বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির ক্ষতি এবং দৃষ্টি শক্তিসহ বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার প্রধান ঝুঁকির কারণ এটি। এই ধরনের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ
হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকেরা। এগুলোর মধ্যে পুরো বিশ্বে প্রচলিত একটি সাধারণ ওষুধ হলো—বিটা ব্লকার। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের পর যাদের হৃদ্যন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে তাঁদের দীর্ঘ মেয়াদে এই ওষুধ সেবনের প্রয়োজনীয়তা নাও থাকতে পারে।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেছেন, ‘অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট ও লবণ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের উচ্চ রক্তচাপজনিত বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি এবং মৃত্যু বাড়ছে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপের জন্য ঝুঁকি।’
দেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনি রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের উচ্চতর ঝুঁকিতে রয়েছেন। কিন্তু দেশের কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সংকট রয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে বিভিন্ন ভুল ধারণা। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি হলো, উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া। কেউ কেউ আবার মনে করেন, খাবার লবণ তাওয়ায় ভেজে খেলে সমস্যা নেই।
ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের তথ্য অনুসারে, উচ্চ রক্তচাপ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুঝুঁকির এক নম্বর কারণ। এটি এমনই একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, যা কার্ডিওভাসকুলার, মস্তিষ্ক এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
সময়মতো উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় এবং চিকিৎসা না হলে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এ রোগে ভুগলেও তাঁরা তা বুঝতে পারেন না। বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। কিন্তু কোনো লক্ষণ থাকে না এ রোগের
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কিছু পরিস্থিতিতে এটি বিপজ্জনক হতে পারে। সেসব পরিস্থিতিতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
অনেকেরই কোনো কোনো খাবার খাওয়ার পর শরীরে কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চুলকানি, ত্বক ফুলে যাওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, জিহবা ফুলে যাওয়া, হাঁচি-কাশি, বমি, রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। আবার কিছু কিছু খাবারে হজমের সমস্যাও হতে পারে। এসবের কারণ হিসেবে সাধারণভাবে ফুড অ্যালার্জিকে দায়ী করা হয়। তবে
উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত ৪৬ শতাংশ মানুষ জানেন না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। এটি একটি নীরব ঘাতক। অধিকাংশ সময়ে এই রোগের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না। উচ্চরক্তচাপে যে কোনো মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এটা সাধারণত জীবনাচরণ বা বংশগত কারণে হয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও কিডনি
বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় হৃদ্রোগে। এ ছাড়া প্রায় ২ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। অতিরিক্ত সোডিয়াম (লবণ) গ্রহণ হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকসহ উচ্চ রক্তচাপের জটিলতার প্রধান কারণ। যা খাবারে লবণ গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সহজেই কমিয়ে আনা সম্ভব...
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিংবা অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিস থাকলে স্নায়ু বা নার্ভের যে সমস্যা হয়, সেটাই ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি। এর প্রধান প্রতিরোধ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণে রাখা।
বিবাহিত জীবনের প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে। কিন্তু কর্মব্যস্ততার জন্য দিনটি বেমালুম ভুলে গেছেন। বিবাহিত জীবনের প্রথম ভালোবাসা দিবস কি এড়িয়ে যাওয়া যায়! তারপর কী করবেন কী করবেন, ভাবতে ভাবতে রক্তচাপ বেড়ে গেল! এমন হয়নি তেমন মানুষ বিশেষ করে পুরুষ খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন বৈকি।
‘হাইপারটেনশন’ বা উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। হাইপারটেনশনের কারণে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, কিডনি, হৃদ্রোগসহ বহুবিধ রোগের বৃদ্ধি ও ঝুঁকি—দুই-ই বেড়ে যাচ্ছে। অসচেতনতা এবং অজ্ঞতার কারণে হাইপারটেনশন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সব বয়সভেদেই হাইপারটেনশন ক্রমেই বাড়ছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ তালিকায় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশে উচ্চ রক্তচাপজনিত অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে সৃষ্ট উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে যোগাসন। এজন্য দৈনিক অন্তত ৪৫ মিনিট যোগাসন করার পরামর্শ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব হাইপারটেনশন। পাশাপাশি দৈনিক গান শোনা, যোগ ব্যায়াম ও মননশীলতার চর্চা করতে পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালিতে নাইট্রিক অক্সাইডের প্রভাব সম্পর্কে ফেরিদ মুরাদের গবেষণা হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসায় ব্যাপক অগ্রগতি এনে দিয়েছে। এই কাজের জন্য ১৯৯৮ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে তিনই যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান।