জহির উদ্দিন মিশু,ঢাকা
কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে সেদিন যে সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছিল, তার মৌতাত অনেক দিন থাকবে দেশের ফুটবল অঙ্গনে। নেপালকে হারিয়ে ব্যাক টু ব্যাক শিরোপায় তৈরি হয়েছিল ছাদখোলা বাসে চ্যাম্পিয়নদের রাজপথ অতিক্রমের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য।
সেই দৃশ্যের অংশ ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা আর রুপনা চাকমা। পুরো দেশ এখন তাঁদের এক নামে চেনে।
এই আনন্দ, এই উদ্যাপনের মুহূর্ত তৈরি করতে পারার পেছনের যে গল্প, সেটি গ্যালারিতে বসে কিংবা টিভি পর্দায় দেখা যায় না। পরিবার, পাড়ার মানুষ আবার সহপাঠীদের ঘৃণার পাত্র যে হতে হয়েছে কতবার? সেই প্রশ্ন এখন অবান্তর বটে। কিন্তু জিততে জিততে শিখে যাওয়া জীবনে থেকে গেছে তা। এখন হয়তো সাক্ষাৎকারে ‘জীবনের গল্প’ হিসেবে বলে যাওয়া যায় সেসব।
দু-দুবার সাফে সেরা গোলকিপার হওয়া রুপনা যেমন বললেন, ‘...সব কষ্ট, সব দুঃখ ভুলে আজ এখানে দাঁড়িয়ে। হ্যাঁ, এখনো কিছু সমস্যা আছে। তবে সেগুলো ছোটবেলার মতো নয়। একটা সময় ছিল, মায়ের সঙ্গে আমি মাঠে কাজ করতাম। বাবাকে তো জন্মের পরই হারিয়েছি। পৃথিবীতে আসার পর যেদিন থেকে কথা বলা শিখি, মনে হয় সেদিন থেকেই আমার যুদ্ধটা শুরু। আজকের রুপনা হতে আমাকে বহু বাধা জয় করতে হয়েছে।’
পাহাড়ের মানুষের এমনিতেই সমস্যার অন্ত নেই। সেসব সমস্যা ঠেলতে ঠেলতে রাঙামাটির দুর্গম এলাকায় বেড়ে ওঠা ঋতুপর্ণা-মনিকা-রুপনার সাফল্যের চূড়ায় উঠতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ছোটবেলায় বাবাকে হারান ঋতুপর্ণা। মায়ের আদর আর ভালোবাসা নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন— শিক্ষক হবেন। সবাই তাঁকে সম্মান করবেন। শিক্ষক না হয়ে হলেন ফুটবলার। এবার সাফের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার বাগিয়ে নিলেন। কিন্তু ভাগ্যের চাবি হাতে পাননি।
ঋতুর বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়িতে। চার বোন ও এক ভাইয়ের সংসারে ঋতুর বয়স যখন ১১, ক্যানসারে মারা গেলেন বাবা। আর একমাত্র ভাই দুই বছর আগে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেলেন। বাবা-ভাইবিহীন সংসার টেনে নিচ্ছেন মা ভূজোপতি চাকমা।
চার বোনের মধ্যে ছোট ঋতু। বড় তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। তাই বাড়িতে একাই থাকেন মা। কিন্তু থাকার ঘরটার অবস্থা খুবই নাজুক। টিনের চালা ও বাঁশের বেড়ার একটি ঘরে থাকতে হয় ঋতুপর্ণার বৃদ্ধ মাকে। ঋতু যখন গ্রামে যান, তাঁকেও বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে করতে হয় যুদ্ধ। কারণ, বাড়িতে যাওয়ার ভালো কোনো রাস্তা নেই। এমন অনেক না থাকাকে সঙ্গী করে দেশের পক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা খেলোয়াড় এখন ঋতুপর্ণা চাকমা। এই অনুভূতিই তাঁকে অনেক বেশি প্রেরণা জোগাচ্ছে।
ঋতু বললেন, ‘এই অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই খুশি। এমন দিন দ্বিতীয়বার দেখব কখনো ভাবিনি। সেরা হওয়াটা আমাদের প্রাপ্য ছিল। কারণ, এত দূর আসতে সবাইকে অনেক শ্রম, অনেক বাধা টপকাতে হয়েছে।’
তবে বাবা আর ভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে ঋতুপর্ণার। সুখের দিনে তাই একটুখানি দুঃখের স্মৃতিতেও ডুব দিলেন। বললেন, ‘বাবা ও ভাই দুজনই ফুটবল ভীষণ পছন্দ করতেন; বিশেষ করে বাবা। তিনি ফুটবলকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। আমি যেদিন ফুটবল খেলার কথা বাসায় প্রথম জানিয়েছিলাম, সবার আগে বাবা “হ্যাঁ” বলে দেন। তিনি শুরু থেকে আমার এই লড়াইয়ের সঙ্গী ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বাবাকে হারিয়ে ফেললাম। এরপর ভাইটাও চলে গেলেন। জানি না, তাঁরা কেমন আছেন। এবার আমি দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা খেলোয়াড় হলাম। কিন্তু বাবা দেখে যেতে পারলেন না।’
খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ির সুমান্তপাড়ায় মনিকা চাকমার বাড়ি। সেখানে এখনো পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ। রাতের বেলা চাঁদের আলো আর জোনাকির দেখা মেলে। চলাচলের জন্য নেই ভালো রাস্তা। কৃষক বিন্দু কুমার চাকমা ও রবি মালা চাকমার পাঁচ মেয়ের মধ্যে মনিকা ছোট। মেয়ে ফুটবল খেলবেন, বাবার তা পছন্দের ছিল না। ২০১২ সালে চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতে গেলে রাঙামাটি মগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিরসেন চাকমার নজরে আসেন মনিকা। এরপর তিনি মনিকার বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করান। সেই শুরু। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তবে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের এই পর্যায়ে আসতে তাঁকেও দিতে হয়েছে অনেক শ্রম। তবু আফসোস, যে বেতন পান, তাতে আর চলে না।
সেটাই বললেন মনিকা, ‘আসলে আমাদের বেতনটাও অনেক সময় বকেয়া পড়ে। তখন বাবা অনেক কষ্ট করে বাড়ি থেকে টাকা পাঠান। আমাদের নিজেদের কোনো জমি নেই। বাবা অন্যের জমিতে চাষ করেন। মাঝেমধ্যে আমি কিছু টাকা দিই। কিন্তু বেতনটা আরও বেশি হলে টানাটানি হতো না। সেই ছোটবেলা থেকে কষ্ট করছি। এখন কিছুটা ভালো। কিন্তু সমস্যার শেষ নেই।’
ঋতুপর্ণা-মনিকা-রুপনা আমাদের মেয়ে, আমাদের খেলোয়াড়। আর কত বাধার পাহাড় ডিঙাতে হবে তাঁদের? এবার খানিক স্বস্তি ফিরুক—ঘরে ও মনে।
কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে সেদিন যে সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছিল, তার মৌতাত অনেক দিন থাকবে দেশের ফুটবল অঙ্গনে। নেপালকে হারিয়ে ব্যাক টু ব্যাক শিরোপায় তৈরি হয়েছিল ছাদখোলা বাসে চ্যাম্পিয়নদের রাজপথ অতিক্রমের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য।
সেই দৃশ্যের অংশ ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা আর রুপনা চাকমা। পুরো দেশ এখন তাঁদের এক নামে চেনে।
এই আনন্দ, এই উদ্যাপনের মুহূর্ত তৈরি করতে পারার পেছনের যে গল্প, সেটি গ্যালারিতে বসে কিংবা টিভি পর্দায় দেখা যায় না। পরিবার, পাড়ার মানুষ আবার সহপাঠীদের ঘৃণার পাত্র যে হতে হয়েছে কতবার? সেই প্রশ্ন এখন অবান্তর বটে। কিন্তু জিততে জিততে শিখে যাওয়া জীবনে থেকে গেছে তা। এখন হয়তো সাক্ষাৎকারে ‘জীবনের গল্প’ হিসেবে বলে যাওয়া যায় সেসব।
দু-দুবার সাফে সেরা গোলকিপার হওয়া রুপনা যেমন বললেন, ‘...সব কষ্ট, সব দুঃখ ভুলে আজ এখানে দাঁড়িয়ে। হ্যাঁ, এখনো কিছু সমস্যা আছে। তবে সেগুলো ছোটবেলার মতো নয়। একটা সময় ছিল, মায়ের সঙ্গে আমি মাঠে কাজ করতাম। বাবাকে তো জন্মের পরই হারিয়েছি। পৃথিবীতে আসার পর যেদিন থেকে কথা বলা শিখি, মনে হয় সেদিন থেকেই আমার যুদ্ধটা শুরু। আজকের রুপনা হতে আমাকে বহু বাধা জয় করতে হয়েছে।’
পাহাড়ের মানুষের এমনিতেই সমস্যার অন্ত নেই। সেসব সমস্যা ঠেলতে ঠেলতে রাঙামাটির দুর্গম এলাকায় বেড়ে ওঠা ঋতুপর্ণা-মনিকা-রুপনার সাফল্যের চূড়ায় উঠতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ছোটবেলায় বাবাকে হারান ঋতুপর্ণা। মায়ের আদর আর ভালোবাসা নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন— শিক্ষক হবেন। সবাই তাঁকে সম্মান করবেন। শিক্ষক না হয়ে হলেন ফুটবলার। এবার সাফের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার বাগিয়ে নিলেন। কিন্তু ভাগ্যের চাবি হাতে পাননি।
ঋতুর বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়িতে। চার বোন ও এক ভাইয়ের সংসারে ঋতুর বয়স যখন ১১, ক্যানসারে মারা গেলেন বাবা। আর একমাত্র ভাই দুই বছর আগে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেলেন। বাবা-ভাইবিহীন সংসার টেনে নিচ্ছেন মা ভূজোপতি চাকমা।
চার বোনের মধ্যে ছোট ঋতু। বড় তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। তাই বাড়িতে একাই থাকেন মা। কিন্তু থাকার ঘরটার অবস্থা খুবই নাজুক। টিনের চালা ও বাঁশের বেড়ার একটি ঘরে থাকতে হয় ঋতুপর্ণার বৃদ্ধ মাকে। ঋতু যখন গ্রামে যান, তাঁকেও বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে করতে হয় যুদ্ধ। কারণ, বাড়িতে যাওয়ার ভালো কোনো রাস্তা নেই। এমন অনেক না থাকাকে সঙ্গী করে দেশের পক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা খেলোয়াড় এখন ঋতুপর্ণা চাকমা। এই অনুভূতিই তাঁকে অনেক বেশি প্রেরণা জোগাচ্ছে।
ঋতু বললেন, ‘এই অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই খুশি। এমন দিন দ্বিতীয়বার দেখব কখনো ভাবিনি। সেরা হওয়াটা আমাদের প্রাপ্য ছিল। কারণ, এত দূর আসতে সবাইকে অনেক শ্রম, অনেক বাধা টপকাতে হয়েছে।’
তবে বাবা আর ভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে ঋতুপর্ণার। সুখের দিনে তাই একটুখানি দুঃখের স্মৃতিতেও ডুব দিলেন। বললেন, ‘বাবা ও ভাই দুজনই ফুটবল ভীষণ পছন্দ করতেন; বিশেষ করে বাবা। তিনি ফুটবলকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। আমি যেদিন ফুটবল খেলার কথা বাসায় প্রথম জানিয়েছিলাম, সবার আগে বাবা “হ্যাঁ” বলে দেন। তিনি শুরু থেকে আমার এই লড়াইয়ের সঙ্গী ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বাবাকে হারিয়ে ফেললাম। এরপর ভাইটাও চলে গেলেন। জানি না, তাঁরা কেমন আছেন। এবার আমি দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা খেলোয়াড় হলাম। কিন্তু বাবা দেখে যেতে পারলেন না।’
খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ির সুমান্তপাড়ায় মনিকা চাকমার বাড়ি। সেখানে এখনো পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ। রাতের বেলা চাঁদের আলো আর জোনাকির দেখা মেলে। চলাচলের জন্য নেই ভালো রাস্তা। কৃষক বিন্দু কুমার চাকমা ও রবি মালা চাকমার পাঁচ মেয়ের মধ্যে মনিকা ছোট। মেয়ে ফুটবল খেলবেন, বাবার তা পছন্দের ছিল না। ২০১২ সালে চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতে গেলে রাঙামাটি মগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিরসেন চাকমার নজরে আসেন মনিকা। এরপর তিনি মনিকার বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করান। সেই শুরু। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তবে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের এই পর্যায়ে আসতে তাঁকেও দিতে হয়েছে অনেক শ্রম। তবু আফসোস, যে বেতন পান, তাতে আর চলে না।
সেটাই বললেন মনিকা, ‘আসলে আমাদের বেতনটাও অনেক সময় বকেয়া পড়ে। তখন বাবা অনেক কষ্ট করে বাড়ি থেকে টাকা পাঠান। আমাদের নিজেদের কোনো জমি নেই। বাবা অন্যের জমিতে চাষ করেন। মাঝেমধ্যে আমি কিছু টাকা দিই। কিন্তু বেতনটা আরও বেশি হলে টানাটানি হতো না। সেই ছোটবেলা থেকে কষ্ট করছি। এখন কিছুটা ভালো। কিন্তু সমস্যার শেষ নেই।’
ঋতুপর্ণা-মনিকা-রুপনা আমাদের মেয়ে, আমাদের খেলোয়াড়। আর কত বাধার পাহাড় ডিঙাতে হবে তাঁদের? এবার খানিক স্বস্তি ফিরুক—ঘরে ও মনে।
অভিনেত্রীরা হবেন আবেদনময়ী। পর্দা কিংবা পোস্টারে তুলবেন ঝড়। এর বাইরে তাঁরা শোকেসে সাজানো পুতুল। অন্যদিকে প্রযুক্তির জগতে অবদানের কথা উঠলে সবাই একবাক্যে বলবে, সে চশমা আঁটা গম্ভীর নারী বা পুরুষদের কাজ। বেশির ভাগ মানুষের ধারণাটা এমন যে লাইট আর ক্যামেরার বাইরে অভিনেত্রীদের মেধা শূন্যের কোঠায়।
১৩ ঘণ্টা আগেআমার দাদা-দাদি মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। চাচা-জ্যাঠারা বেশি বেশি জায়গাজমি ভোগ করছেন। আমার বাবার উপযুক্ত ছেলে নেই। আমাদের ভাগ তাঁদের তুলনায় অর্ধেক। দুই দিন পরপর চাচা-জ্যাঠারা তাঁদের ছেলেদের নিয়ে বাবার দিকে তেড়ে আসেন।
১৩ ঘণ্টা আগেপ্রস্তাবিত গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন পাস করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। একই সঙ্গে হাসপাতাল ও সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর চিকিৎসাসেবা, কাউন্সেলিংসহ পুনর্বাসন নিশ্চিতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৪ ঘণ্টা আগেনড়াইল শহরের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের খেলার মাঠের দক্ষিণ দিকে রাস্তার পাশে চারতলা ভবন। নাম ‘অন্তি কটেজ’। এ ভবনের ৩ হাজার বর্গফুট ছাদজুড়ে তনিমা আফরিনের বাগান। তিনতলায় স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া তনিমা।
৭ দিন আগে