এসি ২৭ ডিগ্রিতে রেখে ফ্যান চালালে ঘর ঠান্ডা হবে, বিদ্যুৎ বিলও কমবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ মে ২০২৪, ১৯: ২২
আপডেট : ১০ মে ২০২৪, ১৯: ৩৭

এয়ারকন্ডিশনার (এসি) এবং সিলিং ফ্যান এক সঙ্গে চালিয়ে বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় করা যায়—এমন একটি দাবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন করে থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম দ্য নেশন। দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয় এমন নির্দেশনাই দিয়েছে। এমন দাবির পক্ষে কি কোনো প্রমাণ আছে? 

নেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানের এক প্রভাষকের মতে, ফ্যান ব্যবহার করা এবং এসির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে রাখলে অর্থ সাশ্রয় সম্ভব। 

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক জেসাদা ডেনডুয়াংবোরিপ্যান্ট জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শের সঙ্গে একমত। তিনি বলেছেন, এই পদক্ষেপ ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারে। মন্ত্রণালয়ের পরামর্শটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের সৃষ্টি করার পর ওই প্রভাষক বিষয়টি খোলাসা করেন। 

মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সিলিং ফ্যান এবং এসি একসঙ্গে চালালে ঘরে বায়ুপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, এতে তাপমাত্রা অতিরিক্ত ২ ডিগ্রি কমে যায়। অর্থাৎ এসি ২৭–এ চললে সিলিং ফ্যানের কারণে তাপমাত্রা অনুভূত হবে ২৫ ডিগ্রি। এই পদ্ধতিটি ২৩–২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এসি ব্যবহারের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে। 

প্রভাষক জেসাদা সরকারের পরামর্শকে সমর্থন করে বলেন, তিনি নিজেও প্রায়ই ফ্যান ও এসি একসঙ্গে চালিয়ে থাকেন। তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন, তাপমাত্রা বেশি সেট করলে এসির কম্প্রেসার কম সময় চলবে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ হবে কম। 

জেসাদা বলেন, ঘরের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে কমিয়ে রাখলে আর্দ্রতা আরামদায়ক পর্যায়ে থাকে। এর মধ্যে ফ্যান চালালে ঘর শীতল হবে, কারণ বায়ুপ্রবাহ শরীরের তাপ কমাতে সাহায্য করবে। 

এ ছাড়া, সিলিং ফ্যান এসির চেয়ে অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ করে। ফ্যান সর্বোচ্চ গতিতে চালালে, এমনকি একসঙ্গে দু–তিনটি ফ্যান চালু রাখলেও একটি এসির চেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচ হয়। যোগ করেন জেসাদা। 

তবে এই সুবিধা পেতে নিয়মিত এসি ও ফিল্টার পরিষ্কার করার পরামর্শ দেন জেসাদা। 

লাইভ মিন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে ভারত সরকারও এমন একটি পদ্ধতি উৎসাহিত করার চিন্তাভাবনা করেছিল। সরকার এসি প্রস্তুতকারক এবং বাণিজ্যিক ভবন কর্তৃপক্ষকে এসির ডিফল্ট তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার নির্দেশনা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। সরকার হিসাব করে দেখেছিল, সব ব্যবহারকারী এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে বছরে ২ হাজার কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। 

বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে যেভাবে
অনেকে মনে করেন, এসির তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রিতে সেট করলে ঘর দ্রুত ঠান্ডা হয়। এটি সত্য নয়। কারণ এসি ১৮ বা ২৬ ডিগ্রি যেটিতেই সেট করা হোক না কেন একটি কক্ষের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রিতে নেমে আসতে একই সময় লাগবে। 

কিন্তু এসির তাপমাত্রা কমিয়ে সেট করলে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হবে। কারণ যখন কম তাপমাত্রা সেট করা হয় তখন এসির কম্প্রেসার বেশি সময় কাজ করে, এর অর্থ বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। অন্যদিকে, তাপমাত্রা বাড়িয়ে রাখলে (২৪ থেকে বাড়িয়ে ২৬ ডিগ্রি) কম্প্রেসার অনেক কম সময় কাজ করবে, ফলে কম বিদ্যুৎ খরচ হবে। কাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রায় পৌঁছে গেলে কম্প্রেসার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে। তখন শুধু এসির ফ্যান কাজ করবে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কম্প্রেসার আবার চালু হয়। 

ভারতের অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অজয় মাথু লাইভমিন্টকে বলেন, ২৪ ডিগ্রি কিন্তু বেশ আরামদায়ক তাপমাত্রা। এমনকি উচ্চ আর্দ্রতার পরিস্থিতিতেও এটি আরামদায়ক। আর এসি ১৮ বা ২২ ডিগ্রিতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, এই ২৪–এ কিন্তু তার চেয়ে অনেক কম খরচ করে। 

ভারতের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এসির তাপমাত্রা প্রতি এক ডিগ্রি বাড়িয়ে রাখার ফলে ৩ থেকে ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। এ ছাড়া এসির তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৮ ডিগ্রিতে বাড়িয়ে রাখলে ভারতের বাজার অনুযায়ী একজন ব্যবহারকারীর বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৬ হাজার ২৪০ রুপি। শুধু তা–ই নয়, এতে বছরে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে ৯৬০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। যেখানে এসি সাধারণত বছরে আট মাস চলে। 

আর এসি ছেড়ে গায়ে কম্বল জড়িয়ে ঘুমানো মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ অপচয় তো রয়েছেই। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৩৬–৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘরের বাইরে উচ্চ তাপমাত্রা এবং ঘরের ভেতরে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় থাকলে স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

অতএব, এসির তাপমাত্রা বাড়িয়ে রাখুন, প্রয়োজনে আস্তে করে সিলিং ফ্যান চালিয়ে রাখুন। এতে বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হবে, সুস্থও থাকা যাবে!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত