পর্বতের মাঝে ওটা কী? গর্ত, নাকি গুহা

ইশতিয়াক হাসান
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ৫৯
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ৩০

চীনের হুনান প্রদেশের ঝাংজিয়াজি শহর থেকে উঠে পড়বেন তিয়ানমেন মাউন্টেন ক্যাব্‌লওয়ের কোনো কারে। পরের আধা ঘণ্টায় ক্যাব্‌ল কারে চেপে ৪ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় উঠবেন, পৌঁছে যাবেন তিয়ানমেন পর্বতের চূড়ার কাছাকাছি। প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার ফুটের এই ক্যাব্‌ল কার যাত্রার শেষে আপনার সামনে পড়বে আশ্চর্য সুন্দর এক সিঁড়ি, যেটি পেরোনোর পর পৌঁছে যাবেন পাহাড়মাঝের অদ্ভুত এক জায়গায়। স্থানীয়দের কাছে এটি পরিচিত ‘গেটওয়ে টু হ্যাভেন’ বা ‘স্বর্গের প্রবেশদ্বার’ নামে। 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ফুট উচ্চতায় তিয়ানমেন গুহার অবস্থান। সাধারণ আর দশটি গুহার সঙ্গে একে মেলাতে পারবেন না। দেখে মনে হবে গুহা নয় বরং পর্বতের গায়ে বিশাল এক গর্ত। স্থানীয়দের কাছে জায়গাটাই সব সময়ই পবিত্র, রহস্যময়। তাই এর নামই দিয়ে দিয়েছে তাঁরা ‘স্বর্গের প্রবেশদ্বার’। অবশ্য বিশাল এই গর্তটা এমন যে, দূর থেকে দেখলে আপনার মনে হবে এর অপর পাশে নিশ্চয় বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। 

একে আলাদা করে তুলতে সাহায্য করেছে এখানকার আবহাওয়াও। কখনো কুয়াশায় ঢাকা থাকে গোটা এলাকা। কুয়াশাকে পিছু হটিয়ে যখন সূর্যরশ্মি দেখা দেয়, তখন মনে হয় কোনো এক ভোজবাজিতে হাজির হয়ে গেছে বিশাল সেই গর্ত। আবার কখনো ঝাঁঝাঁ রোদে গুহার দিকে তাকাতেই বেগ পেতে হবে। 

প্রচুর পর্যটক ভিড় জমান তিয়ানমেন পর্বতেতিয়ানমেন বা তিয়ানমেন শান পর্বতের রোপওয়েটি নির্মাণ করা হয় ২০০৫ সালে। ৯৮টি কার এখানে পর্যটকদের সেবা দেয়। চূড়ার কাছাকাছি পৌঁছার আগে ক্যাব্‌ল কারের পথটি অনেক খাঁড়া, রোমাঞ্চকর।

তবে গর্তটি পর্যন্ত পৌঁছাতে হলে পর্যটকদের অবশ্যই ৯৯৯টি সিঁড়ি টপকাতে হবে, যেটি আবার পরিচিত ‘স্টেয়ারওয়ে টু হ্যাভেন’ বা ‘স্বর্গের সিঁড়ি’ নামে। চীনা নিউমোরোলজি অনুসারে ৯ একটি শুভ সংখ্যা। অবশ্য কেউ যদি পর্বতচূড়ায় বা গুহার কাছাকাছি পৌঁছাতে ক্যাব্‌ল কার ব্যবহার করতে না চান, তাঁকে বাসে চেপে আঁকাবাঁকা একটু সরু পথ পাড়ি দিতে হবে। ১১ কিলোমিটার এই রাস্তায় বাঁক আছে ৯৯টি। 

সবুজের মাঝখানে বিশাল এক গর্তআবহাওয়া ঠিক থাকলে সিঁড়িপথের গোড়া থেকেই দেখবেন মুখ ব্যাদান করে আছে গুহা কিংবা গর্তটি। সিঁড়িগুলো পাথুরে। চওড়া পথ ধরে ধীরে-সুস্থে পৌঁছে যেতে পারবেন গর্তটির কাছে।  

এবার বিশাল সেই গর্ত কিংবা গুহা সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। এটির দৈর্ঘ্য বা উচ্চতা ৪৩০ ফুট, চওড়া ১৯০ ফুট। শুনে অবাক হবেন, বহু আগে এটির সঙ্গে সাধারণ আর দশটি গুহার খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। যত দূর জানা যায়, ২৬৩ সালে পর্বতের দেয়ালের একটি পাশ ধসে পড়লে গুহাটি এমন চেহারা পেয়ে যায়। তবে স্থানীয়দের সামনে এই তত্ত্ব প্রকাশ করলে ঝামেলায় পড়তে পারেন। কারণ তাঁদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, গর্তটির জন্মই এক রহস্য। মানে, কীভাবে এটির এমন চেহারা হয়েছে তা কেউ বলতে পারবে না, যা পবিত্র পর্বত হিসেবে তিয়ানমেনের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ায়। তা ছাড়া তাঁরা মনে করেন, তিয়ানমেন শান হলো দেবতাদের রাজ্য। 

ক্যাব্‌ল কারে চেপে ৪ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় পৌঁছে যাবেনআগ্রহী পর্যটকেরা তিয়ানমেন শান পর্বতের মন্দিরটিও ঘুরে আসতে পারেন। পর্বতচূড়ায় এর অবস্থান। ৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মূল বৌদ্ধমন্দিরটি বিশ শতকের গোড়ার দিকে ধ্বংস হয়ে যায়। পরে ১৯৪৯ সালে নতুন একটি মন্দির তৈরি শুরু হয়। পুরোনো মন্দিরটির স্থাপত্য অনুসরণ করে বানানো নতুন মন্দিরটি এখন দাঁড়িয়ে আছে। গোটা মন্দির এলাকার আয়তন দুই হেক্টর। অনেকে পশ্চিম হুনান অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচনা করেন একে। 

সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেইজার ডট কম, উইকিপিডিয়া, এটলাস অবসকিউরা

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত