জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
পড়ন্ত বিকেলে বনশ্রীর ৩ নম্বর রোডের এক কোণে ল্যাম্পপোস্টের নিচে যিনি বসে আছেন তাঁর নাম শহীদ মিয়া। সামনে দুটো ঝুড়ি, তাতে তাঁর ভাষায়, ‘শাকপাতা’। দেখে বোঝা যাচ্ছে, আজকের ব্যবসা মোটেই ভালো হয়নি।
কাছে গেলে তাকালেন। কথা বলা যাবে কি না, জিজ্ঞেস করলে সম্মতি দিলেন কোনো কিছু না ভেবেই।
‘কেমন আছেন? আজকে ব্যবসা কেমন হলো?’
‘আরও কিছুক্ষণ বইসা থাকব, আরও কিছু বিক্রি হইতে পারে!’
‘লকডাউনের সময় কোথায় ছিলেন?’
‘লকডাউনে তো ব্যবসা হয় নাই। দেশে চইলা গেছিলাম, জামালপুরে।’
‘সেখানে কাজ পেয়েছিলেন?’
আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন, যেন সেই চাহনি দিয়ে বোঝাতে চাইলেন, এ রকম আহাম্মকি প্রশ্ন জীবনে হয়তো প্রথম শুনেছেন।
‘আমারে কাজ দিব কেডা? বয়স হইছে না?’
এই কথাটা আমার মাথায় আসেনি। বয়স হয়ে গেলে আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ কর্মহীন থাকেন, স্রেফ তাঁকে অবহেলা করা হয় বলে। সেটা সব সময় মনে থাকে না।
‘তাহলে বাড়ি গেলে কী করেন?’
‘কষ্টেসৃষ্টে থাকি। ধার করি, কর্জ করি।’
‘সেই ধার শোধ করেন কী করে?’
‘আবার ঢাকায় আইসা কাম করি।’
‘বাড়িতে কে কে আছে?’
‘দুই ছেলে আর এক মেয়ে!’
‘আর ভাবি?’
‘সে আর আমি এক সাথে ঢাকায় থাকি! তার নাম শাহিনুর।’
‘ছেলেমেয়েরা কই থাকে?’
‘ওরা তো জামালপুরেই থাকে। আমার মেয়েটা ছেলে দুইটারে দেইখা রাখে! মেয়ের বিয়া দিসি।’
ব্যাপারটা বুঝতে একটু কষ্ট হয় আমার। সেটা বুঝতে পারেন শহীদ মিয়া। বলেন, ‘মেয়ে তার জামাইরে নিয়া থাকে। আমার ছেলে দুইটাও ওদের সাথেই থাকে।’
‘তার মানে লকডাউন শেষে আবার ঢাকায় এসেছেন?’
‘হ্যাঁ!’
‘ব্যবসা করে কত লাভ হয়?’
‘এই মনে করেন ৪০০-৫০০ টাকা!’
‘এখনো তো এতগুলো শাকসবজি বিক্রি হয়নি, বিক্রি না হলে কী করবেন?’
‘বাড়ি নিয়া যাব। কিছু শাকসবজি নষ্ট হবে।’
‘শাকসবজি কেনেন কোত্থেকে?’
‘ত্রিমোহনী আছে না, সেইখান থেকে!’
‘বাড়িতে কী খান?’
এটাও ছিল কেমন যেন আহাম্মকি প্রশ্ন। বাংলাদেশের মানুষ এই প্রশ্নের উত্তরে সব সময়ই বলে ‘ভাত খাই’। আসলে আমি জানতে চেয়েছিলাম কী দিয়ে ভাত খান।
‘শাকটাক সবজিটবজি খাই, মাছ খাই।’
সরু রাস্তাটায় যন্ত্রযান আর অযান্ত্রিক যান চলছিল। হাঁটতে থাকা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। করোনা যেন কোনোভাবেই স্পর্শ করতে পারেনি এই মানুষদের। রাস্তা দেখে মনে হচ্ছিল স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু হয়ে গেছে। তবে অনেকের মুখে মাস্ক দেখে মনে হচ্ছিল, কিছুটা সতর্কতা হয়তো এখনো আছে। কিন্তু এই জনস্রোতের কেউ শহীদ মিয়ার কাছে এসে থামছে না, কেউ কিনে নিচ্ছে না তাঁর শাকপাতা।
‘আচ্ছা এই যে এত দিন বেঁচে রইলেন, জীবনের মানে কী, সেটা কি বলতে পারেন?’ প্রশ্নটা করে তাকাই শহীদ মিয়ার দিকে।
খুবই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শহীদ মিয়া উত্তর দিলেন, ‘জীবনের মানে হইল কষ্ট!’
‘তাহলে জীবনে সুখ কীভাবে পেতে হয়?’
‘আমি কেমনে বলব? আপনি কন দেহি সুখটা কী?’
জীবনে এই প্রথম পাল্টা প্রশ্নে একেবারে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম!
পড়ন্ত বিকেলে বনশ্রীর ৩ নম্বর রোডের এক কোণে ল্যাম্পপোস্টের নিচে যিনি বসে আছেন তাঁর নাম শহীদ মিয়া। সামনে দুটো ঝুড়ি, তাতে তাঁর ভাষায়, ‘শাকপাতা’। দেখে বোঝা যাচ্ছে, আজকের ব্যবসা মোটেই ভালো হয়নি।
কাছে গেলে তাকালেন। কথা বলা যাবে কি না, জিজ্ঞেস করলে সম্মতি দিলেন কোনো কিছু না ভেবেই।
‘কেমন আছেন? আজকে ব্যবসা কেমন হলো?’
‘আরও কিছুক্ষণ বইসা থাকব, আরও কিছু বিক্রি হইতে পারে!’
‘লকডাউনের সময় কোথায় ছিলেন?’
‘লকডাউনে তো ব্যবসা হয় নাই। দেশে চইলা গেছিলাম, জামালপুরে।’
‘সেখানে কাজ পেয়েছিলেন?’
আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন, যেন সেই চাহনি দিয়ে বোঝাতে চাইলেন, এ রকম আহাম্মকি প্রশ্ন জীবনে হয়তো প্রথম শুনেছেন।
‘আমারে কাজ দিব কেডা? বয়স হইছে না?’
এই কথাটা আমার মাথায় আসেনি। বয়স হয়ে গেলে আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ কর্মহীন থাকেন, স্রেফ তাঁকে অবহেলা করা হয় বলে। সেটা সব সময় মনে থাকে না।
‘তাহলে বাড়ি গেলে কী করেন?’
‘কষ্টেসৃষ্টে থাকি। ধার করি, কর্জ করি।’
‘সেই ধার শোধ করেন কী করে?’
‘আবার ঢাকায় আইসা কাম করি।’
‘বাড়িতে কে কে আছে?’
‘দুই ছেলে আর এক মেয়ে!’
‘আর ভাবি?’
‘সে আর আমি এক সাথে ঢাকায় থাকি! তার নাম শাহিনুর।’
‘ছেলেমেয়েরা কই থাকে?’
‘ওরা তো জামালপুরেই থাকে। আমার মেয়েটা ছেলে দুইটারে দেইখা রাখে! মেয়ের বিয়া দিসি।’
ব্যাপারটা বুঝতে একটু কষ্ট হয় আমার। সেটা বুঝতে পারেন শহীদ মিয়া। বলেন, ‘মেয়ে তার জামাইরে নিয়া থাকে। আমার ছেলে দুইটাও ওদের সাথেই থাকে।’
‘তার মানে লকডাউন শেষে আবার ঢাকায় এসেছেন?’
‘হ্যাঁ!’
‘ব্যবসা করে কত লাভ হয়?’
‘এই মনে করেন ৪০০-৫০০ টাকা!’
‘এখনো তো এতগুলো শাকসবজি বিক্রি হয়নি, বিক্রি না হলে কী করবেন?’
‘বাড়ি নিয়া যাব। কিছু শাকসবজি নষ্ট হবে।’
‘শাকসবজি কেনেন কোত্থেকে?’
‘ত্রিমোহনী আছে না, সেইখান থেকে!’
‘বাড়িতে কী খান?’
এটাও ছিল কেমন যেন আহাম্মকি প্রশ্ন। বাংলাদেশের মানুষ এই প্রশ্নের উত্তরে সব সময়ই বলে ‘ভাত খাই’। আসলে আমি জানতে চেয়েছিলাম কী দিয়ে ভাত খান।
‘শাকটাক সবজিটবজি খাই, মাছ খাই।’
সরু রাস্তাটায় যন্ত্রযান আর অযান্ত্রিক যান চলছিল। হাঁটতে থাকা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। করোনা যেন কোনোভাবেই স্পর্শ করতে পারেনি এই মানুষদের। রাস্তা দেখে মনে হচ্ছিল স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু হয়ে গেছে। তবে অনেকের মুখে মাস্ক দেখে মনে হচ্ছিল, কিছুটা সতর্কতা হয়তো এখনো আছে। কিন্তু এই জনস্রোতের কেউ শহীদ মিয়ার কাছে এসে থামছে না, কেউ কিনে নিচ্ছে না তাঁর শাকপাতা।
‘আচ্ছা এই যে এত দিন বেঁচে রইলেন, জীবনের মানে কী, সেটা কি বলতে পারেন?’ প্রশ্নটা করে তাকাই শহীদ মিয়ার দিকে।
খুবই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শহীদ মিয়া উত্তর দিলেন, ‘জীবনের মানে হইল কষ্ট!’
‘তাহলে জীবনে সুখ কীভাবে পেতে হয়?’
‘আমি কেমনে বলব? আপনি কন দেহি সুখটা কী?’
জীবনে এই প্রথম পাল্টা প্রশ্নে একেবারে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম!
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪