ভারতের বাংলাদেশ নীতি পুরোপুরি ব্যর্থ, দ্য হিন্দুকে আমীর খসরু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ৪৯
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ৫৯

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের অফিশিয়াল নীতিমালা ‘পুরোপুরি ব্যর্থ’ হয়েছে। তাঁর মতে, ভারতের এই নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়েছে কতিপয় শক্তিশালী আমলা, পক্ষপাতদুষ্ট সাবেক কূটনৈতিক, তাত্ত্বিক ও সাংবাদিকদের নিয়ে এমন একটি ‘ইকোসিস্টেম’ গড়ে তুলেছিল, যারা মাঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশের জনগণের অনুভূতিকে সম্মান করার আহ্বান জানান ভারতের প্রতি। তিনি বলেন, গত দশকে বাংলাদেশে যে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার সবগুলোই জালিয়াতিতে পরিপূর্ণ এবং ভারত এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে ‘সক্রিয়’ ভূমিকা পালন করেছে। 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ইকোসিস্টেমটি এই ন্যারেটিভ তৈরি করেছে যে হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশ মৌলবাদীদের হাতে চলে যাবে। হাসিনা না থাকলে ভারতের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। ভারতকে এই ইকোসিস্টেম ও মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সাউথ ব্লকের জেগে ওঠে নতুন পরিস্থিতি উপলব্ধি করা উচিত।’ এ সময় বিএনপির এই নেতা সতর্ক করে বলেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে কয়েক বছর সময় লাগবে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের শেষ দিনগুলোতে বাংলাদেশ যে রক্তপাত ঘটেছে, তা পুরোপুরি এড়ানো যেত—যদি চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতো।’ যে দ্রুততার সঙ্গে ভারত জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফলকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাতে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন এবং সেই নির্বাচনকে ‘সম্পূর্ণ জালিয়াতিপূর্ণ’ বলে আখ্যা দেন। 

বিএনপি ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কাছে হেরে যায়। অবশ্য এর আগে থেকেই দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। বিএনপির দাবি এবং তা পূরণ না করতে আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অচলাবস্থার তৈরি করে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বয়কট করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকায়। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনও বয়কট করে বিএনপি। 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালের রাজনৈতিক অচলাবস্থা মোকাবিলা করার জন্য ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় এসে শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির নেতা প্রয়াত প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে লবিং করেন এবং তাঁকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আহ্বান জানান। 

এ বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যে পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিলেন—যেখানে সবাই জানত যে এই নির্বাচন হবে বানোয়াট এবং এতে চুরি করা হবে—এমন পরিস্থিতিতে (ভারতকে) আমরা সক্ষমকারী (এনাব্লার) না বলে আর কী বলতে পারি? তিনি (সুজাতা সিং) এরশাদকে—যিনি নির্বাচনে অংশ নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন—প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য করে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ এটা পছন্দ করেনি।’ 

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘ভারত ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারকে বারবার স্বীকৃতি দিয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে তিনটি নির্বাচনের ক্ষেত্রেই সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আমি আমার কথাগুলোকে মোটেও খাটো করে বলছি না।’ এ সময় তিনি বলেন, এই তিনটি নির্বাচনের বিষয়ে তাঁর খোলামেলা মন্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ‘কঠিন বাস্তবতা’। 

আমীর খসরু আরও স্পষ্ট করে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের জন্য তিনি যে ইকোসিস্টেমকে দোষারোপ করেছিলেন, যা একদল শক্তিশালী আমলা, অবসরপ্রাপ্ত কূটনৈতিক যারা নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। তারা এই ইকোসিস্টেম থেকে ব্যক্তিগতভাবে লাভবানও হলেও বাংলাদেশের মানসিকতা বোঝার ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলাকালে উদ্বেগ প্রকাশ করার বিষয়টির প্রশংসা করেন আমীর খসরু। এ সময় তিনি জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতে আত্মসমালোচনা শুরু হয়েছে বলে যে বিষয়টি তিনি শুনতে পেয়েছেন, তা সন্তোষজনক।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত