বেশি আদরে বিরক্ত হয় বিড়ালেরা: গবেষণা

প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪, ১৭: ২১
Thumbnail image

সংগীত শিল্পী টেলর সুইফটের পোষা বিড়ালটির সম্পত্তি নাকি তাঁর বয়ফ্রেন্ডের চেয়েও বেশি! বিলিয়নিয়ার এ সংগীত শিল্পীর বিড়াল নিয়ে আদিখ্যেতা সবাই জানে। সুইফট তাঁর বিড়ালটিকে এত ভালোবাসলেও বিড়ালটি তাঁকে কি পছন্দ করে? গবেষকেরা বলছেন, উত্তরটি নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘ক্যাট পিপল’ নামে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। এই ধরনের ব্যক্তিরা বিড়াল অন্তত পছন্দ করেন। তবে ক্যাট পিপলরা বিড়াল একটু বেশিই আহ্লাদ দেখান বলে মনে করে অনেকেই।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, এদের অপছন্দের তালিকায় থাকতে পারেন খোদ বিড়ালপ্রেমীরাও।

২০২১ সালে এক গবেষণায় বিড়ালদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত তা তুলে ধরা হয়েছে। এই গবেষণার প্রধান গবেষক হলেন—যুক্তরাজ্যের নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির বিড়াল কল্যাণ ও আচরণ বিজ্ঞানী ড. লরেন ফিনকা। 

গবেষণায় বলা হয়, বিড়াল সব সময় আদর নেওয়ার মুডে থাকে না। তাই বুঝতে হবে, এরা কখন আদর চায়, হুট করে কোলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ঘন ঘন স্পর্শ না করে এদের নিজেদের মতো থাকতে দিতে হবে। 

আর আদর নেওয়ার জন্য বিড়াল আগ্রহ দেখালে পেট ও লেজের অগ্রভাগ এড়িয়ে কানের অগ্রভাগ, গাল এবং চিবুকের নিচে স্পর্শ করা উচিত। আদরের এমন নিয়মগুলো মেনে চললেই কেবল তা ‘সঠিক আচরণ’ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক নয়জন সহকর্মীর সঙ্গে গবেষণাটি পরিচালনা করেন ড. ফিনকা। এই গবেষণার সঙ্গে আরও কিছু ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন। বিড়ালপ্রেমীরা এই গবেষণার পরামর্শগুলো মেনে চলছেন কি না সেটি পর্যবেক্ষণ করা হয়।

যখন-তখন আদর করতে গেলে বিড়াল বিরক্ত হতে পারে। ছবি: পেক্সেল ডটকমএই গবেষণায় থেকে বিড়ালপ্রেমীদের সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য জানা যায়। গবেষণায় বলা হয়, যারা বিড়াল সম্পর্কে অনেক জানেন ও অভিজ্ঞ হিসেবে নিজেদের দাবি করেন, তাঁরাই বিড়ালের আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষা বুঝে সঠিকভাবে আদর করার বিষয়গুলো উপেক্ষা করেন। অর্থাৎ ক্যাট পিপলরা বিড়াল স্পর্শ করার সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চলেন না। 

বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন করতে ও বিড়ালদের সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ড. ফিনকা ও তাঁর সহকর্মীরা ১১৯ জন অংশগ্রহণকারীর তথ্য নেন। অংশগ্রহণকারীদের একটি পরীক্ষাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পরীক্ষাগারে বিভিন্ন স্থানে ক্যামেরা লাগানো ছিল। অংশগ্রহণকারীরা তিনটি ভিন্ন প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন, তা ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। তবে এর আগেই বিড়ালগুলো মানুষের সঙ্গে কতটুকু বন্ধুসুলভ আচরণ করে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে বিড়ালের প্রতিটি সেশন পাঁচ মিনিট স্থায়ী ছিল। 

পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘ক্যাট পিপল’ নামে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। ছবি: ওয়ান কাইন্ড অফ এ পেট রেসকিউ ড. ফিনকা বলেন, অংশগ্রহণকারীদের শান্তভাবে পরীক্ষাগার প্রবেশ করতে ও প্রবেশদ্বারের নিকটবর্তী কোনায় বসতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা বিড়ালগুলোর সঙ্গে সাধারণভাবে যেমন আচরণ করেন তেমনটিই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে শুধু কোলে নেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পরীক্ষার পুরো সময় বসে থাকতে বলা হয়েছিল। এর ফলে বিড়ালগুলো চাইলে মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া এড়াতে পারে। 

গবেষকেরা সর্বোত্তম অনুশীলনের ওপর ভিত্তি করে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বিড়ালগুলোর মিথস্ক্রিয়া পর্যালোচনা করেন ও নম্বর দেন।

যাদের বিড়াল পোষার অভিজ্ঞতা বেশি তাঁদের প্রাণীটির আচরণে অভ্যস্ত থাকার কথা। সেই সঙ্গে এই ব্যক্তিরা বিড়ালের সঙ্গে সঠিক আচরণ করবেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অংশগ্রহণকারী বিড়ালের বিষয়ে নিজেদের বেশি অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী বলে দাবি করেন, তাঁরা প্রাণীগুলোর সঙ্গে সঠিক আচরণ করেননি। তাঁরাই স্পর্শের ক্ষেত্রে বিড়ালের পছন্দের ও অপছন্দের স্থানের পার্থক্য করতে পারেননি।

গবেষক বলেন, সঠিক আচরণ, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের স্ব–মূল্যায়নের সঙ্গে পোষা কুকুর নিয়ে আগের গবেষণায় প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণগুলোর ইতিবাচক সম্পর্কের ঘাটতি দেখা গেছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাণীর প্রতি অধিকতর সহমর্মিতার সঙ্গেও সম্পর্কিত নয়। 

গবেষণা দেখা যায়, ৫৬ থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা বিষণ্নতায় আক্রান্ত, তাঁরাই বিড়ালদের বেশি কোলে নিচ্ছিলেন ও ধরে রাখেন। এমন আচরণ বেশির ভাগ বিড়ালই পছন্দ করে না। 

এক বিবৃতিতে গবেষকেরা বলেন, অবশ্যই প্রতিটি বিড়ালের নিজস্ব পছন্দ রয়েছে। তাই মানুষের সঙ্গে কতটুকু মেলামেশা করবে প্রতিটি বিড়ালের ক্ষেত্রে তা আলাদা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত