তাছনিম চাকলাদার
আজ সকালে কর্মব্যস্ত শহর থেকে যখন কিছুদিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছিলাম, সকাল থেকেই মনটা খুব ভালো ছিল। বেশ তাড়াহুড়ো করে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে যখন পৌঁছালাম, তখন ট্রেনটা স্টেশনেই দাঁড়িয়েছিল। ট্রেনে উঠে বসলাম জানালার পাশের সিটটায়। বরাবরই আমার জানালার পাশের সিটে বসতে ভালো লাগে। ট্রেনটা জোরে হুইসেল দিয়ে ছেড়ে দিল। গন্তব্য—জামালপুর, সরিষাবাড়ী।
ট্রেনটা এক–দুটি স্টেশন পেরিয়ে গন্তব্যের দিক এগোতে থাকে। ট্রেন জামালপুর স্টেশনে আসার কিছু সময় পর দু–তিন সিট পর থেকে একটা বাজনার আওয়াজ পেলাম। বাজনাটা পরিচিত। শুনেই বোঝা যাচ্ছে কোথাও বেজে চলেছে মন্দিরা। সঙ্গে কিছুটা কাঁপা কাঁপা গলায় ভারি সুন্দর গানও শোনা যাচ্ছে। সিট থেকে উঠে একটু এগিয়ে গেলাম কী হচ্ছে দেখার জন্য। দেখি, ষাটোর্ধ্ব এক লোক গান গাইছেন গলা ছেড়ে। দেরি না করে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে গানটা রেকর্ড করে ফেললাম। এই বেশ ভালো হয়েছে। আগে হলে হয়তো এই সুর মাথায় বা মনে গুঁজে বাড়ি ফিরতে হতো। স্মৃতির ওপরই নির্ভর করত ফের সেই সুর শোনার বিষয়টি। এখন প্রযুক্তি কত কিছু সহজ করে দিয়েছে।
বেশ দরদ দিয়ে গান গাইছেন। খালি গা। কী মধুর তাঁর গানের কণ্ঠ। বয়সের কারণে মাঝেমধ্যে সুর ছুটে যাচ্ছে বলে মনে হলো। কিন্তু দরদের অভাব নেই। এ এক অন্য রকম বিষয়।
গান শুনতে শুনতেই চোখ গেল তাঁর পিঠ ও পেটের দিকটায়। খানিকটা জায়গাজুড়ে পোড়া দাগ। হৃদয় পুড়িয়েই সুর হয়, এ তো জানা। তাঁর সুরেও রয়েছে পোড়খাওয়া জীবনের আঁচ। কিন্তু এই পোড়া দাগ তো তেমন পোড়ার কথা বলছে না। বলছে, সত্যিই একদিন তিনি আগুনের ছোঁয়াচ নিয়েছিলেন; হয়তো অনিচ্ছায়। জানতে মন উসখুস করতে শুরু করল। কথা শুরুও হলো একসময়। নাম বললেন, ‘পোড়ামানিক’।
বললাম, ‘পোড়ামানিক কি আপনার পুরো নাম?’
‘না, আমার নাম মানিক। শরীর পুড়ে গেছে, তাই সবাই পোড়ামানিক বলে ডাকে।’
‘শরীর কীভাবে পুড়ল?’
‘ছোটবেলায় পুড়ছে, পাঁচ–সাত বছর বয়স যখন। বেশি কিছু মনে নাই আমার। ছোট ছিলাম তহন।’
‘আপনার গানের গলা তো ভারি সুন্দর। কত দিন ধরে গান করেন?’
‘গান করি বিগত নয়–দশ বছর ধরে। তারও বেশি হতে পারে।’
‘আপনি কি শুধু ট্রেনে গান শোনান? নাকি অন্য কোথাও গান শোনান?’
‘না, আমি শুধু ট্রেনেই গান শোনাই।’
‘আপনি হাতে যেটা বাজাচ্ছেন, সেটার নাম কী?’
‘এটার নাম ফুলকাঁসার ঝুড়ি।’ হাতের মন্দিরাটি দেখিয়ে বললেন।
পোড়ামানিকের চোখে এই মন্দিরাই ফুলকাঁসার ঝুড়ি। কী সুন্দর নাম!
‘আপনি আর কী করেন, মানে সংসার চলে কীভাবে?’
‘নাহ, আর কিছু করি না, এই ট্রেনে গান গেয়ে টাকা পাই, এটা দিয়েই সংসার চলে।’
‘ট্রেনে গান গেয়ে কেমন টাকা পান?’
‘পাই ভালোই। কেউ দেয় পাঁচ টাকা, কেউ দেয় ৫০ টাকা, আবার কেউ কেউ খুশি হয়ে ৫০০ টাকাও দেয়। আবার অনেকে চার আনা পয়সাও দেয় না।’
‘গান গাওয়ার আগে কী করতেন?’
‘এর আগে কিছুই করতাম না। মাঝে মাঝে লোকজন এক জায়গায় পাইলে তাগোরে মনের আনন্দে গান শুনাইতাম। এহন প্যাটের টানে ট্রেনে ট্রেনে গান গেয়ে বেড়াই।’
‘শুধু কি পেটের টানে গান করেন? নাকি নিজের মনের ইচ্ছাও আছে?’
‘না, পেটের টান তো আছেই। কিন্তু গান গাইতে আমার ভালোও লাগে, আর দুই কাজ একসঙ্গে হয়ে যায়। মনেরও শান্তি, পেটেরও শান্তি।’
আলাপ আরও এগোনো যেত হয়তো। কিন্তু তাতে ষাটোর্ধ্ব পোড়ামানিকের মন ও পেটের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারত। আর নাগরিক জীবনে সময়ের অভাব বলে তো একটা কথা আছেই।
আজ সকালে কর্মব্যস্ত শহর থেকে যখন কিছুদিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছিলাম, সকাল থেকেই মনটা খুব ভালো ছিল। বেশ তাড়াহুড়ো করে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে যখন পৌঁছালাম, তখন ট্রেনটা স্টেশনেই দাঁড়িয়েছিল। ট্রেনে উঠে বসলাম জানালার পাশের সিটটায়। বরাবরই আমার জানালার পাশের সিটে বসতে ভালো লাগে। ট্রেনটা জোরে হুইসেল দিয়ে ছেড়ে দিল। গন্তব্য—জামালপুর, সরিষাবাড়ী।
ট্রেনটা এক–দুটি স্টেশন পেরিয়ে গন্তব্যের দিক এগোতে থাকে। ট্রেন জামালপুর স্টেশনে আসার কিছু সময় পর দু–তিন সিট পর থেকে একটা বাজনার আওয়াজ পেলাম। বাজনাটা পরিচিত। শুনেই বোঝা যাচ্ছে কোথাও বেজে চলেছে মন্দিরা। সঙ্গে কিছুটা কাঁপা কাঁপা গলায় ভারি সুন্দর গানও শোনা যাচ্ছে। সিট থেকে উঠে একটু এগিয়ে গেলাম কী হচ্ছে দেখার জন্য। দেখি, ষাটোর্ধ্ব এক লোক গান গাইছেন গলা ছেড়ে। দেরি না করে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে গানটা রেকর্ড করে ফেললাম। এই বেশ ভালো হয়েছে। আগে হলে হয়তো এই সুর মাথায় বা মনে গুঁজে বাড়ি ফিরতে হতো। স্মৃতির ওপরই নির্ভর করত ফের সেই সুর শোনার বিষয়টি। এখন প্রযুক্তি কত কিছু সহজ করে দিয়েছে।
বেশ দরদ দিয়ে গান গাইছেন। খালি গা। কী মধুর তাঁর গানের কণ্ঠ। বয়সের কারণে মাঝেমধ্যে সুর ছুটে যাচ্ছে বলে মনে হলো। কিন্তু দরদের অভাব নেই। এ এক অন্য রকম বিষয়।
গান শুনতে শুনতেই চোখ গেল তাঁর পিঠ ও পেটের দিকটায়। খানিকটা জায়গাজুড়ে পোড়া দাগ। হৃদয় পুড়িয়েই সুর হয়, এ তো জানা। তাঁর সুরেও রয়েছে পোড়খাওয়া জীবনের আঁচ। কিন্তু এই পোড়া দাগ তো তেমন পোড়ার কথা বলছে না। বলছে, সত্যিই একদিন তিনি আগুনের ছোঁয়াচ নিয়েছিলেন; হয়তো অনিচ্ছায়। জানতে মন উসখুস করতে শুরু করল। কথা শুরুও হলো একসময়। নাম বললেন, ‘পোড়ামানিক’।
বললাম, ‘পোড়ামানিক কি আপনার পুরো নাম?’
‘না, আমার নাম মানিক। শরীর পুড়ে গেছে, তাই সবাই পোড়ামানিক বলে ডাকে।’
‘শরীর কীভাবে পুড়ল?’
‘ছোটবেলায় পুড়ছে, পাঁচ–সাত বছর বয়স যখন। বেশি কিছু মনে নাই আমার। ছোট ছিলাম তহন।’
‘আপনার গানের গলা তো ভারি সুন্দর। কত দিন ধরে গান করেন?’
‘গান করি বিগত নয়–দশ বছর ধরে। তারও বেশি হতে পারে।’
‘আপনি কি শুধু ট্রেনে গান শোনান? নাকি অন্য কোথাও গান শোনান?’
‘না, আমি শুধু ট্রেনেই গান শোনাই।’
‘আপনি হাতে যেটা বাজাচ্ছেন, সেটার নাম কী?’
‘এটার নাম ফুলকাঁসার ঝুড়ি।’ হাতের মন্দিরাটি দেখিয়ে বললেন।
পোড়ামানিকের চোখে এই মন্দিরাই ফুলকাঁসার ঝুড়ি। কী সুন্দর নাম!
‘আপনি আর কী করেন, মানে সংসার চলে কীভাবে?’
‘নাহ, আর কিছু করি না, এই ট্রেনে গান গেয়ে টাকা পাই, এটা দিয়েই সংসার চলে।’
‘ট্রেনে গান গেয়ে কেমন টাকা পান?’
‘পাই ভালোই। কেউ দেয় পাঁচ টাকা, কেউ দেয় ৫০ টাকা, আবার কেউ কেউ খুশি হয়ে ৫০০ টাকাও দেয়। আবার অনেকে চার আনা পয়সাও দেয় না।’
‘গান গাওয়ার আগে কী করতেন?’
‘এর আগে কিছুই করতাম না। মাঝে মাঝে লোকজন এক জায়গায় পাইলে তাগোরে মনের আনন্দে গান শুনাইতাম। এহন প্যাটের টানে ট্রেনে ট্রেনে গান গেয়ে বেড়াই।’
‘শুধু কি পেটের টানে গান করেন? নাকি নিজের মনের ইচ্ছাও আছে?’
‘না, পেটের টান তো আছেই। কিন্তু গান গাইতে আমার ভালোও লাগে, আর দুই কাজ একসঙ্গে হয়ে যায়। মনেরও শান্তি, পেটেরও শান্তি।’
আলাপ আরও এগোনো যেত হয়তো। কিন্তু তাতে ষাটোর্ধ্ব পোড়ামানিকের মন ও পেটের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারত। আর নাগরিক জীবনে সময়ের অভাব বলে তো একটা কথা আছেই।
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪