Ajker Patrika

৩৬০ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল মঙ্গলে, উপকূলরেখা শনাক্ত করল চীনা যান

অনলাইন ডেস্ক
মঙ্গলের মাটিতে চীনা ঝুরং রোভার। ছবি: চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
মঙ্গলের মাটিতে চীনা ঝুরং রোভার। ছবি: চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন

পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ মঙ্গলে আজ থেকে ৩৬০ কোটি বছর আগে বিশাল এক মহাসাগর ছিল এবং তার ঢেউ সৈকতে আছড়ে পড়ত। সম্প্রতি এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে নতুন গবেষণা। চীনের ঝুরং রোভার ২০২১-২২ সাল সময়ের মধ্যে মঙ্গলের ইউটোপিয়া প্লানিশিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভূগর্ভস্থ রাডার ব্যবহার করে সম্ভাব্য এই প্রাচীন মহাসাগরের উপকূলরেখার সন্ধান পেয়েছে।

মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, গবেষণাটি সম্প্রতি প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, ঝুরং রোভার ইউটোপিয়া প্লানিশিয়ার রিজ তথা শৈলশিরাগুলোর ওপর দিয়ে চলার সময় ভূগর্ভে ৮০ মিটার পর্যন্ত গভীরে রাডার পাঠায়। ১০ থেকে ৩৫ মিটার গভীরতায় এটি এমন স্তরের অস্তিত্ব খুঁজে পায়, যার গঠন অনেকটাই পৃথিবীর উপকূলীয় সৈকতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

গবেষকদের মতে, এগুলো ‘ফোরশোর ডিপোজিটস’ (কোনো একটি সমুদ্র উপকূলে পানি সর্বোচ্চ যে স্তরে ওঠে ও সর্বনিম্ন যে স্তরে নামে সেখানে পলির কারণে যে অবস্থা গঠিত হয়), যা কোটি বছর ধরে সমুদ্রের ঢেউ ও জোয়ারের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে।

পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষণার সহলেখক বেনিয়ামিন কার্ডেনাস বলেন, ‘আমরা মঙ্গলের এমন স্থানগুলো চিহ্নিত করছি, যেগুলো দেখতে প্রাচীন সৈকত ও নদীর বদ্বীপের মতো। সেখানে বাতাসের প্রবাহ, ঢেউয়ের আঘাত, প্রচুর পরিমাণ বালুর উপস্থিতি ছিল—একটি আদর্শ অবকাশযাপন উপযোগী সৈকতের মতো।’

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষণার সহলেখক মাইকেল ম্যাঙ্গা বলেন, ‘এই গঠনগুলো বালিয়াড়ি, আগ্নেয়শিলা বা উল্কাপিণ্ডের আঘাতে তৈরি নয়। তখনই আমরা মহাসাগরের কথা ভাবতে শুরু করি। এগুলোর অবস্থান পুরোনো উপকূলরেখার সমান্তরালের মতো।’

এই গবেষণার ফলে মঙ্গলের জলবায়ু নিয়ে নতুন ধারণা তৈরি হয়েছে। আগে ধারণা করা হতো, মঙ্গল গ্রহ খুব দ্রুত শুষ্ক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, সেখানে কয়েক কোটি বছর ধরে উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ বিরাজ করেছিল, যা প্রাণের বিকাশের জন্য অনুকূল হতে পারে।

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষক ড. জো ম্যাকনেইল মনে করেন, এই গবেষণা মঙ্গলের উত্তরের মহাসাগর সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের তত্ত্বকে আরও শক্তিশালী করছে। তিনি বলেন, ‘যদি এসব উপকূলীয় গঠন সত্যিই কোনো প্রাচীন মহাসাগরের প্রান্তে গঠিত হয়ে থাকে, তবে তা প্রমাণ করে যে, সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে তরল পানি ছিল, যা মঙ্গলের জলবায়ু ইতিহাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

গবেষকেরা এখন মঙ্গলের সেই মহাসাগরের ঢেউ ও জোয়ারের উচ্চতা, এর স্থায়িত্ব এবং এটি কতটা বাসযোগ্য ছিল, তা নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা চালানোর পরিকল্পনা করছেন। এ ছাড়া, তাঁরা বুঝতে চান, কীভাবে মঙ্গলের জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে এর বেশির ভাগ পানি মহাকাশে হারিয়ে গেছে এবং কিছু ভূগর্ভস্থ বরফ ও খনিজের সঙ্গে মিশে গেছে।

ফরাসি গবেষক ফ্রাঁসোয়া ফরগে যদিও মনে করেন, এই গবেষণার উপসংহার সম্পূর্ণ নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, এই পর্যবেক্ষণগুলোকে শুধু মহাসাগরীয় উপকূলরেখা বলেই ব্যাখ্যা করা যায়। এগুলো সম্ভবত বালিয়াড়ির কারণে তৈরি হয়েছে, যা মঙ্গলে বেশ স্বাভাবিক।’

তবে বেশির ভাগ গবেষকই মনে করছেন, ঝুরং রোভারের পাঠানো এই তথ্য মঙ্গলের অতীতের জলবায়ু ও ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

নয়াদিল্লি হাসিনা আমলের দৃষ্টিভঙ্গিই ধরে রেখেছে: ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক হচ্ছে

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত