Ajker Patrika

‘মাহমুদউল্লাহর বড় গুণ ছিল তার নীরবতা’

হাবিবুল বাশার সুমন  
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৫, ২২: ২৭
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ছবি: এএফপি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ছবি: এএফপি

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ—বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফল ও দীর্ঘ ক্যারিয়ার গড়া এক ক্রিকেটার। সে স্থিতিশীলতার প্রতীক। যখনই দল চাপে পড়েছে, মাহমুদউল্লাহ ছিল এক ভরসার নাম যে সামনে থেকে দলকে টেনে তুলত। তার ব্যাটিং শুধুই রান করা নয়, বরং দলকে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এগিয়ে নেওয়া, বিরুদ্ধ স্রোতে লড়াই করা এবং ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা—এসবই তাকে আলাদা করেছে অন্যদের চেয়ে।

মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারে অনেক স্মরণীয় ইনিংস থাকলেও ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা তার সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ২২৪ রানের সেই জুটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা। রানের তাড়া করার মুহূর্ত। মাহমুদউল্লাহর অবদান সেদিন শুধু একটি সেঞ্চুরি ছিল না বরং এটি ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার একটি নিদর্শন। বড় মঞ্চে কীভাবে ম্যাচ জিততে হয়, কীভাবে চাপের মধ্যে পারফর্ম করতে হয়—সে সেটাই দেখিয়েছিলেন।

মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ মানেই ছিল নির্ভরতা। অনেক ম্যাচেই দেখা গেছে, যখন শুরুর ব্যাটাররা ব্যর্থ, তখন মাহমুদউল্লাহ এসে পরিস্থিতি সামলেছেন। তার ব্যাটিংয়ে এমন এক পরিণতিবোধ ছিল, যা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করত। শুধু ব্যাটিং নয়, অধিনায়কত্ব, ফিল্ডিং—সব জায়গায় তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে।

মাহমুদউল্লাহর অন্যতম বড় গুণ ছিল, তার নীরবতা, সবকিছু থেকে নীরব থাকা। সমালোচনা, বিতর্ক কিংবা নানা জল্পনা, গুঞ্জন—কখনোই প্রকাশ্যে মুখ খুলে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করত না। বরং ব্যাট হাতে সে সব প্রশ্নের উত্তর দিত। ২০২১ সালে তাকে কয়েকটি সিরিজের জন্য বিশ্রাম দেওয়া হলে, এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। অনেকেই বিষয়টি ভুল ব্যাখ্যা করে অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ আবেগপ্রবণ না হয়ে মাঠেই তার জবাব দিয়েছে। ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে যখন তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, তখন তিনি ফিরে এসে নিজেকে প্রমাণ করেছেন—ফিটনেস, ফিল্ডিং এবং ব্যাটিংয়ে নতুন রূপে। এই দৃষ্টান্ত বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য একটি বড় শিক্ষা হতে পারে। সে দেখিয়েছে, কীভাবে সমালোচনার মুখে পড়ে আবেগের বশে না গিয়ে মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে নিজের জায়গা ধরে রাখতে হয়। সমালোচনা, বিতর্ক, কিংবা দল থেকে বাদ পড়ার নানা গুঞ্জন—এসব কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সে কখনো মুখ খুলে ব্যাখ্যা দেননি, কখনো ফেসবুকে কিংবা সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তার একমাত্র জবাব ছিল মাঠে, ব্যাট হাতে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। ছবি: ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। ছবি: ফাইল ছবি

বিশেষ করে যখন তাকে কয়েকটি সিরিজের জন্য বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল, তখন এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ আবেগের কাছে হার না মেনে পরিশ্রমে মন দেয়, নিজেকে আরও প্রস্তুত করে। এরপর বিশ্বকাপে ফিরে এসে ব্যাটিং, ফিল্ডিং ও স্ট্রাইকরেটে দারুণ উন্নতি করেন এবং মাঠেই প্রমাণ করেন কেন তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এই শিক্ষা বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কীভাবে সমালোচনার জবাব কথায় নয়, বরং পারফরম্যান্স দিয়ে দিতে হয়, সেটি মাহমুদউল্লাহ দেখিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিঃসন্দেহে মাহমুদউল্লাহকে মিস করবে। তার মতো একজন ম্যাচ ফিনিশার পাওয়াও সহজ নয়। এমন একজন ব্যাটার, যিনি ম্যাচের শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে পারেন, যিনি নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে বারবার দলকে উদ্ধার করতে পারেন—এমন ক্রিকেটার সব সময় পাওয়া যায় না।

লেখক: সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত