Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বা রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য নেই

অভিজ্ঞতা বাড়াতে দেশের বাইরে লিগেও খেলতে চান নাহিদ রানা। ছবি: বিসিবি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক বছর না হতেই বিশেষ একটা পরিচিত পেয়েছেন নাহিদ রানা। গতিই তাঁকে বিশেষ পরিচিত করে তুলেছে। রানা এখন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ব্যস্ত। প্রথমবারের মতো পেশোয়ার জালমিরের হয়ে পিএসএল খেলতে এরই মধ্যে বিসিবির কাছে এনওসি চেয়ে আবেদন করেছেন। আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রানা বলেছেন তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সসহ প্রাসঙ্গিক আরও কিছু বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ রিয়াদ

প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর এখন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলছেন। বিপিএল, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর রমজানে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ব্যস্ততা—ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট কি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে?

নাহিদ রানা: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। রোজা রেখে ম্যাচ খেলা কঠিন, স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্তি আসে। রোজার আগে যেভাবে ফিট থেকে খেলতাম, এখন ছন্দ কিছুটা হেরফের হয়। তবে সবকিছুর পরও মানিয়ে নিচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। .

প্রশ্ন: কখনো কি সাবেক গতিতারকা শোয়েব আখতার বা ব্রেট লির সঙ্গে দেখা হয়েছে?

রানা: এখনো দেখা হয়নি।

প্রশ্ন: যদি কখনো দেখা হয়, তাঁদের কাছে কী জানতে চাইবেন?

রানা: ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে অবশ্যই কথা বলার চেষ্টা করব। তাঁরা ক্রিকেটের কিংবদন্তি, তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে তাঁরা কীভাবে অনুশীলন করতেন, কীভাবে নিজেদের গতি ও স্কিল ধরে রেখেছেন—এসব জানতে চাইব, যেন আমি সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারি।

প্রশ্ন: আপনি কি স্বপ্ন দেখেন, বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ১০০ মাইল গতিতে বল করার?

রানা: গতি আমার শক্তির জায়গা, তবে এটা নিয়ে আলাদা করে ভাবছি না। আমি ফিটনেস ঠিক রেখে স্কিল বাড়ানোর দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। স্কিল ঠিক থাকলে গতি এমনিতেই বাড়বে। যারা গতিতে বল করে, তারা কখনো নির্দিষ্ট বলে জোর দিয়ে করে না—সবটাই স্কিলের বিষয়। আমিও সেই প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছি, নিয়মিত কাজ করছি। সময়ের সঙ্গে দেখব, কত দূরে যেতে পারি।

প্রশ্ন: পেস বোলারদের কেউ চান শত শত উইকেট শিকার করতে, কেউ চান বড় কোনো মাইলফলক স্পর্শ করতে। আপনার লক্ষ্য কী?

রানা: নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বা রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য নেই। ক্রিকেটটা উপভোগ করতে চাই, যত দিন ভালোভাবে খেলতে পারব, তত দিন খেলে যেতে চাই। বাড়তি কিছু ভাবছি না, শুধু নিজের খেলাটা উপভোগ করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।

প্রশ্ন: গতি দিয়ে বিশেষ নজর কেড়েছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময়ে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও আপনাকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাড়তি প্রত্যাশার চাপ অনুভব করছেন?

রানা: সত্যি বলতে, বাইরের আলোচনা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলি। এসব নিয়ে ভাবতে গেলে নিজের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ তৈরি হয়। আমি শুধু নিজের খেলায় মনোযোগ দিই। মাঠে যে কাজটা করতে নামি, সেটাই ঠিকঠাকভাবে করতে চাই। অন্য কিছুতে সময় নষ্ট করতে চাই না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তেমন কারও সঙ্গে আলাপের সুযোগ হয়নি। আর আমাদের প্রস্তুতির সময়ও কোনো বিখ্যাত সাবেক খেলোয়াড়ের দেখা হয়নি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের এক্সপ্রেস বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার হাত ধরে। এরপর তালহা জুবায়ের-রুবেল-তাসকিনেরা এসেছেন। সবাই গতি ধরে রাখতে গিয়ে চোটেও পড়েছেন। কারও ক্যারিয়ার বিকশিত হয়নি ঠিকঠাক। আপনার ওয়ার্কলোড নিয়ে তাই অনেক আলোচনা হচ্ছে। কীভাবে সামলাচ্ছেন বিষয়টা?

রানা: একজন পেসারের সত্যিই অনেক পরিশ্রম করতে হয়, তার জীবনধারাই বদলে যায়। ক্রিকেট খেলার আগে আর এখনকার জীবনে অনেক পার্থক্য। খাওয়া-দাওয়া, জিম, ঘুম—সবকিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। আমি সেটাই মানিয়ে নিয়েছি। পেশাদার ক্রিকেটার হতে হলে সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে হবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের পেস আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাসকিন আহমেদ। তাঁর সঙ্গে কী ধরনের আলোচনা হয়?

রানা: ছোটবেলা থেকে মোস্তাফিজ ভাই, তাসকিন ভাইদের খেলা দেখে বড় হয়েছি। তাঁরা যে পরামর্শ দেন, সেটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তামিম ভাই, সাকিব ভাই, মুশফিক-রিয়াদ ভাইদের সঙ্গে খেলার স্বপ্ন দেখতাম, এখন সেটা বাস্তব হয়েছে। সিনিয়ররা আমার ভুল ধরিয়ে দেন, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন—আমি সেসব গুরুত্ব দিয়ে শুনি, নিজের উন্নতি করার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: পেসারদের মধ্যে সাধারণত আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আপনি একেবারেই সরল উদ্যাপন করেন। ওই আক্রমণাত্মক মেজাজ খুব একটা দেখা যায় না, কারণ কী?

রানা: চেষ্টা করি, যতটা সম্ভব শান্ত থেকে নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে। আগ্রাসন তো স্বাভাবিকভাবে আসে, কিন্তু আমি মনে করি, ঠান্ডা মাথায় খেললে ব্যাটারকে আউট করার সুযোগ বেশি থাকে। আমার আগ্রাসন একেবারে নেই, তা নয়। মাঠে ধৈর্য ধরে খেলতে পছন্দ করি।

প্রশ্ন: গতির সঙ্গে ইনসুইং নিয়ে কাজ করছেন, অগ্রগতি কতটা হলো?

রানা: আমার বোলিংয়ে ইনসুইংয়ের কিছুটা ঘাটতি আছে, সেটা ঠিক করতে সময় লাগবে। নিয়মিত এই ডেলিভারিটি রপ্ত করার চেষ্টা করছি। ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।

প্রশ্ন: এনওসি পেলে পিএসএলে কী শেখার লক্ষ্য নিয়ে যাবেন?

রানা: অবশ্যই পিএসএলে খেলতে চাই। তবে আমার কাছে দেশের ক্রিকেট সবার আগে। দেশের হয়ে খেলার সুযোগ থাকলে সেটাই আমার অগ্রাধিকার। যদি এনওসি পাই, অবশ্যই যাব এবং চ্যালেঞ্জ উপভোগ করব। এই ধরনের লিগে বড় বড় কোচ, অভিজ্ঞ বোলারদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকে, যা আমার স্কিলের উন্নতিতে সহায়তা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত