নিজেদের রেকর্ড ভেঙেই এখন জিততে হবে পাকিস্তানকে 

ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১৮: ৩৯
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১৮: ৪০

বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড পাকিস্তানেরই। গত ১০ অক্টোবর হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বোলারদের তুলোধুনো করে ৩৪৫ রান তাড়া করে পাকিস্তান। ১০ দিন পর আজ প্রতিপক্ষ বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে ভেন্যু। বেঙ্গালুরুর চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানি বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে ৩৬৭ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। 

টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। প্রথমে ব্যাটিং পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ বেশ সাবধানী শুরু করেন। প্রথম ৪ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে অজিরা করে ২২ রান। পঞ্চম ওভারে অজিদের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যেতে পারত। ওভারের তৃতীয় বলে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে তুলে মারতে গিয়ে বল সোজা ওপরে তুলে দেন ওয়ার্নার। মিড অনে দাঁড়িয়ে থাকা উসামা মীর সহজ ক্যাচ মিস করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার দলীয় স্কোর তখন ৪.৩ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২২ রান। ওয়ার্নারের স্কোর তখন ১০। 

জীবন পাওয়ার পরও কিছুক্ষণ রয়েসয়ে খেলতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮ ওভার শেষে অজিদের স্কোর হয় ৪৩ রান। নবম ওভার থেকেই শুরু হয় তাণ্ডব। ওভারের প্রথম বলে হারিস রউফকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার মারেন ওয়ার্নার। পরের বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে অসাধারণ এক স্কুপে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটার। ওয়ার্নারের দেখাদেখি চড়াও হয়েছেন মার্শ। ওভারের শেষ তিন বলে বাউন্ডারির হ্যাটট্রিক করেন মার্শ। রউফের ওভার থেকে অজিরা নিয়েছে ২৪ রান। পরের ওভারে ইফতিখার আহমেদ বোলিং করতে এসে খরচ করেছেন ১৫ রান। প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া করেছে ৮২ রান। 

৮ রানরেটে খেলার ধারাবাহিকতা এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া দারুণভাবে বজায় রেখে চলতে থাকে। ওয়ার্নার, মার্শ-দুই ব্যাটারই ফিফটি পেয়েছেন। যে মীরের হাতে জীবন পেয়েছেন, তাঁর (মীর) ওভারেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩২ তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন ওয়ার্নার। ১৩ তম ওভারের তৃতীয় বলে মীরকে কাউ কর্নার দিয়ে চার মেরে ওয়ার্নার তুলে নেন এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ফিফটি। অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটারের ফিফটি করতে লেগেছে ৩৯ বল। ওয়ার্নারের ফিফটির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াও করে ফেলে ১০০ রান। 

ওয়ার্নারের মতো মার্শও ফিফটি পেয়েছেন মীরের ওভারে। ১৫ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মীরকে লং অফে ঠেলে দিয়ে মার্শ তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯ তম ফিফটি। ফিফটি করতে অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডারের লেগেছে ৪০ বল। ফিফটির পর আক্রমণাত্মক ও রক্ষণাত্মকের মিশেলে খেলতে থাকেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার। ৩৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করা ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি করতে খেলতে হয়েছে আরও ৪৬ বল।   ৩১ তম ওভারের চতুর্থ বলে মোহাম্মদ নওয়াজকে লং অনে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে ওয়ার্নার করেন বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। একই ওভারে সেঞ্চুরি করে ফেলেন মার্শও। ওভারের পঞ্চম বলে নওয়াজকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে মার্শ তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডারের এটা বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। 

সেঞ্চুরি করার পর আরও বিধ্বংসী হয়েছেন ওয়ার্নার ও মার্শ। একই সঙ্গে ‘মিস ফিল্ডিং’, ‘ক্যাচ মিসের’ মহড়াও দিতে থাকে পাকিস্তান। ৩৩ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মীরকে পুল করেন ওয়ার্নার। ডিপ মিড উইকেট থেকে দৌড়ে এসেও ক্যাচ ধরতে পারেননি আব্দুল্লাহ শফিক। একই সঙ্গে আঙুলেও ব্যথা পেয়েছেন শফিক। এই ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বলে ছক্কা, চার ও চার মারেন ওয়ার্নার। অবশেষে এই উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে ৩৪ তম ওভারে গিয়ে। ওভারের পঞ্চম বলে শাহিনকে ফ্লিক করতে যান মার্শ। শর্ট ফাইন লেগে এবার ক্যাচ ধরেন মীর। ১০৮ বলে ১০ চার ও ৯ ছক্কায় ১২১ রান করেন মার্শ। ওয়ার্নার, মার্শের উদ্বোধনী জুটিতে এসেছে ২০৩ বলে ২৫৯ রান। 

প্রথম উইকেট পড়ার পর উইকেটে আসেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে ওঠানো হলেও গোল্ডেন ডাক মেরেছেন তিনি। ৩৪ তম ওভারের শেষ বলে শাহিনকে লেগ সাইডে তুলে মারতে যান ম্যাক্সওয়েল। টপ এজ হওয়া বল মিড অফে ক্যাচ ধরেন বাবর আজম। পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৪৩ ওভারে ২ উইকেটে ২৫৯ রান। ঠিক তার পরের ওভারে আরও একবার জীবন দেয় পাকিস্তান। মীরের বলে স্মিথ ডিফেন্ড করতে প্রথম স্লিপে চলে যায় বাবরের কাছে। বাবর সুযোগ পেয়েও তা তালুবন্দী করতে পারেননি। 

সুযোগ পাওয়া স্মিথ অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৯ বলে ৭ রান করা স্মিথ কট এন্ড বোল্ডের শিকার হয়েছেন মীরের। স্মিথের পর ওয়ার্নারও দ্রুত বিদায় নিয়েছেন। ৪৩ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে হারিসকে তুলে মারতে যান ওয়ার্নার। বদলি ফিল্ডার হিসেবে নামা শাদাব খান লং অনে সহজ ক্যাচ ধরেন। ১২৪ বলে ১৪ চার ও ৯ ছক্কায় ১৬৩ রান করেন ওয়ার্নার। যা অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোর। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৪২.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৩২৫ রান। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর সঙ্গে সঙ্গে রানের চাকাও ধীর গতির হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। ৩৮ রানে যোগ করতে আরও ৫ উইকেট হারায় অজিরা। যেখানে ইনিংসের ৩৪ তম ওভার ও শেষ ওভার-দুইবার হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন শাহিন। হ্যাটট্রিক না হলেও ৫ উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত