বাসে বসারও জায়গা পেল না করোনা

গোলাম ওয়াদুদ
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ২৭

করোনাভাইরাসের কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাচ্ছে নিজেকে। জীবনের তাগিদেই বহুরূপী হয়ে উঠতে হচ্ছে আমাদের। করোনাভাইরাসও বসে নেই। নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য রূপ বদলাচ্ছে। কারণ সেও বাঁচতে চায়। যুগ যুগ ধরে এই পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াতে চায় করোনা। এক রূপে থাকলে তো বহুরূপে পারদর্শী মানুষের বিরুদ্ধে বেশি দিন টেকা কঠিন। তাই হয়তো দুনিয়ার একেক প্রান্তে একেক রূপে হাজির হচ্ছে করোনা। তবে কি মানুষের কাছ থেকেই নিজেকে বদলানোর শিক্ষা নিল এই ভাইরাস? 

হতেই পারে। সবাই তো দেখেই শেখে। করোনা কখনো সাধারণ থাকছে, আবার কখনো ধারণ করছে ডেলটা নাম। এখন হয়েছে ওমিক্রন। শোনা যাচ্ছে, এই ডেলটা আর ওমিক্রনের মধ্যেও নাকি গোপন আঁতাত হতে চলেছে। একটু-আধটু শোনা যাচ্ছে ডেলটাক্রনের নাম। 

যাই হোক, যে যার মতো বাঁচার জন্য রূপ ধারণ করছে। করতেই পারে, তা দোষের কিছু নয়। তবে মানুষের বিরুদ্ধে করোনার জয়যাত্রা অব্যাহত রাখা দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বেও পড়ে যাচ্ছে করোনা। ভাইরাস কখন, কোথায় বিচরণ করবে, তা যে মানুষ ঠিক করে দিচ্ছে! যেমন ধরুন অমুক তারিখ থেকে অমুক সময়ের মধ্যে বাইরে বের হওয়া যাবে না বা এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে। করোনা ভাবতে পারে, ‘ওরা কীভাবে জানল! নিশ্চয়ই আমার ঘরে বিভীষণ আছে।’

আবার নিজের চলাফেরার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে করোনা হয়তো নিজেকেই বদলে ফেলল। তৈরি হয়ে গেল নতুন রূপ, রং। কিন্তু বাবা করোনা, ইহা মানুষ! সুবিধে করা কি এতই সহজ? 

এই যেমন করোনাকে আটকাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিত্যনতুন নির্দেশনা দিচ্ছে মানুষ। ওই নির্দেশনাগুলোও ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তন তো আসলে চলমান প্রক্রিয়া। ধরুন, এই বঙ্গে এসব নির্দেশনার একটি হচ্ছে গণপরিবহনে চলাচল নিয়ে। প্রথমে বলা হলো, অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে চলবে সব গণপরিবহন। করোনা ভাবল এক সিট ফাঁকা থাকবে, সেখানে একটু বসার জায়গা মিলবে! কাঁহাতক আর বিনা টিকিটে দাঁড়িয়ে থাকা যায়! যেহেতু এক সিট খালিই আছে, একটু গায়ের কাঁটাগুলোকে আরাম তো দেওয়া যাবে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর করোনার এই স্বস্তির কথা জেনে গেল কর্তৃপক্ষ। বদলে গেল ঘোষণা। বলা হলো, বাসের সব সিটেই যাত্রী নেওয়া যাবে। তাহলে কি করোনার ঘরেই আছে শত্রু বিভীষণ? নইলে এভাবে করোনার দুদণ্ড বসার জায়গা কেড়ে নেওয়ার মতো অভিনব সিদ্ধান্ত এত তড়িৎগতিতে নেওয়া হলো কেন?

জানা গেছে, সকাল থেকেই বাস চলছে করোনার ভয় মাথায় নিয়ে। আমি সকাল সকাল রাস্তায় নেমেছিলাম দাঁড়িয়ে থাকা করোনার অবস্থা দেখতে। দুই চোখে ধরা পড়ল, সকাল থেকেই চালকের সহকারীরা বাসের দরজায় একটু পর পর কী যেন ছিটাচ্ছেন। হতে পারে স্যানিটাইজার বা সাবানগোলা পানি। যাত্রীদের মাস্ক পরে গাড়িতে উঠতেও বলা হচ্ছে তারস্বরে। করোনার বিরুদ্ধে একেবারে যুদ্ধংদেহী রূপে এবার আমরা।

একটি বাসে উঠে দেখা গেল, একজন মাস্ক ছাড়াই উঠে পরল। না না, থুতনিতেও ছিল না। বাসের চালকের সহকারী তাঁকে পরতে বললেন মাস্ক। কিন্তু ওই যাত্রী আবার খুবই সরলসিধে, নিজের রূপ পরিবর্তন করতে রাজি নন। বলেই দিলেন, ‘করোনার ভয়ে মুখ ঢাকব কেন?’ 

এই চরম বিপ্লবী মানুষটিকেই নরম করার দায়িত্ব নিলেন বাসের চালকের সহাকারী। ভাড়া নিতে এসে শুনিয়ে দিলেন দুটো দারুণ কথা। বললেন, ‘সামনে মোবাইলকোর্ট আছে। একটু মাস্ক পরেন। আপনি পাঁচ ট্যাকা ভাড়া কম দেন, তাও মাস্ক পরেন। পুলিশ ধরলে তো আমারে ধরবে।’ 

কিন্তু কম ভাড়া বা শাস্তির ভয়, কোনো কিছুই ওই বিপ্লবীকে দমাতে পারল না। তিনি খোলা মুখেই রইলেন। আচ্ছা, এমন ‘অহেতুক’ সাহস দেখে কি করোনাও ভয় পেতে পারে? আমার মনে হয়, এরই মধ্যে ভয় পেয়েও গেছে। যদি ওই বাসে থেকেও থাকে, সেক্ষেত্রে ওই যাত্রীর ‘হায়াহীন’ মুখ দেখে নেমে গেছে চুপটি করে!

হয়তো করোনাভাইরাস কষ্টও পেয়েছে। কারণ ভয় দেখাতে তাকে না, বরং ব্যবহার করা হচ্ছে আইন-আদালত। ভাবুন একবার! বিশ্বে ত্রাস ছড়ানো করোনা এই পরিস্থিতিতে পাবে না কি যাতনা? বাস থেকে নেমে করোনা যদি এখন হাতিরঝিলে বসে বসে কাঁদে, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই! 

এখন দেখার বিষয়, দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে করোনা তার ক্ষমতা দেখিয়ে যাবে কি না। বাসের ওই মাস্ক পরতে না চাওয়া দুর্দমনীয় যাত্রীটির মতো মনুষ্যসন্তান যে এখানে হরেদরে মেলে। মাস্ক না পরাকে তাঁরা ভাবেন সাহসী পদক্ষেপ। সেই সাহসকেই যে করোনা ‘বাঁশ’ হিসেবে ব্যবহার করে, তা যদি তাঁরা বুঝতেন!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত