চলচ্চিত্রে আত্মবিশ্বাসী হৃদি

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮: ২০
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩: ৪৬

মঞ্চ ও টেলিভিশনের পরিচিত মুখ হৃদি হক এবার নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। তার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন হৃদি। সেই প্রচণ্ড ব্যস্ত সময়ের খানিক পেয়েছিলাম আমরাও। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের সময় তিনি জানিয়েছিলেন, বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে থাকবেন। ৭টার শো শুরু হলে আড্ডা দেবেন আমাদের সঙ্গে।

যথাসময়ে বসুন্ধরায় পৌঁছে সোজা চলে গেলাম সিনেপ্লেক্সে। গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখি, হাতের ডান দিকের একটি টেবিলে আকাশি আর সাদা কম্বিনেশনের শাড়ি পরে বসে আছেন হৃদি হক। তাঁর চুলে অফ হোয়াইট একটি জারবেরা ফুল গোঁজা। পরিচয় দিতেই লাউঞ্জে বসতে বললেন। ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকে আশপাশটা দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল সিনেপ্লেক্সের দেয়ালে ১২টি সিনেমার পোস্টার সাঁটানো।

কোনোটার নিচে লেখা ‘শীঘ্রই আসছে’, কোনোটায় লেখা ‘চলছে’। কিন্তু কোথাও ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ সিনেমাটির পোস্টার খুঁজে পেলাম না। সেগুলো দেখতে দেখতে একটা খটকা মনে দানা বাঁধছিল। তখনই দেখতে পেলাম লাউঞ্জের দিকে হেঁটে আসছেন হৃদি হক।
সোফায় মুখোমুখি বসে জানতে চাইলাম শিশু হৃদি হকের কথা।

লক্ষ করলাম, কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল বড় হয়ে ওঠা অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় হৃদি হকের মুখ। বললেন, ‘আমার ছেলেবেলা ছিল দারুণ মজার।’ হবে নাই-বা কেন? আমরা যাঁদের টেলিভিশনে দেখেছি, সেই ইনামুল হক ও লাকী ইনাম তো তাঁর মা-বাবা। আবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক বাবার সুবাদে থেকেছেন বুয়েটের আবাসিক এলাকায়। মজা তো হওয়ারই কথা! স্মৃতি হাতড়ে হৃদি বললেন, ‘বুয়েটের খোলা মাঠে খেলেই আমি বড় হয়েছি। চারদিক গাছে ঘেরা। পেয়ারাগাছে উঠে পেয়ারা পেড়ে খেতাম। মা-বাবার হাত ধরে অসংখ্য গুণী মানুষ দেখে আমি বড় হয়েছি।’ 

‘১৯৭১ সেই সব দিন’ চলচ্চিত্রের পোস্টারমঞ্চ, টেলিভিশন, বড় পর্দা—সব মিলিয়ে নিজের সংসার আর ছানাদের কীভাবে আগলে রাখেন, জানতে চাইলাম। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প থেকে নাম নিয়ে আদর করে সন্তানদের ডাকেন হিং আর টিং বলে। কেমন হচ্ছে হিং-টিংয়ের বেড়ে ওঠা? একটু শব্দ করেই হাসলেন হৃদি হক। জানালেন, হিং আর টিংয়ের আসল নাম অনিরুদ্ধ উন্মন ও অনসূয়া হৃদি।

বললেন, ‘আমার মা-বাবা আমাকে লেখাপড়া, খেলাধুলা, মেলামেশা করতে কোনো বাধা দেননি। বন্ধুর মতো পাশে থেকেছেন। আমি ভীষণভাবে চাই, আমাদের মা-বাবা আমাদের মধ্যে যে বোধটা তৈরি করেছেন, আমার ছেলেমেয়ের মধ্যে তা থাকুক। কতটা পারব জানি না, তবে আমি এভাবেই চাই।’  

ফিরি চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে। এক হাজারের মতো শিল্পী, সঙ্গে ম্যানেজমেন্টের বিশাল টিম। নিজের বানানো প্রথম চলচ্চিত্রের প্লট ১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পর পুরো দেশের কাঠামোতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগের সেই রাস্তা, বাড়িঘর— কিছুই নেই। সেগুলোকে ঠিকঠাক রেখে একটা সময়কে তুলে আনা কঠিন কাজ। তবে হৃদি ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করলেন কিছুটা ভিন্নভাবে। বললেন, ‘প্রতিবন্ধকতা মনে করলেই সেখানে প্রতিবন্ধকতা আসবে। সেটাকে অভিজ্ঞতা মনে করলে যাত্রাটা অনেক মজার হয়।’

নিজেকে কখনো ছকে বাঁধেননি হৃদি, যা করতে চেয়েছেন তা-ই করেছেন। কৌতূহলে তিনি শিশুদের মতো। বলেন, ‘আমার বিভিন্ন বিষয়ের ওপরেই ইন্টারেস্ট। তাই নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে কাজ করব, এটা আগে থেকে ভেবে রাখি না। তবে হ্যাঁ, নিজেকে আরও বেটার জায়গায় দেখতে চাই।’ জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে হৃদির। বললেন, ‘সব মিলিয়ে কাজ করা কিছুটা কঠিন। কিন্তু ওই যে বলে না, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।’ চলচ্চিত্র বানানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের বাধা অতিক্রম করাকে একধরনের ‘যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করলেন তিনি। 

কাজের ক্ষেত্রে আজকাল নারী-পুরুষ হিসাব করা হয় না। তবু কিছুটা ফাঁকফোকর থেকেই যায়, সেদিক দিয়ে কিছু সমস্যা ঢুকে পড়ে। প্রসঙ্গ আসে অবধারিতভাবে। বিষয়টিকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই বলেই মনে করেন হৃদি। এ-ও মনে করেন, সমাজে নারীরা বিভিন্নভাবে অবদমিত অবস্থায় আছেন। অনেকেই বের হয়ে এসেছেন। তাতে দৃশ্যমান কিছু বদলও এসেছে সব জায়গায়। যোগ করলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নারীরা আরও বেরিয়ে আসবেন। তখন নারীদের নারী বলে আলাদা করা হবে না।’ 

যে কাজটা করতে মন চায়, সেটি পূর্ণোদ্যমে করে ফেলেন হৃদি। পুরো টিম গুছিয়ে একসঙ্গে কাজ করেন। তাই সিনেমার সাফল্য ও প্রাপ্তি সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। কিন্তু একজন নাট্যকর্মী, নির্মাতা, লেখক, সাংগঠনিক দায়িত্বপূর্ণ পদ এবং সর্বোপরি একজন মা—এই পথচলাটা কেমন? উজ্জ্বল মুখে আবারও উত্তর এল, ‘এটা একটা দারুণ জার্নি।

আমি যা করতে চেয়েছি, তাই করেছি এবং করছি। আমি শিল্পের সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলাম। পরিবার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানদের আমি আমার বেড়ে ওঠার পরিবেশটা দিতে চাই সব সময়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত