ভারত-বাংলাদেশ উত্তেজনা উভয় দেশের সংখ্যালঘুদের বিপদে ফেলছে: বাসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

ভারতের আগরতলা, কলকাতা ও মুম্বাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের উপ ও সহকারী হাইকমিশনে হামলা-ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ।

আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির যেকোনো অপতৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, যেকোনো দেশে বিদেশি দূতাবাসের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব সে দেশের রাষ্ট্র ও সরকারের। অথচ ভারত সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। উপরন্তু, ভারত সরকারের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি, শাসক দল বিজেপি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উসকানিমূলক বক্তব্য এ ধরনের অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে, যা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্জিত।

তিনি বলেন, এ সমস্ত ঘটনায় দুই দেশের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে পুষ্টি জোগালেও ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদে ফেলছে দুই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নিরীহ জনগণকে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে কোনো ভুল প্রবণতা তৈরি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্র এবং সরকারের। কিন্তু সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের যেকোনো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তব্য এবং ভূমিকা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভক্তি এবং বিরোধকে বাড়িয়ে তোলে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও পলায়নের পর থেকে ভারতের এক শ্রেণির উগ্রবাদী মহল পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। সৎ প্রতিবেশী সুলভ আচরণের বদলে ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়ে প্রকৃত তথ্যের বদলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রচার চালিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলছে, যা অনভিপ্রেত।

বিবৃতিতে কমরেড ফিরোজ বলেন, গত কয়েক দিনে ভারত সরকারের বক্তব্য এবং ভারতে বাংলাদেশের উপ ও সহকারী হাইকমিশনে আক্রমণ, বাংলাদেশের পতাকা অবমাননা বাংলাদেশের জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। ভারত সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। অতীতেও সাম্প্রদায়িকতার বিষময় প্রভাব ভারত-বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের জনগণ উপলব্ধি করেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা উপমহাদেশকে অশান্তির আগুনে পোড়াবে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সন্দেহ অবিশ্বাস ও তিক্ততা দুই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নিপীড়িত জনগণের জীবনকেই বিপন্ন করবে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে সমমর্যাদার ও বন্ধুত্বপূর্ণ। প্রভুত্বমূলক আচরণ কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না।

বিবৃতিতে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও যে পরিকল্পিত অসন্তোষ ও অরাজকতা তৈরি করা হচ্ছে তার বিষময় প্রভাব সমাজের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ধ্বংস করবে। যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধে সরকারের জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। দেশের প্রধান সমস্যা শোষণ ও বৈষম্য। এর প্রভাবে শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-নারী সকলের জীবন বিপর্যস্ত। ফ্যাসিবাদী শাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের সংগ্রাম করছে তখন সাম্প্রদায়িক সংঘাত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করবে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিপন্ন করবে এবং দেশের জনগণের ঐক্য ও সংহতিকে বিনষ্ট করবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরে কিছু উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ধর্মীয় বিভাজনমূলক বক্তব্য, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের ঘটনা নিন্দনীয়। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে জরুরিভাবে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রতিটি দেশের পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং নাম সেই দেশের জনগণের গভীর আবেগ ও মর্যাদার বিষয়। এর অবমাননা গর্হিত কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু গত কয়েক দিনে এই সব নিন্দনীয় ঘটনা ঘটে চলেছে। তিনি এই সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, কোনো দেশের সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িকতা সংখ্যালঘুদের আতঙ্কিত ও অসম্মানিত করে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সরকার এটা কোনোভাবেই বরদাশত করতে পারে না।

অবিলম্বে এই ঘৃণ্য তৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি ভারত ও বাংলাদেশের সকল বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রকামী জনগণকে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উসকানির ফাঁদে পা না দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা ও সাম্প্রদায়িক বিরোধ সৃষ্টির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত