ফ্রিল্যান্সিংয়ে লাখপতি বরিশালের সানি

Thumbnail image

বরিশাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং করে সফলতা পেয়েছেন সালিহীন হাওলাদার সানি। তিনি মার্কেটপ্লেসে ৩৫০টির বেশি এবং মার্কেটপ্লেসের বাইরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০০টির বেশি প্রকল্প শেষ করেছেন। মাসে তাঁর গড় আয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠা করেছেন ইনোভ্যাট্রিকস টেকনোলজিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ জনের। সানির সফলতার গল্প জানাচ্ছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

লিফলেট দেখে শুরু
একটি লিফলেট দেখে সানির বাবা তাঁকে বলেছিলেন, ‘দেখো, ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসেই আয় করা যায়।’ তখন সবে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেছেন সানি। বাবার কথায় মনে দাগ কাটে তাঁর। তাই বরিশালের একটি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন বিষয় শিখতে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে একটি এসইও প্রজেক্টের কাজ পান তিনি। কাজটি ভালোভাবে শেষ করায় ক্লায়েন্ট তাঁকে ফাইভ স্টার রিভিউ দেয়। এরপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি ফ্রিল্যান্স ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে কাজ করেন বিশ্বের অন্যতম মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সার ডটকমে। একটি এজেন্সিও আছে তাঁর। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের আইটি সার্ভিস দিয়ে থাকে এজেন্সিটি।

ডেডিকেটেড ফ্রিল্যান্সার
ডেডিকেটেড ফ্রিল্যান্সারদের মূল্যায়নে বায়াররা ভুল করেন না। এই সত্য সানি ভালোই বুঝতেন। তাই কাজ করতে গিয়ে কখন সকাল হয়েছে, তা টেরই পেতেন না। দেশের বাইরের ক্লায়েন্টরা ডেডিকেটেড ফ্রিল্যন্সারদের মূল্যায়ন করে এবং ভালো সম্মানী দেয় বলে জানান সানি। সব মিলিয়ে সানির এ পর্যন্ত আয় দুই লাখ ডলার পেরিয়ে গেছে।সালিহীন হাওলাদার সানিযত সব চ্যালেঞ্জ
ফ্রিল্যান্সিংকে যতটা সহজ ভাবা হয়, আসলে ততটা সহজ নয় বিষয়টি। কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হন সানি। চ্যালেঞ্জগুলো গুরুত্বপূর্ণ দেশে পেপাল সেবা না থাকা। এটি আন্তর্জাতিক লেনদেনে বড় সমস্যা। আগে রিভার্সাল সমস্যা দেখা যেত মার্কেটপ্লেসে। একবার সানির প্রায় ৩ হাজার ডলার রিভার্সাল হয়। সেই অর্থ তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে মাইনাস হয়। এখন অবশ্য রিভার্সাল সমস্যা দেখা যায় না।

ভুল থেকে শিক্ষা
ভুল থেকেই শিক্ষা নিয়েছেন সানি। প্রথম দিকে ক্লায়েন্ট তাঁর প্রজেক্ট ডেসক্রিপশন ঠিক কী চেয়েছেন তা ঠিকমতো না বুঝেই কাজের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিতেন। ঠিকমতো চেক করতেন না ক্লায়েন্টদের প্রোফাইল। এমনকি মার্কেটপ্লেসের ভেতর ক্লায়েন্টের সঙ্গে আউটসাইড পেমেন্ট নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। এই ভুলগুলোতে তিনি তখন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন আর এমন ভুল করেন না। 

ইনোভ্যাট্রিকস টেকনোলজিস
শুরুর দিকে এসইও ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এই দুটি জিনিস নিয়ে কাজ করতেন সানি। এজেন্সি করার পর ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যান্ডিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে যুক্ত হন। বরিশালের সদর রোডের সিটি প্লাজা মার্কেটে ইনোভ্যাট্রিকস টেকনোলজিস নামে তাঁর একটি আইটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে কাজ করেন ১২ জন।

পেয়েছেন পুরস্কার
ভালো কাজ করলে পুরস্কার তো জুটবেই। সানিও এর বাইরে নন। তাঁর উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে আছে, ২০১৮ সালে বরিশাল বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবক, রাইজিং ইউথ অ্যাওয়ার্ড (২০২৩), ন্যাশনাল টেক অ্যাওয়ার্ড (২০২৩), ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যাওয়ার্ড (২০২৩) ইত্যাদি।
২০১৫ সালে বরিশাল ফ্রিল্যান্সার ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। সংগঠনটির চেয়ারম্যান সানি। সংগঠনের হয়ে তিনি ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড, নতুন ফ্রিল্যান্সারদের ফ্রি গাইডলাইন দেওয়া এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করেছেন। সালিহীন হাওলাদার সানিসাফল্য পেতে করণীয়
দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা থেকে সাফল্যের কিছু সূত্র বের করেছেন সানি।

  • ক্লায়েন্ট প্রজেক্ট ডেসক্রিপশন মূলত কী বলেছে বা কী চেয়েছে, সেটা ভালোভাবে পড়া ও বোঝা।
  • সংক্ষিপ্ত করে সে বিষয়ের ওপর প্রস্তাব তৈরি করা। 
  • কপি-পেস্ট প্রস্তাব না দেওয়া। 
  • ক্লায়েন্ট যোগাযোগ করলে তাকে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা। কাজের পদ্ধতি ও সময় সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা। 
  • কাজটির বিষয়ে ক্লায়েন্টের বিশেষ কোনো চাওয়া আছে কি না, তা জেনে নেওয়া। 

ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকায় বাইক
ফ্রিল্যান্সিং করে যা আয় করেন, সানি তার অনেকটাই খরচ করে ফেলেন টিমমেটদের জন্য। তারপরও নিজের আয়ে তিনি একটি বাইক কিনেছেন। মনের মতো সাজিয়েছেন নিজের ফ্ল্যাট বাড়ি। আবার অসহায়, গরির, দুস্থদেরও তিনি সাহায্য করেন সাধ্যমতো। 

ভবিষ্যৎ-ভাবনা
গরির ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়ে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করবেন—এটাই সানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত