যুদ্ধের ময়দানে উড়ছে যেসব ড্রোন

আয়শা আফরোজা
Thumbnail image

চলচ্চিত্রের জন্য চিত্তাকর্ষক দৃশ্য ধারণ কিংবা ইউটিউব কনটেন্টের ভিডিও ধারণের জন্যই নয়; যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুশিবিরে নরক গুলজার করতে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে আরও নিখুঁতভাবে শত্রু বাহিনীকে কাবু করতে এগুলোর প্রভাব ও ক্ষমতা বাড়াতে দিন দিন ব্যয় হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। যেসব দেশে যুদ্ধ চলছে, সেগুলোর দিকে তাকালেই হদিস পাবেন যুদ্ধক্ষেত্রে এগুলোর ধ্বংসলীলা চালানোর অপার ক্ষমতার।

সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সিজারিয়ার বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়। লেবানন থেকে উৎক্ষেপণ করা ড্রোন দিয়ে চালানো হয়েছিল এ হামলা। এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার দেখা গেছে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ড্রোন হামলার ঘটনা এবং তাতে দুই পক্ষের হাজারো মানুষের হতাহতের সংবাদ আমরা পেয়েছি। তবে সম্ভবত এর ব্যবহার শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। আফগানিস্তানে তাদের ড্রোন হামলার অসংখ্য সংবাদ পাওয়া গিয়েছিল একসময়।

শত্রুপক্ষের অবস্থান জানতে, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে এবং নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে শত্রুপক্ষের ওপর নিখুঁত হামলা চালাতে ড্রোন কাজে লাগানো হচ্ছে। এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সামরিক ড্রোন।

এ কাজে বিখ্যাত কয়েকটি ড্রোন হলো—

kamikaze-drone
kamikaze-drone

কামিকাজে ড্রোন

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কামিকাজে ড্রোন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইসরায়েল, ইরান ও তুরস্কের কাছেও এ ধরনের ড্রোন রয়েছে। একে সুইচব্লেড ড্রোনও বলা হয়। কামিকাজে ড্রোনগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র বা অন্যান্য স্থাপনা বা স্থির বস্তুতে হামলা চালানোর জন্য বেশ কার্যকর। সামরিক বাহিনীর ওপর এগুলো ব্যবহারে অতটা সফলতা পাওয়া যায় না। এ জন্য ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক আকারে ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করছে রাশিয়া। ছোট প্রাণঘাতী এ ড্রোনগুলো রাডারে শনাক্ত করা কঠিন।

Defense-Technology-of-Bangladesh

বায়রাক্টার টিবি-টু

তুরস্কের তৈরি বায়রাক্টার টিবি-টু আকারে ছোট উড়োজাহাজের সমান। এতে ক্যামেরা লাগানো থাকে এবং এটি দিয়ে লেজার নিয়ন্ত্রিত বোমা বহন করা যায়। অস্ত্রের গুদামের মতো লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করা এবং যুদ্ধজাহাজে হামলা চালিয়ে সেটি ডুবিয়ে দিতে এই ড্রোন কার্যকর। তবে এগুলো বেশ বড় এবং তুলনামূলক ধীরগতিতে চলে। এগুলো ওড়ে মাঝারি উচ্চতায়। ফলে গুলি করে এই ড্রোন ভূপাতিত করে দেওয়া বেশ সহজ।

drone

ওরলান-টেন ড্রোন

ছোটখাটো সাধারণ মানের ড্রোন হলো ওরলান-টেন ড্রোন। এই ড্রোনেও ক্যামেরা আছে এবং এটি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়। এগুলো রাশিয়া খুব বেশি ব্যবহার করে। শত্রুপক্ষের টার্গেট খুঁজে বের করা এবং সেখানে নিশানা করে কামানের গোলা ছোড়ার কাজে এই ড্রোন বেশ কার্যকর। যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়ার কাছে এ রকম হাজারো ড্রোন ছিল। এখন হয়তো আর কয়েক শ অবশিষ্ট আছে।

আইএআই হেরন

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে থাকা সবচেয়ে ভারী ড্রোন আইএআই হেরন। ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি এই ড্রোনের উন্নত সংস্করণের নাম হেরন টিপি। গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেস এবং ল্যান্ডে ফিরে যেতে পারে। এটি এক টনের কাছাকাছি গোলাবারুদ বহনে সক্ষম। এই ড্রোনে বহনকারী বোমা নিচে পড়ার সময় তার গতি শব্দের গতিতে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে। এই বোমা থেকে শব্দ বা জ্বালানির ধোঁয়া নির্গত হয় না। ফলে আগে থেকে কেউ এর আক্রমণ সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না।

drone-3

অসামরিক ড্রোন

সাধারণভাবে মনে হতে পারে, ড্রোন হামলায় নিজেদের বাহিনীর কারও যেহেতু হতাহতের সুযোগ নেই, তাহলে এটিই সব সময় কেন ব্যবহার হয় না। এর কারণ হচ্ছে ব্যয়। শুধু একটি বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনের দাম ২০ লাখ ডলার।

তাই এখন ছোট বাণিজ্যিক মডেল ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে বিভিন্ন দেশ। এ রকম একটি ড্রোন হচ্ছে ডিজেআই ম্যাভিক-৩; যেটির দাম ১ হাজার ৭০০ ডলার।

বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ড্রোনেও ছোট আকারের বোমা লাগানো যায়। তবে এগুলো মূলত ব্যবহৃত হয় শত্রু বাহিনীর অবস্থান জানা এবং সেখানে হামলায় সাহায্য করার কাজে।

তবে বাণিজ্যিক ড্রোনগুলো সামরিক ড্রোনের তুলনায় কম শক্তিশালী। যেমন ডিজেআই ম্যাভিকের পাল্লা মাত্র ৩০ কিলোমিটার। আর এটি একটানা উড়তে পারে মাত্র ৪৬ মিনিট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুদ্ধের ময়দানে উড়ছে যেসব ড্রোন

০৮: ৫৩