আজও শচীনের অপেক্ষায় ১০ লাখ রুপির চেক

আহমেদ রিয়াদ, গোয়ালিয়র থেকে
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ৫০

ভারতের মধ্যপ্রদেশের ঐতিহাসিক শহর গোয়ালিয়র শুধু তার রাজকীয় দুর্গ ও সংগীতের জন্য বিখ্যাত নয়, ক্রিকেট ইতিহাসেও এর একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ালিয়রের ক্যাপ্টেন রূপ সিং স্টেডিয়ামে এক অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। ওয়ানডেতে হাঁকিয়েছিলেন প্রথম দ্বিশতক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শচীনের সেই হার না মানা দ্বিশতকই ক্রিকেটের বিশ্ব মানচিত্রে নতুন করে চিনিয়েছে গোয়ালিয়রকে।

শচীনের সেই কীর্তির শহরে প্রথমবার এসেছে বাংলাদেশ। সাকিব-পরবর্তী বাংলাদেশ দলের মিশন এবার সাদা বলের ক্রিকেটে।

শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান ক্যাপ্টেন রূপ সিং স্টেডিয়ামের। গাড়ি থেকে নামতেই দেখা মেলে রেসকোর্স সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শচীনের স্মৃতিবিজড়িত স্টেডিয়ামের। মূল ফটকের বাইরে শচীনের কয়েকটি দেয়াল অঙ্কন। ভেতরে ঢুকতেই দৃষ্টিগোচর হলো শচীনের দ্বিশতক হাঁকানো ম্যাচের স্কোরকার্ড। পিভিসি ব্যানারে দেয়ালে টাঙানো।

এখানে দর্শনার্থী যাঁরা আসেন, অনেকে স্কোরকার্ড দেখেন, ছবিও তোলেন। ভেতরের অফিসকক্ষের বাইরে আরও কিছু ছবি সংরক্ষিত আছে। বিভিন্ন সময়ের খেলা ম্যাচের ছবি। কালের আবর্তে স্টেডিয়ামের অবস্থা বেশ জীর্ণ। দুটো ম্যানুয়াল স্কোরবোর্ড এখনো আছে। তবে সেটির অবস্থা বেশ নাজুক। এই মাঠে এখন কেবল বয়সভিত্তিক দলের খেলা এবং প্রাদেশিক টুর্নামেন্টের কিছু ম্যাচ হয়।

স্টেডিয়ামটি ঘুরে দেখার সময় কথা হয় এই ভেন্যুর তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ২০১০ সালে ওয়ানডেতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির পর গোয়ালিয়র ডিভিশন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (জিডিসিএ) শচীনকে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। সেই পুরস্কার আজও তুলে দেওয়া যায়নি ব্যাটিং মাস্টারের হাতে। জিডিসিএর সভাপতি প্রশান্ত মেহতা জানিয়েছেন, ‘এখনো শচীনের জন্য আমরা অপেক্ষায়। যখনই তিনি এখানে আসবেন, তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেব।’ প্রশান্ত মেহতা আরও বলেন, ‘এই পুরস্কার শুধু একটি আর্থিক সম্মান নয়, বরং গোয়ালিয়রের মানুষের এবং জিডিসিএর পক্ষ থেকে শচীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার প্রকাশ। শচীনের সেই ইনিংস ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্যই নতুন এক মাইলফলক।’

সে সময় এই মাঠের উইকেট বানিয়েছিলেন কিউরেটর সামান্দর সিং চৌহান। সেদিন মাত্র ১৪৭ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন শচীন। ইনিংসের শেষ ওভারে চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্টের বলে সিঙ্গেল নিতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন গ্যালারিতে উপস্থিত প্রায় ১৮ হাজার দর্শক। সেদিনের স্মৃতি এখনো মনে স্পষ্ট সামান্দর সিংয়ের, ‘শচীনের ইনিংস যখন দেড় শর ঘরে, তখন থেকেই গোটা স্টেডিয়ামে চাপা উত্তেজনা। কিন্তু অধিনায়ক ধোনি জানতেন, শচীনকে ২০০-র লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে হলে দলকে সঠিক কৌশল অবলম্বন করতে হবে।’

ধোনির নেতৃত্বেরও প্রশংসা করলেন সামান্দর সিং, ‘ধোনি খুবই বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়ক। তিনি ভালো করেই জানতেন, শচীনকে এই ঐতিহাসিক মাইলফলকে পৌঁছাতে হলে তাঁকে নির্ভরযোগ্য সঙ্গ দিতে হবে। তবে এটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে দ্রুত রান করতে হবে, যেন শচীন তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন। ধোনি মাঠে এসে শচীনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ব্যাটিংয়ের ধরন এবং ম্যাচ পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। মজার ব্যাপার ছিল, শচীন নিজেই তখন ধোনিকে বলছিলেন, কীভাবে রান দ্রুত তোলার পরিকল্পনা করা যেতে পারে। আমরা দেখলাম, ধোনি ধীরে ধীরে তাঁর ছন্দে ঢুকছেন। প্রথমে কয়েকটা এক রান, তারপর বড় শট। এমনকি তিনি শচীনকে বলেন, ‘আপনি আপনার খেলায় মন দিন, আমি মাঠের বাকি অংশ সামলে নিচ্ছি।’

সামান্দর সিং চৌহানের মতো অনেকে শচীন ও ধোনির দুর্দান্ত বোঝাপড়ার কথা আজও মনে করেন। সেই বোঝাপড়ারই ফসল ওয়ানডের প্রথম দ্বিশতক; যা চিরস্মরণীয়। গোয়ালিয়র তাই এখনো শচীনকে ধারণ করে। রূপ সিং স্টেডিয়ামের সব জায়গায় তাঁর স্মৃতি। শুধু তা-ই নয়, মাঠের অদূরে একটি রাস্তাও তাঁর নামে—শচীন মার্গ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত