ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিসহ ১৭ নেতাকে বহিষ্কার করল সিপিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ মে ২০২৪, ২১: ১১
Thumbnail image

শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং পার্টির নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে ১৭ জনকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। বহিষ্কার ছাত্রনেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈমও রয়েছেন।

গতকাল সোমবার এই ছাত্রনেতাদের চিঠি দিয়ে তাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। ১৭ ছাত্রনেতার সবাই ছাত্র ইউনিয়ন (রাগীব–রাকিব) অংশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। 

এই ছাত্রনেতাদের কাছে পাঠানো সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আপনি বারংবার ছাত্র গণসংগঠন সংক্রান্ত পার্টির সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আপনাকে অবহিত করে পার্টির সিদ্ধান্ত মেনে চলতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরও আপনি পার্টির সিদ্ধান্ত অমান্য করে চলেছেন।’ 

জানা গেছে, ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈমকে গঠনতন্ত্রের ১২.৫ এবং অন্যদের ১২.১ ধারা অনুযায়ী দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পার্টি থেকে বহিষ্কৃত অন্যরা হলেন তামজীদ হায়দার চঞ্চল, জয় রায়, শিমুল কুম্ভকার, বিল্লাল হোসেন, সাব্বির হোসেন রাজ, জাওয়াদুল ইসলাম, নাজিফা জান্নাত, লেনিক চাকমা, মাহমুদা দীপা, আসিফ জামান, রথীন্দ্রনাথ বাপ্পী, মেহেদী হাসান, মনীষা ওয়াহিদ, পার্থ প্রতীম সরকার, আবু বক্কর এবং নজির আমীন চৌধুরী জয়। 

সিপিবির গঠনতন্ত্রের ১২.১ ধারায় বলা হয়েছে, পার্টির শৃঙ্খলা সর্বস্তরের সদস্যের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। পার্টির গঠনতন্ত্র, সিদ্ধান্ত ও শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করলে অথবা পার্টির পক্ষে অসম্মানজনক বা ক্ষতিকর কোনো কাজ করলে, পার্টি তার অন্তর্ভুক্ত ও অধীনস্থ সদস্যকে সতর্ক, নিন্দা, দায়িত্ব থেকে সাময়িক অথবা স্থায়ী অব্যাহতি, সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত, এমনকি পার্টি থেকে বহিষ্কার করতে পারবে। অন্যদিকে ১২.৫ ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি কোনো সদস্যকে বহিষ্কার না করে তার সদস্যপদ সরাসরি বাতিল করতে পারবে। 

বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সভাপতি রাগীব নাঈম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ৪১ সদস্যের, তার মধ্যে আমরা ১৭ জন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলাম। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আমাদের সিপিবি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এমন চিঠি গতকাল পেয়েছি।’ 

এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সিপিবি ছাত্র গণসংগঠন বিষয়ে বিগত কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছে অভিযোগ করে রাগীব বলেন, ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ সংস্থা পার্টির কংগ্রেস। কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত ছিল, ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে যত্নবান হওয়ার এবং পক্ষপাত না করার। কেন্দ্রীয় কমিটি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আমাদের বহিষ্কার করেছে।’ 

সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালে ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলনের পর থেকেই সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে উভয় অংশ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করে আলাদাভাবে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। বর্তমানে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ রাগীব-রাকিব ও অন্য অংশ দীপক-মাহিরের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। সিপিবির বর্তমান নেতৃত্ব দীপক-মাহির নেতৃত্বাধীন ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। 

সূত্র আরও জানায়, দীপক-মাহির নেতৃত্বাধীন ছাত্র ইউনিয়নের আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাগীব-রাকিব নেতৃত্বাধীন ছাত্র ইউনিয়নের পার্টি সদস্যদের অন্য অংশে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সিপিবির নেতারা। নির্দেশনা অমান্য করায় গত ৮ এপ্রিল বহিষ্কৃত ছাত্রনেতাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় সিপিবি। 

ছাত্রনেতাদের বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রথমে বলেন, এ বিষয়ে তিনি জানেন না। তবে ছাত্র গণসংগঠন বিষয়ে পার্টির সর্বশেষ সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা এককথায় বলা সম্ভব না। এটা বুঝতে বিস্তারিত কথা বলতে হবে। আপনি অফিসে আসেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত