বিশ্বে বাংলা ‘লো রিসোর্স ভাষা’ হিসেবে পরিচিত: ড. জাফর ইকবাল 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮: ২৭

বাংলা ভাষাকে সারা বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রযুক্তিবিদেরা অনেক কাজ করছেন। তা দেশের অনেক ভাষাবিদেরা কোনোদিন চিন্তাও করতে পারবেন না। এত সমৃদ্ধ একটি ভাষা সারাবিশ্বে ‘লো রিসোর্স ভাষা’ হিসেবে পরিচিত। এটা আমাদের জন্য অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে আগারগাঁওস্থ আইসিটি টাওয়ার মিলনায়তনে ‘বাংলার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ প্রতিযোগিতার বিজয়ী দলগুলোর মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক জাফর ইকবাল একথা বলেন। 

অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ করে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার জন্য এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদেরা কোনো দিন একুশে পদক বা বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাবে না। যদিও তাঁরা পুরস্কারের আশায় এসব করছেন না। এসব কাজের জন্য প্রচুর গবেষণা দরকার।  আর এই গবেষণার জন্যই বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এত সমৃদ্ধ একটি ভাষা সারা বিশ্বে “লো রিসোর্স ভাষা” হিসেবে পরিচিত। যা আমাদের জন্য অপমানজনক। এই অপমান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তার জন্য প্রতিনিয়ত আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি, একটা সময়ে গিয়ে আর বলতে হবে না, বাংলা ভাষা একটি “লো রিসোর্স ভাষা”।’ 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এনএম জিয়াউল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাবিল মুহাম্মদ। 

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক (গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়ন) এহছানুল পারভেজের সভাপতিত্বে ‘বাংলার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দশটি দল ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন, প্রথম, দ্বিতীয় রানার্সআপ পুরস্কার দেওয়া হয়। আর বাকি সাতটি দল বা প্রতিষ্ঠানকে সম্মানসূচক পুরস্কার দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের উদ্যোগে বাংলা ভাষাভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন টেকনোলজি তৈরি ও বাংলা এনএলপি গবেষণায় উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। 

প্রতিযোগিতায় তরুণ গবেষক ও ডেভেলপারদের কাছে বাংলা ভাষাভিত্তিক ‘ডেটাসেট’, ‘মডেল’ কিংবা ‘ওয়ার্কিং-প্রটোটাইপ’ আহ্বান করা হয়। মুহম্মদ জাফর ইকবালের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ বিচারক প্যানেল প্রতিযোগিতায় প্রাপ্ত ১৬১টি উদ্ভাবনী আইডিয়ার মধ্যে থেকে তিন ধাপে শীর্ষ ১০টি প্রকল্প নির্বাচন করেন। 

নির্বাচিত দশটি প্রকল্প হলো— এক্সএমএল ইন্ডিক দলের ‘ভারতীয় ভাষাসমূহের মডেলিং’, সাস্ট ড্রিমার্স দলের ‘এনএলপি বাংলা টুলকিট’, অভিযাত্রিক দলের ‘বাংলা হাতের লেখাকে কম্পোজে রূপান্তর’, ইন্টেলিজেন্ট মেশিনস লিমিটেডের ‘রশিদে লিখিত বাংলা হাতের লেখার রিডিং’, অনুমিতি দলের ‘ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ ইনফারেন্স ডেটাসেট’, বিয়ন্ড দ্য হিলস দলের বাংলাদেশের ইন্ডিজেনাস কমিউনিটির জন্য অনুবাদ টুলস তৈরি, একুশ দলের ‘বাংলা হাতের লেখা ডেটাসেট’, ড্যাব দলের ‘বাংলা অথরশিপ অ্যাট্রিবিউশন’, রক্তিম দলের ‘বাংলা এনইআর ডেটাসেট’ এবং ইনোভেশন গ্যারেজের ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ডক-রিডার’।

‘হাতের লেখা ও প্রিন্টেড ডকুমেন্টে বাংলা বর্ণ শনাক্তকরণ’ প্রকল্পের জন্য ‘অভিযাত্রিক’ দলকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। আর শীর্ষ দশ প্রকল্পকে সর্বমোট ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রাইজমানি দেওয়া হয়।

ইন্টেলিজেন্ট মেশিনস লিমিটেড ও বুয়েট অনুমিতি দল তাদের প্রস্তাবের জন্য যৌথভাবে দ্বিতীয় রানার্সআপ নির্বাচিত হয়। বাংলা এনএলপি টুল কিডের জন্য রানার্সআপ হয়েছে সাস্ট ড্রিমার্স।

অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার বিচারক, সাংবাদিক, বাংলা ভাষা বিশেষজ্ঞ, প্রযুক্তিবিদ, বেসিস ও আইসিটি-সংশ্লিষ্টদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত