ক্রিকেটের লিলিপুটে গালিভার বাংলাদেশ

রানা আব্বাস, মাসকাট থেকে
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ০১
Thumbnail image

আঁকাবাঁকা পাথুরে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গাড়ি ক্রমেই নিচে নামছে। দূর থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ফ্লাড লাইট দেখে আঁচ করা যাচ্ছিল। তবে হোটেল থেকে প্রায় ৪০ মিনিটের যাত্রা শেষে পৌঁছানো গেল আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামের কাছে আসতে আইসিসির কিছু ব্যানার-পোস্টার আর ঢাউস ফটক দেখে বোঝা গেল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও এসে গেছে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এসে গেলেও স্টেডিয়ামের গেটে দাঁড়িয়ে টুর্নামেন্টের আমেজ পাওয়া কঠিন। শুধু স্টেডিয়ামে কেন, কোলাহলমুক্ত নীরব মাসকাট শহরে বোঝা কষ্টকর যে, আইসিসির একটা টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে এখানে। গা পোড়ানো প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে ঠায় দাঁড়িয়ে মনে হলো, যদি এই টুর্নামেন্টের আয়োজক বাংলাদেশ হতো, আর এক দিন পর সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের ম্যাচ থাকত, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনের দৃশ্যটা তাহলে কেমন হতো?

অথচ পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় বিরান ভূমিতে গড়ে তোলা মাসকাটের আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়াম বিশ্বকাপের এক দিন আগেও ডুবে আছে কী আশ্চর্য নীরবতায়। আইসিসি অবশ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে একটি বিশেষ ফটক বানান হয়েছে মূল স্টেডিয়ামে ঢুকতে। সেই গেট দেখে বাংলাদেশের এক সাংবাদিক রসিকতা করে বললেন, ‘এর চেয়ে বাংলাদেশের একটি বিয়ে বাড়ির গেট আরও আকর্ষণীয় আর জাঁকাল হয়!’

আয়োজকদেরই-বা কী করার আছে! ওমানে এই বিশ্বকাপ হওয়ারই কথা ছিল না। আইসিসির সহযোগী দেশটি উপহার হিসেবেই পেয়েছে একটা বড় টুর্নামেন্টের অংশীদার হওয়ার। আরেকভাবে বললে, গত দুই বছরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো করোনাভাইরাস ওমান ক্রিকেটকে একটা ‘উপহার’ দিয়েছে!

এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ছিল ভারতে। মহামারির কাছে হার মেনে আইসিসির অর্থকারী টুর্নামেন্টটা ভিন দেশে আয়োজন করতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, বিসিসিআই। আর সেটির অংশ হিসেবে আরব আমিরাতের সঙ্গে প্রথম রাউন্ডের ছয়টি ম্যাচ ওমান পেয়েছে। এই ছয়টি ম্যাচের তিনটিতে আছে আবার বাংলাদেশ। আরও একটি বিষয় আছে। কাছাকাছি সময়ে শুধু আরব আমিরাতে আইপিএল আর বিশ্বকাপ হলে পিচকে ‘বিশ্রাম’ দেওয়া কঠিন হয়ে যেত। গতকাল আইপিএল শেষ হওয়ার একদিন পরেই বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে। আরব আমিরাতের পিচ বিশ্বকাপ উপযোগী করে তোলার সময় দিতে ওমানকে সহ-আয়োজক হিসেবে বেছে নেওয়ার যুক্তিটাও সামনে এসেছে।

দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে আরব আমেরাত থেকে গত পরশু রাতে মাসকাটে আসা বাংলাদেশ দল গতকাল ছিল একেবারে বিশ্রামে। দল মাঠে না এলেও বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বসে থাকার সুযোগ কই? আইসিসির অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নিতে ভেন্যুতে যেতে হয়েছে সংবাদকর্মীদের। ঊষর মরু ভূমে খুঁজতে হয়েছে সংবাদের উপাদান। বাংলাদেশ থেকে আসা বিশাল সাংবাদিকদের বহর দেখে ওমান ক্রিকেটের কর্তারা হয়তো চমকেই গেছেন!

ওমানে ক্রিকেট নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আদৌ কোনো আগ্রহ আছে কি না, আইসিসির এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করতেই মৃদু হাসলেন। সহযোগী একটা দেশ, যাদের ক্রিকেট ইতিহাস বেশি দিনেরও নয়। ওমান ক্রিকেট দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই আবার ভারত-পাকিস্তানের প্রবাসী। উপমহাদেশ থেকে আসা এখানকার প্রবাসীরাই আসলে এখানকার ক্রিকেটের প্রাণ।

এই যেমন বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে যত উন্মাদনা-আগ্রহ শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেই। আইসিসির ওই কর্মকর্তা অবশ্য স্বীকার করছেন, স্থানীয় মানুষদের মধ্যে একটা খেলা যত দিন ছড়িয়ে না পড়ে, তত দিন ওই দেশের উন্নতি করা কঠিন। এ কারণেই হয়তো আইসিসির সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টটা আয়োজক শহর হয়েও মাসকটে সেটির আমেজ বোঝা কঠিন। আমেজ যা-ই থাকুক, ওমান ক্রিকেট বোর্ড এখানে অবশ্য লাভবান। তেমন কোনো চেষ্টা-তৎপরতা ছাড়াই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক হতে পেরেছে। ভয়ংকর জীবননাশী করোনা একটা উপহার দিয়েছে তাদের। এটি কাজে লাগিয়ে দেশটিতে ক্রিকেটের একটা দীর্ঘমেয়াদি ছাপ তৈরি হলেই হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত