা হবে, নাকি প্রোক্লেমেশন যে অর্থে ব্যবহৃত হয় রাজনৈতিকভাবে, আইনের দিক থেকে। প্রোক্লেমেশন হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। সেটার মধ্য দিয়ে আমাদের এই রাষ্ট্র পত্তন হয়েছিল। আমরা কি আরেকটা নতুন রাষ্ট্র পত্তন করতে চাচ্ছি? সেইটা প্রশ্ন আকারে আসবে। প্রোক্লেমেশনের যে আইনি ভিত্তি, সেটা নিয়ে এখন ঐক্য তৈরি হবে কি না—রাজনৈতিকভাবে সেটাও একটা প্রশ্ন। ফলে ওই আইনি দিকের বাইরে যদি একটা ঘোষণা থাকে যে ঘোষণা ভবিষ্যতের রাজনীতি রেফারেন্স এবং অভ্যুত্থানের একটা আকাঙ্ক্ষা সংবলিত জনগণের দলিল হিসেবে থাকবে, সে ক্ষেত্রে এটা তৈরি হতে আমি বাধা দেখি না। কিন্তু প্রয়োজনীয় যে সময় এবং উদ্যোগ সেটা দরকার।
আজকের পত্রিকা: গত ৫ আগস্টের আগের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় দলগুলোর মধ্যে একধরনের ঐক্য ছিল। এখন কয়েকটি দল ও সংগঠনের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। এই বিরোধকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
জোনায়েদ সাকি: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানে অনেক রাজনৈতিক দল থাকবে। আর অনেক রাজনৈতিক দল থাকা মানে রাজনৈতিকভাবে যে মতপার্থক্য আছে, সেটাও কাজ করবে। সেটা প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রূপ নেবে—এমনি বিরোধেও রূপ নিতে পারে। এটা গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই কিন্তু ঘটে। একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শক্তির পরীক্ষা হয়, এই প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বিরোধকে কীভাবে ব্যবস্থা ধারণ করে। যত বেশি ধারণ করতে পারে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তত শক্তিশালী হয়। আমরা এখন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণ করতে চাইছি।
এটা মনে রাখা দরকার যে এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব আমাদের আছে যে একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্মাণ করতে হবে, একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে পৌঁছাতে হবে এবং সেটাকে কার্যকর করে তুলতে আমাদের ঐক্যের জায়গাটা দরকার। এই নতুন বন্দোবস্ত বা ব্যবস্থাটা আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য। ফলে রুলস অব দ্য গেম তৈরির যে ঐতিহাসিক দায় তা আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য। সে জন্য আমাদের ঐক্য দরকার আবার রাজনৈতিক কারণেই প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুটো একসঙ্গে যদি চলে তাহলে এমন অনেক সময় হয়, ঐক্যের জায়গাটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেটা সতর্ক থাকা দরকার।
আজকের পত্রিকা: এই বিরোধ থেকে দলগুলোর মধ্যে সংঘাত হতে পারে, এমন আশঙ্কা কি আপনি দেখেন?
জোনায়েদ সাকি: বিরোধের দিকটা যেমন আছে, তেমনি ঐক্যের আওয়াজটাও আছে। আমরা শুরু থেকেই কথা বলছি এবং স্পষ্টভাবে ঐক্যের জায়গাটাকে মানুষের মধ্যে হাজির করার চেষ্টা করছি। মানুষের মধ্যে সেই ঐক্যের আগ্রহের ধারাটাও আছে বলেই এখনো ঐক্য ভেঙে পড়েনি। কাজেই যারা ঐক্যের দিকটি খেয়াল রাখবেন না, দায়িত্বের জায়গাটাকে ভুলে যাবেন, নিজেদের প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকেই বড় করে তুলবেন, তাঁরা তো আসলে মানুষের কাছে দায়ী থাকবেন এবং মানুষ তাঁদের গ্রহণ করবে না। কেউ যদি মনে করে, আমরা যা বলছি সেটাই একমাত্র জন–আকাঙ্ক্ষা, সবচেয়ে ভালো কর্মসূচি এবং সেটাই বাস্তবায়ন, গ্রহণ করতে হবে তাহলে সেই আচরণটা গণতান্ত্রিক হবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানেই হচ্ছে, অন্যকে স্বীকার করে নিয়েই আপনাকে এগোতে হবে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ দলটির এ অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, সরকারে ও সাংবিধানিক পদে নিয়োগে তদবির ও চাপ প্রয়োগ করছে দলগুলো। এমন বক্তব্য সরকারের অবস্থানকে দুর্বল করে কি না?
জোনায়েদ সাকি: অনেকেই তো অনেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন, সব বক্তব্য নিয়ে তো আর বক্তব্য দেওয়া সব সময় আমি ঠিক সমীচীন মনে করি না। একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে সরকারের ভূমিকা কী রকম? মানুষ মনে করে যে সরকার নিজে কোনো পক্ষ নয়। রাজনৈতিকভাবে সকল পক্ষের মধ্যে একটা কার্যকর নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তারা আগামী যে রাজনৈতিক উত্তরণের কাজটি করবেন, সেটা সংস্কার এবং নির্বাচন সব দিক থেকে। ফলে এই সরকারের ভূমিকা যাতে পক্ষপাতদুষ্ট হচ্ছে, এমন কোনো পরিস্থিতি না হয়—সেটাই মানুষ আকাঙ্ক্ষা করে। সেটা কখন হতে পারে?
যেহেতু শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা একটা রাজনৈতিক দল করবে, রাজনৈতিক দল ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু রাজনৈতিক দল গঠনটা তো জনগণের ভেতর থেকে হওয়া উচিত। ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে, মানুষের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হলে তো এটা নতুন দলের জন্যও ইতিবাচক হবে না। শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে মানুষের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি না হয়। ফলে রাজনৈতিক দল গঠন করলে বর্তমানে যারা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আকারে সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁরা কী করবেন তাঁদের ভাবা দরকার। তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, তাঁরা আসলে কোথায় অবস্থান করবেন। রাজনৈতিক দল হয়ে যাওয়ার পরে সেই দলের সমর্থকেরা যখন সরকারে থাকেন, তখন অন্য দলের সমর্থকেরাও বলেন, সরকারে তো আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সেখানে পক্ষপাতের প্রশ্নও উঠতে পারে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে একটি নতুন দল আগামী ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এই দলে আপনার সংগঠনেরও কয়েকজন আছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
জোনায়েদ সাকি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা জাতীয় নাগরিক কমিটি কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল না। দুটোই প্ল্যাটফর্ম। আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে, যেখানে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছিল, এখনো আছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি যখন গঠন করা হয় তখনো একই কথা বলা হয়েছিল, এটা একটা কমন প্ল্যাটফর্ম হবে, যেখানে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরাও থাকতে পারেন। এখন এটা থেকে যখন একটা রাজনৈতিক দল গঠিত হবে, তখন এখান থেকে অনেকেই হয়তো সেই রাজনৈতিক দলে যেতে পারেন। কিন্তু সবাই যাবেন, এমনটা হয়তো নয়। ফলে রাজনৈতিক দল গঠনের পরে আসলে বোঝা যাবে, কারা আসলে ঠিক কমন প্ল্যাটফর্মে থাকতে চান এবং কারা একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলে যেতে চান।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকার দুই দফা সর্বদলীয় বৈঠক করেছে? এমন বৈঠক বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগছে কি? কীভাবে?
জোনায়েদ সাকি: অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে কয়েকবার বসেছে, সেগুলো নির্দিষ্ট ইস্যুভিত্তিক। আমরা যেটা শুরু থেকে বলেছিলাম, একটা কাঠামো তৈরি করলে সরকারের জন্য ভালো হতো। জাতীয় ঐকমত্য তৈরির যে দায়িত্বটা আমাদের আছে, সেটা বজায় রাখতেও সুবিধা হতো। একটা ‘জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল’ গঠন করা যায় কি না। আন্দোলনের যত স্টেকহোল্ডার আছে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে নিয়ে সরকার একটা জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠন করলে যেটা নিয়মিত বিরতিতে সভা করবে, দৈনন্দিন যে রাষ্ট্র পরিচালনা, তাতে তারা মতামত দিতে পারবে—অন্যদিকে রাজনৈতিক উত্তরণের যে কাজ, সেই কাজেও একটা ঐকমত্য তৈরির জায়গাটা সুবিধাজনক হবে। সেটা আসলে করা এখনো হয়নি। একটা জায়গা দেখা যাচ্ছে যে যত আলোচনা হওয়া দরকার সেটা হচ্ছে না। ফলে একটা দূরত্বের জায়গা তৈরি হচ্ছে। এই দূরত্বটা যাতে বেশি না হয়ে যায়। তাহলে আমরা যে উত্তরণের জায়গায় যেতে চাচ্ছি, তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আজকের পত্রিকা: চারটি সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনের প্রধান কোন কোন প্রস্তাবের সঙ্গে আপনি একমত?
জোনায়েদ সাকি: দুটি বড় ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে, বিদ্যমান সংবিধান একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারছে কি না। আমাদের দেশে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গীয় পরিচয়, রাজনৈতিক বিশ্বাস কিংবা জীবনচর্চা নির্বিশেষে প্রত্যেকে নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ তৈরি করতে পারব। এইটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানের দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন বা আদর্শ সেই জায়গাটা সেভাবেই থাকা দরকার। অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১০ এপ্রিলের প্রথম ঘোষণাপত্র, আমাদের প্রথম সংবিধান, জাতীয় ঐকমত্য, সেইটার ভিত্তিতেই আমাদের ’২৪–এর অভ্যুত্থানকে ধারণ করা দরকার। দ্বিতীয় হচ্ছে, ক্ষমতা কাঠামো, যেটা ছিল মূলত আমাদের বড় সমস্যার জায়গায়। ক্ষমতা কাঠামোটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সব ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত। তাকে সংবিধানের ঊর্ধ্বেই জায়গা দেওয়া হয়েছে, ন্যূনতম কোনো জবাবদিহির জায়গা নেই। এটার বিপরীত জায়গাটা আমাদের তৈরি করতে হবে। জবাবদিহিপূর্ণ একটা সরকারব্যবস্থা যদি তৈরি হয়, সরকার যারাই হবে, জনগণের কাছে যাতে তাদের জবাবদিহি করতে হয়। সেই ব্যবস্থাটা সৃষ্টি করা দরকার।
আজকের পত্রিকা: কোন কোন প্রস্তাব দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের দিক থেকে ক্ষতিকর হতে পারে?
জোনায়েদ সাকি: যেগুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলো সকলের মতামতের ভিত্তিতেই হবে। ফলে প্রস্তাব নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু আছে। প্রস্তাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার চেয়ে আমাদের উচিত ন্যূনতম যে জাতীয় ঐকমত্য হবে, সেখানে দাঁড়ানো এবং ঐকমত্য কীভাবে বাস্তবায়ন হবে—এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগামী সংসদ নির্বাচনটা যদি একটা সাধারণ সংসদ হয়, তাহলে এই ঐকমত্যের জায়গাটা বাস্তবায়ন করতে হবে সংশোধনী আকারে। সংশোধনী করলে আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। কারণ, আদালত সংবিধানের অভিভাবক। তাই এই সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে একটা জাতীয় ঐকমত্য দরকার। এটা যে জনগণের অভিপ্রায়, সেটা আমাদের প্রকাশ করার জন্য সংসদ নির্বাচনটাকে একটা সংবিধান সংস্কার সভার নির্বাচন আকারে দেখা দরকার।
গণপরিষদ হিসেবেও গঠন করা যেতে পারে। গণপরিষদের একটা বিষয় হচ্ছে, অনেকে মনে করেন সংবিধান স্থগিত করে গণপরিষদ গঠন করতে হবে। কিন্তু সংবিধান সংস্কার সভা যদি আমরা করি, তাহলে সে ক্ষেত্রে সংবিধান স্থগিত না করেই সংবিধানের যে সংস্কারগুলো হবে, সেটা একটা জনগণের ইচ্ছা এবং অভিপ্রায় হিসেবেই গণ্য হবে। ফলে সংস্কারকৃত সংবিধানটির সুরক্ষা দেওয়া আদালতের কাজ হবে। এই জায়গা থেকেই আমাদের পদ্ধতিটা নিয়ে চিন্তা করা দরকার।
আজকের পত্রিকা: শেখ হাসিনার সরকারের সময় দুর্নীতি, গুম, খুন ও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে অনেকটা একই ধাঁচে মামলা হচ্ছে। আপনার কি মনে হয়, এ অভিযোগগুলো আদালতে প্রমাণ করা যাবে?
জোনায়েদ সাকি: মামলার ধরনগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে যে পুরোনো কায়দাটা বজায় রাখা হয়েছে। যারা মামলা করছেন, নিচ্ছেন, পুলিশ এবং এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো তারা আগের মতোই কাজ করছেন। এখানে নতুন ব্যবস্থা আসা দরকার। না হলে অনেক দুর্বলতা নিয়েই এই বিচারের প্রশ্নটা এগোবে। অথচ মানুষ ন্যায়বিচার চায়। ন্যায়বিচার আমাদের নতুন যাত্রার প্রধান ভিত্তি হওয়া দরকার। বাংলাদেশের মানুষ লুটপাট, দুর্নীতি, গুম, খুন এবং শেষ পর্যন্ত জুলাই আগস্টের নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড এই সবকিছুর বিচার চায়। শুধু এগুলোর জন্য নয়, একটা ন্যায়বিচারের কাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে আমাদের পুরোনো বিচারগুলোও ঠিকঠাক হয়। মানুষ আস্থা আনতে পারে। এখানে অপরাধীদেরও আস্থার জায়গাটা দরকার। তাহলেই আপনি সমাজে একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে পারবেন। তবে যে প্রথাগত পদ্ধতিতে চলছে এবং এটাই যদি বহাল থাকে, তাহলে আমাদের অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।
আজকের পত্রিকা: শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আচরণকে কীভাবে দেখেন?
জোনায়েদ সাকি: ৫ আগস্টের আগে এবং পরে ভারতের যে ভূমিকা, সেটা পরিষ্কারভাবেই বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যাচ্ছে না। তারা বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কোনো রকম গুরুত্ব না দিয়েই তাদের নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে একটি বিশেষ দলকে ক্ষমতায় রাখতে যেভাবে তারা তাদের অবস্থান ঘোষণা করেছে, সেইটা মানুষ গ্রহণ করেনি। জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থান পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, আমাদের দেশের রাজনীতি আমরাই নিয়ন্ত্রণ করব। ভারত এখানে আমাদের রাজনীতি নির্ধারণের জায়গায় যাবে না। ভারতের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক চাই, কিন্তু সেটা আমাদের স্বার্থের ভিত্তিতে। শুধু ভারতের বিষয়ে নয়, সারা দুনিয়ার সঙ্গেই। ভারত যত দ্রুত এর সঙ্গে মানিয়ে নেবে, নতুন বাস্তবতায় ভারত সুসম্পর্ক করতে চাইবে, তত উভয় দেশের জন্য স্বস্তিকর।
আজকের পত্রিকা: গণ-অভ্যুত্থানের পর মাজার, মন্দিরসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে, এই বিষয়গুলোর বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
জোনায়েদ সাকি: ৫ আগস্টের পর থেকে একদিকে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে কিছু হামলার ঘটনা, মাজারে হামলা, মেয়েদের ওপরে হামলা, হয়রানি, পাহাড়ে অন্যান্য জাতির ওপরে হামলা দেখেছি, এটা যেমন বাস্তবতা; আবার একই সঙ্গে এসব ঘটনাকে শত গুণ রং চড়িয়ে ভারতীয় মিডিয়াতে এর একটা প্রচার দেখেছি। এটা নিয়ে ভারতের একধরনের রাজনীতিও চলছে। তারা সারা দুনিয়ার সামনে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশকে এভাবে উপস্থাপন করতে চাইছে। এই যে অসত্য প্রচার করা হচ্ছে, সেটাকে আমাদের সত্য দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। সত্য মোকাবিলা করতে হলে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, প্রত্যেকটা ঘটনার সুনির্দিষ্ট তদন্ত করতে হবে।
ভারতের মিডিয়ার একাংশ এবং তাদের শাসক দল যেভাবে শত গুণ বাড়িয়ে প্রচার করছে। তাদের নিশ্চয়ই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। বাংলাদেশে এটা যারা করছে, তারা যে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখে না, জনগণের স্বার্থ দেখে না, ভারতীয় কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করছে—তা পরিষ্কার রাজনৈতিকভাবে। সরকারের দিক থেকে যখন প্রতিরোধ থাকে এবং বন্ধ করার ব্যাপারে অঙ্গীকার থাকে, তখন এই ঘটনাগুলো কিন্তু ঘটে না।
জনগণের প্রতিরোধের পাশাপাশি যদি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে, তাহলে এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটবে না। যেখানে ভারতীয় মিডিয়া এই ঘটনাগুলো ফলাও করে প্রচার করছে, সেখানে বাংলাদেশে বসে যারা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, তারা কারা? অনেকের আছে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট থেকে এখানে উপস্থিত আছে, কিন্তু এর উসকানিদাতা বা পেছনের কারিগর যারা, তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই কাজ করছে। মানুষের ধর্ম চেতনাকে ব্যবহার করছে একদল, অপর দল বা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচন হলে, তা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ আছে কি?
জোনায়েদ সাকি: আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হবে, নাকি তাদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকা হবে, নাকি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে—এই প্রশ্নগুলোর আগে বিচার প্রক্রিয়াটা দ্রুত শুরু হওয়া দরকার। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে তার দায় কতটুকু এবং তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে। জনগণই ঠিক করবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী হবে। তবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক হওয়ার জন্য আবার ন্যায়বিচারের জন্য এখনো প্রক্রিয়াটা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাচ্ছে না, মানুষ আরও দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছে।
আজকের পত্রিকা: ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কতটুকু আশাবাদী আপনি? ছাত্ররাজনীতি ইতিবাচক ধারায় ফেরার সম্ভাবনা কতটা?
জোনায়েদ সাকি: প্রথমত, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের যে গণতান্ত্রিক চর্চা, সেটা থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত, ছাত্ররাজনীতিকে অভিযুক্ত করা হয়, ছাত্ররাজনীতিকে ব্যবহার করে বা ছায়াতলে নানা ধরনের দখলদারিত্ব, সন্ত্রাস—এসব ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে সরকারের সহযোগিতাতেই। সরকার সেটা করতে পারে প্রশাসনের সহযোগিতাতেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করা হবে না—এই বিষয়েও একটা জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। প্রশাসন যদি চায়, এখানে এমন পরিবেশ বজায় রাখতে হবে, যেখানে কেউ দখলদারির পরিবেশ কায়েম করতে পারবে না—তাহলে সেটা সম্ভব।
আজকের পত্রিকা: বাম জোট কেন ছাড়লেন?
জোনায়েদ সাকি: আওয়ামী লীগের যে ফ্যাসিস্ট শাসন, তার বিরুদ্ধে একটা বৃহত্তর আন্দোলনের কথা ২০১৪ সালের পর থেকেই বলে আসছি। বিশেষভাবে বাম জোটে ’১৬-১৭–এর দিকে এই আলোচনা তুলেছিলাম যে এখানে জনগণের বৃহত্তম ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নটিকে সামনে আনতে হবে, না হলে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করা সম্ভব হবে না। বাম গণতান্ত্রিক জোটে জনগণের বৃহত্তর ঐক্যের ডাকের বিষয়টা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। কেননা, বৃহত্তর শব্দের মধ্য দিয়ে তারা ভেবেছে, বিএনপির সঙ্গে হয়তো ঐক্য হয়ে যাবে। অনেকেই সেখানে বলেছিলেন, দ্বিদলীয় বৃত্তের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। আমরা বলেছিলাম, একদলীয় একটা শাসন চলছে। এর বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্য করতে গেলে জনগণের সে বৃহত্তর সংগঠিত অংশগুলো আছে, তার মধ্যে কোনো–না কোনো একটা ঐক্যের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা সব সময় এক মঞ্চে এসে হবে না, যুগপৎ ধারায় হতে পারে, আবার যার যার অবস্থান থেকেও হতে পারে। একটা চূড়ান্ত রাজনৈতিক পার্থক্যের মধ্যেও ঐক্য হতে পারে। কারণ, পার্থক্য আছে বলেই ঐক্যের প্রশ্নটা আসে। কাজেই আমরা বলেছিলাম, যারা পারব, এক মঞ্চে আসব, যেমন পরবর্তীতে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করেছি। অনেকের সঙ্গে যুগপৎ করেছি। ষাট, আশির দশকে এমন ধারায় আন্দোলন হয়েছে। সেই কাঠামোটাকেই আমরা তৈরি করতে চেয়েছি জনগণের বৃহত্তর ঐক্যের মধ্য দিয়ে। এটা বাম জোটের কর্মপদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে আমরা একটা পর্যায়ে বাম জোট ছেড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ তৈরি করেছি। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের কৌশলে আমরা আমাদের যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সেটা বাস্তবায়নের জন্য আমরা দৃঢ় ছিলাম, সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন। এ দলটির সঙ্গে আপনাদের আদর্শগত মিল কতটুকু?
জোনায়েদ সাকি: বিএনপির সঙ্গে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যের প্রয়োজনটা বোধ করেছি। আবার আদর্শের দিক থেকে, কর্মসূচিগত অনেক পার্থক্যের জায়গা আছে। তবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে জায়গায় আছি, এখানে কিন্তু আমাদের সকলকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের পার্থক্য সত্ত্বেও এমন একটা রুলস অব দি গেমে পৌঁছাতে হচ্ছে, যেখানে আমরা সবাই তার অংশীদার। এখানে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা সেটার জন্য কাজ করছি। এটা আমাদের দলের দায়িত্ব মনে করি। কারণ, এটা একটা জাতীয় ঘটনা। এই ঐক্য এবং সংগ্রাম দুটিই এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে বহাল আছে।
আজকের পত্রিকা: গণতন্ত্র মঞ্চ কি নির্বাচনী জোট হিসেবে থাকবে? না দলগুলো এককভাবে ভোটে আসবে?
জোনায়েদ সাকি: এখন পর্যন্ত এক মঞ্চে আছি, আশা করি এই মঞ্চ টিকে থাকবে। এই মঞ্চ আরও বিকশিত হবে। সেই অর্থে নির্বাচন, সংগ্রাম যথাসম্ভব ঐক্যবদ্ধভাবেই মোকাবিলা করতে চাই।
আজকের পত্রিকা: আপনি সামনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা করছেন। আপনার দল গণসংহতি আন্দোলনকে আপনি আগামী কোন অবস্থানে দেখতে চান?
জোনায়েদ সাকি: আমরা একটা গণতান্ত্রিক, গণমানুষের রাজনৈতিক দল, মুক্তিকামী গণতন্ত্রের আদর্শিক জায়গা থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছি এবং রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি অনুযায়ী পরিবর্তন ঘটানোর কাজ করে যাচ্ছি। যাতে সব মানুষের মর্যাদা, অধিকার এবং তাদের স্বাধীনতা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। সেই জায়গাগুলোতে আমাদের একটা অগ্রগতি আছে, আমরা ধারাবাহিক সংগ্রাম করার মধ্য দিয়ে মানুষের কিছুটা আস্থার জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাবে আমাদের দল এখনো কাঙ্ক্ষিত বিকাশের জায়গায় যেতে পারেনি। কিন্তু আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে বিকশিত হচ্ছি। আমরা মনে করি, বিকাশের ধারায় আমরা একটা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি, দল হিসেবে আমরা হাজির হতে পারব। এই দলকে আমরা একসময় রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার জায়গাতে নিয়ে যেতে পারব।
আজকের পত্রিকা: সরকারের স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা কতটুকু?
জোনায়েদ সাকি: অন্তর্বর্তী সরকার তার যে দায়িত্ব দৈনন্দিন রাষ্ট্র পরিচালনা এবং রাজনৈতিক উত্তরণের কাজ। এইটা একটা বিরাট গণ–অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এই পর্বে এসেছি। এই গণ–অভ্যুত্থানই আমাদের শক্তি। এই প্রক্রিয়াটা আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। আমার যে জায়গায় ভরসা রাখতে চাই, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটাই এখানে সফল হবে। অন্য কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ঘিরে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সৃষ্টি হচ্ছে। তাঁরা কোন দলে যুক্ত হবেন—এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। সেই আলোচনায় এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে।
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করেছিল, তারাই মুক্তির ঠিক আগে জাতির সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল— এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার বিকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
১৩ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানিরা নয়, বরং ভারতীয়রাই হত্যা করেছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের—এমন দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন।
১৪ ঘণ্টা আগে
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ঘিরে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সৃষ্টি হচ্ছে। তাঁরা কোন দলে যুক্ত হবেন—এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। সেই আলোচনায় এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা এবং মাহফুজ ও আসিফের ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, শিগগিরই তাঁরা এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন।
মাহফুজ ও আসিফ এনসিপিতে যোগ দিলে তাঁদের দায়িত্ব বা পদবি কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মাহফুজ আলমকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সদস্যসচিব পদমর্যাদার দায়িত্ব পেতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। যদিও এসব বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
মাহফুজ ও আসিফ এনসিপিতে আসতে চাইলে দল তাঁদের স্বাগত জানাবে বলে কয়েকবার জানিয়েছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদের জন্য এনসিপির দরজা সব সময়ই উন্মুক্ত। তাঁরা চাইলে যেকোনো সময় দলে আসতে পারেন। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মাহফুজ-আসিফ এনসিপিতে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক নেতা। ওই নেতা বলেন, তাঁরা কয়েক দিন হলো অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন। এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে একটা ঘোষণা আসতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগের পর মাহফুজ ও আসিফ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আসিফ মাহমুদ ইতিমধ্যে ঢাকা-১০ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে। এ দুই আসনে এনসিপি এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দলটি ১২৫টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেও এই দুটি আসন খালি রাখা হয়েছে। মাহফুজ এবং আসিফের জন্যই আসন দুটিতে এখন পর্যন্ত প্রার্থী দেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন অনেকে।
মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ এবং এনসিপির নেতারা একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। এনসিপির অনেক নেতা মাহফুজ আলমকে ‘তাত্ত্বিক গুরু’ মনে করেন।
চব্বিশের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের শুরু থেকেই নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা পদে ছিলেন। অন্যদিকে মাহফুজ আলম গত বছরের ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ পান। গত বছরের ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রনেতাদের বড় অংশ এনসিপিতে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু মাহফুজ-আসিফ সরকারের অংশ হওয়ায় তাঁরা শুরুতেই এনসিপিতে যোগ দেননি। গত ১০ ডিসেম্বর তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। নির্বাচনী নানা হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে তাঁরা বিএনপি বা গণঅধিকার পরিষদে যুক্ত হবেন, এমন আলোচনাও ছিল। তবে শেষমেশ এই দুই নেতা এনসিপিতেই যোগ দিতে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছে কয়েকটি সূত্র।
এনসিপির নেতারা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের রাজনৈতিক দর্শনে মিল রয়েছে। তাই তাঁরা চান মাহফুজ-আসিফ অন্য কোনো দিলে না গিয়ে এনসিপিতেই আসুক।
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও সহশিক্ষা সম্পাদক মাহাবুব আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দলের বেশির ভাগ সদস্যই চান, তাঁরা (মাহফুজ-আসিফ) জুলাইয়ের শক্তি হিসেবে তাঁরা এনসিপিতেই আসুক। সেভাবেই আলোচনা চলছে৷
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনও একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিন তিনি বলেন, মাহফুজ-আসিফ কোন দলের হয়ে নির্বাচন করবেন, সেটি তাঁদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে তাঁরা যদি এনসিপিতে যুক্ত হতে চান, দল তাঁদের স্বাগত জানাবে।
এনসিপির নেতারা বলছেন, মাহফুজ ও আসিফ এনসিপিতে যুক্ত হলে দলটির রাজনৈতিক কৌশলেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও তখন নতুন মোড় নেবে। মাহফুজ-আসিফ দুজনেই চান এনসিপি বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করুক। সে ক্ষেত্রে তাঁরা এনসিপিতে এলে আন্দোলন-পরবর্তী রাজনীতিতে তরুণ নেতৃত্ব ও বড় দলগুলোর সমন্বয়ের যে আলোচনা চলছে, এনসিপি সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
সব মিলিয়ে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পরবর্তী সিদ্ধান্ত শুধু এনসিপির নয়; বরং পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাঁদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সেই অপেক্ষারই অবসান ঘটাবে বলে মনে করছেন রাজনীতিসংশ্লিষ্টরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ঘিরে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সৃষ্টি হচ্ছে। তাঁরা কোন দলে যুক্ত হবেন—এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। সেই আলোচনায় এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা এবং মাহফুজ ও আসিফের ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, শিগগিরই তাঁরা এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন।
মাহফুজ ও আসিফ এনসিপিতে যোগ দিলে তাঁদের দায়িত্ব বা পদবি কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মাহফুজ আলমকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সদস্যসচিব পদমর্যাদার দায়িত্ব পেতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। যদিও এসব বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
মাহফুজ ও আসিফ এনসিপিতে আসতে চাইলে দল তাঁদের স্বাগত জানাবে বলে কয়েকবার জানিয়েছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদের জন্য এনসিপির দরজা সব সময়ই উন্মুক্ত। তাঁরা চাইলে যেকোনো সময় দলে আসতে পারেন। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মাহফুজ-আসিফ এনসিপিতে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক নেতা। ওই নেতা বলেন, তাঁরা কয়েক দিন হলো অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন। এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে একটা ঘোষণা আসতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগের পর মাহফুজ ও আসিফ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আসিফ মাহমুদ ইতিমধ্যে ঢাকা-১০ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে। এ দুই আসনে এনসিপি এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দলটি ১২৫টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেও এই দুটি আসন খালি রাখা হয়েছে। মাহফুজ এবং আসিফের জন্যই আসন দুটিতে এখন পর্যন্ত প্রার্থী দেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন অনেকে।
মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ এবং এনসিপির নেতারা একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। এনসিপির অনেক নেতা মাহফুজ আলমকে ‘তাত্ত্বিক গুরু’ মনে করেন।
চব্বিশের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের শুরু থেকেই নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা পদে ছিলেন। অন্যদিকে মাহফুজ আলম গত বছরের ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ পান। গত বছরের ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রনেতাদের বড় অংশ এনসিপিতে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু মাহফুজ-আসিফ সরকারের অংশ হওয়ায় তাঁরা শুরুতেই এনসিপিতে যোগ দেননি। গত ১০ ডিসেম্বর তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। নির্বাচনী নানা হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে তাঁরা বিএনপি বা গণঅধিকার পরিষদে যুক্ত হবেন, এমন আলোচনাও ছিল। তবে শেষমেশ এই দুই নেতা এনসিপিতেই যোগ দিতে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছে কয়েকটি সূত্র।
এনসিপির নেতারা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের রাজনৈতিক দর্শনে মিল রয়েছে। তাই তাঁরা চান মাহফুজ-আসিফ অন্য কোনো দিলে না গিয়ে এনসিপিতেই আসুক।
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও সহশিক্ষা সম্পাদক মাহাবুব আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দলের বেশির ভাগ সদস্যই চান, তাঁরা (মাহফুজ-আসিফ) জুলাইয়ের শক্তি হিসেবে তাঁরা এনসিপিতেই আসুক। সেভাবেই আলোচনা চলছে৷
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনও একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিন তিনি বলেন, মাহফুজ-আসিফ কোন দলের হয়ে নির্বাচন করবেন, সেটি তাঁদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে তাঁরা যদি এনসিপিতে যুক্ত হতে চান, দল তাঁদের স্বাগত জানাবে।
এনসিপির নেতারা বলছেন, মাহফুজ ও আসিফ এনসিপিতে যুক্ত হলে দলটির রাজনৈতিক কৌশলেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও তখন নতুন মোড় নেবে। মাহফুজ-আসিফ দুজনেই চান এনসিপি বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করুক। সে ক্ষেত্রে তাঁরা এনসিপিতে এলে আন্দোলন-পরবর্তী রাজনীতিতে তরুণ নেতৃত্ব ও বড় দলগুলোর সমন্বয়ের যে আলোচনা চলছে, এনসিপি সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
সব মিলিয়ে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পরবর্তী সিদ্ধান্ত শুধু এনসিপির নয়; বরং পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাঁদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সেই অপেক্ষারই অবসান ঘটাবে বলে মনে করছেন রাজনীতিসংশ্লিষ্টরা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, সংস্কার প্রক্রিয়া এবং বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও এর সমাধান নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত ফাহাদ।
২৮ জানুয়ারি ২০২৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করেছিল, তারাই মুক্তির ঠিক আগে জাতির সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল— এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার বিকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
১৩ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানিরা নয়, বরং ভারতীয়রাই হত্যা করেছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের—এমন দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন।
১৪ ঘণ্টা আগে
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করেছিল, তারাই মুক্তির ঠিক আগে জাতির সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল— এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার বিকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, একটা নীল নকশার মাধ্যমে, একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত ছিল সেটা। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজশ করেছিল, তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন?’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস প্রমাণ করে, তখনকার সেই রাজনৈতিক শক্তি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারাই সেদিন আমাদের সেই সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই। কারণ বারবার এই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হয়েছে, বারবার এই দেশের মানুষের ওপরে আঘাত এসেছে এবং তারা যেন মেধার ভিত্তিতে জেগে উঠতে না পারে, যেন তারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে উপরে উঠতে না পারে, শিক্ষায় দীক্ষায় জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে না পারে, সেই চেষ্টাটা তখন করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরেও ‘ভিন্ন অঙ্গিকে’ এই চেষ্টার ধারাবাহিকতা ছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল হয়েছে, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে ফেলা হয়েছে। আমরা সবসময় এই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আমাদের এই জাতির বিরুদ্ধে আমরা দেখছি।
ভয় দেখিয়ে গণতন্ত্রের সৈনিকদের স্তব্ধ করে দিতে চায়
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে বিএনপির উদ্যোগে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যা চেষ্টার মধ্য দিয়ে দেশে ‘ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে’ বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে নির্বাচনের যখন তফসিল ঘোষণা হলো, তখনই হত্যা করার চেষ্টা করা হলো হাদিকে. . একজন সৈনিক যে ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। একটা ভয় আবার শুরু করতে চেয়েছে, যে ভয় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে— ভয় দেখিয়ে দেশ শাসন করার চেষ্টা করেছে, চাপ সৃষ্টি করেছে। আবার সেই ভয় দেখিয়ে আমাদের গণতন্ত্রের সৈনিকদের স্তব্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু ইতিহাস বলে বিএনপি ভয়ে কখনও দমে যায় না।’
আলোচনায় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করেছিল, তারাই মুক্তির ঠিক আগে জাতির সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল— এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার বিকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, একটা নীল নকশার মাধ্যমে, একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত ছিল সেটা। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজশ করেছিল, তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন?’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস প্রমাণ করে, তখনকার সেই রাজনৈতিক শক্তি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারাই সেদিন আমাদের সেই সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই। কারণ বারবার এই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হয়েছে, বারবার এই দেশের মানুষের ওপরে আঘাত এসেছে এবং তারা যেন মেধার ভিত্তিতে জেগে উঠতে না পারে, যেন তারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে উপরে উঠতে না পারে, শিক্ষায় দীক্ষায় জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে না পারে, সেই চেষ্টাটা তখন করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরেও ‘ভিন্ন অঙ্গিকে’ এই চেষ্টার ধারাবাহিকতা ছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল হয়েছে, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে ফেলা হয়েছে। আমরা সবসময় এই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আমাদের এই জাতির বিরুদ্ধে আমরা দেখছি।
ভয় দেখিয়ে গণতন্ত্রের সৈনিকদের স্তব্ধ করে দিতে চায়
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে বিএনপির উদ্যোগে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যা চেষ্টার মধ্য দিয়ে দেশে ‘ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে’ বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে নির্বাচনের যখন তফসিল ঘোষণা হলো, তখনই হত্যা করার চেষ্টা করা হলো হাদিকে. . একজন সৈনিক যে ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। একটা ভয় আবার শুরু করতে চেয়েছে, যে ভয় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে— ভয় দেখিয়ে দেশ শাসন করার চেষ্টা করেছে, চাপ সৃষ্টি করেছে। আবার সেই ভয় দেখিয়ে আমাদের গণতন্ত্রের সৈনিকদের স্তব্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু ইতিহাস বলে বিএনপি ভয়ে কখনও দমে যায় না।’
আলোচনায় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, সংস্কার প্রক্রিয়া এবং বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও এর সমাধান নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত ফাহাদ।
২৮ জানুয়ারি ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ঘিরে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সৃষ্টি হচ্ছে। তাঁরা কোন দলে যুক্ত হবেন—এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। সেই আলোচনায় এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে।
৭ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানিরা নয়, বরং ভারতীয়রাই হত্যা করেছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের—এমন দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন।
১৪ ঘণ্টা আগে
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পাকিস্তানিরা নয়, বরং ভারতীয়রাই হত্যা করেছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের—এমন দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এ দেশের দিল্লির তাঁবেদাররা বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা নিয়ে প্রথাগতভাবে সমস্ত দায়দায়িত্ব ঘৃণিতভাবে জামায়াতে ইসলামীর ওপরে চাপানোর চেষ্টা করেছেন। ইতিহাসের অনেক তথ্য আবিষ্কার হচ্ছে যে, দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ভিত্তিতে ভারতীয়রাই আমাদের এই সেরা সন্তানদের হত্যা করেছে।’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর বিজয়ের আগে ভারতীয় ৩৬ সেনারা ঢাকায় অবতরণ করেছে, এর রেকর্ড আছে। তখন রাজধানী ঢাকাসহ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ভারতীয় সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার-আল-বদরেরা তো আত্মসমর্পণ, নিজেদের প্রাণ বাঁচানো, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল; কে কাকে খুঁজে কোথায় হত্যা করবে? নিজেদের জীবন বাঁচাতেই ততক্ষণ তারা ব্যস্ত ছিল।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ভারতের জনগণের প্রতি আমাদের কোনো আক্রোশ নেই। তবে ভারতের সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী সরকার, যারা ক্ষমতায় এখনো আছে, বারবার যারা এসেছে, তারাই এ দেশের স্বাধীন সত্তাকে বিকিয়ে দিয়ে এ দেশের ইসলামি মূল্যবোধ ধ্বংসের জন্য বারবার এ দেশের মানুষের ওপরে হত্যার ষড়যন্ত্র চাপিয়ে দিয়েছে।’
ভারত সরকারের উদ্দেশে পরওয়ার বলেন, ‘আপনারা বর্ডার কিলিং করেছেন। আমাদের পানি সমস্যা, আমাদের নদীর সমস্যা। আপনারা ফেলানির মতো কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখে দেশের মানুষকে হত্যা করা, আমাদের ট্রানজিট, আমাদের ট্রেড ব্যালেন্স সবকিছুকে পরিকল্পিতভাবে আপনারা ধ্বংস করেছেন। আমরা সম্পর্ক চাই, কিন্তু সেই সম্পর্ক চাই ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।’
জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন প্রমুখ।

পাকিস্তানিরা নয়, বরং ভারতীয়রাই হত্যা করেছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের—এমন দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এ দেশের দিল্লির তাঁবেদাররা বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা নিয়ে প্রথাগতভাবে সমস্ত দায়দায়িত্ব ঘৃণিতভাবে জামায়াতে ইসলামীর ওপরে চাপানোর চেষ্টা করেছেন। ইতিহাসের অনেক তথ্য আবিষ্কার হচ্ছে যে, দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ভিত্তিতে ভারতীয়রাই আমাদের এই সেরা সন্তানদের হত্যা করেছে।’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর বিজয়ের আগে ভারতীয় ৩৬ সেনারা ঢাকায় অবতরণ করেছে, এর রেকর্ড আছে। তখন রাজধানী ঢাকাসহ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ভারতীয় সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার-আল-বদরেরা তো আত্মসমর্পণ, নিজেদের প্রাণ বাঁচানো, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল; কে কাকে খুঁজে কোথায় হত্যা করবে? নিজেদের জীবন বাঁচাতেই ততক্ষণ তারা ব্যস্ত ছিল।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ভারতের জনগণের প্রতি আমাদের কোনো আক্রোশ নেই। তবে ভারতের সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী সরকার, যারা ক্ষমতায় এখনো আছে, বারবার যারা এসেছে, তারাই এ দেশের স্বাধীন সত্তাকে বিকিয়ে দিয়ে এ দেশের ইসলামি মূল্যবোধ ধ্বংসের জন্য বারবার এ দেশের মানুষের ওপরে হত্যার ষড়যন্ত্র চাপিয়ে দিয়েছে।’
ভারত সরকারের উদ্দেশে পরওয়ার বলেন, ‘আপনারা বর্ডার কিলিং করেছেন। আমাদের পানি সমস্যা, আমাদের নদীর সমস্যা। আপনারা ফেলানির মতো কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখে দেশের মানুষকে হত্যা করা, আমাদের ট্রানজিট, আমাদের ট্রেড ব্যালেন্স সবকিছুকে পরিকল্পিতভাবে আপনারা ধ্বংস করেছেন। আমরা সম্পর্ক চাই, কিন্তু সেই সম্পর্ক চাই ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।’
জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন প্রমুখ।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, সংস্কার প্রক্রিয়া এবং বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও এর সমাধান নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত ফাহাদ।
২৮ জানুয়ারি ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ঘিরে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সৃষ্টি হচ্ছে। তাঁরা কোন দলে যুক্ত হবেন—এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। সেই আলোচনায় এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে।
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করেছিল, তারাই মুক্তির ঠিক আগে জাতির সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল— এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার বিকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
১৩ ঘণ্টা আগে
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়েছে।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ২টায় বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি বিজয় দিবসে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
এ ছাড়া, একই দিন সকাল ৭টায় বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন এবং শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় এবং নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। পাশাপাশি দিবসটি উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিজস্ব আঙ্গিকে কর্মসূচি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করবে। সেই সঙ্গে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে স্থানীয় সুবিধানুযায়ী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাসহ সারা দেশের বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানানো হয়েছে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়েছে।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ২টায় বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি বিজয় দিবসে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
এ ছাড়া, একই দিন সকাল ৭টায় বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন এবং শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় এবং নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। পাশাপাশি দিবসটি উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিজস্ব আঙ্গিকে কর্মসূচি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করবে। সেই সঙ্গে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে স্থানীয় সুবিধানুযায়ী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাসহ সারা দেশের বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানানো হয়েছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, সংস্কার প্রক্রিয়া এবং বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও এর সমাধান নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত ফাহাদ।
২৮ জানুয়ারি ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ঘিরে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সৃষ্টি হচ্ছে। তাঁরা কোন দলে যুক্ত হবেন—এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। সেই আলোচনায় এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে।
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করেছিল, তারাই মুক্তির ঠিক আগে জাতির সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল— এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার বিকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
১৩ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানিরা নয়, বরং ভারতীয়রাই হত্যা করেছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের—এমন দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন।
১৪ ঘণ্টা আগে