Ajker Patrika

২০২৪ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

অনলাইন ডেস্ক
জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস ক্যাপলার (বাঁয়ে) এবং সংগীতজ্ঞ বেটোফেন। ছবি: সিএনএন
জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস ক্যাপলার (বাঁয়ে) এবং সংগীতজ্ঞ বেটোফেন। ছবি: সিএনএন

দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২৫ সাল। তবে বিদায়ী বছর ২০২৪ সালে বিজ্ঞানীরা ইতিহাসের পরিচিত ও অজ্ঞাত ব্যক্তিত্বদের রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করেছেন। প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনেক বিষয় নতুনভাবে জানা গেছে। এতে কিছু বিষয়ে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত ধারণার পরিবর্তন হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ—৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর এর ছাইয়ে ঢাকা পড়া পম্পেই শহরের ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পম্পেই নগরীর প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শনে শুরুতে যাদের মা ও ছেলে বলে মনে করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে আসলে কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে এক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি মৃত্যুর মুহূর্তে এক শিশুকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।

এভাবে প্রাচীন ডিএনএ গবেষণা দীর্ঘদিনের বেশ কিছু বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করেছে। চলতি বছর আরও যেসব নতুন রহস্য উন্মোচন হয়েছে তাঁর মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে, ডেনমার্কের ভিত্রুপ এলাকার একটি পিট বগে পাওয়া ৫ হাজার ২০০ বছর আগের এক ব্যক্তির কঙ্কাল নিয়ে প্রচলিত ধারণার কথা।

গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ভিত্রুপ ম্যান’ নামে পরিচিত সেই ব্যক্তি প্রস্তর যুগের অভিবাসী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ হতে পারে কোনো বলিদান কিংবা আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনা।

কঙ্কালটির দাঁতের এনামেল, ক্যালসিয়াম এবং কোলাজেন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, তিনি একজন শিকারি সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। তাঁর খাদ্যতালিকায় ছিল মাছ, সিল, এমনকি তিমিও। পরবর্তীতে তিনি ডেনমার্কে এসে কৃষিজীবী হয়ে যান এবং ভেড়া ও ছাগল খেতে শুরু করেন।

এই গবেষণায় পাওয়া তথ্যে বোঝা যায়, ভিত্রুপ ম্যান ডেনমার্কের প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী ছিলেন এবং তাঁর জীবনের ভূগোল ও খাদ্যতালিকার বিশাল পরিবর্তন ঘটেছিল।

নরওয়ের ‘ওয়েল-ম্যান’ রহস্যেরও সমাধান মিলেছে এবার। এটি মূলত নরওয়ের ভেরেসবর্গ দুর্গের একটি কুয়ার ভেতর পাওয়া কঙ্কাল। এটি ৮০০ বছরের পুরোনো নর্স কাহিনির সঙ্গে সম্পর্কিত।

গবেষণায় জানা গেছে, ওই ওয়েল-ম্যান ছিলেন আসলে একটি আক্রমণকারী সেনাবাহিনীর সৈনিক। তাঁকে কুয়ার পানিতে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল। মূলত রেডিওকার্বন ডেটিং এবং ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমেই জানা গেছে, ওই ব্যক্তি স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন না, বরং দক্ষিণ নরওয়ের কোনো অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন তিনি।

‘হারিয়ে যাওয়া রাজপুত্র’ রহস্যেরও সমাধান মিলেছে ২০২৪-এ। ১৯ শতকের জার্মানিতে ‘হারিয়ে যাওয়া রাজপুত্র’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন কাসপার হাউসার নামে এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করা হতো, তিনি কোনো রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন। তবে এই বছর তাঁর চুলের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাঁর মাতৃকুলের ডিএনএ বাডেন রাজপরিবারের সঙ্গে মেলে না।

কাছাকাছি ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে সংগীতজ্ঞ বেটোফেনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু তথ্য উন্মোচিত হয়েছে এবার। বিখ্যাত সুরকার লুডভিগ ভান বেটোফেন ১৮২৭ সালে ৫৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর চুলের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তাঁর শরীরে উচ্চমাত্রায় সিসা, আর্সেনিক এবং পারদ ছিল। এগুলো দানিউব নদীর দূষিত মাছ এবং সিসাযুক্ত মদ থেকে তার শরীরে জমা হয়েছিল।

বেটোফেনের স্বাস্থ্য সমস্যা তার সুরসৃষ্টিতে কীভাবে প্রভাব ফেলেছিল তা বোঝার জন্য এই গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ।

এবার কলোনিয়াল আমলেরও কিছু রহস্য উন্মোচন হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের পরিবারের অচিহ্নিত কবর নিয়ে গবেষণায় ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁর ভাই স্যামুয়েলের পরিবারের কয়েকজন সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে।

বেটোফেনের চুল। ছবি: সিএনএন
বেটোফেনের চুল। ছবি: সিএনএন

একই সময়ে ভার্জিনিয়ার জেমস্টাউনের একটি কবরস্থানের গবেষণায় ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রথম গভর্নর থমাস ওয়েস্টের পরিবারের একটি গোপন কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা কবরস্থানের দুটি পুরুষ কঙ্কাল থেকে ডিএনএ বিশ্লেষণ করেছেন এবং উভয় পুরুষই আলাদা মাতৃ সূত্রে ওয়েস্টের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। পুরুষদের মধ্যে একজন ছিলেন ক্যাপ্টেন উইলিয়াম ওয়েস্ট। গভর্নর ওয়েস্টের অবিবাহিত খালার গর্ভে অবৈধভাবে জন্ম হয়েছিল উইলিয়ামের। তবে তাঁর জন্মের বিবরণটি ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবারের বংশগত রেকর্ড থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। গবেষকেরা খুঁজে পেয়েছেন, তাঁর প্রকৃত পিতা-মাতার রহস্যই তাঁকে আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে উপনিবেশে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

আরেকটি গবেষণায় ১৬ শতকের অজানা তথ্য উন্মোচন করেছে। ১৬ শতকে ডেনিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গোপন অ্যালকেমিক কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন। তাঁর ল্যাব থেকে পাওয়া ভগ্নাংশ বিশ্লেষণ করে নিকেল, তামা, সিসা এবং টাংস্টেনের মতো উপাদান শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এসব উপাদান সেই যুগেও ছিল, তা বিজ্ঞানীদের কাছেও অকল্পনীয়।

এ ছাড়াও জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার ১৬০৭ সালে সূর্যের গায়ে দাগের যে চিত্র তৈরি করেছিলেন, তা দিয়ে এই বছর সূর্যের সোলার সাইকেল সম্পর্কে নতুন তথ্য জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত