শেষ সময়ে মার্তিনেজ-জাদু, আর্জেন্টিনার রেকর্ড কোপা জয়

অয়ন রায়, ঢাকা 
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৪, ১১: ৪৮
Thumbnail image

দর্শকদের উত্তেজনা, লিওনেল মেসির কান্না, খেলোয়াড়দের হাতাহাতি—মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া ফাইনালে কী ছিল না আজ! সব ছাপিয়ে শেষ হাসি হাসে আর্জেন্টিনা। লাওতারো মার্তিনেজের শেষ সময়ের ম্যাজিকে কোপা আমেরিকায় রেকর্ড ১৬ বার শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ে আকাশী-নীলরা। অন্যদিকে ২৩ বছর পর শিরোপার  কাছাকাছি এসেও ফিরে আসতে হয়েছে কলম্বিয়াকে।  

বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল কোপার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। তবে কলম্বিয়ার দর্শকদের বিশৃঙ্খলার কারণে দফায় দফায় পিছিয়ে যায় ম্যাচ শুরুর সময়। ৮০ মিনিটে দেরিতে বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে শুরু হয় আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া ফাইনাল। ৯০ মিনিটের লড়াইয়েও কোনো দল গোলমুখ খুলতে পারেনি। সেখানে অতিরিক্ত সময়ে লাওতারো মার্তিনেজের দুর্দান্ত গোল করে আর্জেন্টিনাকে এনে দেন উদযাপনের উপলক্ষ্য। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের জয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা নিজেদের কাছে রাখার মিশনে সফল হলো লিওনেল স্কালোনির দল। ডাগআউটে বসে থাকা মেসির কান্না রূপ নিয়েছে হাসিতে। সুদূর ফ্লোরিডায় আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের আনন্দ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ঢাকায়।

ম্যাচের একেবারে শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ১ মিনিটে গঞ্জালো মন্তিয়েলের ক্রস থেকে ডান পায়ে শট নিলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি হুলিয়ান আলভারেজ। শুরুতে আকাশী-নীলদের ব্যর্থতার পরপরই আর্জেন্টিনার ওপর পাল্টা আক্রমণ করে কলম্বিয়া। ৫ মিনিটে রিকার্ডো রিওসের অ্যাসিস্টে ডান পায়ে শট নেন কলম্বিয়ার ফরোয়ার্ড লুইস দিয়াজ। তবে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ তা প্রতিহত করেছেন। 

পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল কলম্বিয়া। ৭ মিনিটে সান্টিয়াগো আরিয়াসের হেড থেকে পাস রিভিস করে ডান পায়ে শটও নেন জন কর্ডোবা। তবে কর্ডোবার শট গোলপোস্টের বাঁ পাশে লেগে ফিরে যায়। কলম্বিয়ার সুযোগ মিসের মহড়ায় পাল্টা আক্রমণে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। ২০ মিনিটে দি মারিয়ার পাস রিসিভ করে মেসি শট নেন। তবে বক্সের মধ্যে আলভারেজের পা লেগে যাওয়ার পর খুব সহজেই সেটা প্রতিহত করেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ক্যামিলো ভার্গাস।

আর্জেন্টিনার সহজ সুযোগ হারানোর পর কলম্বিয়া লাগাতার আক্রমণ করেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। নিজেদের ফিনিশিং দুর্বলতা তো ছিলই, পাশাপাশি মার্তিনেজ গোলপোস্টের সামনে বরাবরের মতোই ‘চীনের মহাপ্রাচীর’ হিসেবে আগলে রেখেছেন। প্রথমার্ধের শেষে অবশ্য গোল পেতে পারত আর্জেন্টিনা। ৪৪ মিনিটের সময় সেটপিস থেকে মেসির ক্রসে নিকোলাস তাগলিয়াফিকো হেড দিলেও তা বক্সের অনেক ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য ড্রয়ে।

কোপা আমেরিকায় রেকর্ড ১৬তম শিরোপা জয়ের পর আর্জেন্টিনার উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপিদ্বিতীয়ার্ধেও দুই দল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে। ৪৭ মিনিটে আরিয়াসের শট একটু এদিক-ওদিক হলেই গোল পেতে পারত কলম্বিয়া। তবে আর্জেন্টিনা গোলমুখ খোলার চেষ্টায় আর্জেন্টিনা বেশি প্রেসিং শুরু করে। দি মারিয়া কলম্বিয়ার রক্ষণদুর্গ কাঁপিয়ে দেন ক্ষণে ক্ষণে। তবে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ভারগাসের দৃঢ়তায় ৪৮ ও ৫৮ মিনিটে দুই বার গোল করতে পারেননি দি মারিয়া। উপরন্তু বিদায়ী ম্যাচে দি মারিয়াকে বাজে ট্যাকল করায় ডাগআউটে উত্তেজিত অবস্থায় দেখা গেছে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনিকে।

একের পর এক সুযোগ মিসের মহড়ার মধ্যে আর্জেন্টিনা বড়সড় এক ধাক্কা খায়। ৬৫ মিনিটে গোঁড়ালির চোটের কাছে হার মেনে মাঠেই পড়ে যান মেসি। ফিজিও এসে সেবা শুশ্রূষা করার পর আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলারকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ডাগআউটে হতাশায় বুট ছুড়ে মারলেন, মুখ ঢেকে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। সে কান্না ছুঁয়ে গেল সব আর্জেন্টাইন সমর্থকদের।

ডাগআউটে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দুঃখ ভোলার উপলক্ষ প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন মেসি। ৭৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার গোলের পর তাঁর মুখে হাসিও দেখা যায়। তবে সেটা সাময়িক সময়ের জন্য। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার নিকোলাস তাগলিয়াফিকো অফসাইডে থাকলে গোল বাতিল করা হয়। আবারও মেসির মুখে ফিরে আসে হতাশা। ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচ হলেও কোনো দলই গোল করতে পারেনি।

নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তখন আরও জোর গতিতে প্রেসিং করে আর্জেন্টিনা। তবে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ভার্গাস যে ‘ধনুক ভাঙা পণ’ করে নেমেছেন। অতন্দ্র প্রহরীর মতো গোলপোস্ট পাহারা দিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা দি মারিয়া একের পর এক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারছিলেন না। ১১২ মিনিটে জিওভান্নি লো সেলসোর থ্রু বল থেকে ডান পায়ের শটে দারুণ এক লক্ষ্যভেদ করেন লাওতারো। শেষ পর্যন্ত ১৬তম কোপা আমেরিকা জয়ের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।

কোপা আমেরিকায় সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ডের পাশাপাশি শিরোপা নিজেদের কাছে রেখে দিল আর্জেন্টিনা। ২০২১ কোপা জিতেই দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপাখরা কাটিয়েছিল আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। ক্লাব ফুটবলে একের পর এক শিরোপা জয়ী মেসিরও সেটা  আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম শিরোপা। সেই ধারাবাহিকতায় আর্জেন্টিনা এরপর জিতল ২০২২ ফিনালিসিমা, ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ ও ২০২৪ কোপা আমেরিকা। আলবিসেলেস্তের ৩ বছরে সবশেষ ৪টি শিরোপা জয়ে জড়িয়ে আছেন মেসি। ফুটবল যে এমনই। কখনো কাঁদায়, কখনো হাসায়। ২০২১ কোপা জয়ের আগে হয়তো আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের কাছে স্বপ্নই মনে হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত