Ajker Patrika

যত দর্শক ঢাকার, কুমিল্লার দর্শকেরা নীরব

নাজিম আল শমষের, কুমিল্লা থেকে 
আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ২০: ৩২
যত দর্শক ঢাকার, কুমিল্লার দর্শকেরা নীরব

গুগল বলছে, কুমিল্লা সদরে এই মুহূর্তে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গরমের অনুভূতি ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে জ্যৈষ্ঠের গরমে নয়, কুমিল্লা এখন কাঁপছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডান ফেডারেশন কাপের ফাইনালকে ঘিরে। 

কুমিল্লা শহরের মানুষ বড় ঘটনার সাক্ষী হোন কালেভদ্রে। হঠাৎ করে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ শহরে ঢুকতে খানিকটা কৌতূহলী হয়ে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন স্থানীয়রা। তবে কুমিল্লাবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে দুই দলের মানুষ। এক দল মানুষের গায়ে সাদা-কালো জার্সি, আরেক দল পরে এসেছেন আকাশি-নীল টি-শার্ট। কে মোহামেডান সমর্থক আরা কারা আবাহনীর সেই ফারাকটা গড়ে দিচ্ছে তাদের গায়ের পোশাক। 

কুমিল্লায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ স্টেডিয়ামে বিকেল ৩.১৫ মিনিটে শুরু হওয়া ম্যাচ দেখতে আবাহনী-মোহামেডান সমর্থকদের ভিড় বাড়তে শুরু করে দুপুর ১২টার পর থেকে। দীর্ঘ ১৪ বছর ফেডারেশন কাপের ফাইনাল দেখতে দুই দলের পাঁড় সমর্থকেরা এসেছেন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কেউ এসেছেন নিজে নিজে, কেউ কেউ দল ভারী করে বাস-মাইক্রোবাস ভাড়া করে। সোনালি অতীতে দুই দলের সমর্থকদের মারামারির ইতিহাস মাথায় রেখে আসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে স্টেডিয়ামের দুই পাশ। 

তবে যতটা দর্শক আশা করা হচ্ছিল, ঠিক ততটা দর্শক দেখা যায়নি কুমিল্লা স্টেডিয়ামে। ১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে যারা খেলা দেখতে গিয়েছেন তার প্রায় ৯০ শতাংশই গিয়েছেন ঢাকা থেকে। প্রচণ্ড গরমে স্থানীয় দর্শকেরা মাঠেই আসেননি তেমন। মাঠের দুই প্রান্ত দখলে ছিল দুই দলের সমর্থকদের। 

আসন ব্যবস্থা আলাদা করা হলেও এর কোন প্রয়োজন ছিল না, এমনটাই দাবি আবাহনী-মোহামেডানের কট্টর সমর্থকদেরই। বনশ্রী থেকে প্রিয় দল মোহামেডানকে সমর্থন দিতে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যবসায়ী বাপ্পী ইসলাম। আবাহনী-মোহামেডানের খেলা দেখতে গিয়ে মরতে মরতে বেঁচে যাওয়ার গল্প শোনালেন তিনি, ‘ঢাকা স্টেডিয়ামে আমার মাথা ওপরে ইট ফেলা হয়েছিল। কোথা থেকে এক ছেলে এসে ধাক্কা না দিলে আজ এই ম্যাচ দেখা হতো না। বহুবার এভাবে বেঁচে গিয়েছি।’ 

খেলা দেখতে গিয়ে পিঠে কোপের স্মৃতি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন আবাহনীর কট্টর সমর্থক শাহাদাদ সামাদ নয়ন। তাঁর মতে ম্যাচে মারামারি হলে মন্দ হয় না। এই মারামারির মধ্যে দিয়ে যদি আবাহনী-মোহামেডানের হারানো ঐতিহ্য ফেরে, তাহলে সেটাই ভালো। নয়ন বললেন, ‘সমর্থক কেউ থেকে থাকলে সেটা আবাহনী-মোহামেডানেরই। নিজের টাকা খরচ করে এরা খেলা দেখতে আসে। ম্যাচের আগে ৩০০ টাকা দিয়ে ভাড়া করা দর্শক নেই আবাহনীতে।’ 

আবাহনীর সমর্থক হলেও নয়ন চান দেশের ফুটবলের স্বার্থে মোহামেডান যেন একটা শিরোপা জেতে। খানিকটা খোঁচার সুরে তিনি বললেন, ‘একটা দল ১৪ বছর ধরে শিরোপা জেতে না। মোহামেডান জিতলে যদি আবারও দেশের ফুটবলে প্রাণ ফেরে তাহলে মোহামেডানেরই জেতা উচিত।’ মোহামেডানের আরেক সমর্থক শফিকুল ইসলামের দাবি, নিরপেক্ষ রেফারিং হলে জিতবে তাঁর দলই। বললেন, ‘আমরা বিদেশি রেফারি চেয়েছিলাম। নিরপেক্ষ রেফারিং হলে আমরাই জিতব।’ 

এই ম্যাচে আলাদাভাবে উত্তাপ ছড়িয়েছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। আবাহনী-মোহামেডান খেলা দেখতে হেলিকপ্টারে করে কুমিল্লা গেছে বাফুফে সভাপতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত