তামিমের বিদায় সুখের হলো না কেন

ভানু গোপাল রায়, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৩, ২২: ৫৮
Thumbnail image

বলা হয়ে থাকে, সবকিছুর দুটি অর্থ থাকে। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয় শব্দকে। সে হিসেবে বিদায় ও কান্না—শব্দ দুটিরও দুই অর্থ থাকার কথা। আছেও বটে। কিন্তু আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে দুই অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না বললেই চলে।

যার সর্বশেষ উদাহরণ তামিম ইকবাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলেন তিনি। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটারের কান্নাটা দুঃখের। সকলে জানি, তিন অক্ষরের বিদায় শব্দটি সব সময় বিষাদে ভরা। তাই বলে কি কান্না সুখের হবে না! বাংলাদেশ বাদে অন্যান্য দলের খেলোয়াড়দের বিদায়ের ক্ষেত্রে তো এমনটা হয় না। বিদায় বেলায় তাঁদের চোখ জলে ভিজে, কিন্তু তা হয় সুখের।

চোখে জল থাকে। তবে সে কান্না তামিমের মতো অভিমান, কষ্ট বা ক্ষোভের হয় না। তাঁদের কান্না হয় সংক্রমণের মতো ছোঁয়াচে। যেমনটা শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়ে দেখা গেছে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তির কান্না সকলের চোখ ভিজিয়ে দিয়েছিল। ‘লিটল মাস্টারের’ সেদিনের অশ্রুজলে ছিল তৃপ্তির, মাঠ থেকে ক্রিকেট বিদায় বলতে পারার আনন্দের। সে কান্না ছিল সুখের।

বিদায় বেলা শচীনের মতো এমন সুখের কান্না আরও অনেক ক্রিকেটারের আছে। শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারারও এমন সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁদের মতো বিদায় বলতে পেরেছেন পাকিস্তানি কিংবদন্তি ব্যাটার ইউনিস খানও। আসলে সতীর্থের কাঁধে চড়ে বিদায় নেওয়ার মতো আনন্দ আর কী আছে! এমন দৃশ্য ক্রিকেটে কম নেই। ফুটবলেও এমন দৃশ্য অহরহ দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এ দৃশ্য বিরল। শেষ কবে মাঠ থেকে আমাদের খেলোয়াড়েরা বিদায় নিতে পেরেছেন তা স্মৃতি হয়ে চোখে ভাসে না।

শুধু মনে পড়ে, সংবাদ সম্মেলনে খেলোয়াড়দের আক্ষেপ, অভিমানে না বলা কথাগুলো দুই গাল বেয়ে অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। এভাবে বিদায় নেওয়া যেন আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের রীতিতে পরিণত হয়েছে। যেখানে শচীন-সাঙ্গাকারা-ইউনিসের মতো আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের বিদায়ের কান্না সংক্রমিত হওয়ার কথা ছিল। সবার চোখে থাকত দেশের সেরা ক্রীড়াবিদদের হারানোর হাহাকারের জল। যাঁরা অসংখ্য আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন। সে সময় আবেগ ধরে রাখতে না পেরে অনেকের গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়েছিল। ভক্ত-সমর্থকদের এমন অশ্রুসজল দৃশ্য তো বিদায় বেলাও হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি না হয়ে সকলের মনে ক্ষোভ ও আক্ষেপের উদ্রেক হচ্ছে।

অবশ্য ক্ষোভ ও আক্ষেপের এই উদ্রেকের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা (বিসিবি ও বাফুফে ইত্যাদি) ও খেলোয়াড়রা উভয়ই দায়ী। অভিভাবক সংস্থারা বিদায় দেওয়ার সংস্কৃতি বা পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। কিংবা অন্য কিছু। আর আমাদের খেলোয়াড়দের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অক্ষমতা তো আছেই। এই দুইয়ের মিলনের অভাব আগেও অনেক কিংবদন্তির কান্না সুখের হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত