ফয়সাল পারভেজ (মাগুরা)
‘জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় দুপুরে ভারী খাবার ছাড়া সকাল ও রাতে কম খাই। আগের মতো তাই শরীরে শক্তি পাই না। কী করব? চুরি করে তো আর চলতে পারি না।’ কথাগুলো রহিম মিয়ার। পেশায় ভ্যানচালক। ভ্যানে মালপত্র আনা-নেওয়া করেন অনেক দিন হলো। সময়ের সঙ্গে বাজারে সবকিছুরই দাম বেড়েছে, শুধু তাঁর শ্রমেরই দাম বাড়ে সেভাবে।
বাজারে সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি মানুষের আয়। এতে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। রহিম মিয়া এমনই একজন। মাগুরা সদরের পাথরা এলাকায় তাঁর বাড়ি। সদরের ভায়না এলাকায় নিয়মিত ভ্যানে মালপত্র আনা-নেওয়া করেন। সময়ের সঙ্গে ব্যয় বাড়লেও, সে অনুপাতে বাড়েনি আয়।
মাগুরা সদরের ভায়না এলাকায় তাঁর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে, তখন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আনিসুর। পেশায় রিকশাচালক তিনি। কথায় কথায় বললেন, ‘রিকশা ভাড়া ১০ টাকা সেই ২০ বছর ধরে। এই সময়ে কত কিছুর দাম বাড়ল। ভাড়া বাড়ল না।’
এই ২০ বছরে আনিসুরের ব্যক্তিগত অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। আগে তিনি একা ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে বিয়ে করেছেন, সন্তানও আছে। বললেন, ‘বিয়ে করিছি, বাচ্চা তিনডা। বড় মেয়েটা বিয়ের যোগ্য। এবার এসএসসি দিলি পাত্র দেখে বিয়ে দেব। অভাবের ঘর বোঝেনই তো। দুইডা ছোট ছেলে, একজন শসা বেচে। তার আয়ে সে পড়াশোনা করে। অন্যজন মায়ের কাছে থাকে। এই ১০ টাকা করে ভাড়ায় আর চলে না।’
আনিসুরের সমস্যা আরও আছে। জানালেন, যে রিকশা তিনি চালান, সেটা তাঁর নিজেরই। এ জন্য কোনো মাহাজনকে ভাড়া দিতে হয় না। তারপরও চলতে পারছেন না। কারণ, রিকশাটি পুরোনো। ফলে মানুষ ওঠে কম। আর মানুষের রিকশায় চড়ার হারও নাকি কমে গেছে। বললেন, ‘আর কী বলব ভাই, জিনিসপত্রের দাম এত যে, মানুষ রিকশায় ওঠাই কমাই দেছে। হেঁটেই দেহি অনেকে কাজে যাওয়া-আসা করে।’
রিকশাচালক আনিসুরের কথার রেশ ধরে এবার ভ্যানচালক রহিম বলেন, ‘ভ্যানে তো মালপত্র টানাটানি করি। আগের মতোই ভাড়া আছে, বাড়েনি। খাওয়ার কষ্ট তো আছেই। নিজর কথা বাদ থাক, বাচ্চাদের জন্যও জামা কিনতে পারি না।’
এবার কথা হলো নূর মিয়ার সঙ্গে। মাগুরা নতুন বাজার এলাকার সড়কের পাশে কলা বিক্রি করেন তিনি। বয়স তাঁর ৫০-এর আশপাশে। সারা দিন কলা বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে পরিবারের ছয়জনের ভরন-পোষণ চলে। ইচ্ছা থাকলেও গরুর মাংস খেতে পারছেন না দুই মাস ধরে। কারণ, দাম।
নূর মিয়া বলেন, ‘আগে সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস কিনতাম। তখন ৩৫০ টাকা কেজি ছিল। বড় ছেলেটা গরুর গোশ খুব পছন্দ করে। সে কিছুটা মানসিক অসুস্থ বিধায়, তার ইচ্ছাটা আমি কষ্ট করে হলেও পূরণ করি। কিন্তু গরু এখন ৭৫০ টাকা কেজি। কিনতে পারি না দুই মাস। ঈদেও কিনতে পারি নাই। গোশ কিনলে যদি তেল না হয়, তয় কোনটা কিনবার পারি? তেল ২০০ টাকা কেজি কিনলে মাছও কেনা হয় না। কারণ, চালের আবার দাম বাড়ছে। ছেলেটার ইচ্ছা আর পূরণ হয় না। সামনে কোরবানি ঈদ। তখন হয়তো আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে গরুর গোশ জুটবে।’
না, তাই বলে মাংস ব্যবসায়ীরা যে বেশ ভালো আছেন তেমনটাও মনে হলো না পুরাতন বাজার এলাকার মাংস ব্যবসায়ী কামাল শেখের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, ‘আগে গরুর দাম ছিল কম, এখন দ্বিগুণের বেশি। এর পর চামড়ার দাম নেই। আগে যে চামড়ার দাম ছিল ১৮০০ টাকা, তা এখন ৬-৭ শ টাকা। তাই মাংসের দাম এখন বেশি। কিন্তু বিক্রি কম। মানুষ কিনতে আসে কম। আগে গরিব মানুষও মাংস কিনতে আসত। এখন তেমন আসে না। এমনকি মধ্যবিত্তরাও কম আসে। মাছ কিনে চলে যায়। ফলে ব্যবসা আগের মতো নেই।’
গরিব মানুষ মাংস কিনবে কী করে, চাল কেনা নিয়েই তো তার নাভিশ্বাস উঠছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে খাওয়াই কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানালেন চানাচুর বিক্রেতা রাসেল। তিনি বলেন, ‘মাগুরা আসি সেই ৯ কিলোমিটার দূরের কামারখালী থেকা। সারা দিন বিক্রি করে যা পাই, তাতে চাল কিনে বাড়ি যাই। কিন্তু মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৬ টাকা বেড়েছে দুই সপ্তাহ। সংসারে প্রতিদিন ৩ কেজি চাল লাগে। প্রতিদিন এত চাল কিনলে তো পুঁজিই থাকব না। চানাচুর তৈরির মালামাল কিনতে গেলে চাল কম কিনতে হয়। খাওয়া কমাই দিছি। কী করব বলেন? অন্য পেশায় তো যাওয়ার বয়স নাই।’
‘জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় দুপুরে ভারী খাবার ছাড়া সকাল ও রাতে কম খাই। আগের মতো তাই শরীরে শক্তি পাই না। কী করব? চুরি করে তো আর চলতে পারি না।’ কথাগুলো রহিম মিয়ার। পেশায় ভ্যানচালক। ভ্যানে মালপত্র আনা-নেওয়া করেন অনেক দিন হলো। সময়ের সঙ্গে বাজারে সবকিছুরই দাম বেড়েছে, শুধু তাঁর শ্রমেরই দাম বাড়ে সেভাবে।
বাজারে সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি মানুষের আয়। এতে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। রহিম মিয়া এমনই একজন। মাগুরা সদরের পাথরা এলাকায় তাঁর বাড়ি। সদরের ভায়না এলাকায় নিয়মিত ভ্যানে মালপত্র আনা-নেওয়া করেন। সময়ের সঙ্গে ব্যয় বাড়লেও, সে অনুপাতে বাড়েনি আয়।
মাগুরা সদরের ভায়না এলাকায় তাঁর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে, তখন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আনিসুর। পেশায় রিকশাচালক তিনি। কথায় কথায় বললেন, ‘রিকশা ভাড়া ১০ টাকা সেই ২০ বছর ধরে। এই সময়ে কত কিছুর দাম বাড়ল। ভাড়া বাড়ল না।’
এই ২০ বছরে আনিসুরের ব্যক্তিগত অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। আগে তিনি একা ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে বিয়ে করেছেন, সন্তানও আছে। বললেন, ‘বিয়ে করিছি, বাচ্চা তিনডা। বড় মেয়েটা বিয়ের যোগ্য। এবার এসএসসি দিলি পাত্র দেখে বিয়ে দেব। অভাবের ঘর বোঝেনই তো। দুইডা ছোট ছেলে, একজন শসা বেচে। তার আয়ে সে পড়াশোনা করে। অন্যজন মায়ের কাছে থাকে। এই ১০ টাকা করে ভাড়ায় আর চলে না।’
আনিসুরের সমস্যা আরও আছে। জানালেন, যে রিকশা তিনি চালান, সেটা তাঁর নিজেরই। এ জন্য কোনো মাহাজনকে ভাড়া দিতে হয় না। তারপরও চলতে পারছেন না। কারণ, রিকশাটি পুরোনো। ফলে মানুষ ওঠে কম। আর মানুষের রিকশায় চড়ার হারও নাকি কমে গেছে। বললেন, ‘আর কী বলব ভাই, জিনিসপত্রের দাম এত যে, মানুষ রিকশায় ওঠাই কমাই দেছে। হেঁটেই দেহি অনেকে কাজে যাওয়া-আসা করে।’
রিকশাচালক আনিসুরের কথার রেশ ধরে এবার ভ্যানচালক রহিম বলেন, ‘ভ্যানে তো মালপত্র টানাটানি করি। আগের মতোই ভাড়া আছে, বাড়েনি। খাওয়ার কষ্ট তো আছেই। নিজর কথা বাদ থাক, বাচ্চাদের জন্যও জামা কিনতে পারি না।’
এবার কথা হলো নূর মিয়ার সঙ্গে। মাগুরা নতুন বাজার এলাকার সড়কের পাশে কলা বিক্রি করেন তিনি। বয়স তাঁর ৫০-এর আশপাশে। সারা দিন কলা বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে পরিবারের ছয়জনের ভরন-পোষণ চলে। ইচ্ছা থাকলেও গরুর মাংস খেতে পারছেন না দুই মাস ধরে। কারণ, দাম।
নূর মিয়া বলেন, ‘আগে সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস কিনতাম। তখন ৩৫০ টাকা কেজি ছিল। বড় ছেলেটা গরুর গোশ খুব পছন্দ করে। সে কিছুটা মানসিক অসুস্থ বিধায়, তার ইচ্ছাটা আমি কষ্ট করে হলেও পূরণ করি। কিন্তু গরু এখন ৭৫০ টাকা কেজি। কিনতে পারি না দুই মাস। ঈদেও কিনতে পারি নাই। গোশ কিনলে যদি তেল না হয়, তয় কোনটা কিনবার পারি? তেল ২০০ টাকা কেজি কিনলে মাছও কেনা হয় না। কারণ, চালের আবার দাম বাড়ছে। ছেলেটার ইচ্ছা আর পূরণ হয় না। সামনে কোরবানি ঈদ। তখন হয়তো আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে গরুর গোশ জুটবে।’
না, তাই বলে মাংস ব্যবসায়ীরা যে বেশ ভালো আছেন তেমনটাও মনে হলো না পুরাতন বাজার এলাকার মাংস ব্যবসায়ী কামাল শেখের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, ‘আগে গরুর দাম ছিল কম, এখন দ্বিগুণের বেশি। এর পর চামড়ার দাম নেই। আগে যে চামড়ার দাম ছিল ১৮০০ টাকা, তা এখন ৬-৭ শ টাকা। তাই মাংসের দাম এখন বেশি। কিন্তু বিক্রি কম। মানুষ কিনতে আসে কম। আগে গরিব মানুষও মাংস কিনতে আসত। এখন তেমন আসে না। এমনকি মধ্যবিত্তরাও কম আসে। মাছ কিনে চলে যায়। ফলে ব্যবসা আগের মতো নেই।’
গরিব মানুষ মাংস কিনবে কী করে, চাল কেনা নিয়েই তো তার নাভিশ্বাস উঠছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে খাওয়াই কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানালেন চানাচুর বিক্রেতা রাসেল। তিনি বলেন, ‘মাগুরা আসি সেই ৯ কিলোমিটার দূরের কামারখালী থেকা। সারা দিন বিক্রি করে যা পাই, তাতে চাল কিনে বাড়ি যাই। কিন্তু মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৬ টাকা বেড়েছে দুই সপ্তাহ। সংসারে প্রতিদিন ৩ কেজি চাল লাগে। প্রতিদিন এত চাল কিনলে তো পুঁজিই থাকব না। চানাচুর তৈরির মালামাল কিনতে গেলে চাল কম কিনতে হয়। খাওয়া কমাই দিছি। কী করব বলেন? অন্য পেশায় তো যাওয়ার বয়স নাই।’
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪