উপমহাদেশের দলগুলো কেন বিশ্বকাপ জেতে না

রানা আব্বাস
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ১৫: ৪৯
আপডেট : ০১ জুন ২০২৪, ১৭: ১২

১০ বছর পর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) শিরোপা জিতেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে বলিউড বাদশার আনন্দের শেষ নেই। শাহরুখ খানের মুখে তৃপ্তির হাসি ছুঁয়ে যেতে বাধ্য সব ভারতীয়কেই। একবার কল্পচোখে দেখুন, ২৯ জুন ব্রিজটাউনে রোহিত শর্মা উঁচিয়ে ধরেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা—পুরো ভারতবর্ষে তাহলে কতটা উৎসবের রং ছড়াবে!

যখন ২০ ওভার ক্রিকেটের শিকড় খুব একটা গভীরে যায়নি, তখন টি-টোয়েন্টির বিশ্ব শিরোপা ঘরে তুলেছে ভারত। সেটিও আবার পাকিস্তানকে হারিয়ে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পরের বছর পৃথিবীতে এল আইপিএল নামের সবচেয়ে বড়, আকর্ষণীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। যারা এত সফল এক ঘরোয়া টুর্নামেন্ট প্রতিষ্ঠা করল, তাদের শোকেসে আর ওঠেনি একটি কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ শিরোপা।

বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের ভূমিকায় কাজ করে গেছেন শ্রীরাম শ্রীধরন। তিনি যুক্ত থাকেন আইপিএলের বিভিন্ন দলের সঙ্গে। ভারত কেন এই সংস্করণের বিশ্বকাপ জিততে পারছে না, প্রশ্নটা শুনে শ্রীরাম আজকের পত্রিকাকে বললেন, ‘খুব ভালো প্রশ্ন। তবে সত্যি বলতে এই উত্তর আমার জানা নেই। হতে পারে এ বছরই (জিতবে ভারত)। এবার আমরা সবাই খুব ইতিবাচক (শিরোপা জয়ের ব্যাপারে)।’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে শুধু ভারতের কেন, দীর্ঘশ্বাস ঝরার কথা পাকিস্তানেরও। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে হারের দুঃখ তারা ভুলেছিল পরের আসর জিতে। ইংল্যান্ডে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পাকিস্তান জিতেছিল উপমহাদেশের আরেক দল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। আইপিএলের মতো বড় না হলেও পাকিস্তানের পিএসএল যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে গত কয়েক বছরে। অথচ তাদের ঘরেও ১৫ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ওঠেনি।

পিএসএলকে আকর্ষণীয় করে তুলতে যাঁর অবদান, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান রমিজ রাজা ধারাভাষ্য দিতে এসেছিলেন ২০২৪ বিপিএলে। ট্রফি জিততে না পারার ব্যাখ্যা করে রমিজ আজকের পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘এটা ভিন্ন বল গেম। আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে ভাগ্যের ছোঁয়া লাগে। সঠিক সময়ে আপনাকে সেরা ছন্দে থাকতে হবে। ১৯৯২ বিশ্বকাপে যখন আমরা জিতেছি, আমাদের কোয়ালিফাই করতে কিন্তু অন্য দলের জয়-পরাজয়ের দিকে থাকতে হয়েছে। ওই ভাগ্যটাও থাকতে হবে। আর সঠিক সময়ে সেরা ছন্দে থাকতে হবে, এটাই আমরা শেষ দিকে (১৯৯২ বিশ্বকাপে) করেছিলাম।’

পাকিস্তানের কাছে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল হারের আক্ষেপ শ্রীলঙ্কা ভুলেছিল বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতে। শ্রীলঙ্কা নিজেদের ঘরের মাঠে ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টও ছিল। প্রথম পাঁচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চারটির শিরোপার লড়াইয়ে এশিয়ার দল ছিল। এই পরিসংখ্যান দেখে তখন মনে হয়েছিল, ২০ ওভারের ক্রিকেটের রূপরস বোধ হয় উপমহাদেশের দলগুলোই ভালো আস্বাদন করেছে!

তবে পরিসংখ্যানটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে গত এক দশকে। গত ১০ বছরে হওয়া প্রতিটি আসরেই ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অস্ট্রেলিয়ার দাপটই বেশি দেখা গেছে। পৃথিবীর আকর্ষণীয় সব টি-টোয়েন্টি লিগ এই অঞ্চলে হওয়ার পরও উপমহাদেশের দলগুলো কেন শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে পিছিয়ে, সেটির ব্যাখ্যায় লঙ্কান ধারাভাষ্যকার রাসেল আরনল্ডের যুক্তি, ‘আইসিসির টুর্নামেন্টে লম্বা সময় ভালো খেলতে হয়। এটা এক-দুই ম্যাচের টুর্নামেন্ট নয়। উপমহাদেশের দলগুলো আসেই অনেক চাপ নিয়ে। দর্শকদের প্রত্যাশার অনেক চাপ থাকে। গ্রুপ পর্বে কেউ কেউ উতরে যায় ভালোভাবে। যখন নকআউট পর্বে আসে, তখনই তারা ভেঙে পড়ে। এই চাপ সামলানো, দর্শকদের বিপুল প্রত্যাশা ভালোভাবে সামলাতে পারাটাই হচ্ছে শিরোপা জয়ের মূল চাবিকাঠি।’

এবার যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজে উপমহাদেশের দলগুলো সাফল্যের ঝান্ডা কতটা ওড়াতে পারে, সেটি দেখার অপেক্ষায়। তবে রমিজের কথাও ভুলে গেলে চলবে না, ‘চ্যাম্পিয়নস লাক’ও থাকতে হবে। এটা তাদের সঙ্গেই থাকে, যারা সাহসী, আত্মবিশ্বাসী আর সঠিক সময়ে জ্বলে উঠতে জানে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত