ফজলুল কবির
‘বিপুল গভীর মধুর মন্দ্রে/কে বাজাবে সেই বাজনা!/উঠিবে চিত্ত করিয়া নৃত্য,/বিস্মৃত হবে আপনা।’ আপনাকে ভুলিয়ে দেওয়ার মতো করে রবিঠাকুরের চিত্ত কখনো নেচে উঠেছিল কি না, কিংবা সেই অন্তরের নৃত্য বহিরাঙ্গে প্রকাশ পেয়েছিল কি না, নাকি সেই বাজনদারের অভাবে আর নাচটা হয়ে ওঠেনি, তার তত্ত্বতালাশ রবি-বিশেষজ্ঞ দিতে পারবেন। কিন্তু বাজনদারের অপেক্ষা ছাড়াই যে কতজন আক্ষরিক অর্থেই নাচতে নাচতে মরে গেল, তার খোঁজ কে রাখে।
শুনে একটু কেমন লাগলেও ঘটনা কিন্তু সত্য। ভাবুন, কোনো একজন বা একদল লোক নেচে যাচ্ছে, অনবরত, সকাল থেকে সন্ধ্যা, দিনের পর দিন, এমনকি সপ্তাহ পেরিয়ে। তাদের থামানো যাচ্ছে না। যারা আসছে তাদের দেখতে, তাদেরও কেউ কেউ যোগ দিচ্ছে নাচে। বহর বাড়ছে। ‘আপনা’ বিস্মৃত হয়ে তারা শুধু নেচেই যাচ্ছে। শহরের বাঁধানো রাস্তা বা পাহাড়ি পথে তারা নাচছে। তাদের কেউ কেউ হয়তো নাচতে নাচতে উঠছে পাহাড়ে, চলছে পথ। একেবারে অপ্রতিরোধ্য তাদের এই নৃত্যরোখ।
এমন ঘটনা একটি-দুটি নয়, অনেকগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও বিখ্যাত ঘটনাটি ফরাসি দেশের। ফ্রান্সের স্ত্রাসবুগ শহরে ১৫১৮ সালে দেখা মিলেছিল এই নৃত্যরোখের। রোখ বলা হচ্ছে কারণ, ওই নাচ ছিল একেবারে অনিয়ন্ত্রিত। সেই নাচ ও মৃত্যুর আখ্যান নিয়ে লেখা হয়েছে বিস্তর কবিতা, গদ্য, গল্প, আরও কত- কী।
জুলাই মাস। গ্রীষ্মকাল। বেশ গরম পড়েছে। বৃষ্টির দেখাহীন সেই জুলাইয়ের এক দুপুরে ফো তোফ নামের এক নারী স্ত্রাসবুগ শহরের একটি চত্বরে এগিয়ে এলেন। কোনো বাজনদার নেই আশপাশে। নেই কোনো আয়োজন। তবু সেই নারী নাচতে শুরু করলেন। প্রকাশ্য পথে এই নাচ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সময় লাগেনি। আশপাশের পথচলতি মানুষেরা একটু একটু করে আগ্রহী হয়ে উঠল। তাকে ঘিরে ভিড় হয়ে গেল। তারা এমন এক নারীর নাচ দেখতে লাগলেন, যে কখনো থামতে পারবে না, থামার শক্তিই নেই তার। সংগীতের আয়োজনহীন সেই নাচ চলল প্রায় এক সপ্তাহ। না, এই একটানা নাচ তিনি একইভাবে নেচে যেতে পারেননি। তিনি শক্তি হারিয়েছেন। তাঁর পদস্খলন হয়েছে। মাটিতে পড়ে গেছেন। আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। যেন এ এক দারুণ দায়, যা তাঁকে চোকাতে হবে। কিন্তু নেচে নেচে তিনি কোথায় কিসের দায়ভোগ করছেন?
যতক্ষণে ফো তোফকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলো, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরও অনেকে যোগ দিয়েছে সেই নাচে। দল ভারী হয়ে গেছে। কতজন? বিবিসি বলছে, শত শত। কোনো ব্যাখ্যা নেই। তারা নেচেছে বাধ্যের মতো, যেন নাচতে তাদের হবেই। পা থেকে রক্ত ঝরছে, পেশিতেও পড়েছে টান, তবু থামার নাম নেই কারও। যেন এই নেচে যাওয়াই নিয়তি। সে সময়ের এক পত্রিকায় সে ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছিল, উন্মুক্ত বাজারে রাত-দিন যে নারী-পুরুষেরা নাচতে শুরু করেছিল, শুরু করেছিল খোঁড়ানো, তারা সেই রোগ থেকে সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত শুধু নেচেই গেছে। আরেক খবরে জানা যায়, বাজনদার আসতে সময় লাগেনি। কর্তৃপক্ষ এই নাচ থামাতে একজন সত্যিকারের নৃত্যশিল্পীকে নিয়োগও দিয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি।
অন্য আরেক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ওই ‘নৃত্যপাগল’ মানুষদের কর্তৃপক্ষ নিয়ে গিয়েছিল শহরের বাইরে সেন্ট ভিটাস সমাধিতে। সেখানে তাদের দেওয়া হয় ছোট ছোট ক্রুশ, আর লাল জুতো।
কী হয়েছিল সেই মানুষদের? তারা কি নাচ থামিয়েছিল? না। অনেকে নাচতে নাচতে মরে গিয়েছিল। কেউ হার্ট অ্যাটাকে, কেউ স্ট্রোকে, তবু নাচ থামেনি। কতজন মরেছিল? এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা জানাচ্ছে, নাচতে নাচতে মরে যাওয়া লোকের সংখ্যা ১০০-এর আশপাশে। ইতিহাসে এই ঘটনা ‘ড্যান্স প্লেগ’ নামে পরিচিত।
কথা হলো ড্যান্স প্লেগ কি শুধু এই একবারই দেখা দিয়েছিল। সত্যিকারের নৃত্যপাগল মানুষের দেখা কি আর মেলেনি? মিলেছে। মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের প্রথম পর্বে এমন নজির আছে ইউরোপেই। কখনো জার্মানি, কখনো ইংল্যান্ডে এমন ঘটনা ঘটেছে। তার আগেও হয়েছে। জানা ইতিহাসে প্রথম এমন ঘটনা ঘটেছিল সপ্তম শতকে জার্মানির বার্নবার্গে। ১০২০ সালে সেই একই এলাকায় এর পুনরাবৃত্তি ঘটে। এরপর ১২৩৭ সালে আবার। এবারও জার্মানি। এবার নাচে মশগুল হলো একদল শিশু। তারা নাচতে নাচতে জার্মানির আরফার্ট থেকে আর্নস্টাড শহরে গেল। এই দুই শহরের দূরত্ব কত? ১২ মাইল বা ২০ কিলোমিটার। ১২৭৮ সালে জার্মানির মাইজা নদীর ওপর এক সেতুতে উঠে গেল ২০০ লোক। তারা সেই সেতুর ওপরই নাচতে শুরু করল। ফলাফল? সেতুটি আর টিকল না। ভেঙে নাচে মশগুল সবাইকে নিয়ে জলে গেল সেই সেতু। ১৩৭৩ থেকে ১৩৭৪ সময়ে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ডে এই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ল।
এর সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে সামনে আছে নিউইয়র্ক। ২০১১ সালে নিউইয়র্কের লি রয় জুনিয়র-সিনিয়র হাইস্কুলে ১২ জন কিশোরী হঠাৎ শরীর বাঁকানো শুরু করে। কোনোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষক্রিয়া হতে পারে—এমন যেকোনো ধরনের খাবার নিষিদ্ধ করে।
কথা হলো কেন এমন হয়? আগে একসময় বলা হতো এটা দৈব ঘটনা। কেউ বলত, এই নৃত্যপাগলেরা স্বর্গীয় আশীর্বাদপুষ্ট, আবার কেউ বলত, তাদের ওপর শয়তানের আছর হয়েছে। এদের প্রতি নির্দয় আচরণ করা হতো। যাজকেরা নেমে আসতেন উচিত শিক্ষা দিতে। স্ত্রসবুগের ধর্মযাজক সেবাস্তিয়ান ব্রাঁ এক প্রহসনে লিখেছিলেন, ‘নাচ ও পাপ সমগোত্রীয়।’
কিন্তু এই পাপ-বিষয়ক ধারণায় মানুষ অন্ধ হয়ে বসে থাকেনি। তারা এর কারণ অনুসন্ধান করেছে। স্ত্রসবুগের ঘটনার কয়েক বছর পর প্যারাসেলাস নামের এক চিকিৎসক বললেন, এটা দৈব কিছু নয়, বরং মর্ত্যের কারবার। শরীরের শিরা-উপশিরায় এমন কিছু ঘটে, যাতে মানুষ আর স্থির থাকতে পারে না। অঙ্গগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই নিয়ন্ত্রণহীন অঙ্গসঞ্চালন ততক্ষণ পর্যন্ত চলে, যতক্ষণ না তার উন্মত্ত রক্ত স্থির না হয়।
না, প্যারাসেলাসের এই ব্যাখ্যা পরে পাল্টেছে। এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে। প্যারাসেলাস এমন ঘটনার জন্য শয়তান বা ঈশ্বর নয়, বরং কল্পনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করেছিলেন। তাঁর এই শেষ কারণটি কিন্তু এখনকার তত্ত্বগুলোর সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়। এখন এই ধরনের ঘটনার জন্য মানসিক অসুস্থতাকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়। আর এই মানসিক অসুস্থতার পেছনে ভঙ্গুর রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা হয় কোনো কোনো তত্ত্বে।
শুরুতে অবশ্য অনেক ধরনের ব্যাখ্যা দাঁড়িয়েছিল। এর মধ্যে আছে রাই শস্যের ডালপালা খাওয়া বা অনুরূপ কিছু খাওয়ার কারণে বিষক্রিয়ার কথাও। একে একেবারে উড়িয়ে দেননি বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, কিছু প্রাকৃতিক গাছ-গাছড়া আছে, যেগুলো একধরনের কল্পনার জগতে নিয়ে যায় মানুষকে। যেগুলোতে ঠিক সেই ধর্ম আছে, যা আছে হালের হাইকাডেলিক ড্রাগ লিসারজিক অ্যাসিড ডাইইথাইলঅ্যামাইডের (এলএসডি) মধ্যে।
ইতিহাসবিদ জন ওয়েলারকে উদ্ধৃত করে হিস্টোরি ডেইলি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, এই প্লেগ সম্ভবত গণহিস্টিরিয়ার একটি উদাহরণ হতে পারে, যা দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলেই দেখা দিয়েছিল। এখন বিজ্ঞানীরা অবশ্য এসব কারণকে উড়িয়ে না দিয়েই জানাচ্ছেন এক স্নায়বিক রোগের কথা, যাকে বলা হচ্ছে ডিসকিনেসিয়াস। আর সাধারণ্যে একে ডাকা হয় কোরিওম্যানিয়া নামে, যার অর্থ ‘নাচের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি’। এর মূল এসেছে গ্রিক থেকে। অর্থাৎ গ্রিসও এর বাইরে ছিল না। এশিয়ায় এর খোঁজ মিলেছিল সিঙ্গাপুরে ১৯৭৩-৭৮ সময়ে। সে সময় দেশটির কিছু কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ দেখা দিয়েছিল। এই বঙ্গে কখনো দেখা দিয়েছিল কি না, কে জানে।
‘বিপুল গভীর মধুর মন্দ্রে/কে বাজাবে সেই বাজনা!/উঠিবে চিত্ত করিয়া নৃত্য,/বিস্মৃত হবে আপনা।’ আপনাকে ভুলিয়ে দেওয়ার মতো করে রবিঠাকুরের চিত্ত কখনো নেচে উঠেছিল কি না, কিংবা সেই অন্তরের নৃত্য বহিরাঙ্গে প্রকাশ পেয়েছিল কি না, নাকি সেই বাজনদারের অভাবে আর নাচটা হয়ে ওঠেনি, তার তত্ত্বতালাশ রবি-বিশেষজ্ঞ দিতে পারবেন। কিন্তু বাজনদারের অপেক্ষা ছাড়াই যে কতজন আক্ষরিক অর্থেই নাচতে নাচতে মরে গেল, তার খোঁজ কে রাখে।
শুনে একটু কেমন লাগলেও ঘটনা কিন্তু সত্য। ভাবুন, কোনো একজন বা একদল লোক নেচে যাচ্ছে, অনবরত, সকাল থেকে সন্ধ্যা, দিনের পর দিন, এমনকি সপ্তাহ পেরিয়ে। তাদের থামানো যাচ্ছে না। যারা আসছে তাদের দেখতে, তাদেরও কেউ কেউ যোগ দিচ্ছে নাচে। বহর বাড়ছে। ‘আপনা’ বিস্মৃত হয়ে তারা শুধু নেচেই যাচ্ছে। শহরের বাঁধানো রাস্তা বা পাহাড়ি পথে তারা নাচছে। তাদের কেউ কেউ হয়তো নাচতে নাচতে উঠছে পাহাড়ে, চলছে পথ। একেবারে অপ্রতিরোধ্য তাদের এই নৃত্যরোখ।
এমন ঘটনা একটি-দুটি নয়, অনেকগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও বিখ্যাত ঘটনাটি ফরাসি দেশের। ফ্রান্সের স্ত্রাসবুগ শহরে ১৫১৮ সালে দেখা মিলেছিল এই নৃত্যরোখের। রোখ বলা হচ্ছে কারণ, ওই নাচ ছিল একেবারে অনিয়ন্ত্রিত। সেই নাচ ও মৃত্যুর আখ্যান নিয়ে লেখা হয়েছে বিস্তর কবিতা, গদ্য, গল্প, আরও কত- কী।
জুলাই মাস। গ্রীষ্মকাল। বেশ গরম পড়েছে। বৃষ্টির দেখাহীন সেই জুলাইয়ের এক দুপুরে ফো তোফ নামের এক নারী স্ত্রাসবুগ শহরের একটি চত্বরে এগিয়ে এলেন। কোনো বাজনদার নেই আশপাশে। নেই কোনো আয়োজন। তবু সেই নারী নাচতে শুরু করলেন। প্রকাশ্য পথে এই নাচ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সময় লাগেনি। আশপাশের পথচলতি মানুষেরা একটু একটু করে আগ্রহী হয়ে উঠল। তাকে ঘিরে ভিড় হয়ে গেল। তারা এমন এক নারীর নাচ দেখতে লাগলেন, যে কখনো থামতে পারবে না, থামার শক্তিই নেই তার। সংগীতের আয়োজনহীন সেই নাচ চলল প্রায় এক সপ্তাহ। না, এই একটানা নাচ তিনি একইভাবে নেচে যেতে পারেননি। তিনি শক্তি হারিয়েছেন। তাঁর পদস্খলন হয়েছে। মাটিতে পড়ে গেছেন। আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। যেন এ এক দারুণ দায়, যা তাঁকে চোকাতে হবে। কিন্তু নেচে নেচে তিনি কোথায় কিসের দায়ভোগ করছেন?
যতক্ষণে ফো তোফকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলো, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরও অনেকে যোগ দিয়েছে সেই নাচে। দল ভারী হয়ে গেছে। কতজন? বিবিসি বলছে, শত শত। কোনো ব্যাখ্যা নেই। তারা নেচেছে বাধ্যের মতো, যেন নাচতে তাদের হবেই। পা থেকে রক্ত ঝরছে, পেশিতেও পড়েছে টান, তবু থামার নাম নেই কারও। যেন এই নেচে যাওয়াই নিয়তি। সে সময়ের এক পত্রিকায় সে ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছিল, উন্মুক্ত বাজারে রাত-দিন যে নারী-পুরুষেরা নাচতে শুরু করেছিল, শুরু করেছিল খোঁড়ানো, তারা সেই রোগ থেকে সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত শুধু নেচেই গেছে। আরেক খবরে জানা যায়, বাজনদার আসতে সময় লাগেনি। কর্তৃপক্ষ এই নাচ থামাতে একজন সত্যিকারের নৃত্যশিল্পীকে নিয়োগও দিয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি।
অন্য আরেক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ওই ‘নৃত্যপাগল’ মানুষদের কর্তৃপক্ষ নিয়ে গিয়েছিল শহরের বাইরে সেন্ট ভিটাস সমাধিতে। সেখানে তাদের দেওয়া হয় ছোট ছোট ক্রুশ, আর লাল জুতো।
কী হয়েছিল সেই মানুষদের? তারা কি নাচ থামিয়েছিল? না। অনেকে নাচতে নাচতে মরে গিয়েছিল। কেউ হার্ট অ্যাটাকে, কেউ স্ট্রোকে, তবু নাচ থামেনি। কতজন মরেছিল? এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা জানাচ্ছে, নাচতে নাচতে মরে যাওয়া লোকের সংখ্যা ১০০-এর আশপাশে। ইতিহাসে এই ঘটনা ‘ড্যান্স প্লেগ’ নামে পরিচিত।
কথা হলো ড্যান্স প্লেগ কি শুধু এই একবারই দেখা দিয়েছিল। সত্যিকারের নৃত্যপাগল মানুষের দেখা কি আর মেলেনি? মিলেছে। মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের প্রথম পর্বে এমন নজির আছে ইউরোপেই। কখনো জার্মানি, কখনো ইংল্যান্ডে এমন ঘটনা ঘটেছে। তার আগেও হয়েছে। জানা ইতিহাসে প্রথম এমন ঘটনা ঘটেছিল সপ্তম শতকে জার্মানির বার্নবার্গে। ১০২০ সালে সেই একই এলাকায় এর পুনরাবৃত্তি ঘটে। এরপর ১২৩৭ সালে আবার। এবারও জার্মানি। এবার নাচে মশগুল হলো একদল শিশু। তারা নাচতে নাচতে জার্মানির আরফার্ট থেকে আর্নস্টাড শহরে গেল। এই দুই শহরের দূরত্ব কত? ১২ মাইল বা ২০ কিলোমিটার। ১২৭৮ সালে জার্মানির মাইজা নদীর ওপর এক সেতুতে উঠে গেল ২০০ লোক। তারা সেই সেতুর ওপরই নাচতে শুরু করল। ফলাফল? সেতুটি আর টিকল না। ভেঙে নাচে মশগুল সবাইকে নিয়ে জলে গেল সেই সেতু। ১৩৭৩ থেকে ১৩৭৪ সময়ে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ডে এই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ল।
এর সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে সামনে আছে নিউইয়র্ক। ২০১১ সালে নিউইয়র্কের লি রয় জুনিয়র-সিনিয়র হাইস্কুলে ১২ জন কিশোরী হঠাৎ শরীর বাঁকানো শুরু করে। কোনোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষক্রিয়া হতে পারে—এমন যেকোনো ধরনের খাবার নিষিদ্ধ করে।
কথা হলো কেন এমন হয়? আগে একসময় বলা হতো এটা দৈব ঘটনা। কেউ বলত, এই নৃত্যপাগলেরা স্বর্গীয় আশীর্বাদপুষ্ট, আবার কেউ বলত, তাদের ওপর শয়তানের আছর হয়েছে। এদের প্রতি নির্দয় আচরণ করা হতো। যাজকেরা নেমে আসতেন উচিত শিক্ষা দিতে। স্ত্রসবুগের ধর্মযাজক সেবাস্তিয়ান ব্রাঁ এক প্রহসনে লিখেছিলেন, ‘নাচ ও পাপ সমগোত্রীয়।’
কিন্তু এই পাপ-বিষয়ক ধারণায় মানুষ অন্ধ হয়ে বসে থাকেনি। তারা এর কারণ অনুসন্ধান করেছে। স্ত্রসবুগের ঘটনার কয়েক বছর পর প্যারাসেলাস নামের এক চিকিৎসক বললেন, এটা দৈব কিছু নয়, বরং মর্ত্যের কারবার। শরীরের শিরা-উপশিরায় এমন কিছু ঘটে, যাতে মানুষ আর স্থির থাকতে পারে না। অঙ্গগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই নিয়ন্ত্রণহীন অঙ্গসঞ্চালন ততক্ষণ পর্যন্ত চলে, যতক্ষণ না তার উন্মত্ত রক্ত স্থির না হয়।
না, প্যারাসেলাসের এই ব্যাখ্যা পরে পাল্টেছে। এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে। প্যারাসেলাস এমন ঘটনার জন্য শয়তান বা ঈশ্বর নয়, বরং কল্পনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করেছিলেন। তাঁর এই শেষ কারণটি কিন্তু এখনকার তত্ত্বগুলোর সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়। এখন এই ধরনের ঘটনার জন্য মানসিক অসুস্থতাকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়। আর এই মানসিক অসুস্থতার পেছনে ভঙ্গুর রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা হয় কোনো কোনো তত্ত্বে।
শুরুতে অবশ্য অনেক ধরনের ব্যাখ্যা দাঁড়িয়েছিল। এর মধ্যে আছে রাই শস্যের ডালপালা খাওয়া বা অনুরূপ কিছু খাওয়ার কারণে বিষক্রিয়ার কথাও। একে একেবারে উড়িয়ে দেননি বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, কিছু প্রাকৃতিক গাছ-গাছড়া আছে, যেগুলো একধরনের কল্পনার জগতে নিয়ে যায় মানুষকে। যেগুলোতে ঠিক সেই ধর্ম আছে, যা আছে হালের হাইকাডেলিক ড্রাগ লিসারজিক অ্যাসিড ডাইইথাইলঅ্যামাইডের (এলএসডি) মধ্যে।
ইতিহাসবিদ জন ওয়েলারকে উদ্ধৃত করে হিস্টোরি ডেইলি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, এই প্লেগ সম্ভবত গণহিস্টিরিয়ার একটি উদাহরণ হতে পারে, যা দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলেই দেখা দিয়েছিল। এখন বিজ্ঞানীরা অবশ্য এসব কারণকে উড়িয়ে না দিয়েই জানাচ্ছেন এক স্নায়বিক রোগের কথা, যাকে বলা হচ্ছে ডিসকিনেসিয়াস। আর সাধারণ্যে একে ডাকা হয় কোরিওম্যানিয়া নামে, যার অর্থ ‘নাচের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি’। এর মূল এসেছে গ্রিক থেকে। অর্থাৎ গ্রিসও এর বাইরে ছিল না। এশিয়ায় এর খোঁজ মিলেছিল সিঙ্গাপুরে ১৯৭৩-৭৮ সময়ে। সে সময় দেশটির কিছু কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ দেখা দিয়েছিল। এই বঙ্গে কখনো দেখা দিয়েছিল কি না, কে জানে।
৯১১-তে ফোন দিয়ে কত জরুরি প্রয়োজনেই তো সাহায্য চায় মানুষ। তাই বলে নিশ্চয় আশা করবেন না কেউ অঙ্ক মিলিয়ে দিতে বলবে। কিন্তু ৯১১-তে ফোন দিয়ে এ আবদারই করে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের ১০ বছরের এক বালক।
৩ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এক ফ্লাইটের যাত্রীরা অপর এক যাত্রীকে মাঝপথে চেপে ধরে হাত-পা টেপ দিয়ে আটকে দেন। অবশ্য ওই যাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। তিনি উড়োজাহাজটি ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
৩ দিন আগেবিষধর মাকড়সা হিসেবে আলাদা পরিচিতি আছে ট্যারানটুলার। কাজেই একে এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। ট্যারানটুলা একই সঙ্গে বেশ দুষ্প্রাপ্য এক প্রাণীও। তবে সম্প্রতি পেরুতে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে ৩২০টি ট্যারানটুলা মাকড়সাসহ আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রাণী শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা...
৫ দিন আগেপাঠকেরা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে বই ফেরত দিয়ে দেবেন এটাই নিয়ম। কারও কারও সময়মতো বই ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসও আছে। তবে তাই বলে আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না অর্ধ শতাব্দী পর কেউ বই ফেরত দেবেন। কিন্তু সত্যি মার্কিন মুলুকে এমন একটি কাণ্ড হয়েছে।
৫ দিন আগে