শব্দের দেড়গুণ গতিতে ‘নিঃশব্দে’ চলবে মার্কিন যুদ্ধবিমান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ৫৫
Thumbnail image

শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে চলা যুদ্ধবিমানের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছেই এসব সুপারসনিক যুদ্ধবিমান রয়েছে। এসব বিমানের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো—প্রচণ্ড শব্দ। এই বিষয়টি কাটিয়ে উঠতে লকহিড-মার্টিন ও নাসা যৌথভাবে একটি যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে যা প্রায় নিঃশব্দে চলতে পারে। তাও আবার শব্দের বেগের চেয়ে ১ দশমিক ৪ গুণ বেশি গতিতে। সেই হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় এই বিমানটির গতি ১ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটারেরও বেশি। 

মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড-মার্টিন ও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার তৈরি এই বিমানটির নাম দেওয়া হয়েছে এক্স-৫৯ কোয়েস্ট। এই বিমানটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অন্যান্য সুপারসনিক বিমানের (যেগুলো শব্দের চেয়েও বেশি গতিতে চলে) মতো খুব বেশি শব্দ করে না। এক প্রকার নিঃশব্দেই চলাচল করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নাসার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে।

সাধারণত কোনো সুপারসনিক বিমান যখন চলাচল করে তখন সেটির ইঞ্জিন থেকে প্রচণ্ড শব্দ নির্গত হয়। এর ফলে অনেক সময় সৃষ্টি হয় সনিক বুম বা শব্দ নিনাদ। এই সনিক বুমের কারণে অনেক সময় সাধারণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নাসা এবং লকহিড-মার্টিনের গবেষকেরা মূলত সেই বিষয়টি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। এরই মধ্যে গত শুক্রবার এক্স-৫৯ বিমানটির পরীক্ষামূলক উড্ডয়নও করিয়েছেন তারা। 

নাসা ও লকহিড-মার্টিনের তৈরি সেই যুদ্ধবিমান। ছবি: নাসানাসার নিবন্ধে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, এই ধরনের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্য আগামী দিনে এ ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করে বাণিজ্যিক বিমান তৈরির কাজে অনেক সহায়তা করবে এবং এর ফলে শব্দের গতিতে যাত্রীবাহী বিমান তৈরির বিষয়টি আরও একধাপ এগিয়ে গেল।

নাসার ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্যাম মেলরয় বলেছেন, ‘এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে কেবল নাসা ও এক্স-৫৯ টিমের কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতার মাধ্যমে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আমরা একটি উচ্চাভিলাষী ধারণা থেকে বাস্তবে চলে এসেছি। নাসা ও এক্স-৫৯ টিম আমাদের ভ্রমণের উপায় ও ধারণা পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। আমাদের আরও অনেক কম সময়ে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে।’

নাসা ও লকহিডের তৈরি এই বিমানটি প্রায় ১০০ ফুট (৯৯ দশমিক ৭ ফুট) দীর্ঘ এবং ২৯ দশমিক ৫ ফুট চওড়া। এই বিমানটির দৈর্ঘ্যের এক-তৃতীয়াংশই এর তীক্ষ্ণ নাক। মূলত এই নাকটিই এর সামনে থেকে আসা শব্দ তরঙ্গের শক ওয়েভকে ভেঙে দেবে। মূলত এই শক ওয়েভের কারণেই সনিক বুম তৈরি হয়। বিমানটির এমন গঠনের কারণে এর ককপিট মূল দেহের প্রায় মাঝ বরাবর অবস্থিত। 

এই বিমানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো—অন্যান্য সুপারসনিক বিমানের মতো এর সামনে বরাবর কোনো জানালা নেই যা দিয়ে পাইলট সামনে দেখতে পাবেন। তার বদলে দুপাশে দুটি জানালা রাখা হয়েছে যা দিয়ে তিনি অনায়াসে সামনের অংশটা দেখতে পাবেন। এ ছাড়া ককপিটের ঠিক সামনে উচ্চ রেজুলেশনের এটি ৪কে ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। যা দিয়ে ভেতরে বসেই পাইলট সামনের বাইরের অংশ দেখতে পাবেন।

আরেকটি মজার বিষয় হলো এই বিমানটির ইঞ্জিন মূল দেহের নিচের দিকে নয় বরং ওপরের দিকে অবস্থিত এবং বিমানের তলদেশটি অনেক মসৃণ ও সমান করে রাখা হয়েছে যাতে করে শব্দ দ্রুত কেটে যেতে পারে শক ওয়েভ যাতে ইঞ্জিনের তরঙ্গের সঙ্গে মিশে সনিক বুম তৈরি করতে না পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত