ভুল উত্তর দেওয়ার ঝুঁকি, চ্যাটজিপিটির মালিকেরা তদন্তের মুখে 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৫: ৪১
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৬: ২৯

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা ওপেনএআই গ্রাহকদের ভুল তথ্য দেওয়ার ঝুঁকি যাচাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র তদন্ত শুরু করেছে। ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) মাইক্রোসফট সমর্থিত প্রতিষ্ঠানটির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে চ্যাটজিপিটি কীভাবে মানুষের সুনাম নষ্ট করছে, সে সম্পর্কে জানাতে অনুরোধ করেছে।

ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান বলেছেন, তাঁরা এফটিসির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

চ্যাটজিপিটি প্রথাগত ইন্টারনেট অনুসন্ধানের ফলাফলের চেয়ে ব্যতিক্রম। এটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ব্যবহারকারীর প্রশ্নের একটি গঠনমূলক উত্তর দেয়, যা অনেকটাই মানুষের দেওয়া উত্তরের মতো। এটি ইন্টারনেটে তথ্য পাওয়ার ধরনকেই নিকট ভবিষ্যতে বদলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বীরা নিজস্ব সংস্করণের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারে মানুষকে আকৃষ্ট করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। যদিও তাঁরা যেসব প্রযুক্তি ও তথ্য ব্যবহার করে, সেসব নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।

এফটিসির চিঠিতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, ওপেনএআই ‘ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, অপমানজনক বা ক্ষতিকারক তথ্য ছড়ানোর’ ঝুঁকি মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে। এফটিসি ওপেনএআইয়ের ডেটা সংরক্ষণ, গোপনীয়তা ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতির দিকে নজর দিচ্ছে। 

অল্টম্যান টুইটারে বলেন, ওপেনএআই নিরাপত্তা গবেষণায় কয়েক বছর ব্যয় করেছে। চ্যাটজিপিটি বাজারে ছাড়ার আগে এটিকে আরও নিরাপদ ও ঢেলে সাজাতে কয়েক মাস ব্যয় করেছে। আমরা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষা করি এবং ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং বিশ্ব সম্পর্কে জানতেই সিস্টেমগুলো ডিজাইন করি।

অন্য একটি টুইটে তিনি বলেছেন, ‘প্রযুক্তিটি নিরাপদ ও গ্রাহকবান্ধব কি না, তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নিশ্চিত যে আমরা আইন মেনে চলব। অবশ্যই আমরা এফটিসির সঙ্গে কাজ করব।’

অল্টম্যান এ বছরের শুরুর দিকে কংগ্রেসে একটি শুনানিতে হাজির হন, যেখানে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে প্রযুক্তিটি ভুল তথ্যর উৎস হতে পারে।

তিনি উদীয়মান এই শিল্পের জন্য আইন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এআই সুরক্ষা তদারক করার জন্য একটি নতুন সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছিলেন। প্রযুক্তিটি শিক্ষা, চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলেও আশা করেছিলেন। 

অল্টম্যান সে সময় বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি যদি এই প্রযুক্তিটি ভুল হয়ে যায় তবে এটি বেশ ভুল হতে পারে। আমরা এটি সম্পর্কে সোচ্চার হতে চাই। আমরা অপব্যবহার ঠেকাতে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই।’ 

এফটিসির তদন্তের বিষয়টি প্রথম ওয়াশিংটন পোস্ট রিপোর্ট করেছিল। ওই রিপোর্টে এফটিসির চিঠির একটি অনুলিপিও প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে ওপেনএআই বিবিসির মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। 

এফটিসিও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সংস্থাটির বর্তমান প্রধান লিনা খান টেক জায়ান্টদের বিভিন্ন বিষয়াবলি যাচাই-বাছাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাজনের একচেটিয়ার বিরুদ্ধে মুখ খোলার পর থেকে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রী লিনা খানের বেশ খ্যাতি রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন দ্বারা নিযুক্ত লিনার বিতর্কিতও বেশ। তিনি এফটিসির অপব্যবহার করছেন বলে দাবি করেছেন অনেক সমালোচক।

গতকাল বৃহস্পতিবার কংগ্রেসে পাঁচ ঘণ্টার শুনানির সময় তিনি রিপাবলিকানদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। শুনানিতে তিনি ওপেনএআই নিয়ে এফটিসির তদন্তের কথা উল্লেখ করেননি। যা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, পণ্যটির আউটপুট নিয়ে তার উদ্বেগ রয়েছে।

মিসেস খান বলেন, ‘একজন মানুষের সংবেদনশীল তথ্য অন্য কেউ সহজেই চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছেন। আমাদের কাছে এমন তথ্য এসেছে। আমরা মানহানিকর বিবৃতি ও স্পষ্ট মিথ্যা তথ্য সম্পর্কে শুনেছি। এমন প্রতারণা এবং প্রতারণার ধরন নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। 

চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে এফটিসির এ তদন্ত প্রথম নয়। এর আগেও গোপনীয়তা ইস্যুতে এপ্রিলে ইতালি চ্যাটজাপিটি নিষিদ্ধ করেছিল। তবে ব্যবহারকারীদের বয়স যাচাইয়ে একটি কৌশল ও গোপনীয়তা নীতি সম্পর্কে আরও তথ্য যোগ করার পরে পরিষেবাটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত